alt

দিনের আলোয় রুশ হামলা, থমকে যাচ্ছে ইউক্রেনীয়দের জীবন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুটিনের পাশাপাশি এখন শেখানো হয় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর পথ, জরুরি সরে যাওয়ার নিয়ম -এএফপি

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করেই পাঁচ বছরের শিশুকে শ্রেণিকক্ষের বদলে নামতে হয়েছে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়ে। ২ সেপ্টেম্বর সকালেই বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। আর অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো তাকেও পাঠানো হয় বেজমেন্টে। যুদ্ধের মধ্যে স্কুলজীবনের এমন বাস্তবতাই এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনীয় শিশুদের জন্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-র এক প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।

রাশিয়া এ বছর নিজেদের ড্রোন উৎপাদন বাড়ানোর পর থেকে হামলার পরিমাণ ও মাত্রা বেড়েছে। আগে বেশিরভাগ আক্রমণ হতো রাতে, তবে সম্প্রতি দিনের বেলায়ও হামলার হুমকি বাড়ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে শুধু কিয়েভেই এক হাজার আটশোর বেশি বিমান হামলা সতর্কতা জারি হয়েছে। এর ফলে নাগরিক জীবনে প্রায় ২ হাজার ২০০ ঘণ্টা থেমে গেছে কার্যক্রম। চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে গড়ে দিনে দু’বার সাইরেন বাজছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার-এর বিশ্লেষক ক্রিস্টিনা হারওয়ার্ড বলেন, পুতিন ও ক্রেমলিনের শীর্ষ নেতারা বারবারই বলেছেন, তারা আলোচনায় আগ্রহী নন। বরং এসব হামলা তাদের সেই অবস্থানকেই আরও স্পষ্ট করছে।

স্কুলগুলোরও মানিয়ে নেওয়ার নিয়ম তৈরি হয়েছে। নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুটিনের পাশাপাশি এখন শেখানো হয় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর পথ, জরুরি সরে যাওয়ার নিয়ম। কিয়েভের একটি স্কুলের উপ-প্রধান লিউদমিলা আন্দ্রুক জানান, ৭০০ শিক্ষার্থীকে আশ্রয়ে পৌঁছাতে ছয় মিনিট লাগে। তিনি বলেন, শারীরিক নিরাপত্তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মানসিক স্থিতিও আমাদের জন্য সমান জরুরি। দীর্ঘ সময় আশ্রয়ে কাটাতে হলে আমরা গল্প বলি, খেলা খেলি বা ভিডিও দেখি। তবুও ক্লাসে ফেরার পর শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

শুধু স্কুল নয়, দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কিয়েভের বৃহত্তম শপিং সেন্টার লাভিনা মলে একসঙ্গে ২০ হাজার মানুষ কেনাকাটা করেন। প্রতিবার সাইরেন বাজলেই সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সিইও দিমিত্রো লাশিন বলেন, মানুষ এখন আর অবসরে ঘুরে কেনাকাটা করে না, বরং দ্রুত যা প্রয়োজন তাই কিনে নেয়। তার কথায়, আমাদের জরিপে দেখা গেছে, মানুষ একদিন ধরে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা করছে। তারা ভাবে, কাল হয়তো আর থাকব না, তাই আজ কেন নিজেকে বঞ্চিত করব?

