alt

news » international

ট্রাম্পের শুল্কের তোপে শির কাছে মোদি, কোন হিসাব কষে এগোচ্ছেন তারা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং -এএপি

চীনে সোমবার দুই দিনব্যাপী সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন শেষ হচ্ছে। এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমন সময় তিনি চীন সফর করছেন, যখন তাঁর সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক।

হীরা ও চিংড়ির মতো ভারতের বিভিন্ন পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার থেকে এ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে ভারত। এ জন্য ‘জরিমানা’ হিসেবে নয়াদিল্লির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের রপ্তানি খাতের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা আসবে। নয়াদিল্লির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রয়েছে, তাতেও আঘাত আসতে পারে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও এমন একটা সময়ে নিজেদের অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করছেন, যখন আকাশছোঁয়া মার্কিন শুল্ক তাঁর পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দুই দেশের নেতা হয়তো নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছেন। আগে এই সম্পর্ক অনাস্থায় ঘেরা ছিল। এর বড় কারণ ছিল সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের গবেষক চিয়েতিজ বাজপেয়ি ও ইউ জি বলেন, ‘সহজভাবে বলতে গেলে, এই সম্পর্কে যা হবে, তা বাকি বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

এই দুই গবেষকের ভাষ্য, ‘ভারত কখনোই চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ঢাল হয়ে উঠতে যাচ্ছিল না, যেমনটি পশ্চিমারা (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র) মনে করত...মোদির চীন সফর একটি সম্ভাব্য মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’ ২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল। চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্বন্দ্বপূর্ণ সময়।

ভারত–চীন শক্তিশালী সম্পর্কের অর্থ কী: ভারত ও চীন বড় অর্থনৈতিক শক্তির কেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় চীন ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও পঞ্চম। তবে আগামী বছরগুলোয় ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর থাকবে। ৪ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি ও ৫ লাখ কোটি ডলারের শেয়ারবাজার নিয়ে ২০২৮ সাল নাগাদ ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস এমনটিই বলছে।

বেইজিংভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উসাওয়া অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কিয়ান লিউ বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক। চিরাচরিতভাবে বিশ্ব যখন এই সম্পর্কের ওপর মনোযোগ দিয়েছে, তখন সময় এসেছে বিশ্বের দ্বিতীয় ও সম্ভাব্য তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত ও চীন কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তার ওপর মনোযোগ দেওয়ার।

তবে এই সম্পর্কে বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা অমীমাংসিত একটি আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। এটি দুই পক্ষের মধ্যে আরও ব্যাপক ও গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দেয়। ২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত–চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল। চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্বন্দ্বপূর্ণ সময়। এর প্রভাবটা মূলত পড়েছিল অর্থনীতির ওপর। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল। ভিসা ও চীনা বিনিয়োগ স্থগিত করার ফলে অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর গতি কমে এসেছিল। আর টিকটকসহ চীনের দুই শতাধিক অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল নয়াদিল্লি।

সমস্যা এখানেই শেষ নয়। দুই দেশের সম্পর্কে দাগ কাটার মতো আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন তিব্বত ও দালাই লামা ইস্যু। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা একটি নদীর ওপর বেইজিং বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের যে পরিকল্পনা করছে, সেটি ঘিরে পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আছে সাম্প্রতিক সময়ে পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তান নিয়ে উত্তেজনা।

ভারতের নিজের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও বর্তমানে ভালো সম্পর্ক নেই। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের একটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদার চীন। এমন পরিস্থিতিতে ভারত–চীন কাছাকাছি আসা নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়া ডিকোডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান অর্থনীতিবিদ প্রিয়াঙ্কা কিশোর বলেন, চীনের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির কোনো কারখানা যদি ভারতে নিয়ে আসা হয়, তাহলে তা হবে অবাক করার মতো। তবে এটি ছোটখাটো একটি সফলতা হতে পারে।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, এরই মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট আবার চালু হচ্ছে। একই সঙ্গে ভিসা ও অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আরও শিথিলতা আসতে পারে। দুই দেশের সম্পর্কে যে জটিলতা রয়েছে, তাতে মোদি-সির একটি বৈঠকে বড় পরিবর্তন আসবে না। নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

ভারতের অবস্থান বদল

প্রিয়াঙ্কা কিশোর বলেন, তবে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর হবে। মনে রাখতে হবে, একসময় চীনকে একটি ভারসাম্যের মধ্যে আনতে কাছাকাছি এসেছিল ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে ভারত পুরোপুরি বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। তাই ভারত–চীনের কাছাকাছি আসাটা একটি সময়োচিত পদক্ষেপ।

