alt

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাস-ইসরায়েল পরোক্ষ আলোচনা শুরু

এথেন্সে থুনবার্গকে বরণ উল্লসিত জনতার

সংবাদ ডেস্ক : মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

শান্তি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা চলছে। মঙ্গলবারের হামলায় ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছতে আলোচনার জন্য প্যালেস্টাইনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা মিশরের শারম আল-শেইখে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছেন। এই আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন মধ্যস্থতাকারীরাও। আলোচনা কয়েকদিন চলতে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

এদিকে গাজা যাওয়ার পথে সাগর থেকে ইসরাইল বাহিনীর ধরে নিয়ে যাওয়া সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়া পেয়ে এথেন্স বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্যালেস্টাইনপন্থি উল্লসিত জনতা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়।

বিবিসিকে প্যালেস্টাইন ও মিশরীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, মিশরের শারম আল-শেইখে বৈঠকে মূলত সম্ভাব্য বন্দীবিনিময়ের জন্য ‘মাঠ পর্যায়ের পরিবেশ তৈরি করা’ নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে, যাতে ইসরায়েলি সব জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে প্যালেস্টাইন বন্দীরা মুক্তি পেতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যম হতে পারে; যা ঠিক করে দিতে পারে, এই সংঘাতের অবসানের কোনো পথ এখন আদৌ নাগালের মধ্যে এসেছে কিনা।

ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের গতকাল সোমবার শার্ম আল-শেখে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছিল রয়টার্স।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাস্তব প্রস্তুতি এবং বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা থেকেই বোঝা যাবে হামাস আদৌ সিরিয়াস কি না।’ তিনি জানান, আলোচনায় এখন পর্যন্ত ৪৮ জন জিম্মির মুক্তির প্রসঙ্গ প্রাধান্য পাচ্ছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত।

পরে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও জানান, আলোচনা দ্রুত এগোচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই শেষ হবে। আমি সবাইকে আরও দ্রুত অগ্রসর হতে বলেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন তিনি।

চুক্তির প্রথম ধাপে প্যালেস্টাইন বন্দীদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা। হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোষ্ঠীটির নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া। তিনি গত রোববারই মিশর পৌঁছেছেন।

তার নেতৃত্বে হামাসের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

এথেন্সে থুনবার্গকে বরণ উল্লসিত জনতার

সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ইসরায়েলে আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রিসে যাওয়ার পর প্যালেস্টাইনপন্থি উল্লসিত জনতা তাকে বরণ করে নিয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গতকাল সোমবার তারা থুনবার্গসহ ৭১ জন আন্দোলনকারীকে বহিষ্কার করেছে।

থুনবার্গ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চারশ’রও বেশি অধিকার আন্দোলনকারী ৪০টিরও বেশি নৌযান নিয়ে প্যালেস্টাইনের যুদ্ধবিধ্বস্ত, অবরুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ কবলিত ছিটমহল গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের নৌযানগুলো ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনী সেগুলোর গতিরোধ করে ও আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে।

থুনবার্গরা গাজার জলসীমায় বসানো ইসরায়েলি নৌ-অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে প্রায় ৪৭৯ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৩৪১ জন আন্দোলনকারীকে তুরস্ক ও গ্রিসসহ নিকটবর্তী দেশগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা।

গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ১৬১ জন আন্দোলনকারী একটি ফ্লাইটে এথেন্সে এসে পৌঁছান। তাদের মধ্যে থুনবার্গও (২২) আছেন। বাকিদের মধ্যে গ্রিসের ২৭ ও আরও প্রায় ২০ দেশের নাগরিক রয়েছেন।

এথেন্স বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানো জনতার উদ্দেশে থুনবার্গ বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলছি, সেখানে একটি গণহত্যা চলমান আছে। আমাদের বিশ্বব্যবস্থা প্যালেস্টাইনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। তারা এমনকি জঘন্য যুদ্ধাপরাধ ঘটতে থাকালেও তা ঠেকাতে পারছে না। আমাদের সরকারগুলো যখন তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে তখন আমরা পদক্ষেপ নিয়ে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মাধ্যমে তা করার চেষ্টা করেছি’।

