যুদ্ধজাহাজ–বিধ্বংসী ওয়াইজে ১৭ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র- এএফপি
চীন তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র (বিশ্বের প্রায় যেকোনো স্থানে হামলার উপযোগী) থেকে শুরু করে বিমান প্রতিরক্ষা লেজার, হাইপারসনিক অস্ত্র ও সামুদ্রিক ড্রোন—সব মিলিয়ে একধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনের বার্তাই দিয়েছে দেশটি।
সামরিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল বুধবারের এ কুচকাওয়াজকে কাজে লাগিয়েছেন বহুমুখী বার্তা পাঠানোর জন্য। একটি বার্তা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশে, একটি বার্তা দুই প্রতিবেশী ভারত ও রাশিয়ার উদ্দেশে এবং অন্যটি সম্ভাব্য অস্ত্র ক্রেতাদের উদ্দেশে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিল বলেন, এসব নতুন অস্ত্রের নানা কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও চীন আসলে দেখিয়েছে, তারা প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তির সব দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামরিক পরিকল্পনাকারীদের জন্য এসব বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে।’ প্রথমবারের মতো চীন তাদের পূর্ণ পারমাণবিক ‘ট্রায়াড’ বা ত্রিমুখী অস্ত্রশক্তি প্রদর্শন করেছে। এটি স্থল, সমুদ্র ও আকাশ থেকে একযোগে হামলা চালাতে পারে। এর মধ্যে ছিল আধুনিকায়ন করা আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-৫সি, যার পাল্লা ২০ হাজার কিলোমিটার (১২,৪০০ মাইল) আর দীর্ঘ পাল্লার নতুন ‘রোড-মোবাইল’ ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-৬১।
শুধু কৌশলগত স্তরেই নয়, চীন স্পষ্ট করেছে যে তারা নিজস্ব সমুদ্র অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সিঙ্গাপুরের এস রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জেমস চর বলেন, ‘এত বিস্তৃত নতুন অস্ত্রভান্ডার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পূর্ব এশিয়ায় যেকোনো সংঘাতের পরিকল্পনা জটিল করে তুলতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সমুদ্র-ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র মিলে এমন এক ঘেরাটোপ তৈরি করতে পারে, যেখানে বাইরের নৌবাহিনী প্রবেশ করতেই পারবে না।’ জেমস চর ও অন্যান্য বিশ্লেষক বলেন, চীন হয়তো ছোট দেশগুলোকে দেখাতে চাইছে যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে তারা এখন ‘শান্তির রক্ষক’ হিসেবে দাঁড়াতে সক্ষম।
বিশেষ করে নতুন টর্পেডো-আকৃতির ড্রোন ও হাইপারসনিক ট্রায়াড অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় চীনের বাড়তে থাকা ডিএফ-২৬ মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, তবে হুমকি আরও বাড়বে। গাইডেড ওয়ারহেড বহনকারী এ ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন জাহাজ ও গুয়ামসহ অন্যান্য ঘাঁটি টার্গেট করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ান নিয়ে কোনো সংঘাতে সফল হতে হলে চীনকে দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে কার্যত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু এটি সহজ নয়। কারণ, পূর্ব এশিয়াজুড়ে বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় রয়েছে। তবে সামরিক কুচকাওয়াজে শৃঙ্খলা ও নিখুঁত প্রদর্শনীর আড়ালেও প্রশ্ন থেকেই গেছে এসব নতুন অস্ত্রের পূর্ণ সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান আসলে ছিল সির জন্য এক মহাসমারোহ। এ আয়োজনের মাধ্যমে তিনি চীনের সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেন এবং মিত্রদেশগুলোর নেতাদের একত্র করে বিশ্বকে একটি বার্তা দেন। কুচকাওয়াজ উদ্বোধন করে প্রেসিডেন্ট সি সতর্ক করে বলেন, বিশ্ব এখনো ‘শান্তি নাকি যুদ্ধ—এই দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার’ মুখোমুখি। তবে তিনি বলেন, চীনকে থামানো অসম্ভব।
চীনের অত্যন্ত গোছানো এই অনুষ্ঠান ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শি, পুতিন ও কিম এ তিন নেতা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন ‘ভ্লাদিমির পুতিন আর কিম জং–উনকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে দাও।
যেহেতু তোমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ।’
বিশ্বের নজর ছিল সি, পুতিন ও কিম কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে একমঞ্চে ওঠেন, তার দিকে। উত্তর কোরিয়ার নেতা সচরাচর দেশের বাইরে যান না। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তিন নেতার একসঙ্গে থাকার দৃশ্য কেবল কিছুটা দেখানো হয়। ছবি বা ভিডিও করতে বিদেশি সাংবাদিকদের নিষেধ করা হয়।
চীনের তিয়ানজিন শহরে বিশ্বের ২০টি দেশের নেতাদের নিয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলন শেষ হয় গত সোমবার। এরপরই এ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হলো। এসসিও সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল আঞ্চলিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চীনকে স্থাপন করা। এসসিও নিজেদের আঞ্চলিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু ও পশ্চিমা জোটের বিকল্প হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছে।
দুই দিনের এসসিও সম্মেলনের শেষ দিনে সি একটি দেশের বিরুদ্ধে পীড়নমূলক আচরণের সমালোচনা করেন। তিনি কোনো দেশের নাম প্রকাশ না করলেও মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেন। অন্যদিকে পুতিন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে সঠিক বলে দাবি করেন এবং এ সংঘাতের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোকে দায়ী করেন।
যুদ্ধজাহাজ–বিধ্বংসী ওয়াইজে ১৭ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র- এএফপি
বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
