ইসরায়েল-ইরান সংঘাত যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে, তখন সংকট সামাল দিতে নিজস্ব কৌশল নির্ধারণে দোদুল্যমান অবস্থানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
জি৭ সম্মেলন থেকে হঠাৎ করে ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়া, কখনও ইসরায়েলের পক্ষে জোরালো অবস্থান, আবার কখনও দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা—সব মিলিয়ে তার অস্পষ্ট অবস্থান এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
সংঘাত বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে এই অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান পরিস্থিতির কারণে ট্রাম্প জি-৭ থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরেছেন।
তবে ট্রাম্প নিজে পরে ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “এর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কোনও সম্পর্ক নেই।” এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, ইরানের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘পূর্ণ সমন্বয়’ করেই চালানো হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে— ট্রাম্প এখন কী নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল: তার সামনে এখন কী কী বিকল্প পথ খোলা রয়েছে?
নেতানিয়াহুর চাপে নতিস্বীকার ও সংঘাত বাড়ানো:
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হানার পর ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল আরও ‘নৃশংস’ হামলা চালাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বোমা দিয়ে তারা এই হামলা চালাবে।
তবে ট্রাম্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য সবার জানা। আর তা হচ্ছে, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করতে পারে। তাই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মত ট্রাম্পও বলেছেন, ইরান পারমাণবিক বোমার মালিক হতে পারবে না।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ট্রাম্প বলেছেন, তার পছন্দের বিকল্প পথ হল যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি করা। কিন্তু কীভাবে চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে তা নিয়ে তিনি দ্বিধান্বিত।
কখনও ট্রাম্প যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন, আবার কখনও কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তার একটি কথাতেও ছিল দ্বিধার প্রতিফলন।
তিনি বলেছিলেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা হয় চুক্তির জন্য সহায়ক হবে, নয়ত তা চুক্তির সম্ভাবনাই নস্যাৎ করে দেবে।
অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের এই দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান তার কৌশলেরই অংশ, যাকে তার সমর্থকরা বলছেন বৈদেশিক সম্পর্কের ‘ম্যাডম্যান থিওরি’। ইচ্ছাকৃত অনিশ্চয়তা বা অপ্রত্যাশিত আচরণের এই কৌশল প্রতিপক্ষকে (ট্রাম্পের ক্ষেত্রে মিত্রদেরকেও) কথা মানতে বাধ্য করে।
এই থিওরি মূলত প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের স্নায়ুযুদ্ধকালীন কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কিত। ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা ও সমর্থক ইরানের ক্ষেত্রে এই ম্যাডম্যান থিওরির সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের দিকটিকে সমর্থন করছেন।
তারা মনে করেন হুমকিই শেষ পর্যন্ত সফল হবে। কারণ, ইরান আলোচনায় আগ্রহী না। যদিও ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে হওয়া একটি পরমাণু চুক্তিতে ইরান সই করেছিল, যেটা ট্রাম্প পরে বাতিল করেন।
নেতানিয়াহু চাইছেন, ইরানকে থামাতে কূটনৈতিক নয় বরং সামরিক পথে যাওয়া হোক। সেজন্য তিনি ট্রাম্পের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছেন।
আর বহুবার নোবেল পুরস্কার জয়ের আগ্রহ দেখানো ট্রাম্প হয়ত শেষ পর্যন্ত ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে আরও আগ্রাসী হুমকি দিয়ে এগুনোরই প্রয়োজন বোধ করবেন।
ইসরায়েল হয়ত কাজ দ্রুত শেষ করতে গোপনে আরও জোরালোভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতেও চাইতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংকার-বিধ্বংসী বোমা আছে, যা ইরানের ফরদোয় অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ধ্বংস করতে পারে বলে ইসরায়েলের বিশ্বাস।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ যত বাড়ছে, ততই কংগ্রেসের রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছ থেকে ট্রাম্পের ওপর চাপও বাড়ছে। এই রিপাবলিকানরা বহুদিন ধরেই ইরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আসছেন।
ওদিকে, ট্রাম্প এটাও ভেবে থাকতে পারেন যে, দুর্বল অবস্থায় থাকা ইরানকে তিনি আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারবেন।
কিন্তু সত্য হল, ইরান ইতোমধ্যেই আলোচনার টেবিলে ছিল। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ওমানে গত রোববার ইরানি প্রতিনিধিদের ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই আলোচনা এখন বাতিল হয়ে গেছে।
কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা:
এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বলে যাচ্ছেন, ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত নয়। তবে সংঘাত বাড়লে সেটি ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ও স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের পাল্টা হামলা থেকে এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করছে।
তবে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কিছু উপদেষ্টা হয়ত তাকে সতর্ক করছেন যে, এই মুহূর্তে তিনি যেন এমন কোনও পদক্ষেপ না নেন যা ইরানে ইসরায়েলের হামলা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
কারণ, কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে প্রাণঘাতী আঘাত হানছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন দাবি করছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার নিশানা করলেই সংঘাত আর বাড়বে না বরং থেমে যাবে। কিন্তু একটি মার্কিন সূত্র বলেছে, ট্রাম্প তাতে রাজি নন।
সমর্থকদের চাপ এবং পিছু হটা:
ট্রাম্পের মনে বড় রাজনৈতিক বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম যে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল- দেশের ভেতরে তার সমর্থন।
কংগ্রেসের বেশিরভাগ রিপাবলিকান এখনও ইসরায়েলকে জোরালোভাবে সমর্থন করে। তারা ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থনও করেছেন।
কিন্তু ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বা মাগা আন্দোলনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ উঠে এসেছে, যারা ইসরায়েলকে ঐতিহ্যগতভাবে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাওয়ার নীতি স্পষ্টতই প্রত্যাখ্যান করছে।
গত কয়েক দিনে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রাম্প “আমেরিকা সর্বাগ্রে” নীতি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও কেন মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?
ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসন গত শুক্রবার কড়া সমালোচনা করে লেখেন, প্রশাসন বলছে তারা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু একথা সত্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলকে ছেড়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধবাজ সরকার এমনভাবে কাজ করছে যেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে মাঠে নামে।
সাংবাদিক কার্লসন লেখেন, "এই যুদ্ধে জড়ানোর মানে হবে, সেইসব লাখ লাখ ভোটারকে উপেক্ষা করা যারা আশা করেছিলেন একটি সরকার আসবে এবং সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেবে।"
একইভাবে ট্রাম্প অনুগত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে লিখেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েল/ইরান যুদ্ধে পুরোপুরি জড়াতে লোলুপ হয়ে থাকা যে কেউই আমেরিকা ফার্স্ট বা মাগা আদর্শের ধারক নয়।"
ট্রাম্পের জন্য এটি বড় একটি দুর্বল দিকই প্রতিফলিত করে। এতে তার ওপর ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য চাপ বাড়ে।
আর অন্তত প্রকাশ্যে ট্রাম্প যে এই চাপের মুখে সাড়া দিচ্ছেন তার লক্ষণও আছে তার কিছু কিছু মন্তব্যে।
গত সপ্তাহান্তে মাগা নিয়ে বিতর্ক চলার মধ্যেই ট্রাম্প স্যোশাল মিডিয়া পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একসুরে যুদ্ধ থামানোর ডাক দেওয়ার কথা লিখেছেন।
আর রোববারেই তিনি বলেন, “ইরান ও ইসরায়েলের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত। ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনও হাত নেই।”
ইরান ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলো তাদের হামলার লক্ষ্য হবে।
এমন হামলার ক্ষেত্রে মার্কিনিরা হতাহত হলে মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) বিচ্ছিন্নতাবাদের যুক্তিতে যুদ্ধ থেকে সরে আসার দাবি দ্রুতই আরও জোরাল হয়ে উঠতে পারে।
এতে পিছু হটে যাওয়া এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে দ্রুতই অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানানোর জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়বে।
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে, তখন সংকট সামাল দিতে নিজস্ব কৌশল নির্ধারণে দোদুল্যমান অবস্থানে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
জি৭ সম্মেলন থেকে হঠাৎ করে ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়া, কখনও ইসরায়েলের পক্ষে জোরালো অবস্থান, আবার কখনও দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা—সব মিলিয়ে তার অস্পষ্ট অবস্থান এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
সংঘাত বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে এই অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান পরিস্থিতির কারণে ট্রাম্প জি-৭ থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরেছেন।
তবে ট্রাম্প নিজে পরে ট্রুথ সোশালে লিখেছেন, “এর সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কোনও সম্পর্ক নেই।” এর আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেছিলেন, ইরানের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘পূর্ণ সমন্বয়’ করেই চালানো হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে— ট্রাম্প এখন কী নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল: তার সামনে এখন কী কী বিকল্প পথ খোলা রয়েছে?
