alt

ঔপনিবেশিক আমলের মতোই শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন পশ্চিমের ধনীরা : অক্সফাম

গার্ডিয়ান : মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

পশ্চিমের কয়েকজন শীর্ষ ধনকুবের

বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে ধনকুবেরদের সম্পদ। শুধু ২০২৪ সালেই তাদের সম্পদের মোট পরিমাণ বেড়েছে দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৭০ কোটি ডলার করে।

শুধু বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে তিন গুণ দ্রুত হারে।

সংখ্যাও বেড়েছে শতকোটিপতিদের।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে অক্সফামের। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক এসব ধনীরা কোথা থেকে এত সম্পদ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বলছে, এসব ধনী, বিশেষ করে ইউরোপের ধনীদের একটি বড় অংশ এই সম্পদ পেয়েছেন পরিবার থেকে। উত্তরাধিকার সূত্রে। আর তাদের সেই সম্পদের একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে।

সেসময় আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণের দেশগুলো থেকে শোষণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে আসে পশ্চিমা দেশগুলোর ধনীদের হতে।

আজও একইভাবে চলছে সম্পদের সেই শোষণ, বিশ্লেষণ অক্সফামের।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বে শত কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৬৫ জন। গত বছর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ গত বছর প্রতি সপ্তাহে প্রায় চারজন করে যুক্ত হয়েছেন শত কোটিপতিদের দলে।

আর গত এক বছরে শত কোটিপতিদের মোট সম্পদ ১৩ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৫ লাখ কোটি ডলার হয়েছে।

ফ্রান্সের ‘মিডিয়া মোগল’ ভিনসেন্ট বোলোরের উদাহরণ দিয়ে অক্সফাম দেখিয়েছে, তার সম্পদের বড় একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকায় তার নানার কোম্পানির আয় থেকে।

আজও শোষণের মাধ্যমেই পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনও পৃথিবীর পশ্চিম ও উত্তরের দেশে, তাদের কিছু নাগরিকদের হাতে চলে যাচ্ছে।

অক্সফাম একে আধুনিক সময়ের ‘উপনিবেশবাদ’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক উপনিবেশবাদে এ শোষণ চলে নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে।

অক্সফাম হিসেব করেছে, এই আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো উত্তরের দেশগুলোর ১ শতাংশ ধনী দক্ষিণের দেশগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় তিন কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের মোট সম্পদের ৬৯ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এই উত্তরের দেশগুলোর হাতে। বিশ্বে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের ৬৮ শতাংশই সেখানকার। বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৭ শতাংশই তাদের হাতে।

অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশের বসবাস এই দেশগুলোতে।

অক্সফাম তাদের ‘টেকার্স নট মেকার্স’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ঔপনিবেশিক আমলে ধনী দেশগুলো কীভাবে তাদের উপনিবেশ থেকে সম্পদ শোষণ করেছে, তার উদাহরণও দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। ওই সম্পদের মধ্যে ৩৩ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার অর্থ গেছে যুক্তরাজ্যের ওই ১০ শতাংশ ধনীর হাতে। এই অর্থ যদি ৫০ পাউন্ডে ভাঙানো হয়, তবে সেই নোট দিয়ে পুরো লন্ডন প্রায় চারবার ঢেকে ফেলা যাবে।

অক্সফাম হিসাব করে দেখেছে, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পুরো বিশ্বে ধনকুবেরদের ৩৬ শতাংশ সম্পদ এসেছে উত্তরাধিকারসূত্রে।

ফোর্বসের এক গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সের নিচে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের সবাই উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিনিয়োগ খাতের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজকের এক হাজারের বেশি শত কোটিপতির ৫ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আগামী দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে তাদের উত্তরাধিকারের হাতে চলে যাবে।

যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।

পৃথিবী শত কোটিপতি দেখলেও এখনও লাখ কোটিপতি পায়নি। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন একজন মানুষের সম্পদ বেড়ে লাখ কোটিপতির ঘর ছুঁয়ে ফেলবে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সে পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে।