চীন তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক কুচকাওয়াজে নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্র প্রদর্শন করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র (বিশ্বের প্রায় যেকোনো স্থানে হামলার উপযোগী) থেকে শুরু করে বিমান প্রতিরক্ষা লেজার, হাইপারসনিক অস্ত্র ও সামুদ্রিক ড্রোন—সব মিলিয়ে একধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শনের বার্তাই দিয়েছে দেশটি।
সামরিক বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গতকাল বুধবারের এ কুচকাওয়াজকে কাজে লাগিয়েছেন বহুমুখী বার্তা পাঠানোর জন্য। একটি বার্তা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশে, একটি বার্তা দুই প্রতিবেশী ভারত ও রাশিয়ার উদ্দেশে এবং অন্যটি সম্ভাব্য অস্ত্র ক্রেতাদের উদ্দেশে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিল বলেন, এসব নতুন অস্ত্রের নানা কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও চীন আসলে দেখিয়েছে, তারা প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তির সব দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামরিক পরিকল্পনাকারীদের জন্য এসব বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে।’ প্রথমবারের মতো চীন তাদের পূর্ণ পারমাণবিক ‘ট্রায়াড’ বা ত্রিমুখী অস্ত্রশক্তি প্রদর্শন করেছে। এটি স্থল, সমুদ্র ও আকাশ থেকে একযোগে হামলা চালাতে পারে। এর মধ্যে ছিল আধুনিকায়ন করা আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-৫সি, যার পাল্লা ২০ হাজার কিলোমিটার (১২,৪০০ মাইল) আর দীর্ঘ পাল্লার নতুন ‘রোড-মোবাইল’ ক্ষেপণাস্ত্র ডিএফ-৬১।
শুধু কৌশলগত স্তরেই নয়, চীন স্পষ্ট করেছে যে তারা নিজস্ব সমুদ্র অঞ্চলেও প্রভাব বিস্তার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। সিঙ্গাপুরের এস রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জেমস চর বলেন, ‘এত বিস্তৃত নতুন অস্ত্রভান্ডার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পূর্ব এশিয়ায় যেকোনো সংঘাতের পরিকল্পনা জটিল করে তুলতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘সমুদ্র-ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র মিলে এমন এক ঘেরাটোপ তৈরি করতে পারে, যেখানে বাইরের নৌবাহিনী প্রবেশ করতেই পারবে না।’ জেমস চর ও অন্যান্য বিশ্লেষক বলেন, চীন হয়তো ছোট দেশগুলোকে দেখাতে চাইছে যে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ভূমিকা নিয়ে সংশয়ের মধ্যে তারা এখন ‘শান্তির রক্ষক’ হিসেবে দাঁড়াতে সক্ষম।
বিশেষ করে নতুন টর্পেডো-আকৃতির ড্রোন ও হাইপারসনিক ট্রায়াড অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্রদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় চীনের বাড়তে থাকা ডিএফ-২৬ মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, তবে হুমকি আরও বাড়বে। গাইডেড ওয়ারহেড বহনকারী এ ক্ষেপণাস্ত্র মার্কিন জাহাজ ও গুয়ামসহ অন্যান্য ঘাঁটি টার্গেট করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ান নিয়ে কোনো সংঘাতে সফল হতে হলে চীনকে দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে কার্যত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু এটি সহজ নয়। কারণ, পূর্ব এশিয়াজুড়ে বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বজায় রয়েছে। তবে সামরিক কুচকাওয়াজে শৃঙ্খলা ও নিখুঁত প্রদর্শনীর আড়ালেও প্রশ্ন থেকেই গেছে এসব নতুন অস্ত্রের পূর্ণ সক্ষমতা ও কার্যকারিতা নিয়ে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবসানের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান আসলে ছিল সির জন্য এক মহাসমারোহ। এ আয়োজনের মাধ্যমে তিনি চীনের সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেন এবং মিত্রদেশগুলোর নেতাদের একত্র করে বিশ্বকে একটি বার্তা দেন। কুচকাওয়াজ উদ্বোধন করে প্রেসিডেন্ট সি সতর্ক করে বলেন, বিশ্ব এখনো ‘শান্তি নাকি যুদ্ধ—এই দুইয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার’ মুখোমুখি। তবে তিনি বলেন, চীনকে থামানো অসম্ভব।
চীনের অত্যন্ত গোছানো এই অনুষ্ঠান ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শি, পুতিন ও কিম এ তিন নেতা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেছেন ‘ভ্লাদিমির পুতিন আর কিম জং–উনকে আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে দাও।
যেহেতু তোমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছ।’
বিশ্বের নজর ছিল সি, পুতিন ও কিম কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে একমঞ্চে ওঠেন, তার দিকে। উত্তর কোরিয়ার নেতা সচরাচর দেশের বাইরে যান না। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তিন নেতার একসঙ্গে থাকার দৃশ্য কেবল কিছুটা দেখানো হয়। ছবি বা ভিডিও করতে বিদেশি সাংবাদিকদের নিষেধ করা হয়।
চীনের তিয়ানজিন শহরে বিশ্বের ২০টি দেশের নেতাদের নিয়ে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সম্মেলন শেষ হয় গত সোমবার। এরপরই এ সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হলো। এসসিও সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল আঞ্চলিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চীনকে স্থাপন করা। এসসিও নিজেদের আঞ্চলিক সহযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু ও পশ্চিমা জোটের বিকল্প হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছে।
দুই দিনের এসসিও সম্মেলনের শেষ দিনে সি একটি দেশের বিরুদ্ধে পীড়নমূলক আচরণের সমালোচনা করেন। তিনি কোনো দেশের নাম প্রকাশ না করলেও মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করেন। অন্যদিকে পুতিন রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে সঠিক বলে দাবি করেন এবং এ সংঘাতের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোকে দায়ী করেন।