নেপালের পার্লামেন্টে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা -এএফপি
নেপালের প্রধানমন্ত্রী (পদত্যাগ করা) কে পি শর্মা অলি গত রোববার রাজধানী কাঠমান্ডুতে পরবর্তী দিন এক বড় বিক্ষোভ আয়োজন করায় তরুণদের উপহাস করেছিলেন। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
অলি বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের ‘জেন-জি’ (জেনারেশন জেড) বলে মনে করেন এবং তাঁরা যা চান, তা-ই দাবি করতে পারেন। ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে, অলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। যে ‘জেন-জি’ আন্দোলনকে তিনি অবহেলার সঙ্গে দেখেছিলেন, তাঁরাই এখন নেপালের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলছেন।
অলির ওই বক্তব্যের পরদিন গত সোমবার পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা সংসদ ভবন এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীও চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনিও পদত্যাগ করেন। সোমবার ও মঙ্গলবারের সহিংসতায় মোট ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
নাটকীয় এ ঘটনাপ্রবাহ নেপালকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাম্প্রতিকতম কেন্দ্র বানিয়েছে। এর আগে তরুণদের নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে একই অঞ্চলের বাংলাদেশে সরকারের পতন ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু তিন কোটি জনসংখ্যার দেশটিকেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। কারণ, নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই পরিবর্তনশীল ও উত্তাল এবং দেশটি ভারত, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাখার চেষ্টা করে থাকে।
নেপালে কী ঘটছে: ৮ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার তরুণ সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিছু বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে নিহত হন অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনা দেশজুড়ে তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।
মঙ্গলবার আরও বড় ও ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগান বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। নেপালের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম কান্তিপুর পাবলিকেশন্সের ভবনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গত সোমবার বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে নিহত হন অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনা তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। মঙ্গলবার আরও বড় ও ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের অফিসে আগুন লাগান বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা।
এদিন দুপুরের দিকে অলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে ‘জেন-জি আন্দোলন’ হিসেবে নিজেদের অভিহিত করা বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা এখন সংসদ ভেঙে দেওয়া, নতুন নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও ৮ সেপ্টেম্বরের গুলির নির্দেশদাতাদের বিচার দাবি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে সেনারা রাস্তায় নেমেছেন এবং কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নেপালে এ ধরনের বড় ছাত্র আন্দোলন নতুন নয়। দেশটির আধুনিক ইতিহাস ছাত্র আন্দোলন, রাজপ্রাসাদের হস্তক্ষেপ ও সহিংসতায় ভরা। এর মধ্যে রয়েছে এক দশকের গৃহযুদ্ধও।
কিছু শিক্ষিত নেপালি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ এ পাক-ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতায় তাঁরা নেপালে রানাদের সরাসরি শাসন অবসানের বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত হন।১৯৫১ সালে রানাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন নেপালের প্রথম আধুনিক বিপ্লবে রূপ নেয়। রানাদের একটি চুক্তির মাধ্যমে পরোক্ষ শাসন মেনে নিতে হয়। পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রাজা ত্রিভুবন দেশে ফেরেন। রানা ও তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস (এনসি) মিলে একটি সরকার গঠন করে।
এ বিক্ষোভ এক রাতের ঘটনা নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুর্নীতির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি। তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতাদের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ জমে ছিল তরুণদের। নেতারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদে পালাবদল ঘটিয়েছেন, ঠিক যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা। আশীর্বাদ ত্রিপাঠী, কাঠমান্ডুর নাগরিক ও ডিজিটাল অধিকারকর্মী
১৯৫৯ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়। এনসির বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা প্রধানমন্ত্রী হন।
কিন্তু এক বছর পরই রাজা মাহেন্দ্র বীরবিক্রম কৈরালা সরকারের পতন ঘটান ও প্রায় তিন দশক ধরে রাজনৈতিক দলবিহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় ছাত্র আন্দোলন একমাত্র প্রতিবাদের পথ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন হয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পতন ঘটায় ১৯৯০ সালে এবং সংসদীয় রাজনীতির দরজা আবার খুলে যায়।
নেপালের পার্লামেন্টে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা -এএফপি
শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নেপালের প্রধানমন্ত্রী (পদত্যাগ করা) কে পি শর্মা অলি গত রোববার রাজধানী কাঠমান্ডুতে পরবর্তী দিন এক বড় বিক্ষোভ আয়োজন করায় তরুণদের উপহাস করেছিলেন। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।
