ত্রাণের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর গোলাবর্ষণ, নিহত ৫১, আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০০ জন, এদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা গুরুতর
ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ত্রাণের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলাবর্ষণে অন্তত ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এসময় অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চিকিৎসা কর্মীরা জানান, খান ইউনিসের প্রধান পূর্বাঞ্চলীয় সড়কের পাশে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মরিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে বলে বাসিন্দারা তাদের বলেছেন।
গতকালের এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা গুরুতর, চিকিৎসা কর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ত্রাণের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারত হাজারো মানুষের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক অন্তত দু’টি গোলা ছুঁড়েছে।
এ ঘটনায় নাসের হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে যেনো তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জায়গার অভাবে চিকিৎসা কর্মীরা বাধ্য হয়ে অনেককে মাটিতে, কাউকে কাউকে করিডোরে রাখছেন।
গাজায় এখন ত্রাণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ডজনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর একদিন আগে সোমবারও গাজার দক্ষিণে রাফায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা।
যদিও জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, কোনো ধরনের ঘটনা ঘটা ছাড়াই তারা তাদের চারটি বিতরণ কেন্দ্র থেকে ৩০ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে।
সোমবারের ঘটনা নিয়েও এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। আগের কিছু ঘটনায় তেল আবিব মাঝেমাঝে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে সেনাদের গুলির কথা স্বীকার করলেও এসব ঘটনায় উসকানি দেওয়ার জন্য হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায় দিত।
জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলো ইসরায়েলি বাহিনীর পাহারা দেওয়া এলাকায় অবস্থিত। জাতিসংঘ জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে অপর্যাপ্ত, বিপজ্জনক ও মানবিক নিরপেক্ষতার নীতিমালা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
এই হত্যাযজ্ঞ এমন এক সময়ে ঘটল যখন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের বিতর্কিত একটি ত্রাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থনে পরিচালিত এই ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ করছে এমন এলাকায়, যা পুরোপুরি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সমর্থিত ও ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পরিচালিত জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। গাজা কর্তৃপক্ষ ও সমালোচকেরা এই ত্রাণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানা’ আখ্যা দিয়েছেন। কারণ জিএইচএফ গত ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর এসব স্থানে ত্রাণ নিতে গিয়ে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি এবং ব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদের প্রয়োগ ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক, ভয়াবহ ও মেনে নেওয়া যায় না- এমন ভোগান্তি চাপিয়ে দিচ্ছে।’
গত ২০ মাসে ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫৫,৩৬২ জন ফিলিস্তিনি। এদের মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ।
এই ঘটনাগুলো গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে, যেখানে নিরাপত্তা, খাদ্য ও চিকিৎসা- সবকিছুরই চরম সংকট বিরাজ করছে।
ত্রাণের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর গোলাবর্ষণ, নিহত ৫১, আহত হয়েছে কমপক্ষে ২০০ জন, এদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা গুরুতর
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ত্রাণের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারতদের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলাবর্ষণে অন্তত ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এসময় অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
চিকিৎসা কর্মীরা জানান, খান ইউনিসের প্রধান পূর্বাঞ্চলীয় সড়কের পাশে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা মরিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক থেকে গোলাবর্ষণ করা হয়েছে বলে বাসিন্দারা তাদের বলেছেন।
গতকালের এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অবস্থা গুরুতর, চিকিৎসা কর্মীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এ ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ত্রাণের ট্রাকের জন্য অপেক্ষারত হাজারো মানুষের ওপর ইসরায়েলি ট্যাংক অন্তত দু’টি গোলা ছুঁড়েছে।
এ ঘটনায় নাসের হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে যেনো তিল ধারণের ঠাঁই নেই। জায়গার অভাবে চিকিৎসা কর্মীরা বাধ্য হয়ে অনেককে মাটিতে, কাউকে কাউকে করিডোরে রাখছেন।
গাজায় এখন ত্রাণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)। তাদের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে প্রায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ডজনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এর একদিন আগে সোমবারও গাজার দক্ষিণে রাফায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা।
যদিও জিএইচএফ এক বিবৃতিতে জানায়, কোনো ধরনের ঘটনা ঘটা ছাড়াই তারা তাদের চারটি বিতরণ কেন্দ্র থেকে ৩০ লাখের বেশি খাবারের প্যাকেট বিতরণ করেছে।
সোমবারের ঘটনা নিয়েও এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। আগের কিছু ঘটনায় তেল আবিব মাঝেমাঝে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে সেনাদের গুলির কথা স্বীকার করলেও এসব ঘটনায় উসকানি দেওয়ার জন্য হামাসসহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায় দিত।
জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলো ইসরায়েলি বাহিনীর পাহারা দেওয়া এলাকায় অবস্থিত। জাতিসংঘ জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে অপর্যাপ্ত, বিপজ্জনক ও মানবিক নিরপেক্ষতার নীতিমালা লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
এই হত্যাযজ্ঞ এমন এক সময়ে ঘটল যখন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন নামের বিতর্কিত একটি ত্রাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থনে পরিচালিত এই ফাউন্ডেশন ত্রাণ বিতরণ করছে এমন এলাকায়, যা পুরোপুরি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সমর্থিত ও ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পরিচালিত জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহকারীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। গাজা কর্তৃপক্ষ ও সমালোচকেরা এই ত্রাণ কেন্দ্রগুলোকে ‘মানব কসাইখানা’ আখ্যা দিয়েছেন। কারণ জিএইচএফ গত ২৭ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করার পর এসব স্থানে ত্রাণ নিতে গিয়ে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, ‘ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতি এবং ব্যবহৃত অস্ত্র-গোলাবারুদের প্রয়োগ ফিলিস্তিনিদের ওপর অমানবিক, ভয়াবহ ও মেনে নেওয়া যায় না- এমন ভোগান্তি চাপিয়ে দিচ্ছে।’
গত ২০ মাসে ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫৫,৩৬২ জন ফিলিস্তিনি। এদের মধ্যে রয়েছে হাজার হাজার শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ।
এই ঘটনাগুলো গাজার মানবিক সংকটকে আরও গভীর করে তুলছে, যেখানে নিরাপত্তা, খাদ্য ও চিকিৎসা- সবকিছুরই চরম সংকট বিরাজ করছে।