alt

news » international

ট্রাম্পকে উসকে পুতিন-কিমকে পাশে নিয়ে কী করতে চান শি

বিদেশী সংবাদ মাধোম : সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (বাঁয়ে), চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং (মাঝে) এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন -এএফপি

এক পাশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, অন্য পাশে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনকে নিয়ে বেইজিংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজে উপস্থিত হয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। ঠিক তাঁদের পেছনেই ছিলেন ইরান, পাকিস্তান, বেলারুশ ও মিয়ানমারসহ প্রায় দু ডজন দেশের নেতারা। বিশ্বের জন্য এ দৃশ্যের থেকে স্পষ্ট বার্তা আর কী হতে পারে। তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বড় পর্দাগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই দৃশ্য দেখেছেন। সামরিক কুচকাওয়াজের বিশাল আয়োজন দেখতে গত বুধবার তীব্র রোদ উপেক্ষা করে তাঁরা রাজধানীর তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকের হাতে ছিল চীনের ছোট ছোট পতাকা।

চীনজুড়ে টেলিভিশনে সামরিক কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়েছে। চীনের বাইরের অনেক দেশ থেকেও টেলিভিশনে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ডনাল্ড ট্রাম্পসহ পশ্চিমা অনেক দেশ একে স্পষ্ট বার্তা হিসেবে দেখেছেন। তাদের মনে হয়েছে, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্ররোচিত করছে।

কুচকাওয়াজ চলার মধ্যেই সিকে উদ্দেশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, দয়া করে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবেন।’ কিম ও পুতিনকে পাশে বসিয়ে সি চিন পিং বিশ্বকে দৃঢ়ভাবে এটা দেখাতে চেয়েছেন যে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে সংঘাত ও দ্বন্দ্ব, তার জন্য তাঁর চারপাশে বসা ব্যক্তিরা দায়ী নন বরং এর দায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার।

গত বুধবার তিয়েনআনমেন স্কয়ারে যাঁরা চীনের হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনাদের চিৎকার শুনেছেন; কুচকাওয়াজে একে একে অতিকায় পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ও পানির নিচে চলা ড্রোনের প্রদর্শন দেখেছেন এবং বেইজিংয়ের ‘অ্যাভিনিউ অব ইটারনাল পিস’ ধরে যুদ্ধবিমানগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে উড়ে যেতে দেখেছেন, তাঁরা একটা বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝেছেন। আর সেটা হলো, সি সামরিক শক্তি দেখাতেই এই আয়োজন করেছেন। সামরিক শক্তি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে বিকল্প শক্তি হিসেবে চীন যে আবির্ভূত হচ্ছে, এই প্রদর্শনী তা বুঝিয়ে দিয়েছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরেই তাদের উত্থান শান্তিপূর্ণ বলে প্রচার করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধবাজ বলে সমালোচনা করেছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উদ্?যাপন করতে গিয়ে চীন তাদের যে শক্তি দেখিয়েছে, তাতে বোঝা যায় দেশটি দ্রুতগতিতে অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ হতে চলেছে।

কিম ও পুতিনকে পাশে বসিয়ে শি একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন। আর তা হলো দেশে দেশে যে যুদ্ধ চলছে, তার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির ইশারায় চলা বিশ্বব্যবস্থার। পাশে বসা দুজনের এই পরিস্থিতির জন্য কোনো দায়ভার নেই।

গত বুধবার কুচকাওয়াজে সি যে বক্তব্য দেন তাতে এ বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়। সি বলেন, যখন সব দেশ একে অন্যকে সমান হিসেবে দেখবে, সহযোগিতা করবে, শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবে, কেবল তখনই গোড়া থেকে যুদ্ধ নির্মূল করা যাবে। সাধারণের নিরাপত্তা রক্ষা হবে। সি ও তাঁর কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, সেই মূল কারণ হলো ‘শীতল যুদ্ধ সময়ের মানসিকতা।’

আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, দয়া করে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবেন।

সপ্তাহের শুরুতে, চীনের বন্দর শহর তিয়ানজিনে সি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলন করেন। সেখানে ‘বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উদ্যোগ’ উন্মোচন করা হয়।এই উদ্যোগের আওতায় সি বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে আরও গণতান্ত্রিক করতে চান। বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ওয়াং ইওয়ে বলেন, জাতিসংঘকে সমর্থন করা এই পরিকল্পনার ব্যাপ্তি বিস্তৃত হতে পারে।