নেতানিয়াহুর চাপে নতিস্বীকার ও সংঘাত বাড়ানো:
গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র ইরানে আঘাত হানার পর ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, তেহরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল আরও ‘নৃশংস’ হামলা চালাবে। যুক্তরাষ্ট্রের বোমা দিয়ে তারা এই হামলা চালাবে।
তবে ট্রাম্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য সবার জানা। আর তা হচ্ছে, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন না করতে পারে। তাই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মত ট্রাম্পও বলেছেন, ইরান পারমাণবিক বোমার মালিক হতে পারবে না।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ট্রাম্প বলেছেন, তার পছন্দের বিকল্প পথ হল যুক্তরাষ্ট্র-ইরানের মধ্যে একটি চুক্তি করা। কিন্তু কীভাবে চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে তা নিয়ে তিনি দ্বিধান্বিত।
কখনও ট্রাম্প যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন, আবার কখনও কূটনীতির ওপর জোর দিয়েছেন। গত সপ্তাহে তার একটি কথাতেও ছিল দ্বিধার প্রতিফলন।
তিনি বলেছিলেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলা হয় চুক্তির জন্য সহায়ক হবে, নয়ত তা চুক্তির সম্ভাবনাই নস্যাৎ করে দেবে।
অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের এই দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থান তার কৌশলেরই অংশ, যাকে তার সমর্থকরা বলছেন বৈদেশিক সম্পর্কের ‘ম্যাডম্যান থিওরি’। ইচ্ছাকৃত অনিশ্চয়তা বা অপ্রত্যাশিত আচরণের এই কৌশল প্রতিপক্ষকে (ট্রাম্পের ক্ষেত্রে মিত্রদেরকেও) কথা মানতে বাধ্য করে।
এই থিওরি মূলত প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের স্নায়ুযুদ্ধকালীন কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কিত। ট্রাম্পের কিছু উপদেষ্টা ও সমর্থক ইরানের ক্ষেত্রে এই ম্যাডম্যান থিওরির সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের দিকটিকে সমর্থন করছেন।
তারা মনে করেন হুমকিই শেষ পর্যন্ত সফল হবে। কারণ, ইরান আলোচনায় আগ্রহী না। যদিও ২০১৫ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে হওয়া একটি পরমাণু চুক্তিতে ইরান সই করেছিল, যেটা ট্রাম্প পরে বাতিল করেন।
নেতানিয়াহু চাইছেন, ইরানকে থামাতে কূটনৈতিক নয় বরং সামরিক পথে যাওয়া হোক। সেজন্য তিনি ট্রাম্পের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছেন।
আর বহুবার নোবেল পুরস্কার জয়ের আগ্রহ দেখানো ট্রাম্প হয়ত শেষ পর্যন্ত ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে আরও আগ্রাসী হুমকি দিয়ে এগুনোরই প্রয়োজন বোধ করবেন।
ইসরায়েল হয়ত কাজ দ্রুত শেষ করতে গোপনে আরও জোরালোভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়াতেও চাইতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংকার-বিধ্বংসী বোমা আছে, যা ইরানের ফরদোয় অবস্থিত ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ধ্বংস করতে পারে বলে ইসরায়েলের বিশ্বাস।
ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষ যত বাড়ছে, ততই কংগ্রেসের রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের কাছ থেকে ট্রাম্পের ওপর চাপও বাড়ছে। এই রিপাবলিকানরা বহুদিন ধরেই ইরানে সরকার পরিবর্তনের ডাক দিয়ে আসছেন।
ওদিকে, ট্রাম্প এটাও ভেবে থাকতে পারেন যে, দুর্বল অবস্থায় থাকা ইরানকে তিনি আলোচনায় বসতে বাধ্য করতে পারবেন।
কিন্তু সত্য হল, ইরান ইতোমধ্যেই আলোচনার টেবিলে ছিল। ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ওমানে গত রোববার ইরানি প্রতিনিধিদের ষষ্ঠ দফা আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তবে সেই আলোচনা এখন বাতিল হয়ে গেছে।
কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা:
এখন পর্যন্ত ট্রাম্প বলে যাচ্ছেন, ইসরায়েলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িত নয়। তবে সংঘাত বাড়লে সেটি ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ও স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের পাল্টা হামলা থেকে এরই মধ্যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করছে।
