হামাস এবং গাজাবাসী প্রতি রাতে যে সাজা ভোগ করছে, তাতে সংগঠনটির নত না হওয়ার অনেক কারণ আছে। গত মার্চ মাসে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলা চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের হামলায় হামাসের প্রথম সারির নেতৃত্ব, বেসামরিক সরকার, পুলিশ এবং প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে গেছে। রাফাও ধ্বংস করা হচ্ছে। তবু দেশ ছেড়ে নির্বাসনে যাওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাবকে তারা অগ্রাহ্য করে চলেছে।
ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাত অনেক আগেই নির্বাসনে চলে যেতেন, যেমনটা তিনি করেছিলেন ১৯৮২ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের পশ্চিমে অবস্থিত ফিলিস্তিনি বাহিনীদের ইসরায়েল অবরুদ্ধ করার পর। ফাতাহ এতক্ষণে বিমানে উঠে পড়ত। কিন্তু এই উদাহরণগুলোর কোনোটিই হামাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেন?
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা এবং দক্ষিণ ইসরায়েলে চালানো নৃশংসতা যদি ইসরায়েলকে চিরতরে বদলে দেয়, তেমনি গাজার ধ্বংসযজ্ঞও ফিলিস্তিনি লক্ষ্য–আদর্শকে আমূল বদলে দিয়েছে। দুনিয়ার নানা প্রান্তে ফিলিস্তিনিদের কাছে গাজা হয়ে উঠেছে পবিত্র ভূমি। গাজার এমন কোনো পরিবার নেই যারা এই যুদ্ধে আত্মীয়স্বজন কিংবা তাদের ঘরবাড়ি হারায়নি।
হামাস কিংবা অন্য কোনো প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব। এই মানুষদের জন্যই তারা লড়াই করছে। সম্মিলিত দুর্ভোগ যত বাড়ছে, ততই নিজেদের ভূমিতে থাকার সম্মিলিত ইচ্ছাও বাড়ে, যেমনটি দক্ষিণ হেবরনের নিরস্ত্র কৃষকেরা করেছিলেন।
গাজাকে আপনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন হত্যার ময়দান; রক্ত, যন্ত্রণা ও মৃত্যুর অবিরাম চক্র কিংবা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতিগত বন্দিশালা। তেল আবিবের আশকেনাজি ইহুদিরা পশ্চিমা বুদ্?বুদের মধ্যে বসবাস করেন। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকা বা রুয়ান্ডার পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যাবলি থেকে মাত্র এক ঘণ্টা গাড়ি চালানোর দূরত্বে বসে কাপুচিনোর মগে চুমুক দিয়ে যোগব্যয়ামের শিক্ষক বিষয়ে গজগজ করতে করতে তাঁরা দিন শুরু করেন। কিন্তু একটা বিষয় তাঁদের কেউই বুঝতে পারছেন না, সেটা হলো এই যে হামাস আত্মসমর্পণ করবে না।
টানা ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধ এবং ২ মাস ধরে অনাহারের পর গাজার নেতারা টাকা নিয়ে ভেগে যাবেন, যেমনটা একবার ফাতাহ নিয়েছিল এমন কথা ভাবাটা অজ্ঞতা।
এমন প্রত্যাশা বলে দেয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর শত্রুকে কতটা কম বোঝেন।
হামাসের প্রতি ইসরায়েলের শেষ ‘প্রস্তাব’ যে কার্যত তাদের আত্মসমর্পণে গড়াত, তা বুঝতে ভুল করার অবকাশ নেই। এ প্রস্তাবের মানে আসলে ৪৫ দিনের মতো খাবার ও পানির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং হামাস সদস্যদের নিরস্ত্র করার উদ্যোগ নেওয়া।
