ভারতে ভোটার তালিকায় ব্যাপক গরমিল
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ভারতে ভোটার তালিকায় বড় ধরনের গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির উত্তরপ্রদেশের মহোবা জেলায় ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় একটি ছোট ভাঙা ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটারের নাম পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় গ্রামজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুসলিম মিরর সংবাদমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উত্তরপ্রদেশের মহোবা জেলার জৈতপুর গ্রামপঞ্চায়েতের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মাত্র ১৬ বাই ১৫ ফুটের এই এক কামরার ঘরটি ভোটার তালিকা সংশোধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের খাতায় ৪ হাজার ২৭১ মানুষের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসন্ন ২০২৬ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য চলমান এই সংশোধনের সময় এই ‘অলৌকিক’ আবিষ্কার গ্রামজুড়ে বিস্ময় ছড়িয়েছে। কাগজে-কলমে দেখা যাচ্ছে, জৈতপুরের মোট ১৬ হাজার ৬৯ জন ভোটারের প্রায় এক-চতুর্থাংশই নাকি ওই এক কামরার ঘরে থাকেন।
বাড়ির মালিক এবং প্রতিবেশীরা এই ঘটনায় হতবাক। বাড়ির মালিক বলেন, ‘বুথ অফিসার যখন বললেন আমার ঘরে নাকি চার হাজারের বেশি ভোটার আছে, ভেবেছিলাম মজা করছেন।’ কর্মকর্তারা অবশ্য এটিকে ‘ক্লারিক্যাল ভুল’ বলে দায় এড়াতে চেয়েছেন। তারা জানান, তিনটি ওয়ার্ডের নাম ভুলবশত বাড়ি নম্বর ৮০৩-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
সহকারী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আর.পি. বিশ্বকর্মা বলেন, ‘গ্রামে ঘরের নম্বর ঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। তথ্য প্রবেশের সময় বহু নাম এক ঠিকানায় জুড়ে গেছে। ভোটাররা আসল, শুধু ঠিকানার সঙ্গে গড়মিল হয়েছে।’ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কুনওয়ার পঙ্কজ সিং স্বীকার করেন যে, ২০২১ সালেও একই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছিল।
শুধু জৈতপুর নয়, পানওয়ারি শহরের এক বাড়িতে ২৪৩ জন এবং পাশের বাড়িতে ১৮৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্মী চৌধুরী রবীন্দ্র কুমার, যিনি নিজেও এমন একটি ঘরের মালিক, এই অনিয়মের অভিযোগ প্রথম তোলেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছোট ভুল নয়। যখন একটি দলিত বাড়িতে শত শত ভোটারের নাম ঠাসা থাকে, তখন সেটা শুধু অবহেলা নয়, বরং মানুষের আস্থা নষ্ট করে।’
এই গরমিলগুলো এমন এক সময়ে ধরা পড়ছে যখন এআই সহায়তায় পরিচালিত যাচাই অভিযানের পর মহোবায় এক লাখেরও বেশি সন্দেহজনক বা পুনরাবৃত্ত ভোটার শনাক্ত হয়েছিল। এসব কাটছাঁট করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ২৭২টি গ্রামপঞ্চায়েতে ৪৮৬ জন বুথ কর্মকর্তা এবং ৪৯ জন সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দিয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট ক্রমেই বাড়ছে। পানওয়ারির এক বাসিন্দা প্রশ্ন করেছেন, ‘যদি কর্মকর্তারা হাজার হাজার ভোটারকে এক ঘরে গুঁজে দিতে পারেন, তাহলে আমাদের ভোট নিরাপদ আছে কীভাবে?’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিবেক ত্রিপাঠী বলেন, ‘গণতন্ত্র একদিনে ভাঙে না, ধীরে ধীরে দুর্বল হয়।
এমন ভুল উপেক্ষা করা মানে অপব্যবহারের সুযোগ রাখা।’ সমাজকর্মী রাম নারায়ণ এই গরমিলকে ‘গণতন্ত্রের ভিত খেয়ে ফেলা উইপোকার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং অভিযোগ করেছেন, ‘এটা স্পষ্ট ভোট ডাকাতির উদাহরণ। এক ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটার কীভাবে? এমন অনিয়ম গণতন্ত্রে সরাসরি আঘাত। সিসিটিভি ফুটেজ ‘গোপনীয়তা’র অজুহাতে প্রকাশ না করাও সন্দেহ বাড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে ভোট প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ভারতে ভোটার তালিকায় ব্যাপক গরমিল