এর আগে ফ্লোটিলার সুইস ও স্প্যানিশ আন্দোলনকারীরা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের আটক করার পর তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে।

এথেন্সে পৌঁছানোর পর থুনবার্গ জানান, তাদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে ও কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে তা নিয়ে ‘অনেক দীর্ঘ সময় ধরে’ কথা বলতে পারবেন তিনি, কিন্তু ‘গল্প এটা না’।

‘সেখানে যা হচ্ছে তা হলো- ইসরায়েল একটি পুরো জনগোষ্ঠীকে, একটি পুরো জাতিকে আমাদের চোখের সামনে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তারা গণহত্যার অভিপ্রায় নিয়ে তাদের গণহত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখে আরও খারাপ ও তীব্র করে তুলছে। গাজায় মানুষ যখন অনাহারে আছে তখন সেখানে মানবিক ত্রাণ পাঠানোর প্রচেষ্টায় বাধা দিয়ে তারা আবারও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।’

সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেয়া স্পেনের বার্সেলোনা নগরীর সাবেক মেয়র আডা কোলাউ বলেছেন, ‘ওরা দুর্ব্যবহার করেছে, কিন্তু প্যালেস্টাইনের জনগণ প্রতিদিন যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তার তুলনায় এগুলো কিছুই না।’

ফ্লোটিলার ১৩০ কর্মী জর্ডানে

জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গাজাগামী সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর থেকে আটক হওয়া মানবাধিকার কর্মীদের ১৩০ জনকে মঙ্গলবার আলেনবি সেতু দিয়ে জর্ডানে পাঠিয়েছে ইসরায়েল।

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই ফ্লোটিলা কর্মীদের মধ্যে বাহরাইন, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, ওমান, কুয়েত, লিবিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জাপান, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উরুগুয়ের নাগরিক রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা পেট্রা জানিয়েছে, জর্ডানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সীমান্ত পারাপার নিশ্চিত করেছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় ত্রাণ বহনকারী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের ৪২টি নৌকা আটক করে ৪৫০ জনের বেশি কর্মীকে আটক করলে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে।

এর আগে ইসরায়েল ইতালি ও তুরস্কে কয়েকডজন ফ্লোটিলা কর্মীকে ফেরত পাঠিয়েছিল। গতকাল সোমবার ইসরায়েল ১৭১ জনকে ইউরোপের দুই দেশে পাঠায়। মঙ্গলবার তারা আরেক দফায় ১৩০ জনকে জর্ডানে পাঠালো।

এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক থাকার সময় অমানবিক আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ফ্লোটিলার মানবাধিকারকর্মীদের অনেকেই। সুইজারল্যান্ড ও স্পেনের কয়েকজন কর্মীর অভিযোগ, আটকাবস্থায় তারা অমানবিক পরিস্থিতিতে ছিলেন।

গত সপ্তাহে আটক হওয়া ৯ জন সুইস কর্মী দেশে ফেরার পর জানান- ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ঘুমাতে দেয়নি, পর্যাপ্ত খাবার পানি দেয়নি, এমনকি কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন। কাউকে লাথি মারা হয়েছে, আবার কেউ খাঁচায় বন্দী ছিলেন বলে জানিয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন।

গত রোববার রাতে নিজ দেশে ফিরে স্প্যানিশ কর্মীরাও অভিযোগ করেছেন- তাদেরও নির্যাতন করা হয়েছে। গত শনিবার সুইডিশ কর্মীরা দাবি করেন, জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকেও ধাক্কা দিয়ে ইসরায়েলি পতাকা পরতে বাধ্য করা হয়েছে।

অন্যরা জানান- তাদের খাবার, পানি, ওষুধ এবং ব্যক্তিগত সামগ্রী কেড়ে নেয়া হয়। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ছবি

