ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন স্থানীয়রা -এএফপি
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকা পাকতিকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে একটি ঘর। ২৫ জুন ২০২২, আফগানিস্তানছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। বিশেষত হিন্দুকুশ পর্বতমালায় প্রায়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ অঞ্চলে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি।
পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য প্রদেশ কুনারে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৬। সরকারি হিসাবমতে, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার মানুষ।
তালেবান সরকারের একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গভীর রাতে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে অসংখ্য ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। বিশেষত কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলার মাজার উপত্যকার ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এ উপত্যকা পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। তালেবান সরকার আশঙ্কা করছে, শুধু কুনার প্রদেশেই শত শত মানুষ নিহত হতে পারে। পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে।
উদ্ধারকাজে যুক্ত তালেবান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবল কম্পনে কুনার প্রদেশের একাধিক জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে এবং উদ্ধারকাজ চলছে।নানগারহার ও কুনার প্রদেশে আহত ১১৫ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের হাতে যথেষ্ট সম্পদ ও সরঞ্জাম নেই। তাই উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ও আন্তর্জাতিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। কুনার প্রদেশের পুলিশপ্রধান বিবিসিকে বলেন, প্রবল বন্যা ও ভূমিধসের কারণে সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থলপথে উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব নয়, কেবল আকাশপথেই তা চালানো যাবে। এমন পরিস্থিতিতে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রতি অবিলম্বে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর অন্তত আরও তিনটি কম্পন হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল চার দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক দুই এর মধ্যে।
এর আগে গত প্রায় সাড়ে তিন দশকে বেশ কয়েকবার আফগানিস্তানে ভয়াবহ কিছু ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। জেনে নেওয়া যাক সেসব ভূমিকম্পের খুঁটিনাটি।
২০২৩: ওই বছর আফগানিস্তানের হেরাত অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ তীব্রতার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৯ হাজারের বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি ছিল দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।
একই বছর উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের কম জনবসতি অঞ্চল বাদাখশানে ৬ দশমিক ৫ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় আফগানিস্তান ও সীমান্তবর্তী পাকিস্তানে অন্তত ১৩ জন নিহত হন।
২০২২: ওই বছরের জুনে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকা পাকতিকায় ৬ দশমিক ১ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় ১ হাজার ৩৬ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন করতে হয়েছিল। এই ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে সেপ্টেম্বরে কুনার অঞ্চলে আবার ভূমিকম্প হয়। নিহত হন অন্তত ৮ জন। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল কম।
২০১৫: আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পগুলোর একটি আঘাত হেনেছিল ২০১৫ সালে। হিন্দুকুশে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৫। এ ঘটনায় আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ভারতে মোট ৩৯৯ জন নিহত হন।
২০০২: ওই বছরের মার্চে হিন্দুকুশে দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় প্রায় ১ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুর্গম অঞ্চল টাখারে এক ভূমিকম্পে অন্তত ২ হাজার ৩০০ জন মারা যান। কোনো কোনো হিসাবে এই সংখ্যা ৪ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন মাস পর একই অঞ্চলে ৬ দশমিক ৬ তীব্রতার আরেকটি ভূমিকম্পে ৪ হাজার ৭০০ জন নিহত হন।
১৯৯৭: আফগানিস্তান-ইরান সীমান্তে ৭ দশমিক ২ তীব্রতার একটি ভূমিকম্পে দুই দেশে দেড় হাজারের বেশি মারা যান। এ ঘটনায় ১০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়।
১৯৯১: হিন্দুকুশে এক ভূমিকম্পে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়নে মোট ৮৪৮ জনের মৃত্যু হয়।
ভূমিকম্প কবলিত এলাকায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন স্থানীয়রা -এএফপি
সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকা পাকতিকায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে একটি ঘর। ২৫ জুন ২০২২, আফগানিস্তানছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তান ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। বিশেষত হিন্দুকুশ পর্বতমালায় প্রায়ই বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ অঞ্চলে ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থল হওয়ায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি।