মোদি যে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন, সেটি আঞ্চলিক একটি জোট। এর লক্ষ্য হলো পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিকল্প এক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। এর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, ইরান, পাকিস্তান ও রাশিয়া। তবে অতীতে এসসিও নিয়ে কম গুরুত্ব দিয়েছে নয়াদিল্লি।

ছবি

ভারতে পাসপোর্ট ছাড়াই থাকেতে পারবেন আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘুরা

ছবি

বিশ্বজুড়ে বাড়ছে পারমাণবিক বিদ্যুতের ব্যবহার

ছবি

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য রক্ষায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান-রাশিয়া

ছবি

চীন-রাশিয়া জোটকে হুমকি মানতে নারাজ ট্রাম্প

ছবি

ফের ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ছবি

আফগানিস্তানে ফের ভূমিকম্প, ক্ষয়ক্ষতি-মৃত্যু আরও বাড়ার শঙ্কা

ছবি

বিশ্ব নেতাদের নিয়ে সামরিক শক্তি দেখাল চীন

ছবি

‘অদম্য চীন’ দেখাল শক্তি, কুচকাওয়াজে নতুন অস্ত্র উন্মোচন করলেন শি

ছবি

গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া হুঁশিয়ারি ফ্রান্সের

ছবি

বুলেটপ্রুফ ট্রেনে চীন গেলেন কিম জং উন

ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ২ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা নিহত

ছবি

১০ বছরের জন্য গাজার নিয়ন্ত্রণ চায় যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

আফগানিস্তানে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা, আরও সহায়তা প্রয়োজন

ছবি

কিম জং উন ট্রেনে সীমান্ত পেরিয়ে চীনে

ছবি

পশ্চিম সুদানে ভূমিধসে এক হাজার মানুষের মৃত্যু, সহায়তা চেয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী

ছবি

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বহু হতাহত

ছবি

পেহেলগাম হামলার নিন্দায় এসসিও’র প্রথম যৌথ ঘোষণা, ভারতের কূটনৈতিক সাফল্য

ছবি

হামাসের মুখপাত্র আবু উবাইদাকে হত্যার দাবি ইসরায়েলের

ছবি

কায়রোতে দূতাবাস বন্ধ করেছে যুক্তরাজ্য

ছবি

শুল্ক না থাকলে ‘পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেত’ যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প

ছবি

চীনে মোদি-শি-পুতিনের হাস্যোজ্বল আড্ডা!

ছবি

আল-আকসা মসজিদের নিচে গোপনে খনন করছে ইসরায়েল

ছবি

৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে

ছবি

ভিসা জালিয়াতি করলে যুক্তরাষ্ট্রে আজীবন নিষেধাজ্ঞা

ছবি

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২২

ছবি

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ২০ জনের বেশি নিহত

ছবি

ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলায় তাদের প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছেন, নিশ্চিত করলো হুথিরা

ছবি

নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প ‘গণহত্যা পুরস্কারের যোগ্য’

ছবি

উন্নত সংস্করণের কাওসার স্যাটেলাইট উন্মোচন করল ইরান

ছবি

বন্ধু হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, মোদিকে শি জিনপিং

ছবি

মেক্সিকোতে ১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ, দেশজুড়ে বিক্ষোভ

ছবি

কাদের নিশানা করে মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে তারা

ছবি

ইরানের শীর্ষ নেতাদের যেভাবে ‘টার্গেট’ করেছিল ইসরায়েল

ছবি

ট্রাম্পের ভারত সফর বাতিল: নিউ ইয়র্ক টাইমস

ছবি

সাত বছর পর চীনে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা নিহত

tab

news » international

ট্রাম্পের শুল্কের তোপে শির কাছে মোদি, কোন হিসাব কষে এগোচ্ছেন তারা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠক করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং -এএপি

মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চীনে সোমবার দুই দিনব্যাপী সাংহাই কো–অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন শেষ হচ্ছে। এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমন সময় তিনি চীন সফর করছেন, যখন তাঁর সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্ক।

হীরা ও চিংড়ির মতো ভারতের বিভিন্ন পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বেড়ে ৫০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। গত বুধবার থেকে এ শুল্ক কার্যকর হয়েছে। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রেখেছে ভারত। এ জন্য ‘জরিমানা’ হিসেবে নয়াদিল্লির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক আরোপের ফলে ভারতের রপ্তানি খাতের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা আসবে। নয়াদিল্লির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য রয়েছে, তাতেও আঘাত আসতে পারে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংও এমন একটা সময়ে নিজেদের অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করছেন, যখন আকাশছোঁয়া মার্কিন শুল্ক তাঁর পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দুই দেশের নেতা হয়তো নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছেন। আগে এই সম্পর্ক অনাস্থায় ঘেরা ছিল। এর বড় কারণ ছিল সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের গবেষক চিয়েতিজ বাজপেয়ি ও ইউ জি বলেন, ‘সহজভাবে বলতে গেলে, এই সম্পর্কে যা হবে, তা বাকি বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

