গাজায় আগ্রাসন
নেতজারিম করিডর থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর বেসামরিক লোকজন গাজার উত্তরে যাচ্ছেন - রয়টার্স
যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি মেনে ফিলিস্তিনের গাজার নেতজারিম করিডর ছেড়ে গেছেন ইসরায়েলি সেনারা। রোববার সকালে তারা গুরুত্বপূর্ণ এই করিডর ছেড়ে যান। আগ্রাসন চালানোর সময় উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে ভাগ করে মাঝবরাবর ইসরায়েল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুই কিলোমিটার প্রশস্ত এ করিডর তৈরি করেছিল ইসরায়েল।এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অভিযান আরও বিস্তৃত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পঞ্চম ধাপের বন্দিবিনিময় সম্পন্ন করে শনিবার। এরপর শর্ত অনুযায়ী সোমবার সকালে নেতজারিম করিডর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল। তারা বর্তমানে গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তের বাফার জোনে অবস্থান নিয়েছেন। সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ওপর থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, নেতজারিম করিডর ও এর আশপাশের বিস্তৃত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। এমনকি সেখানকার কৃষিজমিগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর গাজার উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে বেসামরিক লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এখন সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তর গাজায় যানবাহন চলাচল ও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ বাড়বে। গাজাকে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে নেতজারিম করিডর তৈরি করেছিল ইসরায়েল। ওই এলাকায় অনেক সামরিক স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, এটি যুদ্ধের আরেকটি লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েলের ব্যর্থতারই প্রমাণ।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, পশ্চিম তীরের জেনিনের পর এবার নুর শামস এলাকায়ও সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এর আগে ২১ জানুয়ারি জেনিনে ‘আয়রন ওয়াল’ নামে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, নুর শামস শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন ২৩ বছর বয়সী সোনদোস জামাল মুহাম্মদ শালাবি। এ সময় তাঁর গর্ভের আট মাসের সন্তানও নিহত হয়। গুরুতর আহত হন শালাবির স্বামী। নিহত অপরজন হলেন ২১ বছর বয়সী রাহাফ ফুয়াদ।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ভূখ-ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। সোমবার এক বিবৃতিতে তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় জাতিগত নিধনসহ ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর ইসরায়েলি দখলদারদের চালানো অপরাধ থেকে নজর সরাতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলো ইসরায়েলি নেতার (নেতানিয়াহু) বক্তব্যের নিন্দা জানানোয় এবং বিষয়টির বিরোধিতা ও পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করায় বিবৃতিতে সাধুবাদ জানিয়েছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।এর আগে ইসরায়েলি নেতাদের দেওয়া বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে মিসর। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, কাতার ও কুয়েতও সৌদি আরবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছে।এদিকে ফিলিস্তিনি ভূখ- ঘিরে ‘সর্বশেষ মারাত্মক ঘটনাপ্রবাহ’ নিয়ে আলোচনা করতে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরব দেশগুলোর জরুরি সম্মেলন ডেকেছে মিসর। সোমবার মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশ দুটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ‘জরুরি আরব সম্মেলন’ আহ্বান করল মিসর।
টানা ১৫ মাস যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এই যুদ্ধবিরতিটি তিনটি ধাপে করা হয়েছে। যেটির প্রথম ধাপের মেয়াদ ৪২ দিন। চুক্তির শর্তে বলা আছে, প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে এবং এই ধাপ শুরুর মাধ্যমে গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে।
গাজায় আগ্রাসন
নেতজারিম করিডর থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর বেসামরিক লোকজন গাজার উত্তরে যাচ্ছেন - রয়টার্স
সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি মেনে ফিলিস্তিনের গাজার নেতজারিম করিডর ছেড়ে গেছেন ইসরায়েলি সেনারা। রোববার সকালে তারা গুরুত্বপূর্ণ এই করিডর ছেড়ে যান। আগ্রাসন চালানোর সময় উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে ভাগ করে মাঝবরাবর ইসরায়েল থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুই কিলোমিটার প্রশস্ত এ করিডর তৈরি করেছিল ইসরায়েল।এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অভিযান আরও বিস্তৃত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস পঞ্চম ধাপের বন্দিবিনিময় সম্পন্ন করে শনিবার। এরপর শর্ত অনুযায়ী সোমবার সকালে নেতজারিম করিডর থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় ইসরায়েল। তারা বর্তমানে গাজা ও ইসরায়েল সীমান্তের বাফার জোনে অবস্থান নিয়েছেন। সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ওপর থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, নেতজারিম করিডর ও এর আশপাশের বিস্তৃত এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ থেকে কোনো কিছুই রেহাই পায়নি। এমনকি সেখানকার কৃষিজমিগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা সরে যাওয়ার পর গাজার উত্তর ও দক্ষিণাংশের মধ্যে বেসামরিক লোকজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এখন সাধারণ মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উত্তর গাজায় যানবাহন চলাচল ও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ বাড়বে। গাজাকে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে নেতজারিম করিডর তৈরি করেছিল ইসরায়েল। ওই এলাকায় অনেক সামরিক স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হামাস বলেছে, এটি যুদ্ধের আরেকটি লক্ষ্য অর্জনে ইসরায়েলের ব্যর্থতারই প্রমাণ।
এদিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, পশ্চিম তীরের জেনিনের পর এবার নুর শামস এলাকায়ও সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। এর আগে ২১ জানুয়ারি জেনিনে ‘আয়রন ওয়াল’ নামে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী।ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানিয়েছে, নুর শামস শরণার্থীশিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন ২৩ বছর বয়সী সোনদোস জামাল মুহাম্মদ শালাবি। এ সময় তাঁর গর্ভের আট মাসের সন্তানও নিহত হয়। গুরুতর আহত হন শালাবির স্বামী। নিহত অপরজন হলেন ২১ বছর বয়সী রাহাফ ফুয়াদ।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের ভূখ-ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটি। সোমবার এক বিবৃতিতে তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতিতে বলা হয়, গাজায় জাতিগত নিধনসহ ফিলিস্তিনি ভাইদের ওপর ইসরায়েলি দখলদারদের চালানো অপরাধ থেকে নজর সরাতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলো ইসরায়েলি নেতার (নেতানিয়াহু) বক্তব্যের নিন্দা জানানোয় এবং বিষয়টির বিরোধিতা ও পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করায় বিবৃতিতে সাধুবাদ জানিয়েছে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।এর আগে ইসরায়েলি নেতাদের দেওয়া বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ অভিহিত করে নিন্দা জানিয়েছে মিসর। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, কাতার ও কুয়েতও সৌদি আরবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্যকে ‘উসকানিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছে।এদিকে ফিলিস্তিনি ভূখ- ঘিরে ‘সর্বশেষ মারাত্মক ঘটনাপ্রবাহ’ নিয়ে আলোচনা করতে ২৭ ফেব্রুয়ারি আরব দেশগুলোর জরুরি সম্মেলন ডেকেছে মিসর। সোমবার মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশ দুটি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ‘জরুরি আরব সম্মেলন’ আহ্বান করল মিসর।
টানা ১৫ মাস যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এই যুদ্ধবিরতিটি তিনটি ধাপে করা হয়েছে। যেটির প্রথম ধাপের মেয়াদ ৪২ দিন। চুক্তির শর্তে বলা আছে, প্রথম ধাপের ১৬তম দিনে দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে এবং এই ধাপ শুরুর মাধ্যমে গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ হবে।