এ প্রস্তাবের জবাবে হামাস বলেছিল, তারা ইসরায়েলের কারাগারে থাকা নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে তৈরি আছে। শুধু তাই নয়, তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিরও প্রস্তাব করেছিল, যার আওতায় হামাস নিজেদের সুড়ঙ্গগুলো আবার তৈরি করবে না কিংবা অস্ত্র বানাবে না এবং গাজার শাসন ফিলিস্তিনের অন্য দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করবে।
তবে এ যুদ্ধের শুরুতে দেওয়া দুটি শর্ত থেকে সরে আসেনি হামাস। একটি শর্ত হলো তারা নিরস্ত্র হবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত সমাপ্তি চায়। এটা বারবার সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে অন্তরায় নেতানিয়াহু নিজেই। তিনি দুই দফায় হামাসের সঙ্গে চুক্তি করেছেন, কিন্তু একতরফাভাবে নিজেই তা ভেঙে দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে একটি পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন নেতানিয়াহু, এর সুবাদে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। কথা ছিল, দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে ইসরায়েল। কিন্তু নেতানিয়াহু সেই চুক্তি একটানে ছিঁড়ে ফেলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে এটা করতে দেন। যদিও চুক্তিনামাটির কৃতিত্ব একসময় ট্রাম্প নিজেই দাবি করেছিলেন।
পারস্পরিক সম্মতিতে নেতানিয়াহু যুদ্ধে ফিরে যান শুধু বাজেটবিষয়ক ভোটে আসন্ন পরাজয় থেকে নিজের জোটকে বাঁচাতে। যুদ্ধের সামরিক লক্ষ্যগুলো অনেক আগেই ব্যবহার করা হয়ে গেছে। গাজা যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দূতদের নেতানিয়াহুর সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ট্রাম্পের সাবেক জিম্মিবিষয়ক দূত অ্যাডাম বয়েহলারকেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। হামাস সরাসরি দর কষাকষির মাধ্যমে জিম্মি বিনিময়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি স্বাধীন চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু এ কথা জানতে পেরে গণমাধ্যমে ফাঁস করে দেন।
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
হামাস এবং গাজাবাসী প্রতি রাতে যে সাজা ভোগ করছে, তাতে সংগঠনটির নত না হওয়ার অনেক কারণ আছে। গত মার্চ মাসে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলা চালানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের হামলায় হামাসের প্রথম সারির নেতৃত্ব, বেসামরিক সরকার, পুলিশ এবং প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল ধ্বংস হয়ে গেছে। রাফাও ধ্বংস করা হচ্ছে। তবু দেশ ছেড়ে নির্বাসনে যাওয়ার বিনিময়ে মোটা টাকা দেওয়ার প্রস্তাবকে তারা অগ্রাহ্য করে চলেছে।
ফিলিস্তিনের প্রয়াত নেতা ইয়াসির আরাফাত অনেক আগেই নির্বাসনে চলে যেতেন, যেমনটা তিনি করেছিলেন ১৯৮২ সালে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের পশ্চিমে অবস্থিত ফিলিস্তিনি বাহিনীদের ইসরায়েল অবরুদ্ধ করার পর। ফাতাহ এতক্ষণে বিমানে উঠে পড়ত। কিন্তু এই উদাহরণগুলোর কোনোটিই হামাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেন?
