ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
পেট্রল ও ডিজেলের সঙ্গে ইথানল মেশানোর পক্ষে অনেকজ দিন ধরেই কথা বলে চলেছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষ নেতা নীতীন গড়কড়ি। এবার সেই নীতীন গড়কড়ি পড়েছেন প্রশ্নের মুখে। বিরোধীদের সরাসরি আক্রমণ তার দিকে। এমন কথাও তাকে শুনতে হচ্ছে, দুই পুত্রের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠার পেছনে তার প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে।
গড়কড়ি অনেক দিন থেকেই পেট্রল ও ডিজেলের সঙ্গে ইথানল মেশানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছেন। বলছেন, তাতে গাড়ি চালানোর খরচ যেমন কমবে, তেমনই বায়ুদূষণ রোধে একটা বড় পদক্ষেপ করা যাবে। যত শতাংশ ইথানল পেট্রল–ডিজেলে মেশানো হবে, জৈব জ্বালানির ব্যবহার ততটাই কম হবে। ফলে আনুপাতিক হারে দূষণ কমবে। ইথানলের হয়ে গড়কড়ির ওই সওয়ালের দরুন সরকার পেট্রল–ডিজেলে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো বাধ্যতামূলক করেছে। বিতর্কের সৃষ্টি তা নিয়েই।
বিতর্ক তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। আখ, ভুট্টা ও গম থেকে ইথানল প্রস্তুত করা হয়। পেট্রল–ডিজেলের চেয়ে ইথানল অনেক সস্তা। ২০১৮ সাল থেকে গড়কড়ি ইথানলের হয়ে সওয়াল করে আসছেন। তাঁর দাবি ছিল, ইথানল মেশানো হলে পেট্রল–ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি যথাক্রমে ৫৫ ও ৫০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। ঘটনা হলো, ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো বাধ্যতামূলক করা হলেও পেট্রল ও ডিজেলের দাম দেশের কোথাও এক পয়সাও কমানো হয়নি। এটা প্রথম বিতর্ক।
দ্বিতীয় বিতর্ক, দূষণ রোধ ও গাড়ির স্বাস্থ্য নিয়ে। দেখা গেছে, ইথানল মেশানোর ফলে গাড়ির মাইলেজ চার–পাঁচ কিলোমিটার (এক লিটারে কত কিলোমিটার চলে সেই হিসাব) কমে গেছে। ফলে গাড়িতে বেশি জ্বালানি লাগছে। তা ছাড়া ইথানলের জন্য গাড়ির ইঞ্জিনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই ক্ষতির দায় বিমা সংস্থাগুলো নিতে চাইছে না।
তৃতীয় বিতর্কটি রাজনৈতিক। সেই বিতর্ক বিপাকে ফেলেছে গড়কড়িকে।
নীতীন গড়কড়ির দুই ছেলে, নিখিল গড়কড়ি ও সারঙ্গ গড়কড়ি। দুজনের কেউই বাবার মতো রাজনীতিতে আসেননি। দুজনেই ব্যবসায়ী। নিখিলের সংস্থা সিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইথানল প্রস্তুতকারক সংস্থা। সারঙ্গের সংস্থা মানস অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজও ইথানল প্রস্তুত করে।
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা এই তৃতীয় বিষয়ই বড় করে তুলে ধরেছেন। তাঁর অভিযোগ, পেট্রল-ডিজেলে বাধ্যতামূলকভাবে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর সরকারি সিদ্ধান্ত ও সে জন্য নীতীন গড়কড়ির সওয়াল করাটা স্বার্থের সংঘাত। ওই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে পেট্রল–ডিজেলের দাম না কমলেও নীতীনের দুই পুত্রের ব্যবসা ফুলে–ফেঁপে উঠেছে।
কতটা লাভবান তাঁরা হয়েছেন, পবন খেরা সেই হিসাবও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিয়ান অ্যাগ্রোর আয় ২০২৪ সালের জুন মাসে ছিল ১৮ কোটি। এক বছর পর ২০২৫ সালের জুনে, তা বেড়ে হয়েছে ৫২৩ কোটি। সংস্থার শেয়ার মূল্য ৩৭ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৩৮ টাকা! খেরা বলেছেন, বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা দরকার। তাঁর অভিযোগ, মহারাষ্ট্রের আখচাষি ও চিনি মিলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গড়কড়ি–পুত্রদের সংস্থা এই বিপুল মুনাফা লুটছে।
ইথানল মেশানো পেট্রল-ডিজেলের দাম না কমিয়ে বিক্রির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থাগুলোও তাদের লাভ বাড়িয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা সত্ত্বেও দেশের বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম এক পয়সাও কমানো হয়নি। কেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার মধ্য দিয়ে সরকার কত মুনাফা করেছে, সেই হিসাব এখনো দেওয়া হয়নি। তবে সরকারি সূত্রের বরাতে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে ভারত গত ৩৯ মাস ১ হাজার ২৬০ কোটি ডলার বা ১ কোটি ১১ লাখ রুপি মুনাফা করেছে। এই বিপুল মুনাফার একাংশও উপভোক্তারা পায়নি। পেট্রল-ডিজেলের দাম সরকার কমায়নি।