সংস্কৃতিজগতেও বদল এসেছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক ওলেক্সি কোমারোভস্কি বলেন, এখন সিনেমা রেটিংয়ের নতুন মানদ- তৈরি হয়েছে। যদি দর্শকরা আশ্রয় থেকে ফিরে এসে ছবি শেষ করেন, তবে বুঝতে হবে সিনেমাটি সত্যিই ভালো। বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকরাও এখন প্রতিরক্ষায় যুক্ত হচ্ছেন। কিয়েভের একটি স্বেচ্ছাসেবী ইউনিটের প্রধান আন্দ্রি জানান, নির্মাণশ্রমিক থেকে শুরু করে কবি পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের দলে আছেন। ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণে ড্রোন শনাক্ত ও গুলি করে নামানোর কৌশল শেখানো হয়। তার মতে, ড্রোনযুদ্ধ এখন জটিল হয়ে উঠেছে, যা আসলে ‘ক্ষুদ্রাকৃতির বিমান চালনার সমান দক্ষতা’ দাবি করে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া বর্তমানে মাসে পাঁচ হাজারের বেশি দূরপাল্লার আঘাত হানতে সক্ষম ড্রোন তৈরি করছে। চীনা যন্ত্রাংশ সরবরাহ না থাকলে এ উৎপাদন সম্ভব হতো না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার সামরিক শিল্পে ব্যবহৃত চিপস ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের বড় অংশ আসছে চীনা কোম্পানি থেকে। কিয়েভের শিশুশিক্ষার্থীরা এখন ‘গ্র্যাব ব্যাগ’ নিয়ে স্কুলে আসে। যার ভেতরে থাকে পানি, খাবার ও জরুরি নম্বর লেখা স্টিকার। টিম হ্রিশচুক নামের এক শিশু জানায়, দ্বিতীয় দিনে আশ্রয়ে তিন ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে। তার কথায়, আমি শুধু বসেছিলাম, কিছু স্ন্যাকস খেয়েছি আর খেলা খেলেছি। তবে বেশ বিরক্তও লেগেছিল। যুদ্ধের প্রতিটি হামলা, প্রতিটি সাইরেন, প্রতিটি আশ্রয়—ইউক্রেনের লাখো মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে প্রতিদিন থামিয়ে দিচ্ছে। আর এটিই রাশিয়ার যুদ্ধনীতির বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হঠাৎ করেই সুর বদলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলো আবার কিয়েভ ফিরে পেতে পারে বলে বিশ্বাস তাঁর। কিছুদিন আগেও যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছাড় দেওয়া লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে যাবে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানেই কথাগুলো বলেন তিনি। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখ- রাশিয়ার দখলে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়াও।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর উপদ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল রুশ বাহিনী।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়া এখন বড় অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। তিনি মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে বর্তমানে লড়াই করার এবং নিজেদের প্রকৃত মানচিত্রের পুরো অংশ ফিরিয়ে আনার অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।

ছবি

বিক্ষুব্ধ লাদাখে কারফিউ জারি করল নয়াদিল্লি

ছবি

উদ্ভাবনী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে চীন

ছবি

রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কমে গেছে: জাতিসংঘের প্রতিবেদন

ছবি

ইসরায়েলের আগ্রাসন ‘দুই রাষ্ট্র সমাধানের’ পথ বন্ধ করে দেবে: মাহমুদ আব্বাস

ছবি

এবার জেন-জিদের বিক্ষোভে উত্তাল মাদাগাস্কার, রাজধানীতে কারফিউ জারি

ছবি

জেগে উঠেছে ভারতের একমাত্র সক্রিয় আগ্নেয়গিরি

ছবি

ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেব না: ট্রাম্প

ছবি

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইয়েমেনে নিহত ৮

ছবি

নেতানিয়াহুকে পশ্চিম তীর অধিভুক্ত করতে দেবেন না: ট্রাম্প

জাতিসংঘে ‘তিন নাশকতার’ তদন্ত চান ট্রাম্প

ছবি

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জাপানের প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

ট্রাম্পের অভিযোগ: জাতিসংঘ অধিবেশনে ‘তিনটি নাশকতা’ তদন্তের দাবি

ছবি

রাশিয়া কোনো কাগুজে বাঘ নয়: ক্রেমলিন

ছবি

ইরান কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে না: মাসুদ পেজেশকিয়ান

ছবি

উত্তর কোরিয়ার কাছে ২ হাজার কেজি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে

ছবি

ইরানের হাতে ইসরায়েলের ‘কয়েক লাখ পৃষ্ঠার’ গোপন নথি পারমাণবিক স্থাপনার ছবি প্রকাশ

ছবি

মুসলিম নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের মধ্যেই গাজায় তীব্র হামলা

ছবি

ভারত-চীন উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে জেন-জি বিক্ষোভ কীভাবে রক্তাক্ত হয়ে উঠল

ছবি

ডালাসে আইসিই দপ্তরে বন্দুকধারীর হামলা, নিহত ১

ছবি

আসল অপরাধী ইসরায়েল, শাস্তি ভোগ করছে ইরান: পেজেশকিয়ান

ছবি

নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জাপানের প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

