মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরেক দফা দায়িত্ব নিয়েছেন ডনাল্ড জন ট্রাম্প। তার দ্বিতীয় মেয়াদ ইরানের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তাদের মতে, ট্রাম্পের নতুন মেয়াদকাল ইরানের জন্য পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, এবং তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল অবকাঠামোর ওপর সামরিক হামলার আশঙ্কা নিয়ে আলাপ করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ইসরায়েলের নেতারাও।তবে পাশ্চাত্যের এই আলাপ গায়ে মাখছেন না আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়িসহ ইরানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এরমধ্যে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বেশ বড়সড় সামরিক মহড়া করেছে। দেশটির অভ্যন্তরে স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর প্রতিরক্ষার জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি ছিল এই মহড়া।
দিন বদলের হাওয়া, কোন দিকে বইছে সেই হাওয়া?
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে পারমাণবিক কর্মসূচি। এই অবস্থা চলছে গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। যদিও ইরান সরকার সবসময়ই বলে আসছে যে, তারা মানববিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। ইরান যেন পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে সেজন্য পশ্চিমারা অনেক পদক্ষেপই নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব ও সামরিক বাহিনি ভিন্ন কিছু ভাবছে।
ইরানের ভাবগতিতে দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায় মোটা দাগে। এর মধ্যে একটি ধারা চায়, পারমাণবিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপের দুয়ার খোলা রাখা হোক। এর বিপরীত ধারাটি অবশ্য আলাপ-আলোচনার ধার ধারতে চাইছে না। তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির পক্ষে কট্টর অবস্থান নিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক নেইসান রাফাতি বলছেন, সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতায় ইরানের ঘাটতি স্পষ্ট হয়েছে। আঞ্চলিক মিত্রদের অবস্থাও সঙ্গীন। এই দুই কারণে দেশটির দ্বিতীয় ধারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কথা ভাবছে।
নেইসান রাফাতির ভাষ্য হচ্ছে, ‘প্রথম ধারার অবস্থানকে যদি প্রাধান্য দেওয়াও হয়, তাহলেই যে ইরান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে যাবে- বিষয়টি তা নয়। আলোচনা শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রকেও আগ্রহী হতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নানা দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে হয়তো ইরানকে ছাড় দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বরং আরও কঠোর হতে পারে।’
ইরানবিষয়ক এই বিশ্লেষক আরও মনে করেন, সম্প্রতি সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইরান প্রতিরক্ষা কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি খুইয়েছে। আসাদের পতন এই অঞ্চলে ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষে’র ওপর গভীর আঘাত হেনেছে।
ইরানকে এখন কঠোর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় ভুগতে হচ্ছে। কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে দেশটির দুর্বল অর্থনীতি আরও বিপর্যনস্ত হবে। ইতোমধ্যে দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। মনে হচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ও আলোচনা বাড়াতে চান। ইরান জানুয়ারির শেষের দিকে ই-থ্রিÑফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইউরোপে কূটনীতিক পাঠাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন চুক্তিতে আগ্রহী
পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির আগে কয়েক বছর ধরে দর-কষাকষি চলেছিল। এখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। সেখানেই শেষ নয়। বছর পাঁচেক আগে ইরানের শীর্ষ জেনারেল ও আঞ্চলিক প্রতিরোধ অক্ষের মূল কারিগর কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশও দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র?্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো আবাস আসলানি বলেছেন, এ বছর বড় ধরনের অগ্রগতি হওয়া উচিত। সেটা হলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গতিপথ আরও স্পষ্ট হবে।
আবাস আসলানি বলেন, জেসিপিওএর বেশ কিছু ধারার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এ কারণে নতুন বোঝাপড়ার প্রয়োজন। সেজন্য আলোচনার আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষকরে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে জেসিপিওএর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার মেয়াদ শেষ হবে। এই ধারার অধীনে ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল। এই ধারার মেয়াদ ফুরালে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরপের ক্ষমতা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে চলে যাবে আবারও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি
এখনও পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেনি ইরান- সর্বশেষ তথ্যে এমনটাই জানা যায়। তবে ২০১৮ সালে জেসিপিওএ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রাম্প বের করে নিয়ে যাওয়ার এক বছর পর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা এবং সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা বাড়ানো শুরু করে। আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ইরান পারমাণবিক এই কর্মসূচি চালু রেখেছে।
ইরান গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার নতুন সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বোর্ডে পশ্চিমারা আরেকটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করলে এই পদক্ষেপ নেয় ইরান। দেশটি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। অবশ্য পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা ৯০ শতাংশের বেশি হতে হবে। আইএইএ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের কাছে একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট ফিসাইল রয়েছে।
নেইসান রাফাতির মতে, পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়ানোর কারণে ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করার প্রশ্নে ইরানের কিছু সুবিধাও রয়েছে। অবশ্য পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়ানোর কৌশলে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যা অগ্রাহ্য করা চলে না।
ইরানবিষয়ক এই বিশ্লেষক আরও মনে করেন, ‘ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, সেটা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছেছে। এতেকরে হামলা চালানোর প্রস্তুতির শুরু থেকে চূড়ান্ত পর্বÑদৃশ্যত বিলীন হয়ে পড়ছে।’
ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায়, তাহলে দেশটিকে একটি অস্ত্র নকশা তৈরি করতে হবে, টুকরো টুকরো অংশগুলো এক করে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এমন একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে স্থাপন করতে হবে। তারপর সফল পরীক্ষা চালাতে হবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের উপপ্রধান জেরেনমায়ের ভাষ্য হচ্ছে, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প যদি আগ্রাসী হয়ে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল না নেন, তাহলে এ বছরের শুরুর দিকে ইরান হয়তো পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যহারে বাড়াবে না।’
জেরেনমায়ে আরও বলেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে সামনের দিনগুলোতে কূটনৈতিক আলোচনাকে অগ্রগণ্য করে, তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কিছুটা স্তিমিত হতে পারে। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ডনাল্ড ট্রাম্প কী অবস্থান নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে আগামিতে কী হতে যাচ্ছে।
রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরেক দফা দায়িত্ব নিয়েছেন ডনাল্ড জন ট্রাম্প। তার দ্বিতীয় মেয়াদ ইরানের জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তাদের মতে, ট্রাম্পের নতুন মেয়াদকাল ইরানের জন্য পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, এবং তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল অবকাঠামোর ওপর সামরিক হামলার আশঙ্কা নিয়ে আলাপ করেছেন। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ইসরায়েলের নেতারাও।তবে পাশ্চাত্যের এই আলাপ গায়ে মাখছেন না আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেয়িসহ ইরানের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। এরমধ্যে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বেশ বড়সড় সামরিক মহড়া করেছে। দেশটির অভ্যন্তরে স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর প্রতিরক্ষার জন্য এক ধরনের প্রস্তুতি ছিল এই মহড়া।
দিন বদলের হাওয়া, কোন দিকে বইছে সেই হাওয়া?
পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের মূল নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে পারমাণবিক কর্মসূচি। এই অবস্থা চলছে গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। যদিও ইরান সরকার সবসময়ই বলে আসছে যে, তারা মানববিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। ইরান যেন পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে না পারে সেজন্য পশ্চিমারা অনেক পদক্ষেপই নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব ও সামরিক বাহিনি ভিন্ন কিছু ভাবছে।
ইরানের ভাবগতিতে দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায় মোটা দাগে। এর মধ্যে একটি ধারা চায়, পারমাণবিক কর্মসূচিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপের দুয়ার খোলা রাখা হোক। এর বিপরীত ধারাটি অবশ্য আলাপ-আলোচনার ধার ধারতে চাইছে না। তারা পারমাণবিক বোমা তৈরির পক্ষে কট্টর অবস্থান নিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক নেইসান রাফাতি বলছেন, সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতায় ইরানের ঘাটতি স্পষ্ট হয়েছে। আঞ্চলিক মিত্রদের অবস্থাও সঙ্গীন। এই দুই কারণে দেশটির দ্বিতীয় ধারা পারমাণবিক বোমা তৈরির কথা ভাবছে।
নেইসান রাফাতির ভাষ্য হচ্ছে, ‘প্রথম ধারার অবস্থানকে যদি প্রাধান্য দেওয়াও হয়, তাহলেই যে ইরান সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়ে যাবে- বিষয়টি তা নয়। আলোচনা শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রকেও আগ্রহী হতে হবে। সমস্যা হচ্ছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্রের নানা দুর্বলতা রয়েছে। যে কারণে হয়তো ইরানকে ছাড় দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বরং আরও কঠোর হতে পারে।’