পাকিস্তান সীমান্তসংলগ্ন আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য প্রদেশ কুনারে স্থানীয় সময় গতকাল রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে শক্তিশালী একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর তীব্রতা ছিল ৬। সরকারি হিসাবমতে, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার মানুষ।
তালেবান সরকারের একাধিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গভীর রাতে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পে অসংখ্য ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। বিশেষত কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলার মাজার উপত্যকার ঘরবাড়ি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এ উপত্যকা পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। তালেবান সরকার আশঙ্কা করছে, শুধু কুনার প্রদেশেই শত শত মানুষ নিহত হতে পারে। পাহাড়ি ও দুর্গম এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা চালাতে বেশ বেগ পোহাতে হচ্ছে।
উদ্ধারকাজে যুক্ত তালেবান প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়েছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবল কম্পনে কুনার প্রদেশের একাধিক জেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
আফগানিস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শরাফাত জামান জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে এবং উদ্ধারকাজ চলছে।নানগারহার ও কুনার প্রদেশে আহত ১১৫ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
তালেবান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের হাতে যথেষ্ট সম্পদ ও সরঞ্জাম নেই। তাই উদ্ধারকাজে হেলিকপ্টার ও আন্তর্জাতিক সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। কুনার প্রদেশের পুলিশপ্রধান বিবিসিকে বলেন, প্রবল বন্যা ও ভূমিধসের কারণে সড়কপথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে স্থলপথে উদ্ধার কার্যক্রম সম্ভব নয়, কেবল আকাশপথেই তা চালানো যাবে। এমন পরিস্থিতিতে তালেবান সরকার আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর প্রতি অবিলম্বে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রোববার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ভূমিকম্প হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের ৮ কিলোমিটার গভীরে। এরপর অন্তত আরও তিনটি কম্পন হয়েছে। সেগুলোর মাত্রা ছিল চার দশমিক পাঁচ থেকে পাঁচ দশমিক দুই এর মধ্যে।
এর আগে গত প্রায় সাড়ে তিন দশকে বেশ কয়েকবার আফগানিস্তানে ভয়াবহ কিছু ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটেছে। জেনে নেওয়া যাক সেসব ভূমিকম্পের খুঁটিনাটি।
২০২৩: ওই বছর আফগানিস্তানের হেরাত অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ তীব্রতার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় ২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ৯ হাজারের বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এটি ছিল দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প।
একই বছর উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানের কম জনবসতি অঞ্চল বাদাখশানে ৬ দশমিক ৫ তীব্রতার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় আফগানিস্তান ও সীমান্তবর্তী পাকিস্তানে অন্তত ১৩ জন নিহত হন।
২০২২: ওই বছরের জুনে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের দুর্গম পার্বত্য এলাকা পাকতিকায় ৬ দশমিক ১ তীব্রতার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় ১ হাজার ৩৬ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি ছিল যে আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন করতে হয়েছিল। এই ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে সেপ্টেম্বরে কুনার অঞ্চলে আবার ভূমিকম্প হয়। নিহত হন অন্তত ৮ জন। তবে এতে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল কম।
২০১৫: আফগানিস্তানে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পগুলোর একটি আঘাত হেনেছিল ২০১৫ সালে। হিন্দুকুশে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৫। এ ঘটনায় আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশী পাকিস্তান ও ভারতে মোট ৩৯৯ জন নিহত হন।
২০০২: ওই বছরের মার্চে হিন্দুকুশে দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ ঘটনায় প্রায় ১ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় দুর্গম অঞ্চল টাখারে এক ভূমিকম্পে অন্তত ২ হাজার ৩০০ জন মারা যান। কোনো কোনো হিসাবে এই সংখ্যা ৪ হাজার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
তিন মাস পর একই অঞ্চলে ৬ দশমিক ৬ তীব্রতার আরেকটি ভূমিকম্পে ৪ হাজার ৭০০ জন নিহত হন।
১৯৯৭: আফগানিস্তান-ইরান সীমান্তে ৭ দশমিক ২ তীব্রতার একটি ভূমিকম্পে দুই দেশে দেড় হাজারের বেশি মারা যান। এ ঘটনায় ১০ হাজারের বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়।
১৯৯১: হিন্দুকুশে এক ভূমিকম্পে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়নে মোট ৮৪৮ জনের মৃত্যু হয়।