ইসরায়েলি বাহিনীর দখলে ফ্রিডম ফ্লোটিলার জাহাজ, আছেন বাংলাদেশের শহিদুল আলম

ছবি

পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ৩ মার্কিন বিজ্ঞানী

ছবি

শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ না নেওয়ার আহ্বান ব্রিটিশ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা কড়াকড়ি, ভোগান্তির শিকার ভারতীয় শিক্ষার্থীরা

ছবি

‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার কোনো পরিকল্পনা নেই ইরানের’

ছবি

সেনা মোতায়েন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের

ছবি

ইসরায়েল ও হামাসের বৈঠকের প্রথম দিনে কী আলোচনায় হলো

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলার ২ বছর, বর্বতার শেষ কোথায়?

ছবি

কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

ছবি

মিসরে ইসরায়েল-হামাস আলোচনার প্রথম দিন ‘ইতিবাচক’, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে আশার আলো

ছবি

ভারতে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ

ছবি

বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারে যারাই আসুক, ‘তাদের সঙ্গেই কাজ করবে’ ভারত

ছবি

থাইল্যান্ডে টানা বৃষ্টি ও ঝড়ে ভয়াবহ বন্যা: ১৬ প্রদেশ প্লাবিত, নিহত ১২

ছবি

ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী লেকোর্নুর সরকারের পদত্যাগ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আরও ঘনীভূত

ছবি

গ্রেটা থুনবার্গসহ ১৫৬ অভিযাত্রীকে গ্রিসে ফেরত পাঠাচ্ছে ইসরায়েল

ছবি

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুলভবন ধসে নিহত ৫০

ছবি

নেপালে ভারী বর্ষণ-ভূমিধসে নিহত ৫১

ছবি

রুশ হামলার পর পোল্যান্ডে যুদ্ধবিমান মোতায়েন

ছবি

ভারতের ওড়িশা রাজ্যে সংঘর্ষের পর ইন্টারনেট বন্ধ, কারফিউ জারি

ছবি

শান্তির চেষ্টার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের তীব্র হামলা

ছবি

রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার রহস্য উদঘাটনে তিন বিজ্ঞানীর চিকিৎসায় নোবেল

ছবি

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ধসে ৫০ জনের লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ১৩

ছবি

শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যেও গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল, নিহত ৭০

ছবি

আটকের পর গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতনের অভিযোগ, ইসরায়েল বলছে ‘মিথ্যা’

আটকের পর গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতনের অভিযোগ, ইসরায়েল বলছে ‘মিথ্যা’

ছবি

বোমাবর্ষণ থামাতে ট্রাম্পের আহ্বানের পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৭০

ছবি

গাজা পরিকল্পনায় এখনও ‘অস্পষ্টতা’

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের গাজা পরিকল্পনা: হামাসের প্রতি ইসলামিক জিহাদের সমর্থন

ছবি

১৪০০ বছরের প্রথা ভেঙে নারী নেতৃত্বে চার্চ অব ইংল্যান্ড

ছবি

ফ্লোটিলা থেকে ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে আটক করেছে ইসরায়েল

ছবি

পাকিস্তানকে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়ার হুমকি ভারতীয় সেনাপ্রধানের

ছবি

নির্বাচনি সমর্থন খুঁজতে বিশ্ব ভ্রমণে ব্যস্ত মায়ানমার জান্তা

ছবি

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আবার কেন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ল

ছবি

ট্রাম্পের ২০ দফার ‘কিছু অংশে’ সম্মত হামাস

ছবি

ভারতে যাচ্ছেন তালেবান মন্ত্রী, ২০২১ সালের পর প্রথম সফর

ছবি

গাজায় অভিযান থামাতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ ইসরায়েল সরকারের

tab

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে হামাস-ইসরায়েল পরোক্ষ আলোচনা শুরু

এথেন্সে থুনবার্গকে বরণ উল্লসিত জনতার

সংবাদ ডেস্ক

শান্তি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা চলছে। মঙ্গলবারের হামলায় ভবনের ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার তৎপরতা

মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছতে আলোচনার জন্য প্যালেস্টাইনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েলের প্রতিনিধিরা মিশরের শারম আল-শেইখে পরোক্ষ আলোচনা শুরু করেছেন। এই আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন মধ্যস্থতাকারীরাও। আলোচনা কয়েকদিন চলতে পারে বলে ধারণা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

এদিকে গাজা যাওয়ার পথে সাগর থেকে ইসরাইল বাহিনীর ধরে নিয়ে যাওয়া সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়া পেয়ে এথেন্স বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্যালেস্টাইনপন্থি উল্লসিত জনতা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়।

বিবিসিকে প্যালেস্টাইন ও মিশরীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, মিশরের শারম আল-শেইখে বৈঠকে মূলত সম্ভাব্য বন্দীবিনিময়ের জন্য ‘মাঠ পর্যায়ের পরিবেশ তৈরি করা’ নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে, যাতে ইসরায়েলি সব জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে প্যালেস্টাইন বন্দীরা মুক্তি পেতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যম হতে পারে; যা ঠিক করে দিতে পারে, এই সংঘাতের অবসানের কোনো পথ এখন আদৌ নাগালের মধ্যে এসেছে কিনা।

ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের গতকাল সোমবার শার্ম আল-শেখে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছিল রয়টার্স।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এনবিসি নিউজের ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বাস্তব প্রস্তুতি এবং বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনা থেকেই বোঝা যাবে হামাস আদৌ সিরিয়াস কি না।’ তিনি জানান, আলোচনায় এখন পর্যন্ত ৪৮ জন জিম্মির মুক্তির প্রসঙ্গ প্রাধান্য পাচ্ছে, যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত।

পরে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও জানান, আলোচনা দ্রুত এগোচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে, প্রথম ধাপ এই সপ্তাহেই শেষ হবে। আমি সবাইকে আরও দ্রুত অগ্রসর হতে বলেছি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন তিনি।

চুক্তির প্রথম ধাপে প্যালেস্টাইন বন্দীদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা। হামাসের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোষ্ঠীটির নির্বাসিত নেতা খলিল আল-হায়া। তিনি গত রোববারই মিশর পৌঁছেছেন।

তার নেতৃত্বে হামাসের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

এথেন্সে থুনবার্গকে বরণ উল্লসিত জনতার

সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ইসরায়েলে আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রিসে যাওয়ার পর প্যালেস্টাইনপন্থি উল্লসিত জনতা তাকে বরণ করে নিয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, গতকাল সোমবার তারা থুনবার্গসহ ৭১ জন আন্দোলনকারীকে বহিষ্কার করেছে।

থুনবার্গ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চারশ’রও বেশি অধিকার আন্দোলনকারী ৪০টিরও বেশি নৌযান নিয়ে প্যালেস্টাইনের যুদ্ধবিধ্বস্ত, অবরুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ কবলিত ছিটমহল গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের নৌযানগুলো ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি বাহিনী সেগুলোর গতিরোধ করে ও আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করে।

থুনবার্গরা গাজার জলসীমায় বসানো ইসরায়েলি নৌ-অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী তাদের প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে প্রায় ৪৭৯ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ৩৪১ জন আন্দোলনকারীকে তুরস্ক ও গ্রিসসহ নিকটবর্তী দেশগুলোতে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা।

গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল সোমবার ১৬১ জন আন্দোলনকারী একটি ফ্লাইটে এথেন্সে এসে পৌঁছান। তাদের মধ্যে থুনবার্গও (২২) আছেন। বাকিদের মধ্যে গ্রিসের ২৭ ও আরও প্রায় ২০ দেশের নাগরিক রয়েছেন।

এথেন্স বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানানো জনতার উদ্দেশে থুনবার্গ বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলছি, সেখানে একটি গণহত্যা চলমান আছে। আমাদের বিশ্বব্যবস্থা প্যালেস্টাইনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। তারা এমনকি জঘন্য যুদ্ধাপরাধ ঘটতে থাকালেও তা ঠেকাতে পারছে না। আমাদের সরকারগুলো যখন তাদের আইনি বাধ্যবাধকতা পালনে ব্যর্থ হয়েছে তখন আমরা পদক্ষেপ নিয়ে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মাধ্যমে তা করার চেষ্টা করেছি’।

