অলিগার্কির বিরুদ্ধে সতর্কতা, এআই ও জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্ব তুলে ধরলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর বিদায়ী ভাষণে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় আমেরিকান জনগণকে প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে দেওয়া এ ভাষণে তিনি চরম সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। তাঁর ভাষণে উঠে আসে সামাজিক বিভ্রান্তি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, জলবায়ু সংকট এবং আন্তর্জাতিক সংঘাতের প্রসঙ্গ।
বিদায়ী ভাষণটি বাইডেনের জন্য ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন, এবং তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। বিদায়ী ভাষণটি ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিন আগে দেওয়া হয়।
বাইডেন বলেন, “আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা এবং প্রভাবের একটি বিপজ্জনক অলিগার্কি বিকশিত হচ্ছে, যা আমাদের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে।” অতিধনী ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, এটি কেবল আমেরিকার জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বব্যবস্থার জন্যও বড় বিপদ।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে একটি প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক অলিগার্কির বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তিনি এটিকে “নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা অর্জনকারী এক বিপজ্জনক শক্তি” হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাইডেন তাঁর ভাষণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমেরিকানরা ভুল তথ্য ও অপতথ্যের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।”
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রসঙ্গে বাইডেন সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এআই মানবজাতির জন্য অসাধারণ সম্ভাবনা এনে দিতে পারে। তবে যদি এর ওপর সঠিক প্রহরা না থাকে, তাহলে এটি নতুন হুমকি তৈরি করতে পারে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এআই ও অন্যান্য রূপান্তরমূলক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের ওপর নেতৃত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, তাঁর প্রশাসন এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এটি এখন হুমকির মুখে। তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাশালী অর্থনৈতিক শক্তি ও মুনাফার পেছনে লিপ্ত গোষ্ঠীগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বাইডেন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নৃশংস সহিংসতার পর উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি আমার প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে।”
বাইডেন তাঁর প্রশাসনের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা একত্রে যা করেছি, তার সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে। তবে বীজ ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে। সেগুলো প্রস্ফুটিত হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপকৃত করবে।”
তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা দশকের পর দশক ধরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে জলবায়ু, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।
বাইডেন বিদায়ী ভাষণের শেষাংশে আমেরিকানদের গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশের জনগণের প্রহরীর ভূমিকা পালনের সময় এখন। আমেরিকা সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।”
বাইডেন তাঁর ভাষণে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, আমেরিকার জনগণের প্রচেষ্টা এবং ঐক্যের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত। তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান।
জো বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ মার্কিন রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসা অলিগার্কির উত্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো আগামী দিনগুলোর নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাইডেন তাঁর ভাষণে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমেরিকানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন।
বিদায়ী এই ভাষণ শুধু বাইডেন প্রশাসনের নয়, সমগ্র আমেরিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এটি নতুন প্রজন্মের জন্য গণতন্ত্র এবং নৈতিকতার ভিত্তি দৃঢ় করার আহ্বান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অলিগার্কির বিরুদ্ধে সতর্কতা, এআই ও জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুত্ব তুলে ধরলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর বিদায়ী ভাষণে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় আমেরিকান জনগণকে প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে দেওয়া এ ভাষণে তিনি চরম সম্পদ ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেন। তাঁর ভাষণে উঠে আসে সামাজিক বিভ্রান্তি, প্রযুক্তির অপব্যবহার, জলবায়ু সংকট এবং আন্তর্জাতিক সংঘাতের প্রসঙ্গ।
বিদায়ী ভাষণটি বাইডেনের জন্য ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন, এবং তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ট্রাম্পের কাছে পরাজিত হন। বিদায়ী ভাষণটি ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক দিন আগে দেওয়া হয়।
বাইডেন বলেন, “আমেরিকায় চরম সম্পদ, ক্ষমতা এবং প্রভাবের একটি বিপজ্জনক অলিগার্কি বিকশিত হচ্ছে, যা আমাদের গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে।” অতিধনী ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতার বিপজ্জনক কেন্দ্রীকরণের বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, এটি কেবল আমেরিকার জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বব্যবস্থার জন্যও বড় বিপদ।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বিশেষ করে একটি প্রযুক্তি-কেন্দ্রিক অলিগার্কির বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তিনি এটিকে “নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতা অর্জনকারী এক বিপজ্জনক শক্তি” হিসেবে উল্লেখ করেন।
বাইডেন তাঁর ভাষণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর কার্যক্রমের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমেরিকানরা ভুল তথ্য ও অপতথ্যের নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। এটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছে।”
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রসঙ্গে বাইডেন সম্ভাবনার পাশাপাশি ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এআই মানবজাতির জন্য অসাধারণ সম্ভাবনা এনে দিতে পারে। তবে যদি এর ওপর সঠিক প্রহরা না থাকে, তাহলে এটি নতুন হুমকি তৈরি করতে পারে।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এআই ও অন্যান্য রূপান্তরমূলক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে চীনের ওপর নেতৃত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, তাঁর প্রশাসন এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এটি এখন হুমকির মুখে। তিনি দাবি করেন, ক্ষমতাশালী অর্থনৈতিক শক্তি ও মুনাফার পেছনে লিপ্ত গোষ্ঠীগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বাইডেন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “ফিলিস্তিনের গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা নৃশংস সহিংসতার পর উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এই চুক্তি আমার প্রস্তাবিত কাঠামোর ওপর ভিত্তি করেই হয়েছে।”
বাইডেন তাঁর প্রশাসনের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে গর্ব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা একত্রে যা করেছি, তার সম্পূর্ণ প্রভাব অনুভব করতে সময় লাগবে। তবে বীজ ইতোমধ্যেই রোপণ করা হয়েছে। সেগুলো প্রস্ফুটিত হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপকৃত করবে।”
তিনি আরও বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন নীতিমালা দশকের পর দশক ধরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে জলবায়ু, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেওয়া পদক্ষেপগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাবে।
বাইডেন বিদায়ী ভাষণের শেষাংশে আমেরিকানদের গণতন্ত্র রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “দেশের জনগণের প্রহরীর ভূমিকা পালনের সময় এখন। আমেরিকা সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে গেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।”
বাইডেন তাঁর ভাষণে আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেন, আমেরিকার জনগণের প্রচেষ্টা এবং ঐক্যের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত। তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান।
জো বাইডেনের বিদায়ী ভাষণ মার্কিন রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসা অলিগার্কির উত্থান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সম্ভাবনা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো আগামী দিনগুলোর নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাইডেন তাঁর ভাষণে আশাবাদ ব্যক্ত করলেও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমেরিকানদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছেন।
বিদায়ী এই ভাষণ শুধু বাইডেন প্রশাসনের নয়, সমগ্র আমেরিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এটি নতুন প্রজন্মের জন্য গণতন্ত্র এবং নৈতিকতার ভিত্তি দৃঢ় করার আহ্বান হিসেবে দেখা হচ্ছে।