বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানে ৪৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস ইন ইরান (এইচআরএএনএ) এ তথ্য জানিয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২২৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১০৯ জন সামরিক বাহিনীর সদস্য।

গত রাতে ইরানের এক সিনিয়র সামরিক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)।

আইডিএফ জানিয়েছে, নিহত কমান্ডারের নাম আলী শাদমানি। তিনি ইরানের সামরিক সদরদপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন, যা দেশটির এলিট ফোর্স রেভল্যুশনারি গার্ড ও নিয়মিত সেনাবাহিনীর যৌথ সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

শুক্রবার ইরানের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। বিবিসি ভিডিও যাচাই করে তেহরানসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে। আইএইএ জানিয়েছে, নাতাঞ্জ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রের ভূগর্ভস্থ ইউনিটে ‘সরাসরি প্রভাব’-এর লক্ষণ দেখা গেছে, তবে ইসফাহান বা ফর্দো কেন্দ্রে বড় কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। নাতাঞ্জ হলো ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যার দুটি ইউনিট মাটির নিচে অবস্থিত। ইসরায়েল দাবি করেছে, এই কেন্দ্রে ‘অনেক ক্ষতি’ হয়েছে। তেহরানে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আন্দারযগৌ এলাকায় ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ‘উচ্চ প্রযুক্তির’ একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা ইসরায়েল প্রতিরোধ করতে পারেনি।

মঙ্গলবার সকালে ইরানের মধ্যাঞ্চলের ইসফাহান শহরের একটি তল্লাশিচৌকিতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছেন। মেহের সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে, ইসরায়েল জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের ২৪ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইরানের হামলায় গুরুতর আহত ১৫৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী আজ ভোরে জানায়, ইরান প্রায় ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার বেশিরভাগ প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি তাদের।

খামেনির পরিণতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে: হুমকি ইসরায়েলের

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরিণতি সাদ্দাম হোসেনের মতো হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে এ হুমকির খবর পাওয়া গেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি ইরানের স্বৈরশাসককে সতর্ক করছি, তিনি যেন যুদ্ধাপরাধ ও ইসরায়েলি নাগরিকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করেন। ইরানের এক

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের স্বৈরশাসকও একই পথ বেছে নিয়েছিলেন। খামেনি তাঁর (সাদ্দাম হোসেন) পরিণতি স্মরণে রাখলেই ভালো করবেন।”

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন চীনের প্রেসিডেন্ট

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেছেন, ইরানকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘হঠাৎ করে উত্তেজনা বেড়েছে’, যা নিয়ে চীন ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।

চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার বরাত দিয়ে সিএনএন এই তথ্য জানিয়েছে।

চীন, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মিত্র। প্রেসিডেন্ট চিনপিং বলেন,“চীন অন্য কোনো দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক অখ-তা লঙ্ঘনকারী যেকোনো কর্মকা-ের বিরোধিতা করে। সামরিক সংঘাত কোনো সমস্যার সমাধান নয়। আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ানো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থের বিরুদ্ধে।”

তিনি আরও বলেন, সব পক্ষকে যত দ্রুত সম্ভব শান্তির জন্য কাজ করতে হবে। চীন ‘গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে’ সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন, ইরানকে দায়ী করল জি-৭ জোট

ইরানের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে জি-৭ জোটের নেতারা। সোমবার রাতে এক যৌথ বিবৃতিতে তারা ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার মূল উৎস বলে উল্লেখ করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ইরান সন্ত্রাসবাদের উৎস।ইরানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সহিংসতা রোধে একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ‘সত্যিকার সমাপ্তি’ চান ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘যুদ্ধবিরতির চেয়ে ভালো কিছু’, অর্থাৎ একটি ‘সত্যিকার সমাপ্তি’ চান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন,“যুদ্ধবিরতি নয়, আমি চাই একটি প্রকৃত সমাপ্তি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘সোশ্যাল ট্রুথ’-এ তিনি আরও বলেন, “ইরানের একটি চুক্তিতে সই করা উচিত, যাতে বহু প্রাণ রক্ষা পায়। তারা যদি আলোচনায় আসতে চায়, জানে কিভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়।”

ইরানে সরকার পরিবর্তন ইসরায়েলের লক্ষ্য নয়: ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদোন সা’র বলেছেন, ইরানের সরকার পরিবর্তন করা ইসরায়েলের লক্ষ্য নয়। তবে সামরিক অভিযানের ফলে এমনটা ঘটলেও, তা উদ্দেশ্য নয়।

রিশন লেজিওনে ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি বলেন, প্রথম লক্ষ্য: ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। দ্বিতীয় লক্ষ্য: ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ক্ষতি সাধন। তৃতীয় লক্ষ্য: ইসরায়েল রাষ্ট্র ধ্বংসের পরিকল্পনার ক্ষতিসাধন।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতার প্রস্তাব রাশিয়ার

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতার জন্য প্রস্তুত রয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়া আন্তরিকভাবে রাজনৈতিক সমাধান চায়। তবে বর্তমানে আমরা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখছি না।”

বিশ্লেষক নিকোলাই সুরকভ বলেন, “রাশিয়া একটি সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করছে। ইরানের মিত্র হলেও, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার কৌশল নিয়েছে মস্কো।”