এর আগে ফ্লোটিলার সুইস ও স্প্যানিশ আন্দোলনকারীরা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী তাদের আটক করার পর তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেছে।

এথেন্সে পৌঁছানোর পর থুনবার্গ জানান, তাদের সঙ্গে যে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে ও কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে তা নিয়ে ‘অনেক দীর্ঘ সময় ধরে’ কথা বলতে পারবেন তিনি, কিন্তু ‘গল্প এটা না’।

‘সেখানে যা হচ্ছে তা হলো- ইসরায়েল একটি পুরো জনগোষ্ঠীকে, একটি পুরো জাতিকে আমাদের চোখের সামনে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তারা গণহত্যার অভিপ্রায় নিয়ে তাদের গণহত্যা ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত রেখে আরও খারাপ ও তীব্র করে তুলছে। গাজায় মানুষ যখন অনাহারে আছে তখন সেখানে মানবিক ত্রাণ পাঠানোর প্রচেষ্টায় বাধা দিয়ে তারা আবারও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।’

সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেয়া স্পেনের বার্সেলোনা নগরীর সাবেক মেয়র আডা কোলাউ বলেছেন, ‘ওরা দুর্ব্যবহার করেছে, কিন্তু প্যালেস্টাইনের জনগণ প্রতিদিন যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তার তুলনায় এগুলো কিছুই না।’

ফ্লোটিলার ১৩০ কর্মী জর্ডানে

জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, গাজাগামী সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহর থেকে আটক হওয়া মানবাধিকার কর্মীদের ১৩০ জনকে মঙ্গলবার আলেনবি সেতু দিয়ে জর্ডানে পাঠিয়েছে ইসরায়েল।

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই ফ্লোটিলা কর্মীদের মধ্যে বাহরাইন, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, ওমান, কুয়েত, লিবিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জাপান, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উরুগুয়ের নাগরিক রয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা পেট্রা জানিয়েছে, জর্ডানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সীমান্ত পারাপার নিশ্চিত করেছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি সেনারা গাজায় ত্রাণ বহনকারী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নৌবহরের ৪২টি নৌকা আটক করে ৪৫০ জনের বেশি কর্মীকে আটক করলে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়ে।

এর আগে ইসরায়েল ইতালি ও তুরস্কে কয়েকডজন ফ্লোটিলা কর্মীকে ফেরত পাঠিয়েছিল। গতকাল সোমবার ইসরায়েল ১৭১ জনকে ইউরোপের দুই দেশে পাঠায়। মঙ্গলবার তারা আরেক দফায় ১৩০ জনকে জর্ডানে পাঠালো।

এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক থাকার সময় অমানবিক আচরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ফ্লোটিলার মানবাধিকারকর্মীদের অনেকেই। সুইজারল্যান্ড ও স্পেনের কয়েকজন কর্মীর অভিযোগ, আটকাবস্থায় তারা অমানবিক পরিস্থিতিতে ছিলেন।

গত সপ্তাহে আটক হওয়া ৯ জন সুইস কর্মী দেশে ফেরার পর জানান- ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ঘুমাতে দেয়নি, পর্যাপ্ত খাবার পানি দেয়নি, এমনকি কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন। কাউকে লাথি মারা হয়েছে, আবার কেউ খাঁচায় বন্দী ছিলেন বলে জানিয়েছে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন।

গত রোববার রাতে নিজ দেশে ফিরে স্প্যানিশ কর্মীরাও অভিযোগ করেছেন- তাদেরও নির্যাতন করা হয়েছে। গত শনিবার সুইডিশ কর্মীরা দাবি করেন, জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকেও ধাক্কা দিয়ে ইসরায়েলি পতাকা পরতে বাধ্য করা হয়েছে।

অন্যরা জানান- তাদের খাবার, পানি, ওষুধ এবং ব্যক্তিগত সামগ্রী কেড়ে নেয়া হয়। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

back to top