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ভারতে ভোটার তালিকায় বড় ধরনের গরমিলের অভিযোগ উঠেছে। দেশটির উত্তরপ্রদেশের মহোবা জেলায় ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় একটি ছোট ভাঙা ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটারের নাম পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় গ্রামজুড়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মুসলিম মিরর সংবাদমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উত্তরপ্রদেশের মহোবা জেলার জৈতপুর গ্রামপঞ্চায়েতের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকা মাত্র ১৬ বাই ১৫ ফুটের এই এক কামরার ঘরটি ভোটার তালিকা সংশোধনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের খাতায় ৪ হাজার ২৭১ মানুষের ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসন্ন ২০২৬ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য চলমান এই সংশোধনের সময় এই ‘অলৌকিক’ আবিষ্কার গ্রামজুড়ে বিস্ময় ছড়িয়েছে। কাগজে-কলমে দেখা যাচ্ছে, জৈতপুরের মোট ১৬ হাজার ৬৯ জন ভোটারের প্রায় এক-চতুর্থাংশই নাকি ওই এক কামরার ঘরে থাকেন।
বাড়ির মালিক এবং প্রতিবেশীরা এই ঘটনায় হতবাক। বাড়ির মালিক বলেন, ‘বুথ অফিসার যখন বললেন আমার ঘরে নাকি চার হাজারের বেশি ভোটার আছে, ভেবেছিলাম মজা করছেন।’ কর্মকর্তারা অবশ্য এটিকে ‘ক্লারিক্যাল ভুল’ বলে দায় এড়াতে চেয়েছেন। তারা জানান, তিনটি ওয়ার্ডের নাম ভুলবশত বাড়ি নম্বর ৮০৩-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে।
সহকারী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আর.পি. বিশ্বকর্মা বলেন, ‘গ্রামে ঘরের নম্বর ঠিকভাবে ব্যবহার হয় না। তথ্য প্রবেশের সময় বহু নাম এক ঠিকানায় জুড়ে গেছে। ভোটাররা আসল, শুধু ঠিকানার সঙ্গে গড়মিল হয়েছে।’ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কুনওয়ার পঙ্কজ সিং স্বীকার করেন যে, ২০২১ সালেও একই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছিল।
শুধু জৈতপুর নয়, পানওয়ারি শহরের এক বাড়িতে ২৪৩ জন এবং পাশের বাড়িতে ১৮৫ জনের নাম পাওয়া গেছে। স্থানীয় কর্মী চৌধুরী রবীন্দ্র কুমার, যিনি নিজেও এমন একটি ঘরের মালিক, এই অনিয়মের অভিযোগ প্রথম তোলেন। তিনি বলেন, ‘এটা ছোট ভুল নয়। যখন একটি দলিত বাড়িতে শত শত ভোটারের নাম ঠাসা থাকে, তখন সেটা শুধু অবহেলা নয়, বরং মানুষের আস্থা নষ্ট করে।’
এই গরমিলগুলো এমন এক সময়ে ধরা পড়ছে যখন এআই সহায়তায় পরিচালিত যাচাই অভিযানের পর মহোবায় এক লাখেরও বেশি সন্দেহজনক বা পুনরাবৃত্ত ভোটার শনাক্ত হয়েছিল। এসব কাটছাঁট করতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ২৭২টি গ্রামপঞ্চায়েতে ৪৮৬ জন বুথ কর্মকর্তা এবং ৪৯ জন সুপারভাইজারকে দায়িত্ব দিয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে আস্থার সংকট ক্রমেই বাড়ছে। পানওয়ারির এক বাসিন্দা প্রশ্ন করেছেন, ‘যদি কর্মকর্তারা হাজার হাজার ভোটারকে এক ঘরে গুঁজে দিতে পারেন, তাহলে আমাদের ভোট নিরাপদ আছে কীভাবে?’ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিবেক ত্রিপাঠী বলেন, ‘গণতন্ত্র একদিনে ভাঙে না, ধীরে ধীরে দুর্বল হয়।
এমন ভুল উপেক্ষা করা মানে অপব্যবহারের সুযোগ রাখা।’ সমাজকর্মী রাম নারায়ণ এই গরমিলকে ‘গণতন্ত্রের ভিত খেয়ে ফেলা উইপোকার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।
আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং অভিযোগ করেছেন, ‘এটা স্পষ্ট ভোট ডাকাতির উদাহরণ। এক ঘরে ৪ হাজার ২৭১ ভোটার কীভাবে? এমন অনিয়ম গণতন্ত্রে সরাসরি আঘাত। সিসিটিভি ফুটেজ ‘গোপনীয়তা’র অজুহাতে প্রকাশ না করাও সন্দেহ বাড়ায়। এভাবে চলতে থাকলে ভোট প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’