শি জিন পিংয়ের গ্লোবাল গভর্ন্যান্স কেবল নিরাপত্তার দিকে নয় বরং অর্থনীতির নানা দিকেও মনোনিবেশ করবে। সুইফট সিস্টেম, নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরও কিছু বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। ইওয়ে আরও বলেন, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উদ্যোগ কেবল নিরাপত্তার দিকে নয় বরং অর্থনীতির নানা দিকেও মনোনিবেশ করবে। সুইফট সিস্টেম, নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরও কিছু বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া (জাতিসংঘে) গ্লোবাল সাউথের (দেশগুলোর) আরও বেশি মতামত দেওয়ার অধিকার এবং আরও বেশি ক্ষমতা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সির এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য দুটি। একটি হলো,পশ্চিমা শক্তির চাপে থাকা দেশগুলোর জন্য একটি মিলনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। আর দ্বিতীয়টি হলো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন ক্ষমতা কমিয়ে আনা এবং তা চীনা মিত্র দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া। এটি বেইজিংকে এমন বিশ্বব্যবস্থা গঠনে সহায়তা করতে পারে, যেখানে জাতীয় উন্নয়নকে কোনো ব্যক্তিগত মানবাধিকারের ধারণার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং কোনো মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট চীনের আকাঙ্ক্ষাকে সীমিত করতে পারবে না।

বুধবার চীন তাদের অস্ত্রাগারে থাকা যেসব ক্ষেপণাস্ত্র দেখিয়েছে সেগুলো তাদের বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে হামলা চালাতে সক্ষম করে তুলতে পারে। অত্যাধুনিক হাইপারসনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেগুলো যেকোনো উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতেও সক্ষম। এ ছাড়া তাদের সমর ড্রোন ও লেজার অস্ত্রগুলো ওই অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য চীনা বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা কঠিন করে তুলতে পারে। এই সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রেক্ষাপটে সি তিয়েনআনমেন স্কয়ারের সামনে সমবেত হওয়া জনতার দিকে তাকিয়ে বিশ্ববাসীকে একটি সহজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তা হলো, শান্তি অথবা যুদ্ধের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া।

ছবি

ফ্রান্সে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেলেন সেবাস্টিয়ান লুকোনু

ছবি

নেপালে বিশৃঙ্খলা রোধে সেনাবাহিনী সতর্ক, বিক্ষোভকারীদের সংলাপে বসার আহ্বান

ছবি

নেপালে বিক্ষোভে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২২

ছবি

কাতারে হামাস কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলা

ছবি

নেপালে তারুণ্যের বিক্ষোভের আগুনে পুড়লো সরকার

ছবি

নেপালে উত্তেজনা: প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর পার্লামেন্টে আগুন, বিক্ষোভ তীব্র

ছবি

ফ্রান্সে নতুন রাজনৈতিক সংকট, পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী

ছবি

ইউক্রেনে কমপক্ষে ৯২ জন মার্কিন ভাড়াটে সেনা নিহত : রিপোর্ট

ছবি

সহিংস বিক্ষোভে কাঠমান্ডু বিমানবন্দর বন্ধ, ঢাকায় ফিরল বিমানের ফ্লাইট

ছবি

থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার এক বছরের কারাদণ্ড

ছবি

আফগানিস্তানের ৫ হাজারের বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে

ছবি

ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই, জোরদার বাণিজ্য সম্পর্ক চায় ভারত

ছবি

ইসরায়েলের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করছে হুথি

ছবি

নেপালে টানা বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, অস্থিরতার মধ্যে সেনা মোতায়েন

ছবি

বিক্ষোভে অচল কাঠমান্ডু, বাংলাদেশ ফুটবল দলের ফ্লাইট বাতিল

ছবি

নেপালে তরুণদের কেন এই বিক্ষোভ ও সহিংসতা

ছবি

নেপাল: ১৯ মৃত্যুর পর সোশাল মিডিয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

ছবি

বিক্ষোভের মধ্যে নেপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ

ছবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধে বিক্ষোভ ছড়ালো নেপালজুড়ে: নিহত ১৯, কারফিউ জারি

ছবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে নেপালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

