নেপালের সিংহদরবার প্রাঙ্গণে আগুন জ্বলছে। এখানেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় অবস্থিত -এএফপি
সহিংস বিক্ষোভের পর নেপালে কে পি শর্মা অলি সরকারের পতন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল। প্রেসিডেন্ট পাওদেল খুব সম্ভবত নেপালি সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় রয়েছেন।
তরুণদের বিক্ষোভের মুখে অলি সরকারের পতনের পর আগামী দিনগুলোতে নেপালের পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অলির পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্বে বহাল থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। অলি কোথায় আছেন, তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য জানা যায়নি। প্রেসিডেন্ট বা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের তাঁকে দায়িত্ব পালন করে যেতে অনুরোধ করার বিষয়টি অনেকেই অবাক করেছে।
নেপালের সংবিধানবিশেষজ্ঞ ভিমার্জুন আচার্য বলেন, ‘আমাদের সামনে এমন একটি পরিস্থিতি এসেছে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। কেবল সর্বদলীয় আলোচনার মাধ্যমে এর একটি সমাধান বের করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য আগে বিক্ষোভের অবসান হতে হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের জীবন ও অধিকারের সুরক্ষা জরুরি।’ অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে নেপালের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ও তাঁর পূর্বসূরি কল্যাণ শ্রেষ্ঠার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের দুজনের বয়সই ৭০ পেরিয়ে গেছে।
অনেকের মতো ভিমার্জুন আচার্যও মনে করেন, ১০ বছর আগে রচিত নেপালের বর্তমান সংবিধান কার্যত এখন অকার্যকর। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাই এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কে অলির জায়গা নিতে চলেছেন? সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন এখন এটা। কারণ, নেপালের রাস্তায় বিক্ষোভের যে ঝড় বয়ে গেছে, সে ঝড়ে সব দলের নেতারাই রোষের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ছিলেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। তিনি বিভিন্ন জনমঞ্চে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন এবং জেন-জির বিভিন্ন দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে কার্কি অথবা তাঁর পূর্বসূরি কল্যাণ শ্রেষ্ঠার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের দুজনের বয়সই ৭০ পেরিয়ে গেছে। ১০ বছর আগে রচিত নেপালের বর্তমান সংবিধান কার্যত এখন অকার্যকর। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাই এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
যদিও অনেকে ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছেন, এই দুজনের যে কাউকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হলে ৩০ বছরের কম বয়সীদের এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আরও একটি নাম জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি হলেন কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ। তাঁর বয়স ৩৫ বছর। তিনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং একজন র্যাপার। অলির কট্টর সমালোচক বালেন শাহ জনসমক্ষেই তাঁকে বারবার দুর্নীতিবাজ বলেছেন। তিনিও জেন-জিদের এ বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন।
তবে যেহেতু তাঁর বয়স ২৮ পেরিয়ে গেছে, তাই তিনি তরুণদের ওই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে চান না। অলি সরকারের পতনের পর জেন-জিরা বালেন শাহকে দেশের নেতৃত্বে আসার অনুরোধ করেছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তরুণদের ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তরুণদেরই সরকার পরিচালনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে নেপালের সেনাবাহিনী জনগণ ও জেন-জি বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার, শান্তি বজায় রাখার এবং ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
সেনাবাহিনী থেকে আরও বলা হয়েছে, নাগরিকদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে তারা শান্তি ও পারস্পরিক ঐক্যের মাধ্যমে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার ইঙ্গিতও দিয়েছে।
এদিকে, দুইদিন ধরে অস্থিরতা চলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেপালে সেনা মোতায়েন হয়েছে। পাশাপাশি সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে বাসিন্দাদের চলাচল, জমায়েত, মিছিল ও সমাবেশের ওপর। বিভিন্ন স্থানে চলছে বিশেষ অভিযান। দ্য হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসাত্মক ও অরাজকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে লুট হওয়া ৩৭ লাখ ৩০ হাজার নেপালি রুপি।
এছাড়া, কাঠমান্ডু থেকে ২৩ ও পোখারা থেকে ৮টি মিলিয়ে মোট ৩১টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, সঙ্গে ম্যাগাজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
নেপালের সিংহদরবার প্রাঙ্গণে আগুন জ্বলছে। এখানেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় অবস্থিত -এএফপি
