alt

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শিক্ষা সংস্কারের পরিকল্পনা কী?

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, ঢাকা : বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছেন তিনি। অভিযোগ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘উগ্রপন্থী, ইসলামি ধর্মান্ধ এবং মার্ক্সবাদি’ দ্বারা প্রভাবিত। কট্টর রক্ষণশীল মূল্যবোধের পক্ষে হওয়ায় সে সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বাদ দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। তবে সেই পথে হাঁটেননি। বরং সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করছেন পুনরায় নির্বাচিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

দেশটির প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ‘ইউনিভার্সাল স্কুল চয়েস’ ধারণাকে ছড়িয়ে দিতে চান ট্রাম্প। তিনি এটা অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় বলে ধারণা দেন। এতে বিনামূল্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবে। অর্থাৎ প্রচলিত প্রক্রিয়াকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্দিষ্ট মানদ- পূরণ করতে চান। তার এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য লিন্ডা ম্যাকমোহনকে পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন।

ট্রাম্প তাকে ‘প্যারেন্টস রাইটসের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, ‘শিক্ষার দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যের হাতে ফিরিয়ে আনব এবং লিন্ডা সেই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেবেন’। জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে ট্রানজিশন টিমের কো-চেয়ার ম্যাকমাহন প্রায় চার হাজার সরকারি পদ পূরণ করবেন।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবনা খুব বেশি দীর্ঘ নয়। বিরাট পরিবর্তন হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাদ দেয়ার ঘোষণা দেন। এজন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। তার মিত্ররা আরও বিস্তারিত নীতিমালা প্রস্তাব করেছেন। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রজেক্ট২০২৫-এ এলজিবিটিকিউ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংকীর্ণ করা, ক্যাম্পাসে হামলা ও হয়রানিতে জড়িতদের ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসন’ এবং শিক্ষাঋণ মওকুফের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংশ ফেডারেল তহবিল থেকে আসে। আর এটি পরিচালনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যা ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার শিক্ষাঋণ দিয়ে আসছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মন্ত্রণালয়টি ৪.৮ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতা শিক্ষার্থীর ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ মওকুফ করেছে। ট্রাম্প শিক্ষাঋণ মওকুফ করাকে ‘অবৈধ’ এবং ‘অন্যায়’ বলে সমালোচনা করেছেন। তবে তিনি এখনও শিক্ষাঋণ সংকট সমাধানে তার পদক্ষেপ কি হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করেননি।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনে নীলনকশা হিসেবে পরিচিত এজেন্ডা-৪৭। কার্যত মার্কিন শাসনব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে এই এজেন্ডায়। ট্রাম্পের মত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘শিক্ষার্থীদের কমিউনিষ্ট সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থীর সমর্থকে পরিণত করছে’। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্ট ফান্ডের কর, জরিমানা, মামলায় প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ‘অ্যামেরিকান একাডেমি’ গঠণ করার কথাও বলেছেন তিনি। যা ফেডারেল ঋণ বাদেই ‘বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা’ দেবে। এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হবে। এবং এখানে কোনো প্রগতিশীলতা বা জিহাদী চেতানার ঠাঁই হবে না।’

আরেক ভিডিওতে ট্রাম্প নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থাকে উচ্চশিক্ষা সংস্কারের জন্য ‘গোপন অস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থ উল্লেখ করে ‘উগ্র বামপন্থীদের বরখাস্ত’ করার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা কলেজগুলোকে মার্ক্সবাদি উন্মাদ এবং পাগল দ্বারা প্রভাবিত হতে দিয়েছে’। এরপর অ্যামেরিকান ঐতিহ্য ও পশ্চিমা সভ্যতা রক্ষাকারী, মুক্ত বাকস্বাধীনতার পক্ষে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন, ঘোষণা তার।

সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান গত মাসে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা স্টিভ স্ক্যালিস ও প্রো-ইসরায়েল লবিং গ্রুপ আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এআইপিএসি) মধ্যে একটি বৈঠকের ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে স্ক্যালিস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভের জন্য শাস্তি দিতে বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহার করার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মামলা করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। প্রো-প্যালেস্টান বিক্ষোভের অনুমতি দেয়ায় ‘সমতার নামে অবৈধ বৈষম্য’ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলোই হবে তার লক্ষ্যবস্তু। এছাড়া মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য নিয়ে গবেষণার কোর্সগুলো বন্ধের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, অপতথ্যে সম্পৃক্ত কোর্সগুলো অপসারণ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য গবেষণা তহবিল থেকে বিরত রাখা হবে। এবং তারা শিক্ষাঋণের সুযোগও হারাবে।

ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে মিত্র হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট-২০২৫ এর উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনাও সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা ফেডারেল তহবিলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ দেয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। প্রজেক্ট২০২৫ শিক্ষাঋণ মওকুফ করাকে ‘রাজনৈতিক কূটকৌশল’ হিসেবে অভিহিত করে। পরামর্শ দিয়েছে ‘ঋণগ্রহীতাদের তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে’। যদিও জো বাইডেনের বিপুল শিক্ষাঋণ বাতিলের চেষ্টা আদালত কর্তৃক খারিজ করা হয়েছিল।

এছাড়াও প্রজেক্ট-২০২৫ পাবলিক সার্ভিস লোন ফোর্গিভনেস প্রোগ্রামও বন্ধের পক্ষে প্রস্তাবনা দিয়েছে। সরকারি বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ১০ বছরের পেমেন্টের পর মওকুফের সুযোগ রেখেছে। ‘শত্রু দেশ’ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা বন্ধ বা সীমিত করার কথাও বলা হয়েছে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভর করে।

আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটও একই পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘বিরোধী দেশগুলো থেকে আসা’ শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বিশেষ নজরদারি’ করা উচিত। যদিও তারা এতে কোনো দেশগুলো অন্তভুর্ক্ত তা স্পষ্ট করে জানায়নি।

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা

ছবি

ইউক্রেনকে আরও কোণঠাসা করেছে রাশিয়া, যুদ্ধক্ষেত্রে বড় অর্জন

ছবি

সিঙ্গাপুরের নাগরিক দাবি করে সুরক্ষা চাইলেন এস আলম

ছবি

ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাজ্যের

ছবি

আ.লীগের প্রসঙ্গ তুললেন ভারতীয় সাংবাদিক, জবাবে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

বাইডেন-সির ঐকমত্য: এআই নয়, পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করা উচিত মানুষের

ছবি

ফিলিপাইনে আঘাত হেনেছে সুপার টাইফুন মান-ই, বিপর্যয়ের সতর্কতা

ছবি

মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলার চেষ্টা, কারফিউ জারি

ছবি

ড. ইউনূসের ভিশনের দিকে তাকিয়ে যুক্তরাজ্য

ছবি

ভারতের উত্তর প্রদেশে হাসপাতালে অগ্নিকান্ড, ১০ নবজাতকের মৃত্যু

ছবি

৬.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল পাপুয়া নিউগিনি

ছবি

লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় ১২ প্যারামেডিকস নিহত

ছবি

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসায় উদ্বিগ্ন ভারত

ছবি

হোয়াইট হাউসের সর্বকনিষ্ঠ প্রেস সেক্রেটারি হচ্ছেন ক্যারোলিন লেভিট

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত আরও ২৮ ফিলিস্তিনি

ছবি

দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কাজ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা: ট্রাম্প

ছবি

স্পেনে বৃদ্ধাশ্রমে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যু

ছবি

টিকাবিরোধী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিলেন ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের প্রশাসনে বিতর্কিত নিয়োগ: বিশেষজ্ঞ মহলে সমালোচনা

ইরানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে ইলন মাস্ক, তেহরান-ওয়াশিংটন সম্পর্কের সম্ভাব্য উন্নয়ন

ছবি

শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী জোট এনপিপির জয়

ছবি

বায়ুদূষণের কবলে দিল্লি, বন্ধ হলো প্রাথমিকে সশরীরে ক্লাস

ছবি

গাজা ও লেবাননজুড়ে ইসরায়েলের হামলা চলছেই, নিহত আরও ৪৫

ছবি

ফের বোমাতঙ্ক, ১৯৩ আরোহী নিয়ে কলকাতাগামী ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ

