সামরিক অভ্যুত্থান পরিকল্পনার দায়ে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারোকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
পাঁচ বিচারপতির এক প্যানেল তাকে দোষী সাব্যস্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই সাজা ঘোষণা করে। পাঁচ বিচারপতির মধ্যে চারজন তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন আর একজন খালাসের পক্ষে ভোট দেন।
তবে বলসোনারোর আইনজীবীরা এই সাজাকে “অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে “যথাযথভাবে আপিল” করার কথা জানিয়েছেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেন বলসোনারো। বলসোনারোকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সরকারি কোনো পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্যও ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্যানেল।
বিচারের আগেই পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে গৃহবন্দি রাখা বলসোনারো বিচার প্রক্রিয়ার এই শেষ ধাপে সশরীরে আদালতে হাজির হননি।তবে ২০২৬ সালের নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ ঠেকাতেই এই মামলা করা হয়েছে বলে অতীতে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। যদিও অন্য একটি মামলায় এর আগেই তাকে সরকারি পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। একে তিনি ‘উইচ হান্ট’ বা তার মতাদর্শের জন্য সংঘবদ্ধ প্রচারণা বলেও অভিহিত করেছেন। তার বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেও।
বলসোনারোর বিচারের প্রতিশোধ হিসেবে ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প।
এই রায়কে “খুবই বিস্ময়কর” বলে আখ্যা দিয়ে একে নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করে ট্রাম্প বলেন, “আমার সাথেও এমনটা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনোভাবেই সফল হয়নি।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট “অন্যায়ভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোকে কারাদণ্ড দিয়েছে”। একইসাথে এই “উইচ হান্টের জবাব দেয়ার” হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
দ্রুততার সাথে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “তথ্যপ্রমাণ ও রেকর্ডে থাকা জোরালো উপাত্তকে উপেক্ষা করে ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আজ যেভাবে আক্রমণাত্মক হুমকি দিয়েছেন, তা আমাদের গণতন্ত্রকে ভয় দেখাতে পারবে না।”
৭০ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো এখন কার্যত জীবনের বাকি সময় কারাগারেই কাটাবেন।
সম্ভবত তার আইনজীবীরা শাস্তি কমানোর পাশাপাশি তাকে জেলে না পাঠিয়ে গৃহবন্দি অবস্থায় রাখার আবেদন করবেন। তারা ইতোমধ্যেই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত পাঁচ বিচারপতির মধ্যে অন্তত দু’জন খালাসের পক্ষে ভোট দিলে আপিলের সুযোগ থাকায় তা কঠিন হবে।
মোট পাঁচটি অভিযোগে বলসোনারো দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যার সবগুলোই ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে বাদীপক্ষ জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে অভ্যুত্থানের প্রস্তাব দিয়ে এবং ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে ভিত্তিহীন সন্দেহ ছড়িয়ে অনেক আগে থেকেই তিনি ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন।
তারা আরও জানিয়েছে, লুলা ও তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থীসহ সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়েও বলসোনারো অবগত ছিলেন।
বিচারপতিরা রায়ে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ মামলায় তার আরও সাত সহযোগীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দুই সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, এক সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এবং সাবেক নিরাপত্তা মন্ত্রী। যদিও সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় অভ্যুত্থান কার্যকর হয়নি, তবে ২০২৩ সালের ৮ই জানুয়ারি বলসোনারোর সমর্থকেরা সরকারি ভবনে হামলা চালায়।
পরে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচার কার্যক্রম তদারক করা বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরাসের মতে, ব্রাজিল প্রায় একনায়কতন্ত্রে ফিরে যাচ্ছিল।
দোষী সাব্যস্ত করে নিজের ভোটটি দেয়ার আগে তিনি বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছি যে ব্রাজিল প্রায় ২০ বছরের সামরিক শাসনে ফিরে যাচ্ছিল, কারণ এক রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশী এক অপরাধীদের সংগঠন একটি নির্বাচনে হার মেনে নিতে জানে না।”
বৃহস্পতিবার আদালতে বিচারপতি কারমেন লুসিয়ার রায়েও ব্রাজিলের সামরিক শাসনের ইতিহাস ও সাম্প্রতিক অতীত প্রভাব রেখেছে। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে তিনি “ভাইরাস”-এর সঙ্গে তুলনা করেন, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে যে সমাজের মধ্যে ঢুকেছে তাকেই শেষ করে দেবে।
পাঁচ সদস্যের প্যানেলে একমাত্র ভিন্নমত পোষণ করেন বিচারপতি লুইজ ফাক্স। বুধবার টানা ১১ ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন এবং বলসোনারোর খালাসের পক্ষে ভোট দেন। তবে বৃহস্পতিবার প্যানেলের একমাত্র নারী বিচারপতি কারমেন লুসিয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। তিনি সতর্ক করে বলেন, “স্বৈরতন্ত্র থেকে কোনো জাতিই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়।”
শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সামরিক অভ্যুত্থান পরিকল্পনার দায়ে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেয়ার বলসোনারোকে ২৭ বছর তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