এই দুই গবেষকের ভাষ্য, ‘ভারত কখনোই চীনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ঢাল হয়ে উঠতে যাচ্ছিল না, যেমনটি পশ্চিমারা (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র) মনে করত...মোদির চীন সফর একটি সম্ভাব্য মোড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’ ২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল। চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্বন্দ্বপূর্ণ সময়।

ভারত–চীন শক্তিশালী সম্পর্কের অর্থ কী: ভারত ও চীন বড় অর্থনৈতিক শক্তির কেন্দ্র। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় চীন ও ভারতের অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও পঞ্চম। তবে আগামী বছরগুলোয় ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর থাকবে। ৪ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি ও ৫ লাখ কোটি ডলারের শেয়ারবাজার নিয়ে ২০২৮ সাল নাগাদ ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস এমনটিই বলছে।

বেইজিংভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উসাওয়া অ্যাডভাইজরির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কিয়ান লিউ বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক। চিরাচরিতভাবে বিশ্ব যখন এই সম্পর্কের ওপর মনোযোগ দিয়েছে, তখন সময় এসেছে বিশ্বের দ্বিতীয় ও সম্ভাব্য তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত ও চীন কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তার ওপর মনোযোগ দেওয়ার।

তবে এই সম্পর্কে বিরাট চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা অমীমাংসিত একটি আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে। এটি দুই পক্ষের মধ্যে আরও ব্যাপক ও গভীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত দেয়। ২০২০ সালের জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত–চীনের সেনাদের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল। চার দশকের বেশি সময়ের মধ্যে এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে দ্বন্দ্বপূর্ণ সময়। এর প্রভাবটা মূলত পড়েছিল অর্থনীতির ওপর। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল। ভিসা ও চীনা বিনিয়োগ স্থগিত করার ফলে অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর গতি কমে এসেছিল। আর টিকটকসহ চীনের দুই শতাধিক অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছিল নয়াদিল্লি।

সমস্যা এখানেই শেষ নয়। দুই দেশের সম্পর্কে দাগ কাটার মতো আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন তিব্বত ও দালাই লামা ইস্যু। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা একটি নদীর ওপর বেইজিং বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের যে পরিকল্পনা করছে, সেটি ঘিরে পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আছে সাম্প্রতিক সময়ে পেহেলগাম হামলার পর পাকিস্তান নিয়ে উত্তেজনা।

ভারতের নিজের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও বর্তমানে ভালো সম্পর্ক নেই। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের একটি প্রধান বাণিজ্য অংশীদার চীন। এমন পরিস্থিতিতে ভারত–চীন কাছাকাছি আসা নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়া ডিকোডের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান অর্থনীতিবিদ প্রিয়াঙ্কা কিশোর বলেন, চীনের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির কোনো কারখানা যদি ভারতে নিয়ে আসা হয়, তাহলে তা হবে অবাক করার মতো। তবে এটি ছোটখাটো একটি সফলতা হতে পারে।

প্রিয়াঙ্কা বলেন, এরই মধ্যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট আবার চালু হচ্ছে। একই সঙ্গে ভিসা ও অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়েও আরও শিথিলতা আসতে পারে। দুই দেশের সম্পর্কে যে জটিলতা রয়েছে, তাতে মোদি-সির একটি বৈঠকে বড় পরিবর্তন আসবে না। নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক এগিয়ে নিতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

ভারতের অবস্থান বদল

প্রিয়াঙ্কা কিশোর বলেন, তবে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিঃসন্দেহে অস্বস্তিকর হবে। মনে রাখতে হবে, একসময় চীনকে একটি ভারসাম্যের মধ্যে আনতে কাছাকাছি এসেছিল ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির বর্তমান অবস্থান নিয়ে ভারত পুরোপুরি বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। তাই ভারত–চীনের কাছাকাছি আসাটা একটি সময়োচিত পদক্ষেপ।

মোদি যে এসসিও সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন, সেটি আঞ্চলিক একটি জোট। এর লক্ষ্য হলো পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির বিকল্প এক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। এর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, ইরান, পাকিস্তান ও রাশিয়া। তবে অতীতে এসসিও নিয়ে কম গুরুত্ব দিয়েছে নয়াদিল্লি।

back to top