ছবি

পুতিনকে ‘তার চাওয়া পূরণ’ করে দিয়েছেন ট্রাম্প: জেলেনস্কি

ছবি

ইসরায়েলে বাসে হামলায় নিহত ৫, আহত ২২

ছবি

চুক্তিভুক্ত দেশগুলোকে কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় ট্রাম্পের

ছবি

চাঁদের পূর্ণগ্রাসে বিরল মহাজাগতিক দৃশ্য

ছবি

গাজার রাস্তায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ইসরায়েলের ‘বিস্ফোরক রোবট’

ছবি

ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের রামোন বিমানবন্দরে ড্রোন হামলা

ছবি

ইউক্রেনের প্রধান সরকারি ভবনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার হামলা

ছবি

গাজা নগরীর ৪০ ভাগ দখলের দাবি ইসরায়েলের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের অধিবেশনে যাচ্ছেন না মোদি

ছবি

চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব নাগরিকের তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে

ছবি

‘ভারত দুই মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা চাইবে’

ছবি

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় প্রায় চার কোটি মানুষের মৃত্যু

ছবি

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হামলার প্রস্তুতি, মোতায়েন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান

ছবি

ইউক্রেনের মন্ত্রিসভা ভবনে রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ছবি

লন্ডনে বিবিসির সাবেক সদরদপ্তরের টেলিভিশন সেন্টারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

ছবি

থাইল্যান্ডের নতুন প্রধানমন্ত্রী ডানপন্থি ধনকুবের অনুতিন

tab

news » international

ট্রাম্পকে উসকে পুতিন-কিমকে পাশে নিয়ে কী করতে চান শি

বিদেশী সংবাদ মাধোম

পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (বাঁয়ে), চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং (মাঝে) এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন -এএফপি

সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এক পাশে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, অন্য পাশে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনকে নিয়ে বেইজিংয়ে সামরিক কুচকাওয়াজে উপস্থিত হয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। ঠিক তাঁদের পেছনেই ছিলেন ইরান, পাকিস্তান, বেলারুশ ও মিয়ানমারসহ প্রায় দু ডজন দেশের নেতারা। বিশ্বের জন্য এ দৃশ্যের থেকে স্পষ্ট বার্তা আর কী হতে পারে। তিয়েনআনমেন স্কয়ারের বড় পর্দাগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই দৃশ্য দেখেছেন। সামরিক কুচকাওয়াজের বিশাল আয়োজন দেখতে গত বুধবার তীব্র রোদ উপেক্ষা করে তাঁরা রাজধানীর তিয়েনআনমেন স্কয়ারে জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকের হাতে ছিল চীনের ছোট ছোট পতাকা।

চীনজুড়ে টেলিভিশনে সামরিক কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়েছে। চীনের বাইরের অনেক দেশ থেকেও টেলিভিশনে এ দৃশ্য দেখা গেছে। ডনাল্ড ট্রাম্পসহ পশ্চিমা অনেক দেশ একে স্পষ্ট বার্তা হিসেবে দেখেছেন। তাদের মনে হয়েছে, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্ররোচিত করছে।

কুচকাওয়াজ চলার মধ্যেই সিকে উদ্দেশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লেখেন, ‘আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, দয়া করে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবেন।’ কিম ও পুতিনকে পাশে বসিয়ে সি চিন পিং বিশ্বকে দৃঢ়ভাবে এটা দেখাতে চেয়েছেন যে বর্তমানে বিশ্বজুড়ে যে সংঘাত ও দ্বন্দ্ব, তার জন্য তাঁর চারপাশে বসা ব্যক্তিরা দায়ী নন বরং এর দায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার।

গত বুধবার তিয়েনআনমেন স্কয়ারে যাঁরা চীনের হাজার হাজার প্রশিক্ষিত সেনাদের চিৎকার শুনেছেন; কুচকাওয়াজে একে একে অতিকায় পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র ও পানির নিচে চলা ড্রোনের প্রদর্শন দেখেছেন এবং বেইজিংয়ের ‘অ্যাভিনিউ অব ইটারনাল পিস’ ধরে যুদ্ধবিমানগুলোকে নিয়ন্ত্রিতভাবে উড়ে যেতে দেখেছেন, তাঁরা একটা বিষয় স্পষ্টভাবে বুঝেছেন। আর সেটা হলো, সি সামরিক শক্তি দেখাতেই এই আয়োজন করেছেন। সামরিক শক্তি ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে বিকল্প শক্তি হিসেবে চীন যে আবির্ভূত হচ্ছে, এই প্রদর্শনী তা বুঝিয়ে দিয়েছে।

