alt

গাজায় এক মাসে ৫ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ছয় সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো মানবিক সহায়তাসামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল -এএফপি

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গত ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দেয় ইসরায়েল। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ গাজাবাসী নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশ এখন ‘সুষ্পষ্ট নীতি’ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা হলো হামাসকে চাপে রাখার ‘হাতিয়ার’ হিসেবে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তাসামগ্রী প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ রাখা। ছয় সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো মানবিক সহায়তাসামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এটা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ আরোপের ঘটনা। সেই সঙ্গে গাজাবাসীর ওপর দমন–পীড়ন জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিনই নতুন নতুন হামলা চালানো হচ্ছে। গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, বুধবার সকালের দিকেই ইসরায়েলি হামলায় সেখানে অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন।

জিম্মিদের ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত গাজায় অবরোধ অব্যাহত থাকবে। এমনটাই জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলের নীতি স্পষ্ট—জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। হামাসকে চাপ প্রয়োগের অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে এটি করা হচ্ছে। যাতে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে এটি তারা ব্যবহার করতে না পারে।’

কাৎজ আরও বলেন, ‘গাজায় কেউ সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে না, এমনকি তার কোনো প্রস্তুতিও নেই।’ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মিদের না ইসরায়েলে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে ভয়াবহ শক্তি দিয়ে তাদের আঘাত করা হবে।’ গত ২ মার্চ থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফলে ঢুকতে পারছে না কোনো খাবার, পানি, জ্বালানি এমনকি ওষুধও। নির্বিচারে উপত্যকাজুড়ে চালানো হচ্ছে হামলা। বেসামরিকদের বাড়িঘর ও শরণার্থীশিবির লক্ষ্য করে চলছে বিমান থেকে হামলা। এমন পরিস্থিতিতে গাজা পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সহায়তা সংস্থা ইসরায়েলের এই অবরোধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে ইসরায়েল তা অস্বীকার করে যাচ্ছে। দেশটির সাফাই—গাজায় যথেষ্ট পরিমাণ খাবার, পানি ও জীবনধারণের প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের এমন দাবি যে সত্য নয়, তা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্টই। চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলছে, গাজা উপত্যকা ধীরে ধীরে সুবিশাল এক গণকবরে পরিণত হচ্ছে।

মাঠে থাকা চিকিৎসক ও সহায়তা সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনের পরিচালক মাহমুদ শালাবি বলেন, ‘গত ১৮ মাসে কখনো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়নি—জীবনের মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত তো হতে হচ্ছে, প্রতিদিনই চারপাশে বাড়ছে হামলার আতঙ্ক।’ গাজায় সহায়তা পাঠানো ইসরায়েলে এখন একটি রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত ইস্যু। এখনো ৫৮ জন জিম্মি গাজায় রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারের কট্টর ডানপন্থীরা বলছেন, জিম্মিদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত গাজার বেসামরিক জনগণকেও সহায়তা দেওয়া যাবে না।

দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, ‘যতক্ষণ আমাদের মানুষগুলো টানেলে আটকে রয়েছে, ততক্ষণ এক গ্রাম খাবারও গাজায় যাবে না।’ এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ আবার বলেছেন, ভবিষ্যতে ইসরায়েল নিজের তত্ত্বাবধানে গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য ‘বেসামরিক কাঠামো’ গড়বে, যাতে তা হামাসের হাতে না পড়ে। তবে কবে এবং কীভাবে তা হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

কিছু কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিজেই সহায়তা বিতরণের জন্য লজিস্টিক সেন্টার তৈরি করতে পারে, যেখানে নিরীক্ষিত সহায়তা সংস্থাগুলো কাজ করবে। তবে জাতিসংঘ এখনো তাদের কর্মীদের তালিকা ইসরায়েলকে দেয়নি। মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের আলোচনা এখনো অচলাবস্থায়। ইসরায়েল জানিয়েছে, যে কোনো চুক্তি হলেও তারা গাজার যেসব অংশ দখল করেছে, সেগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না। কাৎজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পূর্বের মতো এবার আর সেনা প্রত্যাহার হবে না। গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ার মতো অঞ্চলেও নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে সেনা থাকবে।’ এদিকে, গতকাল রাতেও ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ১৩ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতনামা আলোকচিত্রী ফাতেমা হাসসুনা।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ মার্চ থেকে আবার হামলা শুরুর পর নিহত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় নারী ও শিশু মিলিয়ে ৫১ হাজার ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখ-ে হামাস হামলা চালায়। ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে খবর দেয় ইসরায়েল সরকার। বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়ায় হয় ২৫১ জনকে।

