মায়ানমারে গণহত্যা ও নির্যাতনের কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ‘১৩ লাখ’ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মির মাধ্যমে রাখাইনে প্রত্যাবাসনকেও নিরাপদ মনে করছেন না রোহিঙ্গারা। তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান।
‘রোহিঙ্গা পার্সপেক্টিভস অন পাথওয়েজ টু আ সেইফ, ডিগনিফায়েড অ্যান্ড পিসফুল ফিউচার’ শীর্ষক জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়।
রোহিঙ্গা সংকট ও মায়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উঁচুপর্যায়ের এক সম্মেলনকে সামনে রেখে এটি প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গবেষণামূলক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণায় কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরের ১২৫ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বের সংকটের কথাও উঠে এসেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ জানান, তাদের কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নেই। আর ৬০ শতাংশ নারী জানান, তারা বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে সামান্যই সচেতন বা সচেতনই নন।
সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের ৭০ শতাংশের বেশি মনে করেন, রাখাইন রাজ্য দখলে রাখা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) তাদের নিঃশেষ করতে চাইছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে তাদের মায়ানমারে ফেরানো হলে তারা জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত হওয়া, ধর্মীয় নিপীড়ন বা নির্দিষ্ট আশ্রয় শিবিরের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ জীবনযাপনের মুখোমুখি হবেন। নির্বিচার গ্রেপ্তার, অপহরণ ও চলাফেরার ওপর সহিংস বিধিনিষেধ আরোপসহ নানা ধরনের নির্যাতনের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
এ ক্ষেত্রে নারী ও কিশোরীরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে আছেন। অনেক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, মায়ানমারে ২০১৭ সালে নিপীড়ন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে ট্রমার মুখোমুখি হওয়ায় সেখানে ফিরে যেতে ব্যক্তিগতভাবে অনিচ্ছুক তারা। তবে তারা তাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে প্রত্যাবাসন চান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গারা চাইছেন জাতিসংঘ, আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলো ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সক্রিয় নেতৃত্ব মায়ানমারের পক্ষগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।
তারা মনে করেন, শুধু স্থানীয় বা মানবিক সহায়তাই যথেষ্ট নয়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা মায়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি চুক্তি ও অতীতের অপরাধের দায় নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
শুধু কথায় নয়, এর জন্য প্রয়োজন আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যাতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায়, প্রত্যাশা তাদের।
রোহিঙ্গারা আরও দাবি জানিয়েছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বা পথনকশা প্রণয়নে শিক্ষিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তারা মনে করছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মূল শর্ত হিসেবে পূর্ণ নাগরিকত্ব ও রোহিঙ্গা পরিচয়ের স্বীকৃতি, সমান অধিকার, শিক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, জীবিকা ও অবাধ চলাচলের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তারা রাখাইনের মংডু, বুথিডং ও রাথেডং নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অঞ্চল বা একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা তাদের ভূমি ফেরত, ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের কথাও বলেছেন।
শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মায়ানমারে গণহত্যা ও নির্যাতনের কারণে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ‘১৩ লাখ’ রোহিঙ্গার জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মির মাধ্যমে রাখাইনে প্রত্যাবাসনকেও নিরাপদ মনে করছেন না রোহিঙ্গারা। তাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমাধান।
‘রোহিঙ্গা পার্সপেক্টিভস অন পাথওয়েজ টু আ সেইফ, ডিগনিফায়েড অ্যান্ড পিসফুল ফিউচার’ শীর্ষক জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়।
রোহিঙ্গা সংকট ও মায়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উঁচুপর্যায়ের এক সম্মেলনকে সামনে রেখে এটি প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) গবেষণামূলক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গবেষণায় কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরের ১২৫ জন রোহিঙ্গা পুরুষ ও নারীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বের সংকটের কথাও উঠে এসেছে। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৪৫ শতাংশ জানান, তাদের কার্যকর প্রতিনিধিত্ব নেই। আর ৬০ শতাংশ নারী জানান, তারা বর্তমান নেতৃত্বের বিষয়ে সামান্যই সচেতন বা সচেতনই নন।
সাক্ষাৎকার দেওয়া রোহিঙ্গাদের ৭০ শতাংশের বেশি মনে করেন, রাখাইন রাজ্য দখলে রাখা সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) তাদের নিঃশেষ করতে চাইছে। অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা আশঙ্কা করছেন, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে তাদের মায়ানমারে ফেরানো হলে তারা জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত হওয়া, ধর্মীয় নিপীড়ন বা নির্দিষ্ট আশ্রয় শিবিরের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ জীবনযাপনের মুখোমুখি হবেন। নির্বিচার গ্রেপ্তার, অপহরণ ও চলাফেরার ওপর সহিংস বিধিনিষেধ আরোপসহ নানা ধরনের নির্যাতনের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
এ ক্ষেত্রে নারী ও কিশোরীরা বিশেষভাবে ঝুঁকির মুখে আছেন। অনেক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, মায়ানমারে ২০১৭ সালে নিপীড়ন ও উচ্ছেদের শিকার হয়ে ট্রমার মুখোমুখি হওয়ায় সেখানে ফিরে যেতে ব্যক্তিগতভাবে অনিচ্ছুক তারা। তবে তারা তাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে প্রত্যাবাসন চান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গারা চাইছেন জাতিসংঘ, আঞ্চলিক শক্তিধর দেশগুলো ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সক্রিয় নেতৃত্ব মায়ানমারের পক্ষগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।
তারা মনে করেন, শুধু স্থানীয় বা মানবিক সহায়তাই যথেষ্ট নয়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। রোহিঙ্গারা মায়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি চুক্তি ও অতীতের অপরাধের দায় নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক আদালতগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
শুধু কথায় নয়, এর জন্য প্রয়োজন আইনি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যাতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় এবং ভবিষ্যতে একই ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা যায়, প্রত্যাশা তাদের।
রোহিঙ্গারা আরও দাবি জানিয়েছেন, যেকোনো প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা বা পথনকশা প্রণয়নে শিক্ষিত রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তারা মনে করছেন, নিজেদের ভবিষ্যৎ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য শিক্ষিত রোহিঙ্গাদের মতামত ও অভিজ্ঞতা অপরিহার্য। রোহিঙ্গারা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের মূল শর্ত হিসেবে পূর্ণ নাগরিকত্ব ও রোহিঙ্গা পরিচয়ের স্বীকৃতি, সমান অধিকার, শিক্ষা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা, জীবিকা ও অবাধ চলাচলের নিশ্চয়তা চেয়েছেন। তারা রাখাইনের মংডু, বুথিডং ও রাথেডং নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অঞ্চল বা একটি নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা তাদের ভূমি ফেরত, ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের কথাও বলেছেন।