সবচেয়ে বড় কথা হলো, ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা এবং দক্ষিণ ইসরায়েলে চালানো নৃশংসতা যদি ইসরায়েলকে চিরতরে বদলে দেয়, তেমনি গাজার ধ্বংসযজ্ঞও ফিলিস্তিনি লক্ষ্য–আদর্শকে আমূল বদলে দিয়েছে। দুনিয়ার নানা প্রান্তে ফিলিস্তিনিদের কাছে গাজা হয়ে উঠেছে পবিত্র ভূমি। গাজার এমন কোনো পরিবার নেই যারা এই যুদ্ধে আত্মীয়স্বজন কিংবা তাদের ঘরবাড়ি হারায়নি।
হামাস কিংবা অন্য কোনো প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব। এই মানুষদের জন্যই তারা লড়াই করছে। সম্মিলিত দুর্ভোগ যত বাড়ছে, ততই নিজেদের ভূমিতে থাকার সম্মিলিত ইচ্ছাও বাড়ে, যেমনটি দক্ষিণ হেবরনের নিরস্ত্র কৃষকেরা করেছিলেন।
গাজাকে আপনি যা ইচ্ছা বলতে পারেন হত্যার ময়দান; রক্ত, যন্ত্রণা ও মৃত্যুর অবিরাম চক্র কিংবা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাতিগত বন্দিশালা। তেল আবিবের আশকেনাজি ইহুদিরা পশ্চিমা বুদ্?বুদের মধ্যে বসবাস করেন। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্রেব্রেনিকা বা রুয়ান্ডার পর বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ দৃশ্যাবলি থেকে মাত্র এক ঘণ্টা গাড়ি চালানোর দূরত্বে বসে কাপুচিনোর মগে চুমুক দিয়ে যোগব্যয়ামের শিক্ষক বিষয়ে গজগজ করতে করতে তাঁরা দিন শুরু করেন। কিন্তু একটা বিষয় তাঁদের কেউই বুঝতে পারছেন না, সেটা হলো এই যে হামাস আত্মসমর্পণ করবে না।
টানা ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধ এবং ২ মাস ধরে অনাহারের পর গাজার নেতারা টাকা নিয়ে ভেগে যাবেন, যেমনটা একবার ফাতাহ নিয়েছিল এমন কথা ভাবাটা অজ্ঞতা।
এমন প্রত্যাশা বলে দেয়, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর শত্রুকে কতটা কম বোঝেন।
হামাসের প্রতি ইসরায়েলের শেষ ‘প্রস্তাব’ যে কার্যত তাদের আত্মসমর্পণে গড়াত, তা বুঝতে ভুল করার অবকাশ নেই। এ প্রস্তাবের মানে আসলে ৪৫ দিনের মতো খাবার ও পানির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া এবং হামাস সদস্যদের নিরস্ত্র করার উদ্যোগ নেওয়া।
এ প্রস্তাবের জবাবে হামাস বলেছিল, তারা ইসরায়েলের কারাগারে থাকা নির্দিষ্টসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে তৈরি আছে। শুধু তাই নয়, তারা একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতিরও প্রস্তাব করেছিল, যার আওতায় হামাস নিজেদের সুড়ঙ্গগুলো আবার তৈরি করবে না কিংবা অস্ত্র বানাবে না এবং গাজার শাসন ফিলিস্তিনের অন্য দলগুলোর কাছে হস্তান্তর করবে।
তবে এ যুদ্ধের শুরুতে দেওয়া দুটি শর্ত থেকে সরে আসেনি হামাস। একটি শর্ত হলো তারা নিরস্ত্র হবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তারা গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত সমাপ্তি চায়। এটা বারবার সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে অন্তরায় নেতানিয়াহু নিজেই। তিনি দুই দফায় হামাসের সঙ্গে চুক্তি করেছেন, কিন্তু একতরফাভাবে নিজেই তা ভেঙে দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে একটি পর্যায়ক্রমিক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন নেতানিয়াহু, এর সুবাদে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। কথা ছিল, দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতি ও গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা শুরু করবে ইসরায়েল। কিন্তু নেতানিয়াহু সেই চুক্তি একটানে ছিঁড়ে ফেলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে এটা করতে দেন। যদিও চুক্তিনামাটির কৃতিত্ব একসময় ট্রাম্প নিজেই দাবি করেছিলেন।
পারস্পরিক সম্মতিতে নেতানিয়াহু যুদ্ধে ফিরে যান শুধু বাজেটবিষয়ক ভোটে আসন্ন পরাজয় থেকে নিজের জোটকে বাঁচাতে। যুদ্ধের সামরিক লক্ষ্যগুলো অনেক আগেই ব্যবহার করা হয়ে গেছে। গাজা যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দূতদের নেতানিয়াহুর সঙ্গে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, ট্রাম্পের সাবেক জিম্মিবিষয়ক দূত অ্যাডাম বয়েহলারকেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। হামাস সরাসরি দর কষাকষির মাধ্যমে জিম্মি বিনিময়ের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি স্বাধীন চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল। কিন্তু নেতানিয়াহু এ কথা জানতে পেরে গণমাধ্যমে ফাঁস করে দেন।