ছবি

মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদেও রিপাবলিকানদের জয়

ছবি

ব্রাজিলে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে বিস্ফোরণ

ছবি

মার্কিন তিন রণতরীতে ইয়েমেনিদের ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ছবি

ট্রাম্পের প্রশাসনে ইলন মাস্ক এবং বিবেক রামস্বামীকে বিশেষ দায়িত্বে নিয়োগ

ছবি

প্রথম দিনেই অভিবাসীদের ওপর কঠোর হবেন ট্রাম্প

ছবি

পার্বত্য লেবাননের দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি হামলা, নিহত অন্তত ২৩

ছবি

গাজা ও লেবাননজুড়ে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ১০৭

ছবি

এলিস স্টেফানিককে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিলেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের জয়: কংগ্রেসেও রিপাবলিকানদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ

ছবি

গাজায় নিহত আরও ৪০, প্রাণহানি ছাড়িয়ে গেল ৪৩ হাজার ৬০০

ছবি

গাজা লেবানন সিরিয়ায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ৯৪

ছবি

অ্যারিজোনাতেও ট্রাম্পের জয়, সব সুইং স্টেট রিপাবলিকানদের দখলে

tab

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের শিক্ষা সংস্কারের পরিকল্পনা কী?

সৈয়দ মুহাম্মদ আজম, ঢাকা

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন ডনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা করেছেন তিনি। অভিযোগ করেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘উগ্রপন্থী, ইসলামি ধর্মান্ধ এবং মার্ক্সবাদি’ দ্বারা প্রভাবিত। কট্টর রক্ষণশীল মূল্যবোধের পক্ষে হওয়ায় সে সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বাদ দেয়ার ঘোষণাও দেন তিনি। তবে সেই পথে হাঁটেননি। বরং সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করছেন পুনরায় নির্বাচিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

দেশটির প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে ‘ইউনিভার্সাল স্কুল চয়েস’ ধারণাকে ছড়িয়ে দিতে চান ট্রাম্প। তিনি এটা অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয় বলে ধারণা দেন। এতে বিনামূল্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবে। অর্থাৎ প্রচলিত প্রক্রিয়াকে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নির্দিষ্ট মানদ- পূরণ করতে চান। তার এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য লিন্ডা ম্যাকমোহনকে পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন।

ট্রাম্প তাকে ‘প্যারেন্টস রাইটসের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, ‘শিক্ষার দায়িত্ব অঙ্গরাজ্যের হাতে ফিরিয়ে আনব এবং লিন্ডা সেই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দেবেন’। জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার আগে ট্রানজিশন টিমের কো-চেয়ার ম্যাকমাহন প্রায় চার হাজার সরকারি পদ পূরণ করবেন।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবনা খুব বেশি দীর্ঘ নয়। বিরাট পরিবর্তন হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাদ দেয়ার ঘোষণা দেন। এজন্য মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন লাগবে। তার মিত্ররা আরও বিস্তারিত নীতিমালা প্রস্তাব করেছেন। হেরিটেজ ফাউন্ডেশন প্রজেক্ট২০২৫-এ এলজিবিটিকিউ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংকীর্ণ করা, ক্যাম্পাসে হামলা ও হয়রানিতে জড়িতদের ‘যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসন’ এবং শিক্ষাঋণ মওকুফের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংশ ফেডারেল তহবিল থেকে আসে। আর এটি পরিচালনা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যা ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার শিক্ষাঋণ দিয়ে আসছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মন্ত্রণালয়টি ৪.৮ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতা শিক্ষার্থীর ১৭৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ মওকুফ করেছে। ট্রাম্প শিক্ষাঋণ মওকুফ করাকে ‘অবৈধ’ এবং ‘অন্যায়’ বলে সমালোচনা করেছেন। তবে তিনি এখনও শিক্ষাঋণ সংকট সমাধানে তার পদক্ষেপ কি হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করেননি।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পেছনে নীলনকশা হিসেবে পরিচিত এজেন্ডা-৪৭। কার্যত মার্কিন শাসনব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়েই পরিকল্পনা করা হয়েছে এই এজেন্ডায়। ট্রাম্পের মত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘শিক্ষার্থীদের কমিউনিষ্ট সন্ত্রাসী ও উগ্রপন্থীর সমর্থকে পরিণত করছে’। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ট্রাস্ট ফান্ডের কর, জরিমানা, মামলায় প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে ‘অ্যামেরিকান একাডেমি’ গঠণ করার কথাও বলেছেন তিনি। যা ফেডারেল ঋণ বাদেই ‘বিনামূল্যে বিশ্বমানের শিক্ষা’ দেবে। এক ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক হবে। এবং এখানে কোনো প্রগতিশীলতা বা জিহাদী চেতানার ঠাঁই হবে না।’

