ইসরায়েলি আগ্রাসন
বাড়ি, আশ্রয়শিবির কিংবা ইসরায়েল ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চল কোথাও যেন নিরাপত্তা মিলছে না গাজাবাসীর। গতকাল বুধবার রাতের অন্ধকারে নুসেইরাহ শরণার্থী শিবির ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত চারজন নিহতের সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছেন দু’জন পুরুষ এবং গুরুতর আহত হয়েছেন সাতজন। এ ছাড়া আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রাণ গেছে এক নারী ও এক শিশুর। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার ৪৫টি স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছে আইডিএফ। নিজেদের এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজার কোথাও এখন নিরাপত্তা নেই। আছে শুধুই মৃত্যু আর ধ্বংস।
এদিকে গাজার পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া অঞ্চলে একাধিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৮০ জন। এসব হামলায় অন্তত ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এলাকাটি। জীবিত বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া নারী ও শিশুদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে উদ্ধারকাজ চালানোর সময় এলাকাটিতে উড়ছিল ইসরায়েলি ড্রোন। উদ্ধারকারীরা জানান, ভারী বোমায় মৃতদেহগুলো এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছে, সেগুলো শনাক্ত করাও কষ্টকর। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৬ জনে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭শর বেশি।
গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চালানো ব্যাপক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলমান হত্যাযজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য কলঙ্ক।’ এদিকে গাজাকে ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হিসেবে সম্বোধন করে ইসরায়েলের অবরোধ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, ‘গাজা এখন একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে এবং সেখানকার বেসামরিক জনগণ মৃত্যুর গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছে।’ গুতেরেসের এই মন্তব্যের আগে জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থার প্রধানরা বিশ্বনেতাদের কাছে গাজার অধিবাসীদের জন্য জরুরি সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহের কোনো সংকট নেই এবং গুতেরেস ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার’ করছেন।
অন্যদিকে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হোসাম বদরান মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ চিরকাল চলতে পারে না। তাই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো অত্যাবশ্যক।’ গাজায় ইসরায়েল খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যাপকভাবে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশুরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টির ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক হুমকির কারণে ২১টি পুষ্টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৩৫০ গুরুতর অপুষ্ট শিশু।
খান ইউনিস শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আখরাস (৬৪) এখন প্লাস্টিকের শিটে তৈরি জনাকীর্ণ একটি শিবিরে বসবাস করছেন। সেখানে একটি হাঁড়িতে মটরশুঁটি সিদ্ধ করছিলেন তিনি। অবশিষ্ট খাবার যা কিছু ছিল সবই এখন ওই হাঁড়িতে। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারে ১৩ জন, এক হাঁড়ি মটরশুঁটিতে আমাদের কতোটা হবে? “আমরা ঘুমাতে গেছি ও জেগেছি যুদ্ধ ও বিমান হামলার মধ্যে, এরমধ্যেও বেঁচে আছি। কিন্তু আনাহারে বাঁচতে পারবো না, আমরাও পারবো না আমাদের শিশুগুলোও পারবে না।”
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের উত্তরে একটি উন্মুক্ত জরুরি রান্নাঘরের সামনে গরম ভাতের জন্য কয়েকশ ফিলিস্তিনি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট শিশুরা লাইনের সামনে জড়ো হয়ে তাদের পাত্রগুলো দোলাচ্ছে, বাড়ি নেওয়ার জন্য কিছু দিতে বলছে তারা। ত্রাণ সংস্থাগুলো এসব জরুরি খাবার বিতরণ করছে। তারা জানিয়েছে, আরও খাবার আনতে না পারলে কয়েকদিনের মধ্যেই এ উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী গাজা ভূখণ্ডের ২৫টি বেকারিকে রুটি সরবরাহ করতে ব্যবহার করতো। এই সবগুলো বেকারিই এখন বন্ধ। রেশন হ্রাস করতে এই সংস্থাটিও শিগগিরই খাবারের পার্সেল বিতরণ স্থগিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের ত্রাণের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, “সমস্ত প্রাথমিক সরবরাহ শেষ হয়ে আসছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা ভূখণ্ডে অবরোধ আরোপ করার পর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পণ্যের দাম দ্রুতগতিতে বেড়েছে। “এর অর্থ বাচ্চারা, শিশুরা ক্ষুধা নিয়েই ঘুমাতে যাচ্ছে।
মৌলিক সরবরাহগুলো ছাড়া দিন কাটিয়ে গাজা ইঞ্চি ইঞ্চি করে অনেক অনেক গভীর ক্ষুধার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”
ইসরায়েলি আগ্রাসন
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