তবে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের কিছু উপদেষ্টা হয়ত তাকে সতর্ক করছেন যে, এই মুহূর্তে তিনি যেন এমন কোনও পদক্ষেপ না নেন যা ইরানে ইসরায়েলের হামলা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
কারণ, কিছু ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে প্রাণঘাতী আঘাত হানছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এখন দাবি করছেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার নিশানা করলেই সংঘাত আর বাড়বে না বরং থেমে যাবে। কিন্তু একটি মার্কিন সূত্র বলেছে, ট্রাম্প তাতে রাজি নন।
সমর্থকদের চাপ এবং পিছু হটা:
ট্রাম্পের মনে বড় রাজনৈতিক বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম যে বিষয়টি ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হল- দেশের ভেতরে তার সমর্থন।
কংগ্রেসের বেশিরভাগ রিপাবলিকান এখনও ইসরায়েলকে জোরালোভাবে সমর্থন করে। তারা ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থনও করেছেন।
কিন্তু ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন বা মাগা আন্দোলনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ উঠে এসেছে, যারা ইসরায়েলকে ঐতিহ্যগতভাবে দৃঢ় সমর্থন দিয়ে যাওয়ার নীতি স্পষ্টতই প্রত্যাখ্যান করছে।
গত কয়েক দিনে তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রাম্প “আমেরিকা সর্বাগ্রে” নীতি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও কেন মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?
ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসন গত শুক্রবার কড়া সমালোচনা করে লেখেন, প্রশাসন বলছে তারা যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নয়। কিন্তু একথা সত্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত ইসরায়েলকে ছেড়ে দেওয়া।
তিনি বলেন, নেতানিয়াহু এবং তার যুদ্ধবাজ সরকার এমনভাবে কাজ করছে যেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা তাদের হয়ে যুদ্ধ করতে মাঠে নামে।
সাংবাদিক কার্লসন লেখেন, "এই যুদ্ধে জড়ানোর মানে হবে, সেইসব লাখ লাখ ভোটারকে উপেক্ষা করা যারা আশা করেছিলেন একটি সরকার আসবে এবং সত্যিই যুক্তরাষ্ট্রকে অগ্রাধিকার দেবে।"
একইভাবে ট্রাম্প অনুগত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে লিখেছেন, "যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েল/ইরান যুদ্ধে পুরোপুরি জড়াতে লোলুপ হয়ে থাকা যে কেউই আমেরিকা ফার্স্ট বা মাগা আদর্শের ধারক নয়।"
ট্রাম্পের জন্য এটি বড় একটি দুর্বল দিকই প্রতিফলিত করে। এতে তার ওপর ইসরায়েলের আক্রমণাত্মক নীতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য চাপ বাড়ে।
আর অন্তত প্রকাশ্যে ট্রাম্প যে এই চাপের মুখে সাড়া দিচ্ছেন তার লক্ষণও আছে তার কিছু কিছু মন্তব্যে।
গত সপ্তাহান্তে মাগা নিয়ে বিতর্ক চলার মধ্যেই ট্রাম্প স্যোশাল মিডিয়া পোস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একসুরে যুদ্ধ থামানোর ডাক দেওয়ার কথা লিখেছেন।
আর রোববারেই তিনি বলেন, “ইরান ও ইসরায়েলের একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত। ইরানে হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনও হাত নেই।”
ইরান ইতোমধ্যে সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইসরায়েলকে সহায়তা করে, তবে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলো তাদের হামলার লক্ষ্য হবে।
এমন হামলার ক্ষেত্রে মার্কিনিরা হতাহত হলে মাগা (মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন) বিচ্ছিন্নতাবাদের যুক্তিতে যুদ্ধ থেকে সরে আসার দাবি দ্রুতই আরও জোরাল হয়ে উঠতে পারে।
এতে পিছু হটে যাওয়া এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে দ্রুতই অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানানোর জন্য ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়বে।