ছবি

ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে লেবাননে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৪

ছবি

চীনের সর্বকনিষ্ঠ নভোচারীর সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হলো ৪টি কালো ইঁদুর

ছবি

‘সুদানে বিদ্রোহীদের চীনা ড্রোন-কামান দিচ্ছে আরব আমিরাত’

ছবি

‘গ্রে জোনে’ হাজার হাজার রুশ সেনা, কোণঠাসা ইউক্রেনের বাহিনী

ছবি

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করবে না ইরান : আরাগচি

ছবি

ওনেই পানি-খাবার, বাঁচার আশায় মাইলের পর মাইল হাঁটছে মানুষ

ছবি

চুক্তি ভেঙে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল, চালাচ্ছে হামলা

ছবি

৩০ প্যালেস্টাইনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল, গাজায় ফের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি

ছবি

ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ঠেকাতে রাশিয়া-চীন-ইরানের দ্বারে মাদুরো

ছবি

‘না যুদ্ধ’, ‘না শান্তির’ মরণফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে গাজা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনের মধ্যেও খাদ্য সহায়তা দিতে আদালতের নির্দেশ

ছবি

গৃহযুদ্ধে নাকাল সুদান

ছবি

প্রিন্স উপাধি হারালেও আপাতত রয়েল লজেই থাকছেন অ্যান্ড্রু

এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে রাজি পাকিস্তান আফগানিস্তান

ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদির নতুন সিদ্ধান্ত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন

ছবি

পাকিস্তান–আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত

ছবি

গাজায় ‘শক্তিশালী’ হামলা চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর

ছবি

নেটোর সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া, সমন্বয়ের অভাব ইউরোপে

ছবি

ট্রাম্পের আগমন ঘিরে দ. কোরিয়ায় বিক্ষোভ

ছবি

কানাডায় এবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতিকে খুন করল বিষ্ণোই গ্যাং

ছবি

ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

ছবি

এক মাসে রেকর্ড ১ কোটি ১৭ লাখ মানুষের ওমরাহ পালন

ছবি

ভারতের অন্ধ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘মোনথা’র তাণ্ডব, নিহত ১

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৩৩, যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বড় সহিংসতা

ছবি

গাজায় সেনা পাঠাচ্ছে পাকিস্তান!

ছবি

অ্যামাজনে চাকরি হারাচ্ছে আরও ৩০ হাজার কর্মী

ছবি

ইউরোপীয় আদালতের জলবায়ু রায়ের মুখোমুখি নরওয়ে

ছবি

পাকিস্তান-আফগানিস্তান শান্তি আলোচনা ব্যর্থ

ছবি

ট্রাম্প-জিনপিংয়ের বৈঠকে ঘিরে বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতির আশা

ছবি

চ্যালেঞ্জের’ মুখে ভারত, সীমান্তে ৩৬টি যুদ্ধবিমান ‘শেল্টার’ বানিয়েছে চীন

ছবি

হামাস ফেরত দিল আরও এক জিম্মির দেহ, যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২ ফিলিস্তিনি

tab

গাজায় এক মাসে ৫ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

ছয় সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো মানবিক সহায়তাসামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল -এএফপি

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েল। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গত ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দেয় ইসরায়েল। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ গাজাবাসী নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দেশ এখন ‘সুষ্পষ্ট নীতি’ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সেটা হলো হামাসকে চাপে রাখার ‘হাতিয়ার’ হিসেবে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তাসামগ্রী প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ রাখা। ছয় সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো মানবিক সহায়তাসামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এটা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ আরোপের ঘটনা। সেই সঙ্গে গাজাবাসীর ওপর দমন–পীড়ন জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রতিদিনই নতুন নতুন হামলা চালানো হচ্ছে। গাজার চিকিৎসা সূত্রের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, বুধবার সকালের দিকেই ইসরায়েলি হামলায় সেখানে অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন।