আরেক ভিডিওতে ট্রাম্প নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থাকে উচ্চশিক্ষা সংস্কারের জন্য ‘গোপন অস্ত্র’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থ উল্লেখ করে ‘উগ্র বামপন্থীদের বরখাস্ত’ করার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা কলেজগুলোকে মার্ক্সবাদি উন্মাদ এবং পাগল দ্বারা প্রভাবিত হতে দিয়েছে’। এরপর অ্যামেরিকান ঐতিহ্য ও পশ্চিমা সভ্যতা রক্ষাকারী, মুক্ত বাকস্বাধীনতার পক্ষে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেবেন, ঘোষণা তার।

সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান গত মাসে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা স্টিভ স্ক্যালিস ও প্রো-ইসরায়েল লবিং গ্রুপ আমেরিকান ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এআইপিএসি) মধ্যে একটি বৈঠকের ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে স্ক্যালিস বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভের জন্য শাস্তি দিতে বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহার করার বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বর্ণ বৈষম্যের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মামলা করার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। প্রো-প্যালেস্টান বিক্ষোভের অনুমতি দেয়ায় ‘সমতার নামে অবৈধ বৈষম্য’ তৈরি করা প্রতিষ্ঠানগুলোই হবে তার লক্ষ্যবস্তু। এছাড়া মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য নিয়ে গবেষণার কোর্সগুলো বন্ধের প্রস্তাব করেছেন তিনি। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, অপতথ্যে সম্পৃক্ত কোর্সগুলো অপসারণ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কমপক্ষে পাঁচ বছরের জন্য গবেষণা তহবিল থেকে বিরত রাখা হবে। এবং তারা শিক্ষাঋণের সুযোগও হারাবে।

ট্রাম্পের নীতির সঙ্গে মিত্র হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট-২০২৫ এর উচ্চশিক্ষার পরিকল্পনাও সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা ফেডারেল তহবিলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ দেয়ার পরিকল্পনা তৈরি করেছে। প্রজেক্ট২০২৫ শিক্ষাঋণ মওকুফ করাকে ‘রাজনৈতিক কূটকৌশল’ হিসেবে অভিহিত করে। পরামর্শ দিয়েছে ‘ঋণগ্রহীতাদের তাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে’। যদিও জো বাইডেনের বিপুল শিক্ষাঋণ বাতিলের চেষ্টা আদালত কর্তৃক খারিজ করা হয়েছিল।

এছাড়াও প্রজেক্ট-২০২৫ পাবলিক সার্ভিস লোন ফোর্গিভনেস প্রোগ্রামও বন্ধের পক্ষে প্রস্তাবনা দিয়েছে। সরকারি বা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের ১০ বছরের পেমেন্টের পর মওকুফের সুযোগ রেখেছে। ‘শত্রু দেশ’ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের ভিসা বন্ধ বা সীমিত করার কথাও বলা হয়েছে। মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুব বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপর নির্ভর করে।

আমেরিকা ফার্স্ট পলিসি ইনস্টিটিউটও একই পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘বিরোধী দেশগুলো থেকে আসা’ শিক্ষার্থীদের জন্য ‘বিশেষ নজরদারি’ করা উচিত। যদিও তারা এতে কোনো দেশগুলো অন্তভুর্ক্ত তা স্পষ্ট করে জানায়নি।

back to top