ইরানবিষয়ক এই বিশ্লেষক আরও মনে করেন, সম্প্রতি সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতনের পর ইরান প্রতিরক্ষা কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি খুইয়েছে। আসাদের পতন এই অঞ্চলে ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষে’র ওপর গভীর আঘাত হেনেছে।
ইরানকে এখন কঠোর নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় ভুগতে হচ্ছে। কোনো নিষেধাজ্ঞা এলে দেশটির দুর্বল অর্থনীতি আরও বিপর্যনস্ত হবে। ইতোমধ্যে দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। মনে হচ্ছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ও আলোচনা বাড়াতে চান। ইরান জানুয়ারির শেষের দিকে ই-থ্রিÑফ্রান্স, জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য ইউরোপে কূটনীতিক পাঠাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন চুক্তিতে আগ্রহী
পশ্চিমা বিশ্বের সাথে ২০১৫ সালে ইরানের পারমাণবিক চুক্তির আগে কয়েক বছর ধরে দর-কষাকষি চলেছিল। এখন পরিস্থিতি একেবারেই বদলে গেছে।
ডনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। সেখানেই শেষ নয়। বছর পাঁচেক আগে ইরানের শীর্ষ জেনারেল ও আঞ্চলিক প্রতিরোধ অক্ষের মূল কারিগর কাশেম সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশও দিয়েছিলেন ট্রাম্প।
সেন্টার ফর মিডল ইস্ট স্ট্র?্যাটেজিক স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো আবাস আসলানি বলেছেন, এ বছর বড় ধরনের অগ্রগতি হওয়া উচিত। সেটা হলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির গতিপথ আরও স্পষ্ট হবে।
আবাস আসলানি বলেন, জেসিপিওএর বেশ কিছু ধারার মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এ কারণে নতুন বোঝাপড়ার প্রয়োজন। সেজন্য আলোচনার আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষকরে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে জেসিপিওএর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার মেয়াদ শেষ হবে। এই ধারার অধীনে ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছিল। এই ধারার মেয়াদ ফুরালে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরপের ক্ষমতা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে চলে যাবে আবারও।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি
এখনও পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেনি ইরান- সর্বশেষ তথ্যে এমনটাই জানা যায়। তবে ২০১৮ সালে জেসিপিওএ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রাম্প বের করে নিয়ে যাওয়ার এক বছর পর ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা এবং সেন্ট্রিফিউজের সংখ্যা বাড়ানো শুরু করে। আন্তর্জাতিক নিন্দা সত্ত্বেও ইরান পারমাণবিক এই কর্মসূচি চালু রেখেছে।
ইরান গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার নতুন সেন্ট্রিফিউজ স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) বোর্ডে পশ্চিমারা আরেকটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করলে এই পদক্ষেপ নেয় ইরান। দেশটি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। অবশ্য পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির মাত্রা ৯০ শতাংশের বেশি হতে হবে। আইএইএ-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের কাছে একাধিক পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট ফিসাইল রয়েছে।
নেইসান রাফাতির মতে, পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়ানোর কারণে ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আলোচনা করার প্রশ্নে ইরানের কিছু সুবিধাও রয়েছে। অবশ্য পারমাণবিক কার্যক্রম বাড়ানোর কৌশলে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে, যা অগ্রাহ্য করা চলে না।
ইরানবিষয়ক এই বিশ্লেষক আরও মনে করেন, ‘ইরান যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, সেটা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছেছে। এতেকরে হামলা চালানোর প্রস্তুতির শুরু থেকে চূড়ান্ত পর্বÑদৃশ্যত বিলীন হয়ে পড়ছে।’
ইরান যদি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায়, তাহলে দেশটিকে একটি অস্ত্র নকশা তৈরি করতে হবে, টুকরো টুকরো অংশগুলো এক করে পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে পারে এমন একটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রে স্থাপন করতে হবে। তারপর সফল পরীক্ষা চালাতে হবে।
ইউরোপীয় কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা প্রোগ্রামের উপপ্রধান জেরেনমায়ের ভাষ্য হচ্ছে, ‘ডনাল্ড ট্রাম্প যদি আগ্রাসী হয়ে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের কৌশল না নেন, তাহলে এ বছরের শুরুর দিকে ইরান হয়তো পারমাণবিক কর্মসূচি উল্লেখযোগ্যহারে বাড়াবে না।’
জেরেনমায়ে আরও বলেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে সামনের দিনগুলোতে কূটনৈতিক আলোচনাকে অগ্রগণ্য করে, তাহলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কিছুটা স্তিমিত হতে পারে। যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ডনাল্ড ট্রাম্প কী অবস্থান নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে আগামিতে কী হতে যাচ্ছে।