বাড়ি, আশ্রয়শিবির কিংবা ইসরায়েল ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চল কোথাও যেন নিরাপত্তা মিলছে না গাজাবাসীর। গতকাল বুধবার রাতের অন্ধকারে নুসেইরাহ শরণার্থী শিবির ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষিত আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত চারজন নিহতের সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
এর মধ্যে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে নিহত হয়েছেন দু’জন পুরুষ এবং গুরুতর আহত হয়েছেন সাতজন। এ ছাড়া আল-মাওয়াসি আশ্রয়কেন্দ্রে এক ব্যক্তির সঙ্গে প্রাণ গেছে এক নারী ও এক শিশুর। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার ৪৫টি স্থাপনায় হামলার কথা স্বীকার করেছে আইডিএফ। নিজেদের এক প্রতিবেদনে আলজাজিরা জানিয়েছে, গাজার কোথাও এখন নিরাপত্তা নেই। আছে শুধুই মৃত্যু আর ধ্বংস।
এদিকে গাজার পূর্বাঞ্চলের শুজাইয়া অঞ্চলে একাধিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন অন্তত ৫৫ জন। এ ছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৮০ জন। এসব হামলায় অন্তত ১০টি বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এলাকাটি। জীবিত বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া নারী ও শিশুদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে উদ্ধারকাজ চালানোর সময় এলাকাটিতে উড়ছিল ইসরায়েলি ড্রোন। উদ্ধারকারীরা জানান, ভারী বোমায় মৃতদেহগুলো এমনভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছে, সেগুলো শনাক্ত করাও কষ্টকর। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ৮৪৬ জনে। তবে গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৬১ হাজার ৭শর বেশি।
গাজা শহরের শুজাইয়া এলাকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চালানো ব্যাপক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চলমান হত্যাযজ্ঞ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য কলঙ্ক।’ এদিকে গাজাকে ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হিসেবে সম্বোধন করে ইসরায়েলের অবরোধ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, ‘গাজা এখন একটি মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে এবং সেখানকার বেসামরিক জনগণ মৃত্যুর গোলক ধাঁধায় আটকে পড়েছে।’ গুতেরেসের এই মন্তব্যের আগে জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থার প্রধানরা বিশ্বনেতাদের কাছে গাজার অধিবাসীদের জন্য জরুরি সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, গাজায় খাদ্য সরবরাহের কোনো সংকট নেই এবং গুতেরেস ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার’ করছেন।
অন্যদিকে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য হোসাম বদরান মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘এই যুদ্ধ চিরকাল চলতে পারে না। তাই যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো অত্যাবশ্যক।’ গাজায় ইসরায়েল খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যাপকভাবে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে শিশুরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টির ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক হুমকির কারণে ২১টি পুষ্টি কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ৩৫০ গুরুতর অপুষ্ট শিশু।
খান ইউনিস শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আখরাস (৬৪) এখন প্লাস্টিকের শিটে তৈরি জনাকীর্ণ একটি শিবিরে বসবাস করছেন। সেখানে একটি হাঁড়িতে মটরশুঁটি সিদ্ধ করছিলেন তিনি। অবশিষ্ট খাবার যা কিছু ছিল সবই এখন ওই হাঁড়িতে। তিনি বলেন, “আমাদের পরিবারে ১৩ জন, এক হাঁড়ি মটরশুঁটিতে আমাদের কতোটা হবে? “আমরা ঘুমাতে গেছি ও জেগেছি যুদ্ধ ও বিমান হামলার মধ্যে, এরমধ্যেও বেঁচে আছি। কিন্তু আনাহারে বাঁচতে পারবো না, আমরাও পারবো না আমাদের শিশুগুলোও পারবে না।”
নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের উত্তরে একটি উন্মুক্ত জরুরি রান্নাঘরের সামনে গরম ভাতের জন্য কয়েকশ ফিলিস্তিনি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট শিশুরা লাইনের সামনে জড়ো হয়ে তাদের পাত্রগুলো দোলাচ্ছে, বাড়ি নেওয়ার জন্য কিছু দিতে বলছে তারা। ত্রাণ সংস্থাগুলো এসব জরুরি খাবার বিতরণ করছে। তারা জানিয়েছে, আরও খাবার আনতে না পারলে কয়েকদিনের মধ্যেই এ উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী গাজা ভূখণ্ডের ২৫টি বেকারিকে রুটি সরবরাহ করতে ব্যবহার করতো। এই সবগুলো বেকারিই এখন বন্ধ। রেশন হ্রাস করতে এই সংস্থাটিও শিগগিরই খাবারের পার্সেল বিতরণ স্থগিত করতে হবে।
ফিলিস্তিনিদের ত্রাণের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, “সমস্ত প্রাথমিক সরবরাহ শেষ হয়ে আসছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজা ভূখণ্ডে অবরোধ আরোপ করার পর থেকে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পণ্যের দাম দ্রুতগতিতে বেড়েছে। “এর অর্থ বাচ্চারা, শিশুরা ক্ষুধা নিয়েই ঘুমাতে যাচ্ছে।
মৌলিক সরবরাহগুলো ছাড়া দিন কাটিয়ে গাজা ইঞ্চি ইঞ্চি করে অনেক অনেক গভীর ক্ষুধার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”