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সহিংস বিক্ষোভের পর নেপালে কে পি শর্মা অলি সরকারের পতন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল। প্রেসিডেন্ট পাওদেল খুব সম্ভবত নেপালি সেনাবাহিনীর সুরক্ষায় রয়েছেন।
তরুণদের বিক্ষোভের মুখে অলি সরকারের পতনের পর আগামী দিনগুলোতে নেপালের পরিস্থিতি কোন দিকে এগোবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অলির পদত্যাগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে পরবর্তী ব্যবস্থা ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্বে বহাল থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। অলি কোথায় আছেন, তাঁর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য জানা যায়নি। প্রেসিডেন্ট বা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের তাঁকে দায়িত্ব পালন করে যেতে অনুরোধ করার বিষয়টি অনেকেই অবাক করেছে।
নেপালের সংবিধানবিশেষজ্ঞ ভিমার্জুন আচার্য বলেন, ‘আমাদের সামনে এমন একটি পরিস্থিতি এসেছে, যার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। কেবল সর্বদলীয় আলোচনার মাধ্যমে এর একটি সমাধান বের করা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য আগে বিক্ষোভের অবসান হতে হবে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। মানুষের জীবন ও অধিকারের সুরক্ষা জরুরি।’ অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে নেপালের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি ও তাঁর পূর্বসূরি কল্যাণ শ্রেষ্ঠার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের দুজনের বয়সই ৭০ পেরিয়ে গেছে।
অনেকের মতো ভিমার্জুন আচার্যও মনে করেন, ১০ বছর আগে রচিত নেপালের বর্তমান সংবিধান কার্যত এখন অকার্যকর। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাই এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কে অলির জায়গা নিতে চলেছেন? সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন এখন এটা। কারণ, নেপালের রাস্তায় বিক্ষোভের যে ঝড় বয়ে গেছে, সে ঝড়ে সব দলের নেতারাই রোষের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। নেপালের সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এবং বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বরাবরই সরব ছিলেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি। তিনি বিভিন্ন জনমঞ্চে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন এবং জেন-জির বিভিন্ন দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য প্রধান হিসেবে কার্কি অথবা তাঁর পূর্বসূরি কল্যাণ শ্রেষ্ঠার নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের দুজনের বয়সই ৭০ পেরিয়ে গেছে। ১০ বছর আগে রচিত নেপালের বর্তমান সংবিধান কার্যত এখন অকার্যকর। অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাই এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
যদিও অনেকে ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছেন, এই দুজনের যে কাউকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হলে ৩০ বছরের কম বয়সীদের এ আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আরও একটি নাম জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে। তিনি হলেন কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন শাহ। তাঁর বয়স ৩৫ বছর। তিনি স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং একজন র্যাপার। অলির কট্টর সমালোচক বালেন শাহ জনসমক্ষেই তাঁকে বারবার দুর্নীতিবাজ বলেছেন। তিনিও জেন-জিদের এ বিক্ষোভে সমর্থন দিয়েছেন।
তবে যেহেতু তাঁর বয়স ২৮ পেরিয়ে গেছে, তাই তিনি তরুণদের ওই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিতে চান না। অলি সরকারের পতনের পর জেন-জিরা বালেন শাহকে দেশের নেতৃত্বে আসার অনুরোধ করেছিল বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি তরুণদের ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তরুণদেরই সরকার পরিচালনায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে নেপালের সেনাবাহিনী জনগণ ও জেন-জি বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার, শান্তি বজায় রাখার এবং ব্যক্তিগত ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
সেনাবাহিনী থেকে আরও বলা হয়েছে, নাগরিকদের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একই সঙ্গে তারা শান্তি ও পারস্পরিক ঐক্যের মাধ্যমে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার ইঙ্গিতও দিয়েছে।
এদিকে, দুইদিন ধরে অস্থিরতা চলার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেপালে সেনা মোতায়েন হয়েছে। পাশাপাশি সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে বাসিন্দাদের চলাচল, জমায়েত, মিছিল ও সমাবেশের ওপর। বিভিন্ন স্থানে চলছে বিশেষ অভিযান। দ্য হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন এলাকায় লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসাত্মক ও অরাজকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে লুট হওয়া ৩৭ লাখ ৩০ হাজার নেপালি রুপি।
এছাড়া, কাঠমান্ডু থেকে ২৩ ও পোখারা থেকে ৮টি মিলিয়ে মোট ৩১টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র, সঙ্গে ম্যাগাজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।