অলি বলেছিলেন, বিক্ষোভকারীরা নিজেদের ‘জেন-জি’ (জেনারেশন জেড) বলে মনে করেন এবং তাঁরা যা চান, তা-ই দাবি করতে পারেন। ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ে, অলি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। যে ‘জেন-জি’ আন্দোলনকে তিনি অবহেলার সঙ্গে দেখেছিলেন, তাঁরাই এখন নেপালের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলছেন।
অলির ওই বক্তব্যের পরদিন গত সোমবার পুলিশের গুলিতে কমপক্ষে ১৯ জন নিহত হওয়ায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর জেরে মঙ্গলবার বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা সংসদ ভবন এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দেন। মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীও চাপের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনিও পদত্যাগ করেন। সোমবার ও মঙ্গলবারের সহিংসতায় মোট ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
নাটকীয় এ ঘটনাপ্রবাহ নেপালকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সাম্প্রতিকতম কেন্দ্র বানিয়েছে। এর আগে তরুণদের নেতৃত্বাধীন গণ-আন্দোলনে ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কা ও ২০২৪ সালে একই অঞ্চলের বাংলাদেশে সরকারের পতন ঘটে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেপালের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু তিন কোটি জনসংখ্যার দেশটিকেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বকে প্রভাবিত করবে। কারণ, নেপালের রাজনৈতিক ইতিহাস খুবই পরিবর্তনশীল ও উত্তাল এবং দেশটি ভারত, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রাখার চেষ্টা করে থাকে।
নেপালে কী ঘটছে: ৮ সেপ্টেম্বর হাজার হাজার তরুণ সরকারের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় নামেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। কিছু বিক্ষোভকারী ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে নিহত হন অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনা দেশজুড়ে তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়।
মঙ্গলবার আরও বড় ও ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে ভাঙচুর করে আগুন লাগান বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা। নেপালের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম কান্তিপুর পাবলিকেশন্সের ভবনেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গত সোমবার বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়েন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনী গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে নিহত হন অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনা তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। মঙ্গলবার আরও বড় ও ভয়ানক বিক্ষোভ শুরু হয়। রাজনীতিবিদদের বাড়ি ও রাজনৈতিক দলের অফিসে আগুন লাগান বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা।
এদিন দুপুরের দিকে অলি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে ‘জেন-জি আন্দোলন’ হিসেবে নিজেদের অভিহিত করা বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা এখন সংসদ ভেঙে দেওয়া, নতুন নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও ৮ সেপ্টেম্বরের গুলির নির্দেশদাতাদের বিচার দাবি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা ফেরাতে সেনারা রাস্তায় নেমেছেন এবং কাঠমান্ডুতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। নেপালে এ ধরনের বড় ছাত্র আন্দোলন নতুন নয়। দেশটির আধুনিক ইতিহাস ছাত্র আন্দোলন, রাজপ্রাসাদের হস্তক্ষেপ ও সহিংসতায় ভরা। এর মধ্যে রয়েছে এক দশকের গৃহযুদ্ধও।
কিছু শিক্ষিত নেপালি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ এ পাক-ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতায় তাঁরা নেপালে রানাদের সরাসরি শাসন অবসানের বৃহত্তর আন্দোলনে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত হন।১৯৫১ সালে রানাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন নেপালের প্রথম আধুনিক বিপ্লবে রূপ নেয়। রানাদের একটি চুক্তির মাধ্যমে পরোক্ষ শাসন মেনে নিতে হয়। পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া রাজা ত্রিভুবন দেশে ফেরেন। রানা ও তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল নেপালি কংগ্রেস (এনসি) মিলে একটি সরকার গঠন করে।
এ বিক্ষোভ এক রাতের ঘটনা নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহার আর দুর্নীতির কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি। তিন প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতাদের প্রতি দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ জমে ছিল তরুণদের। নেতারা শুধু প্রধানমন্ত্রীর পদে পালাবদল ঘটিয়েছেন, ঠিক যেন মিউজিক্যাল চেয়ারের খেলা। আশীর্বাদ ত্রিপাঠী, কাঠমান্ডুর নাগরিক ও ডিজিটাল অধিকারকর্মী
১৯৫৯ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়। এনসির বিশ্বেশ্বর প্রসাদ কৈরালা প্রধানমন্ত্রী হন।
কিন্তু এক বছর পরই রাজা মাহেন্দ্র বীরবিক্রম কৈরালা সরকারের পতন ঘটান ও প্রায় তিন দশক ধরে রাজনৈতিক দলবিহীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেন।
রাজনৈতিক কার্যক্রম সীমিত হওয়ায় ছাত্র আন্দোলন একমাত্র প্রতিবাদের পথ হয়ে ওঠে। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে শিক্ষা ও রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন হয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পতন ঘটায় ১৯৯০ সালে এবং সংসদীয় রাজনীতির দরজা আবার খুলে যায়।