জাতিসংঘ চলছে বিবৃতি দিয়ে, কাজের কাজ কিছু করছে না: জেলেনস্কি

ছবি

তাইওয়ান, হংকংয়ের পর চীনের মূল ভূখণ্ডে বছরের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ঘূর্ণিঝড়

ছবি

উদাসীনতার ভারে ভেঙে পড়ছে জাতিসংঘ : আন্তোনিও গুতেরেস

ছবি

ইউরোপে গরমে এক বছরে ৬২ হাজার মানুষের মৃত্যু

ছবি

নিউইয়র্কে ইরানি কূটনীতিকদের কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা

ছবি

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই চাঁদের কাছে মানুষ পাঠাতে চায় নাসা

ছবি

পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভারত

ছবি

জাতিসংঘে ‘দীর্ঘতম’ ভাষণে মিত্রদের কী বার্তা দিলেন ট্রাম্প

ছবি

জাতিসংঘে ট্রাম্প চড়ার পর থেমে গেল চলন্ত সিঁড়ি, পরে টেলিপ্রম্পটারেও বিভ্রাট

ছবি

সুপার টাইফুন রাগাসার আঘাতে তাইওয়ানে ১৪ জনের মৃত্যু, হংকং বিপর্যস্ত

ছবি

গাজার জন্য হামাসকে দুষলেন ট্রাম্প, বললেন জাতিসংঘ অকার্যকর

ছবি

মেধাবীদের টানতে চীনের ‘কে ভিসা’ ঘোষণা

ছবি

গাজায় শান্তিরক্ষী পাঠাতে চায় ইন্দোনেশিয়া

ছবি

ইসরায়েলের জন্য ‘রেড লাইন’ ঘোষণা করল ফ্রান্স-সৌদি

ছবি

ইরানে ৮টি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে রাশিয়া

tab

দিনের আলোয় রুশ হামলা, থমকে যাচ্ছে ইউক্রেনীয়দের জীবন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুটিনের পাশাপাশি এখন শেখানো হয় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর পথ, জরুরি সরে যাওয়ার নিয়ম -এএফপি

শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু করেই পাঁচ বছরের শিশুকে শ্রেণিকক্ষের বদলে নামতে হয়েছে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়ে। ২ সেপ্টেম্বর সকালেই বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে। আর অন্যান্য শিক্ষার্থীর মতো তাকেও পাঠানো হয় বেজমেন্টে। যুদ্ধের মধ্যে স্কুলজীবনের এমন বাস্তবতাই এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ইউক্রেনীয় শিশুদের জন্য। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-র এক প্রতিবেদনে এমন পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে।

রাশিয়া এ বছর নিজেদের ড্রোন উৎপাদন বাড়ানোর পর থেকে হামলার পরিমাণ ও মাত্রা বেড়েছে। আগে বেশিরভাগ আক্রমণ হতো রাতে, তবে সম্প্রতি দিনের বেলায়ও হামলার হুমকি বাড়ছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে শুধু কিয়েভেই এক হাজার আটশোর বেশি বিমান হামলা সতর্কতা জারি হয়েছে। এর ফলে নাগরিক জীবনে প্রায় ২ হাজার ২০০ ঘণ্টা থেমে গেছে কার্যক্রম। চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে গড়ে দিনে দু’বার সাইরেন বাজছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার-এর বিশ্লেষক ক্রিস্টিনা হারওয়ার্ড বলেন, পুতিন ও ক্রেমলিনের শীর্ষ নেতারা বারবারই বলেছেন, তারা আলোচনায় আগ্রহী নন। বরং এসব হামলা তাদের সেই অবস্থানকেই আরও স্পষ্ট করছে।

স্কুলগুলোরও মানিয়ে নেওয়ার নিয়ম তৈরি হয়েছে। নতুন শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুটিনের পাশাপাশি এখন শেখানো হয় আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছানোর পথ, জরুরি সরে যাওয়ার নিয়ম। কিয়েভের একটি স্কুলের উপ-প্রধান লিউদমিলা আন্দ্রুক জানান, ৭০০ শিক্ষার্থীকে আশ্রয়ে পৌঁছাতে ছয় মিনিট লাগে। তিনি বলেন, শারীরিক নিরাপত্তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, মানসিক স্থিতিও আমাদের জন্য সমান জরুরি। দীর্ঘ সময় আশ্রয়ে কাটাতে হলে আমরা গল্প বলি, খেলা খেলি বা ভিডিও দেখি। তবুও ক্লাসে ফেরার পর শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

