ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতবিক্ষত গাজা উপত্যকা -এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় হামাস সম্মতি দেওয়ার পরও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ অধীর আগ্রহে যুদ্ধবিরতির দিকে তাকিয়ে আছে। গতকাল রোববারও ভারী বোমাবর্ষণ করেছে দখলদার বাহিনী। বহু ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজার রাস্তায় বাস্তুচ্যুত মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগ নিয়ে দিন পার করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজার বৃহত্তম নগর কেন্দ্র শহরজুড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ বাড়িয়েছে। ড্রোনগুলো আবাসিক ভবনের ছাদে গ্রেনেড ফেলছে। সৈন্যরা বিস্ফোরকবোঝাই যানবাহন দিয়ে গাজা শহরের কয়েক ডজন বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে। আলজাজিরা ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে, আজ সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোয় যুদ্ধ অবসানে প্রথম দফার আলোচনা শুরু হচ্ছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যে তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ‘আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি।’ অন্যদিকে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক কর্মীদের নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও। গাজায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি ও গণহত্যা অব্যাহত রাখায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজায় শান্তি ফেরানোর প্রথম ধাপের আলোচনা সহজ হলেও দ্বিতীয় ধাপে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। আলোচনা শুরু হলেও চুক্তির নিশ্চয়তা নেই। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ছাড়া হামলা বন্ধ হবে না। বিপরীতে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জিম্মিদের মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিশ্বনেতাদের দৌড়াদৌড়িতেও গাজার স্থলভাগে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের ধৈর্য ভেঙে পড়ছে। ট্রাম্পের বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ট্যাঙ্ক শনিবার রাতভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ করেছে। গাজা শহরের পশ্চিমে আল-তায়ারান জংশনে একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে সোমবার, (০৬ অক্টোবর ২০২৫) ভয়াবহ বিমান হামলা হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আহমেদ আসাদ রয়টার্সকে বলেন, দুই বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিক যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে দেখেছি। এখন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। আমরা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। আমরা কি রাস্তায় থাকব? গাজার আরেক বাসিন্দা বলেন, সংকীর্ণ জায়গায় কয়েক ডজন পরিবার একসঙ্গে তাঁবুতে বাস করছি। খাবার ও পানীয়জল পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ১৯ লাখ মানুষ, অর্থাৎ ৯০ শতাংশ জনসংখ্যাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রোববারের হামলায় প্রাণ যায় ১৯ ফিলিস্তিনির। গত ২৪ মাসে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ হাজার ১৩৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত কমপক্ষে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন। অনাহারে গাজায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুধায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৬০-এ। তাদের মধ্যে ১৫৪ শিশু রয়েছে।
শান্তি ফেরাতে কায়রোয় আলোচনা শুরু: গাজায় শান্তি ফেরাতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় পক্ষগুলো আজ সোমবার থেকে আলোচনায় বসছে। রোববার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা ছাড়াও মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারের আলোচকরা কায়রোয় উপস্থিত হন। গত শুক্রবার ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় হামাস সম্মতি জানানোর পর এই আলোচনার দ্বার খুলেছে।
তবে হামাসের বিবৃতিকে ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নাখোশ হয়েছেন। বিশেষ করে নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে হামাস আলোচনা শর্ত দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময়ের আলোচনা সহজ হবে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা আরও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, অগ্রগতি নির্ভর করবে হামাস নতুন মানচিত্রে সম্মত হবে কিনা তার ওপর। নতুন মানচিত্রে যেখানে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের জন্য কঠোর দাবি জানাতে পারে।
নেতানিয়াহু তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহকারী রন ডার্মারকে কায়রোতে আলোচনায় পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক দিনে জিম্মিদের মুক্তির ঘোষণা আসার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশ নেবেন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। হামাসের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তুরস্কও আলোচনায় জড়িত রয়েছে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে একমত করানোর ব্যাপারটি বিশাল চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ, এখানে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতবিক্ষত গাজা উপত্যকা -এএফপি
সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনায় হামাস সম্মতি দেওয়ার পরও ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। গাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ অধীর আগ্রহে যুদ্ধবিরতির দিকে তাকিয়ে আছে। গতকাল রোববারও ভারী বোমাবর্ষণ করেছে দখলদার বাহিনী। বহু ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গাজার রাস্তায় বাস্তুচ্যুত মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগ নিয়ে দিন পার করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বিমানগুলো গাজার বৃহত্তম নগর কেন্দ্র শহরজুড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ বাড়িয়েছে। ড্রোনগুলো আবাসিক ভবনের ছাদে গ্রেনেড ফেলছে। সৈন্যরা বিস্ফোরকবোঝাই যানবাহন দিয়ে গাজা শহরের কয়েক ডজন বাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে। আলজাজিরা ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এদিকে, আজ সোমবার মিসরের রাজধানী কায়রোয় যুদ্ধ অবসানে প্রথম দফার আলোচনা শুরু হচ্ছে। ট্রাম্প ইতোমধ্যে তাঁর সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে বলেছেন, ‘আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি।’ অন্যদিকে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা থেকে আটক কর্মীদের নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও। গাজায় দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি ও গণহত্যা অব্যাহত রাখায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, গাজায় শান্তি ফেরানোর প্রথম ধাপের আলোচনা সহজ হলেও দ্বিতীয় ধাপে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। আলোচনা শুরু হলেও চুক্তির নিশ্চয়তা নেই। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুমকি দিয়েছেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ছাড়া হামলা বন্ধ হবে না। বিপরীতে হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জিম্মিদের মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই হামলা বন্ধ করতে হবে।
বিশ্বনেতাদের দৌড়াদৌড়িতেও গাজার স্থলভাগে কোনো পরিবর্তন আসেনি। ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনিদের ধৈর্য ভেঙে পড়ছে। ট্রাম্পের বোমাবর্ষণ বন্ধের আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ট্যাঙ্ক শনিবার রাতভর গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণ করেছে। গাজা শহরের পশ্চিমে আল-তায়ারান জংশনে একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে সোমবার, (০৬ অক্টোবর ২০২৫) ভয়াবহ বিমান হামলা হয়েছে।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আহমেদ আসাদ রয়টার্সকে বলেন, দুই বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে একাধিক যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে দেখেছি। এখন যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি। আমরা পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। আমরা কি রাস্তায় থাকব? গাজার আরেক বাসিন্দা বলেন, সংকীর্ণ জায়গায় কয়েক ডজন পরিবার একসঙ্গে তাঁবুতে বাস করছি। খাবার ও পানীয়জল পাওয়া যাচ্ছে না। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ১৯ লাখ মানুষ, অর্থাৎ ৯০ শতাংশ জনসংখ্যাই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গত চব্বিশ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬৬ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রোববারের হামলায় প্রাণ যায় ১৯ ফিলিস্তিনির। গত ২৪ মাসে নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৭ হাজার ১৩৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত কমপক্ষে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন। অনাহারে গাজায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুধায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪৬০-এ। তাদের মধ্যে ১৫৪ শিশু রয়েছে।
শান্তি ফেরাতে কায়রোয় আলোচনা শুরু: গাজায় শান্তি ফেরাতে মিসরের রাজধানী কায়রোয় পক্ষগুলো আজ সোমবার থেকে আলোচনায় বসছে। রোববার যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল ও হামাসের প্রতিনিধিরা ছাড়াও মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতারের আলোচকরা কায়রোয় উপস্থিত হন। গত শুক্রবার ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনায় হামাস সম্মতি জানানোর পর এই আলোচনার দ্বার খুলেছে।
তবে হামাসের বিবৃতিকে ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু নাখোশ হয়েছেন। বিশেষ করে নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে হামাস আলোচনা শর্ত দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময়ের আলোচনা সহজ হবে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা আরও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, অগ্রগতি নির্ভর করবে হামাস নতুন মানচিত্রে সম্মত হবে কিনা তার ওপর। নতুন মানচিত্রে যেখানে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। হামাস গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের জন্য কঠোর দাবি জানাতে পারে।
নেতানিয়াহু তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহকারী রন ডার্মারকে কায়রোতে আলোচনায় পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী কয়েক দিনে জিম্মিদের মুক্তির ঘোষণা আসার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অংশ নেবেন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার। হামাসের শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তুরস্কও আলোচনায় জড়িত রয়েছে।
মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলোচনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে একমত করানোর ব্যাপারটি বিশাল চ্যালেঞ্জের হবে। কারণ, এখানে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধীরে ধীরে প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।