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পেট্রল ও ডিজেলের সঙ্গে ইথানল মেশানোর পক্ষে অনেকজ দিন ধরেই কথা বলে চলেছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ও বিজেপির শীর্ষ নেতা নীতীন গড়কড়ি। এবার সেই নীতীন গড়কড়ি পড়েছেন প্রশ্নের মুখে। বিরোধীদের সরাসরি আক্রমণ তার দিকে। এমন কথাও তাকে শুনতে হচ্ছে, দুই পুত্রের ব্যবসা ফুলে-ফেঁপে ওঠার পেছনে তার প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে।
গড়কড়ি অনেক দিন থেকেই পেট্রল ও ডিজেলের সঙ্গে ইথানল মেশানোর পক্ষে সওয়াল করে আসছেন। বলছেন, তাতে গাড়ি চালানোর খরচ যেমন কমবে, তেমনই বায়ুদূষণ রোধে একটা বড় পদক্ষেপ করা যাবে। যত শতাংশ ইথানল পেট্রল–ডিজেলে মেশানো হবে, জৈব জ্বালানির ব্যবহার ততটাই কম হবে। ফলে আনুপাতিক হারে দূষণ কমবে। ইথানলের হয়ে গড়কড়ির ওই সওয়ালের দরুন সরকার পেট্রল–ডিজেলে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো বাধ্যতামূলক করেছে। বিতর্কের সৃষ্টি তা নিয়েই।
বিতর্ক তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। আখ, ভুট্টা ও গম থেকে ইথানল প্রস্তুত করা হয়। পেট্রল–ডিজেলের চেয়ে ইথানল অনেক সস্তা। ২০১৮ সাল থেকে গড়কড়ি ইথানলের হয়ে সওয়াল করে আসছেন। তাঁর দাবি ছিল, ইথানল মেশানো হলে পেট্রল–ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি যথাক্রমে ৫৫ ও ৫০ টাকায় বিক্রি করা যাবে। ঘটনা হলো, ২০ শতাংশ ইথানল মেশানো বাধ্যতামূলক করা হলেও পেট্রল ও ডিজেলের দাম দেশের কোথাও এক পয়সাও কমানো হয়নি। এটা প্রথম বিতর্ক।
দ্বিতীয় বিতর্ক, দূষণ রোধ ও গাড়ির স্বাস্থ্য নিয়ে। দেখা গেছে, ইথানল মেশানোর ফলে গাড়ির মাইলেজ চার–পাঁচ কিলোমিটার (এক লিটারে কত কিলোমিটার চলে সেই হিসাব) কমে গেছে। ফলে গাড়িতে বেশি জ্বালানি লাগছে। তা ছাড়া ইথানলের জন্য গাড়ির ইঞ্জিনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই ক্ষতির দায় বিমা সংস্থাগুলো নিতে চাইছে না।
তৃতীয় বিতর্কটি রাজনৈতিক। সেই বিতর্ক বিপাকে ফেলেছে গড়কড়িকে।
নীতীন গড়কড়ির দুই ছেলে, নিখিল গড়কড়ি ও সারঙ্গ গড়কড়ি। দুজনের কেউই বাবার মতো রাজনীতিতে আসেননি। দুজনেই ব্যবসায়ী। নিখিলের সংস্থা সিয়ান অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইথানল প্রস্তুতকারক সংস্থা। সারঙ্গের সংস্থা মানস অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজও ইথানল প্রস্তুত করে।
কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা এই তৃতীয় বিষয়ই বড় করে তুলে ধরেছেন। তাঁর অভিযোগ, পেট্রল-ডিজেলে বাধ্যতামূলকভাবে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর সরকারি সিদ্ধান্ত ও সে জন্য নীতীন গড়কড়ির সওয়াল করাটা স্বার্থের সংঘাত। ওই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে পেট্রল–ডিজেলের দাম না কমলেও নীতীনের দুই পুত্রের ব্যবসা ফুলে–ফেঁপে উঠেছে।
কতটা লাভবান তাঁরা হয়েছেন, পবন খেরা সেই হিসাবও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সিয়ান অ্যাগ্রোর আয় ২০২৪ সালের জুন মাসে ছিল ১৮ কোটি। এক বছর পর ২০২৫ সালের জুনে, তা বেড়ে হয়েছে ৫২৩ কোটি। সংস্থার শেয়ার মূল্য ৩৭ দশমিক ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৩৮ টাকা! খেরা বলেছেন, বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা দরকার। তাঁর অভিযোগ, মহারাষ্ট্রের আখচাষি ও চিনি মিলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গড়কড়ি–পুত্রদের সংস্থা এই বিপুল মুনাফা লুটছে।
ইথানল মেশানো পেট্রল-ডিজেলের দাম না কমিয়ে বিক্রির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থাগুলোও তাদের লাভ বাড়িয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা সত্ত্বেও দেশের বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম এক পয়সাও কমানো হয়নি। কেন, সে নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার মধ্য দিয়ে সরকার কত মুনাফা করেছে, সেই হিসাব এখনো দেওয়া হয়নি। তবে সরকারি সূত্রের বরাতে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করে ভারত গত ৩৯ মাস ১ হাজার ২৬০ কোটি ডলার বা ১ কোটি ১১ লাখ রুপি মুনাফা করেছে। এই বিপুল মুনাফার একাংশও উপভোক্তারা পায়নি। পেট্রল-ডিজেলের দাম সরকার কমায়নি।