জিম্মিদের ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত গাজায় অবরোধ অব্যাহত থাকবে। এমনটাই জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। ইসরায়েলি সূত্রের বরাত দিয়ে আজ বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ তথ্য জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে ইসরায়েল কাৎজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েলের নীতি স্পষ্ট—জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। হামাসকে চাপ প্রয়োগের অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে এটি করা হচ্ছে। যাতে জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে এটি তারা ব্যবহার করতে না পারে।’

কাৎজ আরও বলেন, ‘গাজায় কেউ সহায়তা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে না, এমনকি তার কোনো প্রস্তুতিও নেই।’ হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘হামাস যদি জিম্মিদের না ইসরায়েলে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে ভয়াবহ শক্তি দিয়ে তাদের আঘাত করা হবে।’ গত ২ মার্চ থেকে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফলে ঢুকতে পারছে না কোনো খাবার, পানি, জ্বালানি এমনকি ওষুধও। নির্বিচারে উপত্যকাজুড়ে চালানো হচ্ছে হামলা। বেসামরিকদের বাড়িঘর ও শরণার্থীশিবির লক্ষ্য করে চলছে বিমান থেকে হামলা। এমন পরিস্থিতিতে গাজা পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক সহায়তা সংস্থা ইসরায়েলের এই অবরোধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে ইসরায়েল তা অস্বীকার করে যাচ্ছে। দেশটির সাফাই—গাজায় যথেষ্ট পরিমাণ খাবার, পানি ও জীবনধারণের প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান রয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের এমন দাবি যে সত্য নয়, তা বিশ্ববাসীর কাছে স্পষ্টই। চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলছে, গাজা উপত্যকা ধীরে ধীরে সুবিশাল এক গণকবরে পরিণত হচ্ছে।

মাঠে থাকা চিকিৎসক ও সহায়তা সংস্থাগুলোর মতে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনের পরিচালক মাহমুদ শালাবি বলেন, ‘গত ১৮ মাসে কখনো এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়নি—জীবনের মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত তো হতে হচ্ছে, প্রতিদিনই চারপাশে বাড়ছে হামলার আতঙ্ক।’ গাজায় সহায়তা পাঠানো ইসরায়েলে এখন একটি রাজনৈতিকভাবে উত্তপ্ত ইস্যু। এখনো ৫৮ জন জিম্মি গাজায় রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকারের কট্টর ডানপন্থীরা বলছেন, জিম্মিদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত গাজার বেসামরিক জনগণকেও সহায়তা দেওয়া যাবে না।

দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বলেন, ‘যতক্ষণ আমাদের মানুষগুলো টানেলে আটকে রয়েছে, ততক্ষণ এক গ্রাম খাবারও গাজায় যাবে না।’ এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী কাৎজ আবার বলেছেন, ভবিষ্যতে ইসরায়েল নিজের তত্ত্বাবধানে গাজায় মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য ‘বেসামরিক কাঠামো’ গড়বে, যাতে তা হামাসের হাতে না পড়ে। তবে কবে এবং কীভাবে তা হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।

কিছু কিছু স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিজেই সহায়তা বিতরণের জন্য লজিস্টিক সেন্টার তৈরি করতে পারে, যেখানে নিরীক্ষিত সহায়তা সংস্থাগুলো কাজ করবে। তবে জাতিসংঘ এখনো তাদের কর্মীদের তালিকা ইসরায়েলকে দেয়নি। মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময়ের আলোচনা এখনো অচলাবস্থায়। ইসরায়েল জানিয়েছে, যে কোনো চুক্তি হলেও তারা গাজার যেসব অংশ দখল করেছে, সেগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না। কাৎজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘পূর্বের মতো এবার আর সেনা প্রত্যাহার হবে না। গাজা, লেবানন এবং সিরিয়ার মতো অঞ্চলেও নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসেবে সেনা থাকবে।’ এদিকে, গতকাল রাতেও ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ১৩ ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে রয়েছেন খ্যাতনামা আলোকচিত্রী ফাতেমা হাসসুনা।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ মার্চ থেকে আবার হামলা শুরুর পর নিহত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য, ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় নারী ও শিশু মিলিয়ে ৫১ হাজার ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখ-ে হামাস হামলা চালায়। ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে খবর দেয় ইসরায়েল সরকার। বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়ায় হয় ২৫১ জনকে।

back to top