চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখন প্রায় পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিয়েছে -এএফপি
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখন প্রায় পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। সব দেশের ওপর পালটা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেও চীনের পণ্যে উলটো শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় সব চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করেছে চীন। এ ছাড়া অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার ওয়েবসাইট অ্যামাজনে নিজেদের পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন চীনের ব্যবসায়ীরা।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য : দুই এই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে গত বছর, সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার (৫৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য বাণিজ্য হয়েছে। যদিও চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে তার তুলনায়, চীন থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয়েছে ৪৪০ বিলিয়ন ডলার (৪৪ হাজার কোটি ডলার) মূল্যের বাণিজ্য পণ্য আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করেছে ১৪৫ বিলিয়ন ডলার (১৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য। এর ফলে ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৯৫ বিলিয়ন ডলার (২৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার)। এই ঘাটতি বেশ উল্লেখযোগ্য এবং এর পরিমাণ কিন্তু মার্কিন অর্থনীতির প্রায় এক শতাংশের সমান।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি : যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে গত বছর যে সমস্ত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় অংশ ছিল সয়াবিন। চীনের আনুমানিক ৪৪০ মিলিয়ন (৪৪ কোটি) শূকরকে খাওয়ানোর জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ওই সয়াবিন। এ ছাড়া, চীনে ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে চীনে গাড়ি, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, ভ্যাকসিন, বিউটি অ্যান্ড স্কিনকেয়ারের পণ্য, তুলা, ভুট্টা, প্লাস্টিকের পণ্য রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিক্স আইটেম, কম্পিউটার এবং খেলনা রপ্তানি করা হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ ব্যাটারিও রপ্তানি করা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওই ব্যাটারি। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট, পোশাক রপ্তানি করেছে।
প্রসঙ্গত, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের বৃহত্তম অংশ হলো স্মার্টফোন। এর পরিমাণ মোট আমদানির নয় শতাংশ। এই সমস্ত স্মার্টফোনের একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের জন্য চীনে তৈরি করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংয়ের ওপর শুল্ক আরোপ করার কারণে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া এই সমস্ত পণ্য মার্কিন নাগরিকদের জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে চলেছে।
এখন চীন থেকে আসা সমস্ত পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৪৫ শতাংশের বেশি করায় দামে তীব্র প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, চীনের ‘প্রতিশোধমূলক শুল্কনীতির’ কারণে চীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এর ফলস্বরূপ মার্কিন উপভোক্তাদের মতো চীনা ভোক্তারাও একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে শুল্কের বাইরেও এই দুই দেশের বাণিজ্যের মাধ্যমে একে অপরের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে এবং তার জন্য অন্যান্য উপায় রয়েছে বৈকি।
শিল্পের নিরিখে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাতু পরিশোধনের ক্ষেত্রে চীনের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই তালিকায় তামা এবং লিথিয়াম থেকে শুরু করে বিরল উপাদান রয়েছে। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বেইজিং। জার্মেনিয়াম এবং গ্যালিয়াম আমদানির ক্ষেত্রে এই জাতীয় বাধা তৈরির মতো পদক্ষেপ অবশ্য ওই দেশকে আগেও নিতে দেখা গিয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্যবহৃত রাডার এবং থার্মাল ইমেজিংয়ের জন্য জার্মেনিয়াম এবং গ্যালিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চীনের ওপর প্রযুক্তিগত বাধা আরও কঠোর আকার ধারণ করতে পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে এই জাতীয় প্রযুক্তিগত বাধা আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে চীনের পক্ষে মার্কিন দেশ থেকে উন্নত মাইক্রোচিপ আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন) জন্য এই জাতীয় অত্যাধুনিক মাইক্রোচিপ অত্যাবশ্যক। কারণ এটা এখনও পর্যন্ত তারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন কম্বোডিয়া, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশগুলো যদি মার্কিন দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রাখতে চায়, তাহলে তাদের চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক না রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখন প্রায় পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিয়েছে -এএফপি
শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা এখন প্রায় পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। সব দেশের ওপর পালটা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেও চীনের পণ্যে উলটো শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় সব চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করেছে চীন। এ ছাড়া অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার ওয়েবসাইট অ্যামাজনে নিজেদের পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন চীনের ব্যবসায়ীরা।
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য : দুই এই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে গত বছর, সব মিলিয়ে প্রায় ৫৮৫ বিলিয়ন ডলার (৫৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য বাণিজ্য হয়েছে। যদিও চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে তার তুলনায়, চীন থেকে অনেক বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হিসাব অনুযায়ী, গত বছর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হয়েছে ৪৪০ বিলিয়ন ডলার (৪৪ হাজার কোটি ডলার) মূল্যের বাণিজ্য পণ্য আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীন আমদানি করেছে ১৪৫ বিলিয়ন ডলার (১৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার) মূল্যের পণ্য। এর ফলে ২০২৪ সালে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২৯৫ বিলিয়ন ডলার (২৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার)। এই ঘাটতি বেশ উল্লেখযোগ্য এবং এর পরিমাণ কিন্তু মার্কিন অর্থনীতির প্রায় এক শতাংশের সমান।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি : যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে গত বছর যে সমস্ত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার সবচেয়ে বড় অংশ ছিল সয়াবিন। চীনের আনুমানিক ৪৪০ মিলিয়ন (৪৪ কোটি) শূকরকে খাওয়ানোর জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ওই সয়াবিন। এ ছাড়া, চীনে ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে চীনে গাড়ি, পেট্রোলিয়াম গ্যাস, ভ্যাকসিন, বিউটি অ্যান্ড স্কিনকেয়ারের পণ্য, তুলা, ভুট্টা, প্লাস্টিকের পণ্য রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, চীন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পরিমাণে ইলেকট্রনিক্স আইটেম, কম্পিউটার এবং খেলনা রপ্তানি করা হয়েছিল। বিপুল পরিমাণ ব্যাটারিও রপ্তানি করা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ওই ব্যাটারি। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্য, ফার্নিচার, মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট, পোশাক রপ্তানি করেছে।
প্রসঙ্গত, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের বৃহত্তম অংশ হলো স্মার্টফোন। এর পরিমাণ মোট আমদানির নয় শতাংশ। এই সমস্ত স্মার্টফোনের একটা বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের জন্য চীনে তৈরি করা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংয়ের ওপর শুল্ক আরোপ করার কারণে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া এই সমস্ত পণ্য মার্কিন নাগরিকদের জন্য যথেষ্ট ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে চলেছে।
এখন চীন থেকে আসা সমস্ত পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ১৪৫ শতাংশের বেশি করায় দামে তীব্র প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, চীনের ‘প্রতিশোধমূলক শুল্কনীতির’ কারণে চীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এর ফলস্বরূপ মার্কিন উপভোক্তাদের মতো চীনা ভোক্তারাও একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন। তবে শুল্কের বাইরেও এই দুই দেশের বাণিজ্যের মাধ্যমে একে অপরের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে এবং তার জন্য অন্যান্য উপায় রয়েছে বৈকি।
শিল্পের নিরিখে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাতু পরিশোধনের ক্ষেত্রে চীনের কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। এই তালিকায় তামা এবং লিথিয়াম থেকে শুরু করে বিরল উপাদান রয়েছে। এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বেইজিং। জার্মেনিয়াম এবং গ্যালিয়াম আমদানির ক্ষেত্রে এই জাতীয় বাধা তৈরির মতো পদক্ষেপ অবশ্য ওই দেশকে আগেও নিতে দেখা গিয়েছে।
মার্কিন সামরিক বাহিনী ব্যবহৃত রাডার এবং থার্মাল ইমেজিংয়ের জন্য জার্মেনিয়াম এবং গ্যালিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবার যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে চীনের ওপর প্রযুক্তিগত বাধা আরও কঠোর আকার ধারণ করতে পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে এই জাতীয় প্রযুক্তিগত বাধা আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে চীনের পক্ষে মার্কিন দেশ থেকে উন্নত মাইক্রোচিপ আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এআই অ্যাপ্লিকেশনগুলোর (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন) জন্য এই জাতীয় অত্যাধুনিক মাইক্রোচিপ অত্যাবশ্যক। কারণ এটা এখনও পর্যন্ত তারা নিজেরা উৎপাদন করতে পারে না।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন কম্বোডিয়া, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশগুলো যদি মার্কিন দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রাখতে চায়, তাহলে তাদের চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক না রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।