চীন দীর্ঘদিন ধরেই তাদের উত্থান শান্তিপূর্ণ বলে প্রচার করছে। যুক্তরাষ্ট্রকে যুদ্ধবাজ বলে সমালোচনা করেছে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উদ্?যাপন করতে গিয়ে চীন তাদের যে শক্তি দেখিয়েছে, তাতে বোঝা যায় দেশটি দ্রুতগতিতে অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ হতে চলেছে।

কিম ও পুতিনকে পাশে বসিয়ে শি একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন। আর তা হলো দেশে দেশে যে যুদ্ধ চলছে, তার দায় যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির ইশারায় চলা বিশ্বব্যবস্থার। পাশে বসা দুজনের এই পরিস্থিতির জন্য কোনো দায়ভার নেই।

গত বুধবার কুচকাওয়াজে সি যে বক্তব্য দেন তাতে এ বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট হয়। সি বলেন, যখন সব দেশ একে অন্যকে সমান হিসেবে দেখবে, সহযোগিতা করবে, শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবে, কেবল তখনই গোড়া থেকে যুদ্ধ নির্মূল করা যাবে। সাধারণের নিরাপত্তা রক্ষা হবে। সি ও তাঁর কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, সেই মূল কারণ হলো ‘শীতল যুদ্ধ সময়ের মানসিকতা।’

আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, দয়া করে ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং–উনকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে দেবেন।

সপ্তাহের শুরুতে, চীনের বন্দর শহর তিয়ানজিনে সি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলন করেন। সেখানে ‘বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উদ্যোগ’ উন্মোচন করা হয়।এই উদ্যোগের আওতায় সি বিশ্বব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে আরও গণতান্ত্রিক করতে চান। বেইজিংয়ের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ওয়াং ইওয়ে বলেন, জাতিসংঘকে সমর্থন করা এই পরিকল্পনার ব্যাপ্তি বিস্তৃত হতে পারে।

শি জিন পিংয়ের গ্লোবাল গভর্ন্যান্স কেবল নিরাপত্তার দিকে নয় বরং অর্থনীতির নানা দিকেও মনোনিবেশ করবে। সুইফট সিস্টেম, নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরও কিছু বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। ইওয়ে আরও বলেন, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা উদ্যোগ কেবল নিরাপত্তার দিকে নয় বরং অর্থনীতির নানা দিকেও মনোনিবেশ করবে। সুইফট সিস্টেম, নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ আরও কিছু বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া (জাতিসংঘে) গ্লোবাল সাউথের (দেশগুলোর) আরও বেশি মতামত দেওয়ার অধিকার এবং আরও বেশি ক্ষমতা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, সির এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য দুটি। একটি হলো,পশ্চিমা শক্তির চাপে থাকা দেশগুলোর জন্য একটি মিলনকেন্দ্র হিসেবে কাজ করা। আর দ্বিতীয়টি হলো, বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন ক্ষমতা কমিয়ে আনা এবং তা চীনা মিত্র দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া। এটি বেইজিংকে এমন বিশ্বব্যবস্থা গঠনে সহায়তা করতে পারে, যেখানে জাতীয় উন্নয়নকে কোনো ব্যক্তিগত মানবাধিকারের ধারণার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং কোনো মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট চীনের আকাঙ্ক্ষাকে সীমিত করতে পারবে না।

বুধবার চীন তাদের অস্ত্রাগারে থাকা যেসব ক্ষেপণাস্ত্র দেখিয়েছে সেগুলো তাদের বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে হামলা চালাতে সক্ষম করে তুলতে পারে। অত্যাধুনিক হাইপারসনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সেগুলো যেকোনো উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতেও সক্ষম। এ ছাড়া তাদের সমর ড্রোন ও লেজার অস্ত্রগুলো ওই অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য চীনা বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা কঠিন করে তুলতে পারে। এই সামরিক শক্তি প্রদর্শনের প্রেক্ষাপটে সি তিয়েনআনমেন স্কয়ারের সামনে সমবেত হওয়া জনতার দিকে তাকিয়ে বিশ্ববাসীকে একটি সহজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তা হলো, শান্তি অথবা যুদ্ধের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া।

back to top