পাঁচ বিচারপতির এক প্যানেল তাকে দোষী সাব্যস্ত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই সাজা ঘোষণা করে। পাঁচ বিচারপতির মধ্যে চারজন তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন আর একজন খালাসের পক্ষে ভোট দেন।
তবে বলসোনারোর আইনজীবীরা এই সাজাকে “অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক” আখ্যা দিয়ে “যথাযথভাবে আপিল” করার কথা জানিয়েছেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের নির্বাচনে বামপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় টিকে থাকতে ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেন বলসোনারো। বলসোনারোকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত সরকারি কোনো পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অযোগ্যও ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্যানেল।
বিচারের আগেই পালিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে গৃহবন্দি রাখা বলসোনারো বিচার প্রক্রিয়ার এই শেষ ধাপে সশরীরে আদালতে হাজির হননি।তবে ২০২৬ সালের নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ ঠেকাতেই এই মামলা করা হয়েছে বলে অতীতে অভিযোগ করেছিলেন তিনি। যদিও অন্য একটি মামলায় এর আগেই তাকে সরকারি পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। একে তিনি ‘উইচ হান্ট’ বা তার মতাদর্শের জন্য সংঘবদ্ধ প্রচারণা বলেও অভিহিত করেছেন। তার বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকেও।
বলসোনারোর বিচারের প্রতিশোধ হিসেবে ব্রাজিলীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প।
এই রায়কে “খুবই বিস্ময়কর” বলে আখ্যা দিয়ে একে নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করে ট্রাম্প বলেন, “আমার সাথেও এমনটা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনোভাবেই সফল হয়নি।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট “অন্যায়ভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ের বলসোনারোকে কারাদণ্ড দিয়েছে”। একইসাথে এই “উইচ হান্টের জবাব দেয়ার” হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
দ্রুততার সাথে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “তথ্যপ্রমাণ ও রেকর্ডে থাকা জোরালো উপাত্তকে উপেক্ষা করে ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আজ যেভাবে আক্রমণাত্মক হুমকি দিয়েছেন, তা আমাদের গণতন্ত্রকে ভয় দেখাতে পারবে না।”
৭০ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো এখন কার্যত জীবনের বাকি সময় কারাগারেই কাটাবেন।
সম্ভবত তার আইনজীবীরা শাস্তি কমানোর পাশাপাশি তাকে জেলে না পাঠিয়ে গৃহবন্দি অবস্থায় রাখার আবেদন করবেন। তারা ইতোমধ্যেই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত পাঁচ বিচারপতির মধ্যে অন্তত দু’জন খালাসের পক্ষে ভোট দিলে আপিলের সুযোগ থাকায় তা কঠিন হবে।
মোট পাঁচটি অভিযোগে বলসোনারো দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, যার সবগুলোই ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে বাদীপক্ষ জানিয়েছে, সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে অভ্যুত্থানের প্রস্তাব দিয়ে এবং ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে ভিত্তিহীন সন্দেহ ছড়িয়ে অনেক আগে থেকেই তিনি ক্ষমতায় থাকার ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন।
তারা আরও জানিয়েছে, লুলা ও তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রার্থীসহ সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারপতিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়েও বলসোনারো অবগত ছিলেন।
বিচারপতিরা রায়ে বলেন, তিনি ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ মামলায় তার আরও সাত সহযোগীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দুই সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, এক সাবেক গোয়েন্দা প্রধান এবং সাবেক নিরাপত্তা মন্ত্রী। যদিও সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সমর্থন না থাকায় অভ্যুত্থান কার্যকর হয়নি, তবে ২০২৩ সালের ৮ই জানুয়ারি বলসোনারোর সমর্থকেরা সরকারি ভবনে হামলা চালায়।
পরে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয় এবং দেড় হাজারেরও বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচার কার্যক্রম তদারক করা বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরাসের মতে, ব্রাজিল প্রায় একনায়কতন্ত্রে ফিরে যাচ্ছিল।
দোষী সাব্যস্ত করে নিজের ভোটটি দেয়ার আগে তিনি বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে ভুলে যাচ্ছি যে ব্রাজিল প্রায় ২০ বছরের সামরিক শাসনে ফিরে যাচ্ছিল, কারণ এক রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশী এক অপরাধীদের সংগঠন একটি নির্বাচনে হার মেনে নিতে জানে না।”
বৃহস্পতিবার আদালতে বিচারপতি কারমেন লুসিয়ার রায়েও ব্রাজিলের সামরিক শাসনের ইতিহাস ও সাম্প্রতিক অতীত প্রভাব রেখেছে। অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে তিনি “ভাইরাস”-এর সঙ্গে তুলনা করেন, যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া না হলে যে সমাজের মধ্যে ঢুকেছে তাকেই শেষ করে দেবে।
পাঁচ সদস্যের প্যানেলে একমাত্র ভিন্নমত পোষণ করেন বিচারপতি লুইজ ফাক্স। বুধবার টানা ১১ ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন এবং বলসোনারোর খালাসের পক্ষে ভোট দেন। তবে বৃহস্পতিবার প্যানেলের একমাত্র নারী বিচারপতি কারমেন লুসিয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ব্রাজিলের গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছিল। তিনি সতর্ক করে বলেন, “স্বৈরতন্ত্র থেকে কোনো জাতিই সম্পূর্ণ সুরক্ষিত নয়।”