শুধু স্কুল নয়, দৈনন্দিন জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। কিয়েভের বৃহত্তম শপিং সেন্টার লাভিনা মলে একসঙ্গে ২০ হাজার মানুষ কেনাকাটা করেন। প্রতিবার সাইরেন বাজলেই সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সিইও দিমিত্রো লাশিন বলেন, মানুষ এখন আর অবসরে ঘুরে কেনাকাটা করে না, বরং দ্রুত যা প্রয়োজন তাই কিনে নেয়। তার কথায়, আমাদের জরিপে দেখা গেছে, মানুষ একদিন ধরে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা করছে। তারা ভাবে, কাল হয়তো আর থাকব না, তাই আজ কেন নিজেকে বঞ্চিত করব?

সংস্কৃতিজগতেও বদল এসেছে। চলচ্চিত্র প্রযোজক ওলেক্সি কোমারোভস্কি বলেন, এখন সিনেমা রেটিংয়ের নতুন মানদ- তৈরি হয়েছে। যদি দর্শকরা আশ্রয় থেকে ফিরে এসে ছবি শেষ করেন, তবে বুঝতে হবে সিনেমাটি সত্যিই ভালো। বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকরাও এখন প্রতিরক্ষায় যুক্ত হচ্ছেন। কিয়েভের একটি স্বেচ্ছাসেবী ইউনিটের প্রধান আন্দ্রি জানান, নির্মাণশ্রমিক থেকে শুরু করে কবি পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের দলে আছেন। ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণে ড্রোন শনাক্ত ও গুলি করে নামানোর কৌশল শেখানো হয়। তার মতে, ড্রোনযুদ্ধ এখন জটিল হয়ে উঠেছে, যা আসলে ‘ক্ষুদ্রাকৃতির বিমান চালনার সমান দক্ষতা’ দাবি করে।

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া বর্তমানে মাসে পাঁচ হাজারের বেশি দূরপাল্লার আঘাত হানতে সক্ষম ড্রোন তৈরি করছে। চীনা যন্ত্রাংশ সরবরাহ না থাকলে এ উৎপাদন সম্ভব হতো না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার সামরিক শিল্পে ব্যবহৃত চিপস ও টেলিযোগাযোগ সরঞ্জামের বড় অংশ আসছে চীনা কোম্পানি থেকে। কিয়েভের শিশুশিক্ষার্থীরা এখন ‘গ্র্যাব ব্যাগ’ নিয়ে স্কুলে আসে। যার ভেতরে থাকে পানি, খাবার ও জরুরি নম্বর লেখা স্টিকার। টিম হ্রিশচুক নামের এক শিশু জানায়, দ্বিতীয় দিনে আশ্রয়ে তিন ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে। তার কথায়, আমি শুধু বসেছিলাম, কিছু স্ন্যাকস খেয়েছি আর খেলা খেলেছি। তবে বেশ বিরক্তও লেগেছিল। যুদ্ধের প্রতিটি হামলা, প্রতিটি সাইরেন, প্রতিটি আশ্রয়—ইউক্রেনের লাখো মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে প্রতিদিন থামিয়ে দিচ্ছে। আর এটিই রাশিয়ার যুদ্ধনীতির বড় অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে হঠাৎ করেই সুর বদলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলো আবার কিয়েভ ফিরে পেতে পারে বলে বিশ্বাস তাঁর। কিছুদিন আগেও যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছাড় দেওয়া লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন তিনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ক্রেমলিন বলেছে, ইউক্রেনে অভিযান চালিয়ে যাবে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে গত মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। সেখানেই কথাগুলো বলেন তিনি। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখ- রাশিয়ার দখলে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়াও।

২০১৪ সালে ইউক্রেনে রুশপন্থী সরকারের পতনের পর উপদ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল রুশ বাহিনী।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়া এখন বড় অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেনের পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। তিনি মনে করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে বর্তমানে লড়াই করার এবং নিজেদের প্রকৃত মানচিত্রের পুরো অংশ ফিরিয়ে আনার অবস্থানে রয়েছে ইউক্রেন।

back to top