হামলা চলছেই, সাতদিনে নিহত ২৪
গাজার আয়হীন পরিবারগুলো চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে -এএফপি
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধরিবতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য সংকট রয়ে গেছে। এখনও বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হুড়োহুড়ি দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতির পর বাসিন্দারা পর্যাপ্ত ত্রাণের আশায় ছিলেন। কিন্তু সেই পরিমাণ খাবার তারা সরবরাহ পাচ্ছেন না। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজার কৃষিজমির অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক পরিবার আয়হীন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সবররাহ প্রয়োজন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর যে খাদ্য সরবরাহ হচ্ছে, তা পরিবারগুলোর চাহিদার চেয়ে কম। ফলে গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্যাভাব ও হাহাকার রয়েই গেছে। আল জাজিরা ও রয়টার্সের খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ খাদ্য সরবরাহে অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে সতর্কতা দিয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, এক কেজি টমেটো এখন ১৫ ডলার খরচ করে কিনতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। আয়হীন পরিবার চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। গাজায় আসা ট্রাকগুলো এখন ত্রাণ বহন করছে না, সেগুলোতে এখন বাণিজ্যিক পণ্য আসছে। ফলে অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় তাজা খাবার পেতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। গাজার কৃষিক্ষেত্র পুনর্র্নিমাণ না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণের পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখা জরুরি।
আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েল সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় প্রতিদিন সকাল থেকেই গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যবর্তী কিসুফিম ক্রসিংয়ে ত্রাণের বহু ট্রাক আটকে আছে। এসব ট্রাক ইসরায়েলে প্রবেশ করে এবং ত্রাণবোঝাই করে ফিরে আসে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত কম সংখ্যক ট্রাক ছাড়ছে ইসরায়েল। প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করার কথা থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা ৩০০টিরও কম। চাহিদা বিবেচনায় গাজায় ৬০০ ট্রাকও যথেষ্ট নয়। এখনও কিছু পণ্যের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। কখনও কখনও ইসরায়েল থেকে ট্রাক খালি অবস্থায় ফিরে আসছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে প্রতিদিন গাজায় ৫৬০ টন খাদ্য প্রবেশ করেছে, কিন্তু আরও বেশি প্রয়োজন। ডব্লিউএফপির মুখপাত্র আবির এতেফা জেনেভায় বলেন, ‘আমাদের কাছে মাত্র তিন মাসের খাবার রয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরও খাবারের সরবরাহ অনেক কম। খাবার পৌঁছাতে দীর্ঘস্থায়ী প্রবেশাধিকার না থাকলে সবার কাছে খাদ্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।’
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে কাজ করছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন: রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্রান্স ও ব্রিটেন আগামী দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে। এই পদক্ষেপ গাজায় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর ভিত্তি স্থাপন করবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র প্যাসকেল কনফাভ্রো এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। উপত্যকায় নিরাপত্তা স্থিতিশীল করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের প্রক্রিয়া শুরু কথা জানিয়েছেন দুই জ্যেষ্ঠ মার্কিন উপদেষ্টাও। ফরাসি ওই মুখপাত্র বলেন, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দরকার। এজন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর দেশগুলোর কাছ থেকে ম্যান্ডেট প্রয়োজন।
ইসরায়েলের হামলা বন্ধ হয়নি: যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় গোলাবর্ষণ করেছে। শুজাইয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও এ পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির বাড়িতে ইসরায়েলি সেনারা অভিযান চালিয়েছে। রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে দেইর ঘাসানা গ্রামে ইউসুফ আবদেল হালিম দাউদের বাড়িতে এ হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সূত্র ওয়াফা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, সৈন্যরা দাউদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার পরিবারের জিনিসপত্র লুটপাট করেছে। অভিযানের সময় তারা দেইর ঘাসানা, বেইত রিমা গ্রামের চারপাশে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।
হামাসকে সতর্ক বার্তা দিলেন ট্রাম্প: গাজায় সংঘাতের জেরে হামাসকে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি তার সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা অব্যাহত রাখে, তাহলে গাজায় ঢুকে তাদের হত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’ সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, মার্কিন বাহিনী গাজায় প্রবেশ করবে কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এটা আমাদের করতে হবে না।
আমাদের কাছের মানুষ যারা আছে তারাই প্রবেশ করবে। তবে হামাস জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর কোনো আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে না।
এদিকে, রাফা ক্রসিং আবার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ত্রাণ পরিবহনে ক্রসিংটি ব্যবহার করা যাবে না। তবে মিসর সীমান্তবর্তী এ ক্রসিং কবে খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল। অন্যদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইসরায়েল ও হামাস।
হামলা চলছেই, সাতদিনে নিহত ২৪
গাজার আয়হীন পরিবারগুলো চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে -এএফপি
শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫
ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধরিবতি কার্যকর হলেও ফিলিস্তিনের গাজায় খাদ্য সংকট রয়ে গেছে। এখনও বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে হুড়োহুড়ি দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতির পর বাসিন্দারা পর্যাপ্ত ত্রাণের আশায় ছিলেন। কিন্তু সেই পরিমাণ খাবার তারা সরবরাহ পাচ্ছেন না। জাতিসংঘ জানিয়েছে, দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের হামলায় গাজার কৃষিজমির অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক পরিবার আয়হীন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সবররাহ প্রয়োজন। কিন্তু যুদ্ধবিরতির পর যে খাদ্য সরবরাহ হচ্ছে, তা পরিবারগুলোর চাহিদার চেয়ে কম। ফলে গাজার বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্যাভাব ও হাহাকার রয়েই গেছে। আল জাজিরা ও রয়টার্সের খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ খাদ্য সরবরাহে অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে সতর্কতা দিয়েছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, এক কেজি টমেটো এখন ১৫ ডলার খরচ করে কিনতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। আয়হীন পরিবার চরম খাদ্য সংকটে ভুগছে। গাজায় আসা ট্রাকগুলো এখন ত্রাণ বহন করছে না, সেগুলোতে এখন বাণিজ্যিক পণ্য আসছে। ফলে অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় তাজা খাবার পেতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। গাজার কৃষিক্ষেত্র পুনর্র্নিমাণ না হওয়া পর্যন্ত ত্রাণের পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখা জরুরি।
আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েল সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় প্রতিদিন সকাল থেকেই গাজা ও ইসরায়েলের মধ্যবর্তী কিসুফিম ক্রসিংয়ে ত্রাণের বহু ট্রাক আটকে আছে। এসব ট্রাক ইসরায়েলে প্রবেশ করে এবং ত্রাণবোঝাই করে ফিরে আসে। কিন্তু ইচ্ছাকৃত কম সংখ্যক ট্রাক ছাড়ছে ইসরায়েল। প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণের ট্রাক প্রবেশ করার কথা থাকলেও প্রকৃত সংখ্যা ৩০০টিরও কম। চাহিদা বিবেচনায় গাজায় ৬০০ ট্রাকও যথেষ্ট নয়। এখনও কিছু পণ্যের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। কখনও কখনও ইসরায়েল থেকে ট্রাক খালি অবস্থায় ফিরে আসছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বলেছে, যুদ্ধবিরতির পর থেকে প্রতিদিন গাজায় ৫৬০ টন খাদ্য প্রবেশ করেছে, কিন্তু আরও বেশি প্রয়োজন। ডব্লিউএফপির মুখপাত্র আবির এতেফা জেনেভায় বলেন, ‘আমাদের কাছে মাত্র তিন মাসের খাবার রয়েছে। যুদ্ধবিরতির পরও খাবারের সরবরাহ অনেক কম। খাবার পৌঁছাতে দীর্ঘস্থায়ী প্রবেশাধিকার না থাকলে সবার কাছে খাদ্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।’
গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনে কাজ করছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন: রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্রান্স ও ব্রিটেন আগামী দিনে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাব চূড়ান্ত করার জন্য কাজ করছে। এই পদক্ষেপ গাজায় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাহিনীর ভিত্তি স্থাপন করবে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র প্যাসকেল কনফাভ্রো এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। উপত্যকায় নিরাপত্তা স্থিতিশীল করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের প্রক্রিয়া শুরু কথা জানিয়েছেন দুই জ্যেষ্ঠ মার্কিন উপদেষ্টাও। ফরাসি ওই মুখপাত্র বলেন, গাজায় আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনে একটি শক্তিশালী ভিত্তি দরকার। এজন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর দেশগুলোর কাছ থেকে ম্যান্ডেট প্রয়োজন।
ইসরায়েলের হামলা বন্ধ হয়নি: যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও শুক্রবার ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় গোলাবর্ষণ করেছে। শুজাইয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও এ পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে।
এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দির বাড়িতে ইসরায়েলি সেনারা অভিযান চালিয়েছে। রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে দেইর ঘাসানা গ্রামে ইউসুফ আবদেল হালিম দাউদের বাড়িতে এ হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সূত্র ওয়াফা সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, সৈন্যরা দাউদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার পরিবারের জিনিসপত্র লুটপাট করেছে। অভিযানের সময় তারা দেইর ঘাসানা, বেইত রিমা গ্রামের চারপাশে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।
হামাসকে সতর্ক বার্তা দিলেন ট্রাম্প: গাজায় সংঘাতের জেরে হামাসকে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি তার সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘যদি হামাস গাজায় মানুষ হত্যা অব্যাহত রাখে, তাহলে গাজায় ঢুকে তাদের হত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’ সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, মার্কিন বাহিনী গাজায় প্রবেশ করবে কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, এটা আমাদের করতে হবে না।
আমাদের কাছের মানুষ যারা আছে তারাই প্রবেশ করবে। তবে হামাস জানিয়েছে, তারা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর কোনো আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবে না।
এদিকে, রাফা ক্রসিং আবার খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ত্রাণ পরিবহনে ক্রসিংটি ব্যবহার করা যাবে না। তবে মিসর সীমান্তবর্তী এ ক্রসিং কবে খুলে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি ইসরায়েল। অন্যদিকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ইসরায়েল ও হামাস।