অক্সফামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক দশকে বিশ্ব অন্তত পাঁচজন লাখো কোটি ডলারের মালিককে দেখতে পাবে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি আগামী এক দশকে একজন লাখ কোটিপতি দেখতে পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।

কীভাবে ধনকুবেরদের এই সম্পদের পাহাড় গড়া আটকে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়, সেই পরামর্শও দিয়েছে অক্সফাম।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিজ নিজ দেশ এবং বৈশ্বিকভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমাতে হবে। এ জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেন সমাজের ওপরতলার ১০ শতাংশ মানুষের আয় সমাজের নিচের তলার ৪০ শতাংশ মানুষের আয়কে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। আয়ের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হলে তিন গুণ বেশি গতিতে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

এ ছাড়া ধনীদের কাছ থেকে আরও কর আদায় করে তাদের অতিরিক্ত ধনী হওয়া আটকানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে কর দিতে হয় না, এমন স্থান এবং ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। অক্সফামের বিশ্লেষকেরা দেখেছেন, শত কোটিপতিদের অর্ধেক এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে সরাসরি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদের জন্য কর দিতে হয় না।

দক্ষিণের দেশগুলো থেকে উত্তরের দেশগুলোতে সম্পদের প্রবাহও থামাতে হবে বলে মনে করে অক্সফাম।

ছবি

খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ভারত–সমর্থিত ‘ফিতনা আল-খাওয়ারিজ’ গোষ্ঠীর ৯ সন্ত্রাসী নিহত: আইএসপিআর

মানসিকভাবে ‘অস্থির’ ও ‘অসুস্থ্য‘: ইমরান, তার দল ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাল্টাপাল্টি

ছবি

আরও দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

আরও ক্ষমতাধর আসিম মুনির, হলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রধান

ছবি

আন্তর্জাতিক তহবিল কমায় চলতি বছর শিশুমৃত্যু বাড়তে পারে ২ লাখের বেশি

ছবি

যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ শেষ, নতুন উদ্বেগ

ছবি

দনবাস থেকে ইউক্রেন বাহিনী না সরলে ওই অঞ্চল দখলের ঘোষণা

ছবি

ক্ষমতাধর পুতিন ভারত সফরে-দিল্লি কী চায়, কী হারাতে পারে

ছবি

ট্রাম্পকে ইউরোপের শত্রু মনে করে অর্ধেক ইউরোপীয়, বলছে জরিপ

ছবি

মামদানির গ্রেপ্তারের হুমকি সত্ত্বেও নিউইয়র্ক যাবেন নেতানিয়াহু

ছবি

তেল, প্রতিরক্ষা, ভূরাজনীতি: কেন ভারত সফর করছেন পুতিন

ছবি

পাকিস্তানে ২১ বছরে সর্বোচ্চ বেকারত্ব

ছবি

ইসরায়েলিদের বাধায় নিজেদের জমিতে যেতে পারেন না ফিলিস্তিনিরা

ছবি

ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ারে শ্রীলঙ্কায় অন্তত ৪১০ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ৩৩৬

ছবি

ফিলিস্তিনিদের গাজা ছাড়ার জন্য খোলা হবে রাফা ক্রসিং

ছবি

ইউক্রেন নিয়ে রুশ-মার্কিন বৈঠকে সমঝোতা হয়নি

ছবি

১৯টি দেশ থেকে অভিবাসন স্থগিত করল ট্রাম্প প্রশাসন

ছবি

এশিয়ার কিছু অংশে ঝড়-বন্যা-ভূমিধস কেন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে

ছবি

আফগানিস্তানে হত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তির জনসম্মুখে ফাঁসি কার্যকর

ছবি

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভে নামছেন ইমরান খানের নেতা-কর্মীরা

ছবি

স্মার্টফোনে সরকারি অ্যাপ প্রি-ইনস্টল বাধ্যতামূলক করছে ভারত

ছবি

ট্রাম্প কি ভেনেজুয়েলায় হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন

ছবি

ঘূর্ণিঝড় দিতওয়া: শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু বেড়ে ৩৫৫, নিখোঁজ ৩৬৬

