সতের বছর আগে মুম্বাইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার সন্দেহভাজন তাহাউর রানাকে ভারতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তান্তরের পর তাকে জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর ১৮ দিনের হেফাজতে রাখা হয়েছে কড়া নজরদারিতে।
গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, আত্মহত্যা করতে পারেন রানা। সে কারণে ‘সুইসাইড ওয়াচ’-এ রাখা হয়েছে তাকে। যেখানে সেলটির প্রতিটি কোণ নজরদারিতে রাখতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
একইসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা সেখানে একজন নিরাপত্তা রক্ষী তার পাশে থাকছেন সারাক্ষণ। এনআইএ সদর দপ্তরের নিচতলার একটি ১৪ ফুট বাই ১৪ ফুটের নির্জন সেলে রানাকে রাখা হয়েছে। সেখানে বহুমাত্রিক ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
শুধুমাত্র ১২ জন নির্ধারিত এনআইএ কর্মকর্তারই সেখানে প্রবেশাধিকার আছে। খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবাসহ সব প্রয়োজনীয় জিনিস সেই সেলেই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আত্মহত্যা ঠেকাতে রানাকে শুধু নরম টিপযুক্ত একটি কলম ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীর সঙ্গে রানার দেখা করার সময়েও উপস্থিত থাকছেন এনআইএ কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত দিল্লি পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হয়েছে এবং পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সব মিলিয়ে বলা যায় ‘তীক্ষ্ণ’ দৃষ্টি রাখা হয়েছে রানার দিকে। মুম্বাই হামলার এই সন্দেহভাজনের কাছ থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই তার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সামান্য ঝুঁকিও নিচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক এবং শিকাগোর ব্যবসায়ী তাহাউর রানা বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছান। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিদের হামলায় রানা মদদ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। প্রায় দেড় দশক ধরে এই অপরাধীকে হাতে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে ভারত।
২০১৩ সালে রানাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। তাকে দিল্লির হেফাজতে দিতে মার্কিন প্রশাসন আদালতে আবেদন করেছিল। গত বছরের অগাস্টে ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালত জানিয়ে দেয় রানা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণযোগ্য।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় রানাকে। পরে বিশেষ এনআইএ আদালতের বিচারক চন্দর জিত সিং তাকে ১৮ দিনের জন্য এনআইএ হেফাজতে পাঠান।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত রানাকে মুম্বাই হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তার দায়ে ২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
স্বাস্থ্যগত কারণে ২০২০ সালে রানা কারাগার থেকে ছাড়া পান। ভারত প্রত্যর্পণের অনুরোধ করলে তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৬৬ জনের প্রাণ গিয়েছিল। হামলার জন্য লস্কর-ই তৈয়বা ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করে আসছে ভারত। রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার বাল্যবন্ধু ডেভিড কোলম্যান হ্যাডলি লস্কর-ই তৈয়বাকে হামলায় সহায়তা করেছিলেন।
পাকিস্তানে বেড়ে ওঠা রানা সেনাবাহিনীর মেডিকেল কর্পে যোগ দেওয়ার আগে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার চিকিৎসক স্ত্রী দুজনই ২০০১ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান। এরপর তারা শিকাগোতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে রানা অভিবাসন ও ভ্রমণ কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তায় রানা বন্ধু হ্যাডলির সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশেই লস্কর-ই তৈয়বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় আছে।
এনআইএর কর্মকর্তারা আশা করছেন, রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে কেবল ২৬/১১ হামলার নয়, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে।
শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
সতের বছর আগে মুম্বাইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার সন্দেহভাজন তাহাউর রানাকে ভারতের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তান্তরের পর তাকে জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএর ১৮ দিনের হেফাজতে রাখা হয়েছে কড়া নজরদারিতে।
গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, আত্মহত্যা করতে পারেন রানা। সে কারণে ‘সুইসাইড ওয়াচ’-এ রাখা হয়েছে তাকে। যেখানে সেলটির প্রতিটি কোণ নজরদারিতে রাখতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
একইসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা সেখানে একজন নিরাপত্তা রক্ষী তার পাশে থাকছেন সারাক্ষণ। এনআইএ সদর দপ্তরের নিচতলার একটি ১৪ ফুট বাই ১৪ ফুটের নির্জন সেলে রানাকে রাখা হয়েছে। সেখানে বহুমাত্রিক ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
শুধুমাত্র ১২ জন নির্ধারিত এনআইএ কর্মকর্তারই সেখানে প্রবেশাধিকার আছে। খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবাসহ সব প্রয়োজনীয় জিনিস সেই সেলেই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। আত্মহত্যা ঠেকাতে রানাকে শুধু নরম টিপযুক্ত একটি কলম ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবীর সঙ্গে রানার দেখা করার সময়েও উপস্থিত থাকছেন এনআইএ কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত দিল্লি পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েন হয়েছে এবং পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
সব মিলিয়ে বলা যায় ‘তীক্ষ্ণ’ দৃষ্টি রাখা হয়েছে রানার দিকে। মুম্বাই হামলার এই সন্দেহভাজনের কাছ থেকে নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই তার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সামান্য ঝুঁকিও নিচ্ছেন না গোয়েন্দারা।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক এবং শিকাগোর ব্যবসায়ী তাহাউর রানা বৃহস্পতিবার দিল্লি পৌঁছান। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিদের হামলায় রানা মদদ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। প্রায় দেড় দশক ধরে এই অপরাধীকে হাতে পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে ভারত।
২০১৩ সালে রানাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। তাকে দিল্লির হেফাজতে দিতে মার্কিন প্রশাসন আদালতে আবেদন করেছিল। গত বছরের অগাস্টে ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালত জানিয়ে দেয় রানা ভারতের কাছে প্রত্যর্পণযোগ্য।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রানাকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে সব আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয় রানাকে। পরে বিশেষ এনআইএ আদালতের বিচারক চন্দর জিত সিং তাকে ১৮ দিনের জন্য এনআইএ হেফাজতে পাঠান।
২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত রানাকে মুম্বাই হামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিলেও জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তার দায়ে ২০১৩ সালে তাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
স্বাস্থ্যগত কারণে ২০২০ সালে রানা কারাগার থেকে ছাড়া পান। ভারত প্রত্যর্পণের অনুরোধ করলে তাকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০৮ সালের নভেম্বরে মুম্বাইয়ে ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৬৬ জনের প্রাণ গিয়েছিল। হামলার জন্য লস্কর-ই তৈয়বা ও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করে আসছে ভারত। রানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার বাল্যবন্ধু ডেভিড কোলম্যান হ্যাডলি লস্কর-ই তৈয়বাকে হামলায় সহায়তা করেছিলেন।
পাকিস্তানে বেড়ে ওঠা রানা সেনাবাহিনীর মেডিকেল কর্পে যোগ দেওয়ার আগে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা করেন। তিনি ও তার চিকিৎসক স্ত্রী দুজনই ২০০১ সালে কানাডার নাগরিকত্ব পান। এরপর তারা শিকাগোতে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে রানা অভিবাসন ও ভ্রমণ কোম্পানিসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বাকে সহায়তায় রানা বন্ধু হ্যাডলির সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশেই লস্কর-ই তৈয়বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকায় আছে।
এনআইএর কর্মকর্তারা আশা করছেন, রানাকে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়ে কেবল ২৬/১১ হামলার নয়, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে।