গুজরাতে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করার অভিযানে গত তিন দিনে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। এই অভিযানে মোট সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও আসাম থেকে আসা মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক।
গুজরাত রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক বিকাশ সহায় সোমবার জানান, এই বিপুল সংখ্যক আটক ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনের ‘বাংলাদেশি’ পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। বাকিদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
রাজ্য পুলিশের মহা-নির্দেশক বিকাশ সহায় বলেন, "নথির ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে এখানে অবস্থান করছিলেন। আটক হওয়া বাকি ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।"
এই অভিযানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বহু দিন ধরে গুজরাতে বসবাসরত ভারতীয় মুসলমানরা। কেউ সিলাইয়ের কাজ করেন, কেউ ফেরিওয়ালা, কেউ আবার নির্মাণ শ্রমিক। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে থাকতেন বহু বছর ধরে। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই তাদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।
সুরাত থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়া সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি জানান, তার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের কাছে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, এমনকি ১৯৯৩ সালের জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী বলেছিল সব কাগজ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে। পাঠানোর পর আর কোনো খোঁজ নেই। আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, মেয়েও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”
সুলতান মল্লিক পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নাগরিক এবং গত ছয় বছর ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করতেন।
বিয়েবাড়ির বরযাত্রীদেরও রেহাই নেই
অন্য এক ঘটনায়, আহমেদাবাদের চান্দোলা এলাকায় একটি বিয়েবাড়িতে বরযাত্রী হিসেবে আসা কয়েকজনকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হয়। পরে তারা সব নথিপত্র দেখালে রাত সাড়ে দশটার দিকে ছাড়া পান।
“আমরা মহারাষ্ট্রের আকোলা থেকে এসেছিলাম। জন্মসনদ, আধার কার্ড—সব ছিল আমাদের কাছে। তবু পুলিশ আমাদের টেনে নিয়ে গেল,” — বলেন মিজ জেবুন্নেসা।
এমনকি আহমেদাবাদের ২৩ বছর ধরে বসবাসকারী আলমআরা পাঠানের ছেলেও এই অভিযানে ধরা পড়েন, যদিও তাদের পরিবারের সব ধরনের পরিচয়পত্র বৈধ।
পরিযায়ী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন
‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ নামক সংগঠন জানায়, গুজরাট ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রে বাংলাভাষী মুসলমান পরিযায়ী শ্রমিকদের এভাবে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্তা, মারধর এবং আটক করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে ২৩ জন পশ্চিমবঙ্গের ফেরিওয়ালাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে ওড়িশার কেওনঝড় ও ভদ্রকেও ঘটেছে এমন ঘটনা।
“২০১৪ সাল থেকেই এই হেনস্তা চলছে। সম্প্রতি তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। আমরা অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এভাবে তো এক শ্রেণির ভারতীয়দের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে ফেলা হচ্ছে,” — বলেন সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদক আসিফ ফারুক।
গুজরাত পুলিশের দাবি: নথি জাল হতে পারে
গুজরাত পুলিশ জানিয়েছে, অনেক বাংলাদেশি জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে ভারতীয় নাগরিকের ছদ্মবেশে এখানে বসবাস করছে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় থেকে তদন্ত দল ডেকে এনে জমা দেওয়া নথিগুলোর যাচাই শুরু হয়েছে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি ‘ভৌগোলিক ও ভাষাভিত্তিক পক্ষপাতমূলক আচরণ’। এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া বৈধ নাগরিকদেরও ক্রমাগত হয়রানির মধ্যে ফেলছে।
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
গুজরাতে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’ চিহ্নিত করার অভিযানে গত তিন দিনে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। এই অভিযানে মোট সাড়ে ছয় হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ভারতীয় নাগরিক, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা ও আসাম থেকে আসা মুসলিম পরিযায়ী শ্রমিক।
গুজরাত রাজ্য পুলিশের মহাপরিচালক বিকাশ সহায় সোমবার জানান, এই বিপুল সংখ্যক আটক ব্যক্তির মধ্যে মাত্র ৪৫০ জনের ‘বাংলাদেশি’ পরিচয় নিশ্চিত করা গেছে। বাকিদের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
রাজ্য পুলিশের মহা-নির্দেশক বিকাশ সহায় বলেন, "নথির ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ৪৫০ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেআইনিভাবে এখানে অবস্থান করছিলেন। আটক হওয়া বাকি ব্যক্তিদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।"
এই অভিযানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বহু দিন ধরে গুজরাতে বসবাসরত ভারতীয় মুসলমানরা। কেউ সিলাইয়ের কাজ করেন, কেউ ফেরিওয়ালা, কেউ আবার নির্মাণ শ্রমিক। অনেকেই পরিবার নিয়ে সেখানে থাকতেন বহু বছর ধরে। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় কথা বলার কারণেই তাদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ।
সুরাত থেকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হওয়া সুলতান মল্লিকের স্ত্রী সাহিনা বিবি জানান, তার স্বামী ও দুই ভাগ্নেকে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তাদের কাছে আধার কার্ড, পাসপোর্ট, এমনকি ১৯৯৩ সালের জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও এখনো মুক্তি দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, “আমার স্বামী বলেছিল সব কাগজ হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে। পাঠানোর পর আর কোনো খোঁজ নেই। আমার শাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, মেয়েও জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।”
সুলতান মল্লিক পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নাগরিক এবং গত ছয় বছর ধরে সুরাতে এমব্রয়ডারির কাজ করতেন।
বিয়েবাড়ির বরযাত্রীদেরও রেহাই নেই
অন্য এক ঘটনায়, আহমেদাবাদের চান্দোলা এলাকায় একটি বিয়েবাড়িতে বরযাত্রী হিসেবে আসা কয়েকজনকে ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক করা হয়। পরে তারা সব নথিপত্র দেখালে রাত সাড়ে দশটার দিকে ছাড়া পান।
“আমরা মহারাষ্ট্রের আকোলা থেকে এসেছিলাম। জন্মসনদ, আধার কার্ড—সব ছিল আমাদের কাছে। তবু পুলিশ আমাদের টেনে নিয়ে গেল,” — বলেন মিজ জেবুন্নেসা।
এমনকি আহমেদাবাদের ২৩ বছর ধরে বসবাসকারী আলমআরা পাঠানের ছেলেও এই অভিযানে ধরা পড়েন, যদিও তাদের পরিবারের সব ধরনের পরিচয়পত্র বৈধ।
পরিযায়ী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন
‘পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ’ নামক সংগঠন জানায়, গুজরাট ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রে বাংলাভাষী মুসলমান পরিযায়ী শ্রমিকদের এভাবে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্তা, মারধর এবং আটক করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের কুশিনগরে ২৩ জন পশ্চিমবঙ্গের ফেরিওয়ালাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে ওড়িশার কেওনঝড় ও ভদ্রকেও ঘটেছে এমন ঘটনা।
“২০১৪ সাল থেকেই এই হেনস্তা চলছে। সম্প্রতি তা মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। আমরা অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সাড়া নেই। এভাবে তো এক শ্রেণির ভারতীয়দের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক বানিয়ে ফেলা হচ্ছে,” — বলেন সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদক আসিফ ফারুক।
গুজরাত পুলিশের দাবি: নথি জাল হতে পারে
গুজরাত পুলিশ জানিয়েছে, অনেক বাংলাদেশি জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে ভারতীয় নাগরিকের ছদ্মবেশে এখানে বসবাস করছে। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয় থেকে তদন্ত দল ডেকে এনে জমা দেওয়া নথিগুলোর যাচাই শুরু হয়েছে।
তবে মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি ‘ভৌগোলিক ও ভাষাভিত্তিক পক্ষপাতমূলক আচরণ’। এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া বৈধ নাগরিকদেরও ক্রমাগত হয়রানির মধ্যে ফেলছে।