ছবি

ভেনেজুয়েলায় ‘মাদক যুদ্ধের’ দামামা, দণ্ডিত কোকেন পাচারকারীকে ট্রাম্পের ক্ষমা

ছবি

চরম উত্তেজনার মধ্যে ট্রাম্প-মাদুরোর ফোনালাপ

ছবি

জর্জিয়ায় বিক্ষোভ দমনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ

ছবি

‘যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের ফলপ্রসূ আলোচনা, আরো কাজ বাকি’

ছবি

এশিয়াজুড়ে বন্যা-ভূমিধসের তা-ব, মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়াল

ছবি

নামেই যুদ্ধবিরতি, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০ হাজার ছাড়ালো

ছবি

‘ডেথ সেলে’ ইমরান খানের নিঃসঙ্গ বন্দিজীবন

ছবি

হোয়াইট হাউস ছাপিয়ে বিশাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বানালো উজবেকিস্তান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় বিশ্বের অভিবাসন স্থগিত, কী প্রভাব পড়বে

ছবি

আফগানদের জন্য ভিসা স্থগিত করলো যুক্তরাষ্ট্র

ভারতের অনুমতি মেলেনি, ভুটানের ট্রানশিপমেন্ট পণ্য বুড়িমারীতে আটকা

ছবি

বাইডেনকে দুষলেও সন্দেহভাজন আফগান নাগরিকের আশ্রয়-আবেদনে অনুমোদন দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন

ছবি

মাদকবাহী নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় হামলায় সব আরোহী নিহত

tab

ঔপনিবেশিক আমলের মতোই শোষণ করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন পশ্চিমের ধনীরা : অক্সফাম

গার্ডিয়ান

পশ্চিমের কয়েকজন শীর্ষ ধনকুবের

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে ধনকুবেরদের সম্পদ। শুধু ২০২৪ সালেই তাদের সম্পদের মোট পরিমাণ বেড়েছে দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৫৭০ কোটি ডলার করে।

শুধু বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতিদের সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে তিন গুণ দ্রুত হারে।

সংখ্যাও বেড়েছে শতকোটিপতিদের।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে অক্সফামের। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদের মালিক এসব ধনীরা কোথা থেকে এত সম্পদ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বলছে, এসব ধনী, বিশেষ করে ইউরোপের ধনীদের একটি বড় অংশ এই সম্পদ পেয়েছেন পরিবার থেকে। উত্তরাধিকার সূত্রে। আর তাদের সেই সম্পদের একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে।

সেসময় আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণের দেশগুলো থেকে শোষণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ চলে আসে পশ্চিমা দেশগুলোর ধনীদের হতে।

আজও একইভাবে চলছে সম্পদের সেই শোষণ, বিশ্লেষণ অক্সফামের।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে বিশ্বে শত কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৬৫ জন। গত বছর বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৬৯ জন। অর্থাৎ গত বছর প্রতি সপ্তাহে প্রায় চারজন করে যুক্ত হয়েছেন শত কোটিপতিদের দলে।

আর গত এক বছরে শত কোটিপতিদের মোট সম্পদ ১৩ লাখ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ১৫ লাখ কোটি ডলার হয়েছে।

ফ্রান্সের ‘মিডিয়া মোগল’ ভিনসেন্ট বোলোরের উদাহরণ দিয়ে অক্সফাম দেখিয়েছে, তার সম্পদের বড় একটি অংশ এসেছে ঔপনিবেশিক আমলে আফ্রিকায় তার নানার কোম্পানির আয় থেকে।

আজও শোষণের মাধ্যমেই পৃথিবীর দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো থেকে বিশাল অঙ্কের অর্থ এখনও পৃথিবীর পশ্চিম ও উত্তরের দেশে, তাদের কিছু নাগরিকদের হাতে চলে যাচ্ছে।

অক্সফাম একে আধুনিক সময়ের ‘উপনিবেশবাদ’ বলে বর্ণনা করেছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আধুনিক উপনিবেশবাদে এ শোষণ চলে নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে।

