গাজায় ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে এক নারীর আহজারী -এএফপি
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ বা অস্ত্রবিরতির বার্তা এলেও দুই বছরে আসেনি সমাধান। এই সময়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলও পারেনি সব জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে। এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বেড়েছে সমর্থন আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উঠেছে গণহত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৪৮ সালে প্রমিজ ল্যান্ড হিসেবে ইসরায়েল সৃষ্টির পরই শুরু হয় যুদ্ধ। ঘরবাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয় ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে। যাদের মধ্যে অনেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী জর্ডান, সিরিয়া, লেবাননসহ আরব রাষ্ট্রগুলোতে। এখনও শরণার্থী হিসেবে বাস করছে সেখানে। তবে ইসরায়েলের দাবি, ফিলিস্তিনিদের জোর করে বিতাড়িত করা হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও শুরু হয় ইসরায়েলি বর্বরতা। দুই বছরের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে গাজাবাসী। নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর চলে ইসরায়েলি বোমা ও গুলি। গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। পরে তা শিথিল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় যা নগণ্য।
গাজার যুদ্ধ ছড়িয়েছে লেবানন, সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেনে। ফিলিস্তিনিদের হয়ে লড়াই করে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ, হুতিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী। ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান এসব গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা। গেল জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধ জড়ায় ইরান ও ইসরায়েল। সম্প্রতি, কাতারে বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করে ইসরায়েল।
অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২০ দফার প্রস্তাব আসে। তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়া হয়। যা এখনো আলোচনার টেবিলেই রয়েছে। তবে ইসরায়েল লক্ষ্য পূরণে সফল কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
চাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেন, ‘গেলো দুই বছর ধরে ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে নিজেদের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা সেখানে কী অর্জন করেছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সক্ষমতাকে তারা অনেকটা হ্রাস করতে পেরেছে। এর ফলে এই অঞ্চলে ইসরায়েল সামরিক আধিপত্য দেখাচ্ছে।’
গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলি বর্বরতার মুখে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধ শুরুর পর গেল দুই বছরে ইউরোপের বেশকিছু শক্তিশালী দেশসহ জাতিসংঘের ২০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভে নামে লাখো জনতা।
এদিকে কূটনৈতিকভাবে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে আছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া নেতানিয়াহুর পাশে নেই উল্লেখযোগ্য কোনো দেশ।
এমনকি ইসরায়েলিরাও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্দোলন বিক্ষোভ করে। গাজা সিটি দখলে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
দুই বছর আগে আজকের দিনে ইসরায়েলি ভূখ-ে একটি সংগীত উৎসবে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের দাবি, ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পর ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত। বিপরীতে ইসরায়েলিরা হত্যা করে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে।
গাজার ভবন, বাড়িঘর, পথঘাট মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৩১ বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৯৪ জনের প্রাণ যায়। গতকাল সোমবারের হামলায় একজন ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত দুই বছরে হামলায় কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। গত ৩ অক্টোবর হামলা বন্ধে ট্রাম্পের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
এদিকে, জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজার ওপর ইসরায়েলের যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি তথ্যপত্র প্রকাশ করেছে। এতে ইসরায়েল আরোপিত ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এবং মানবিক সংকটের বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজাজুড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএর ৩৭০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়েছেন। ৯৮ শতাংশেরও বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ৯০ শতাংশ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। পাঁচ লাখ নারীর মাসিক স্বাস্থ্যবিধি উপকরণের অভাব রয়েছে। ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে সাবানের ব্যবহার নেই।
ছয় লাখ ৬০ হাজার শিশু টানা তিন বছর ধরে স্কুলের বাইরে রয়েছে। ৯২ শতাংশ স্কুল ভবনের পুনর্গঠন প্রয়োজন। জাতিসংঘ পরিচালিত ৯০ শতাংশ স্কুল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাজায় ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে এক নারীর আহজারী -এএফপি
মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ বন্ধ বা অস্ত্রবিরতির বার্তা এলেও দুই বছরে আসেনি সমাধান। এই সময়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গোটা গাজা উপত্যকা। ইসরায়েলও পারেনি সব জিম্মিদের মুক্ত করে আনতে। এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বেড়েছে সমর্থন আর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উঠেছে গণহত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ।
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘ। ১৯৪৮ সালে প্রমিজ ল্যান্ড হিসেবে ইসরায়েল সৃষ্টির পরই শুরু হয় যুদ্ধ। ঘরবাড়ি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা হয় ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে। যাদের মধ্যে অনেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী জর্ডান, সিরিয়া, লেবাননসহ আরব রাষ্ট্রগুলোতে। এখনও শরণার্থী হিসেবে বাস করছে সেখানে। তবে ইসরায়েলের দাবি, ফিলিস্তিনিদের জোর করে বিতাড়িত করা হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনিদের ওপর আবারও শুরু হয় ইসরায়েলি বর্বরতা। দুই বছরের যুদ্ধে গাজা উপত্যকা পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে। ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষের মুখে পড়ে গাজাবাসী। নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের ওপর চলে ইসরায়েলি বোমা ও গুলি। গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশে দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। পরে তা শিথিল করলেও প্রয়োজনের তুলনায় যা নগণ্য।
গাজার যুদ্ধ ছড়িয়েছে লেবানন, সিরিয়া, ইরান ও ইয়েমেনে। ফিলিস্তিনিদের হয়ে লড়াই করে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ, হুতিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী। ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারান এসব গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতারা। গেল জুন মাসে ১২ দিনের যুদ্ধ জড়ায় ইরান ও ইসরায়েল। সম্প্রতি, কাতারে বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করে ইসরায়েল।
অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ২০ দফার প্রস্তাব আসে। তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়া হয়। যা এখনো আলোচনার টেবিলেই রয়েছে। তবে ইসরায়েল লক্ষ্য পূরণে সফল কিনা তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
চাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কর্মসূচির পরিচালক ড. সানাম ভাকিল বলেন, ‘গেলো দুই বছর ধরে ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে নিজেদের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা সেখানে কী অর্জন করেছে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে বিভিন্ন আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সক্ষমতাকে তারা অনেকটা হ্রাস করতে পেরেছে। এর ফলে এই অঞ্চলে ইসরায়েল সামরিক আধিপত্য দেখাচ্ছে।’
গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলি বর্বরতার মুখে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। যুদ্ধ শুরুর পর গেল দুই বছরে ইউরোপের বেশকিছু শক্তিশালী দেশসহ জাতিসংঘের ২০টিরও বেশি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। গাজা যুদ্ধ বন্ধ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভে নামে লাখো জনতা।
এদিকে কূটনৈতিকভাবে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে আছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া নেতানিয়াহুর পাশে নেই উল্লেখযোগ্য কোনো দেশ।
এমনকি ইসরায়েলিরাও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আন্দোলন বিক্ষোভ করে। গাজা সিটি দখলে নেতানিয়াহুর পরিকল্পনার তীব্র সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
দুই বছর আগে আজকের দিনে ইসরায়েলি ভূখ-ে একটি সংগীত উৎসবে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের দাবি, ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যার পর ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। হামাসের হাতে এখনো ৪৮ জিম্মি রয়েছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত। বিপরীতে ইসরায়েলিরা হত্যা করে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে।
গাজার ভবন, বাড়িঘর, পথঘাট মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪৮ ঘণ্টায় ১৩১ বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে ৯৪ জনের প্রাণ যায়। গতকাল সোমবারের হামলায় একজন ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত দুই বছরে হামলায় কমপক্ষে ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। গত ৩ অক্টোবর হামলা বন্ধে ট্রাম্পের নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১০৪ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
এদিকে, জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ গাজার ওপর ইসরায়েলের যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি তথ্যপত্র প্রকাশ করেছে। এতে ইসরায়েল আরোপিত ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা এবং মানবিক সংকটের বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজাজুড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইউএনআরডব্লিউএর ৩৭০ জনেরও বেশি সদস্য নিহত হয়েছেন। ৯৮ শতাংশেরও বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রায় ৯০ শতাংশ পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। পাঁচ লাখ নারীর মাসিক স্বাস্থ্যবিধি উপকরণের অভাব রয়েছে। ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবারে সাবানের ব্যবহার নেই।
ছয় লাখ ৬০ হাজার শিশু টানা তিন বছর ধরে স্কুলের বাইরে রয়েছে। ৯২ শতাংশ স্কুল ভবনের পুনর্গঠন প্রয়োজন। জাতিসংঘ পরিচালিত ৯০ শতাংশ স্কুল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।