অক্সফাম হিসেব করেছে, এই আর্থিক ব্যবস্থার মাধ্যমেই ২০২৩ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মতো উত্তরের দেশগুলোর ১ শতাংশ ধনী দক্ষিণের দেশগুলো থেকে প্রতি ঘণ্টায় তিন কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বের মোট সম্পদের ৬৯ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এই উত্তরের দেশগুলোর হাতে। বিশ্বে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের ৬৮ শতাংশই সেখানকার। বিশ্বের মোট সম্পদের ৭৭ শতাংশই তাদের হাতে।

অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২১ শতাংশের বসবাস এই দেশগুলোতে।

অক্সফাম তাদের ‘টেকার্স নট মেকার্স’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনে ঔপনিবেশিক আমলে ধনী দেশগুলো কীভাবে তাদের উপনিবেশ থেকে সম্পদ শোষণ করেছে, তার উদাহরণও দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়। ওই সম্পদের মধ্যে ৩৩ লাখ ৮ হাজার কোটি ডলার অর্থ গেছে যুক্তরাজ্যের ওই ১০ শতাংশ ধনীর হাতে। এই অর্থ যদি ৫০ পাউন্ডে ভাঙানো হয়, তবে সেই নোট দিয়ে পুরো লন্ডন প্রায় চারবার ঢেকে ফেলা যাবে।

অক্সফাম হিসাব করে দেখেছে, শুধু যুক্তরাজ্য নয়, পুরো বিশ্বে ধনকুবেরদের ৩৬ শতাংশ সম্পদ এসেছে উত্তরাধিকারসূত্রে।

ফোর্বসের এক গবেষণা অনুযায়ী, ৩০ বছর বয়সের নিচে যতো শত কোটিপতি আছেন, তাদের সবাই উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিনিয়োগ খাতের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আজকের এক হাজারের বেশি শত কোটিপতির ৫ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি সম্পদ আগামী দুই থেকে তিন দশকের মধ্যে তাদের উত্তরাধিকারের হাতে চলে যাবে।

যুক্তরাজ্যের ১০ শতাংশ ধনকুবের ঔপনিবেশিক আমলে তাদের সম্পদের অর্ধেক পেয়েছেন ভারত থেকে। এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ে ব্রিটিশরা ৬৪ লাখ ৮২ হাজার কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ ভারত থেকে নিজেদের দেশে নিয়ে যায়।

পৃথিবী শত কোটিপতি দেখলেও এখনও লাখ কোটিপতি পায়নি। তবে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন একজন মানুষের সম্পদ বেড়ে লাখ কোটিপতির ঘর ছুঁয়ে ফেলবে। অক্সফামের প্রতিবেদনে সে পূর্বাভাসই দেয়া হয়েছে।

অক্সফামের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক দশকে বিশ্ব অন্তত পাঁচজন লাখো কোটি ডলারের মালিককে দেখতে পাবে। ২০২৩ সালে সংস্থাটি আগামী এক দশকে একজন লাখ কোটিপতি দেখতে পাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল।

কীভাবে ধনকুবেরদের এই সম্পদের পাহাড় গড়া আটকে ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়, সেই পরামর্শও দিয়েছে অক্সফাম।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে নিজ নিজ দেশ এবং বৈশ্বিকভাবে ধনী ও গরিবের মধ্যে আয়ের ব্যবধান কমাতে হবে। এ জন্য এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যেন সমাজের ওপরতলার ১০ শতাংশ মানুষের আয় সমাজের নিচের তলার ৪০ শতাংশ মানুষের আয়কে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। আয়ের বৈষম্য দূর করা সম্ভব হলে তিন গুণ বেশি গতিতে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

এ ছাড়া ধনীদের কাছ থেকে আরও কর আদায় করে তাদের অতিরিক্ত ধনী হওয়া আটকানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে কর দিতে হয় না, এমন স্থান এবং ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। অক্সফামের বিশ্লেষকেরা দেখেছেন, শত কোটিপতিদের অর্ধেক এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে সরাসরি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদের জন্য কর দিতে হয় না।

দক্ষিণের দেশগুলো থেকে উত্তরের দেশগুলোতে সম্পদের প্রবাহও থামাতে হবে বলে মনে করে অক্সফাম।

back to top