alt

পাকিস্তান-তালেবান উত্তেজনায় অনিশ্চিত জীবন আফগান শরণার্থীদের

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলার পর নিজেদের দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন লাখ লাখ আফগান নাগরিক। পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান শরণার্থী আল্লাহ মীরের মা–বাবাও একই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। তাঁরা দেশ ছেড়ে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোহাটে একটি শরণার্থী গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সেখানেই মীরের জন্ম।

বর্তমানে মীরের বয়স ৪৫ বছর। তাঁর ২০০ জনেরও বেশি স্বজন আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তখন থেকে সেখানেই তাঁদের ঘরবাড়ি।

দুই বছর ধরে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ লক্ষাধিক আফগান শরণার্থীকে দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় মীরদের পরিবার নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে আছে। এত দিন তারা ইসলামাবাদে ধরপাকড় থেকে কোনোভাবে বেঁচে থাকলেও গত সপ্তাহে তাদের ওপর বিপদের ছায়া নেমে এসেছে।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, দেশজুড়ে থাকা ৫৪টি আফগান শরণার্থী গ্রামের সব কটিই বন্ধ করে দেবে তারা। এটি ২০২৩ সালে শুরু হওয়া অভিযানেরই অংশ। ওই অভিযানের লক্ষ্য হলো ‘অবৈধ বিদেশিদের’ দেশ থেকে বিতাড়িত করা। ৫৪টি শরণার্থী গ্রামের মধ্যে কোহাটের গ্রামগুলোও আছে, যেখানে মীর ও তাঁর পরিবার বসবাস করে।

আল–জাজিরাকে মীর বলেন, ‘আমার জীবনে আমি মাত্র একবারের জন্য আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম। সেটা ২০১৩ সালে, দুই সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলাম। এর বাইরে আমার পরিবারের কেউ আর কখনো সেখানে ফিরে যায়নি। আমি কী করে সব ছেড়ে চলে যাব, যখন আমরা এখানেই জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই বিয়ে করেছি এবং প্রিয়জনদের এখানেই দাফন করেছি?’

২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মীরের মতো অসংখ্য পরিবার অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিতে আটকা পড়েছে। অক্টোবরের শুরুতে সীমান্তে আফগান ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই দেশের মধ্যকার টানাপোড়েন প্রকাশ্য শত্রুতায় রূপ নেয়। গত রোববার দোহায় দুই পক্ষের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

২৫ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে তাঁদের পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এরপরও উত্তেজনা চলছে। মীরের মতো পরিবারগুলোর আশঙ্কা, তারা দুই প্রতিবেশী দেশের এই সীমান্ত সংঘাতের কূটনৈতিক খেলায় বলি না হয়ে যায়।২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মীরের মতো অসংখ্য পরিবার অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিতে আটকা পড়েছে।

স্বাগত থেকে বিতাড়ন

আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলার পর থেকেই পাকিস্তান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে এবং ১৯৯৬ সালে তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় এলে বহু আফগান নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে আসেন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর আফগানিস্তানে শুরু হওয়া মার্কিন আগ্রাসন এবং তালেবানের পতনের পর কিছু আফগান স্বদেশে ফিরে যান। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

২০২১ সালের আগস্টে হঠাৎ করে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করলে আবারও পাকিস্তানের দিকে এক বিশাল শরণার্থী ঢল নামে। ছয় থেকে আট লাখ আফগান নাগরিক পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। তবে গত চার বছরে কাবুল ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক খুব খারাপ হয়ে যায়। একসময় তালেবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, সীমান্ত হামলার জন্য দায়ী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এর পর থেকে পাকিস্তানের নীতি কঠোর করা হয়েছে। এমনকি যাঁরা মীরের মতো দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানেই বাস করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ছবি

ট্রাম্প-পুতিনের বৈঠক কেন ভেস্তে গেল, ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কী

ছবি

রাশিয়ার দুটি প্রধান তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

আসিয়ান সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছেন মোদি, যাবেন না মালয়েশিয়া

ছবি

চীনের সহায়তায় হারানো এলাকা পুনর্দখলে নিচ্ছে মায়ানমার সেনাবাহিনী

ছবি

বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে আসছে ম্যালেরিয়া

ছবি

রাশিয়ার দুই তেল কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

‘কয়েক প্রজন্ম ধরে’ চলবে গাজায় স্বাস্থ্য সংকট: ডব্লিউএইচও

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ১০ মাসে পাঁচ লাখ অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার

ছবি

অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু

ছবি

‘শারীরিক সম্পর্ক’ মানেই ধর্ষণ নয়, দিল্লি হাইকোর্টের রায়

ছবি

ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা ‘বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের’ সমতুল্য: জাতিসংঘ

ছবি

আফগানিস্তানে ডায়রিয়ায় বছরে মৃত্যু ৯৭ হাজারের অধিক

ছবি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ট্রাম্পের শান্তি আলোচনায় ইউরোপের সায়

ছবি

যুদ্ধবিরতি হলেও ভিন্ন আতঙ্কে গাজার বাসিন্দারা

ছবি

নাইজেরিয়ায় জ্বালানি ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে নিহত অন্তত ৩৫

ছবি

ইউক্রেইনে যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার কঠোর অবস্থান, অনিশ্চয়তায় ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক

ছবি

বিরল খনিজের সরবরাহে চীনা দাপট ঠেকাতে অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি

ছবি

শক্তিধরদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ অবসানের পর ইরান এখন কী করবে

ছবি

ট্রাম্পের জন্য বলরুম বানাতে ভাঙা হচ্ছে হোয়াইট হাউসের একাংশ

ছবি

জাপানের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো বহাল, নাকি ভেস্তে গেছে

ছবি

পাকিস্তান-আফগানিস্তানের অস্ত্রবিরতি টিকবে তো?

ছবি

হংকংয়ে রানওয়ে থেকে সমুদ্রে ছিটকে পড়লো কার্গো বিমান

ছবি

ইইউ: ২০২৮ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি ধীরে ধীরে বন্ধের প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

বলিভিয়ায় দুই দশকের বামপন্থী শাসনের অবসান, নতুন প্রেসিডেন্ট মধ্যপন্থী পাজ

ছবি

রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ভারতকে আবারও ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি

ছবি

ফের জেলেনস্কিকে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে বললেন ট্রাম্প

ছবি

দোহায় আলোচনার পর অস্ত্রবিরতিতে রাজি পাকিস্তান-আফগানিস্তান

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন ঘিরে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্র হচ্ছে

ইসরায়েলের হামলা চলছেই, হুমকির মুখে যুদ্ধবিরতি

ছবি

বলিভিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাজ, দুই দশকের বামপন্থি শাসনের অবসান

ল্যুভর মিউজিয়াম থেকে সোনার ৯ আইটেম নিয়ে গেছে ডাকাতরা

ছবি

ইউক্রেনকে দূরপাল্লার মিসাইল না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের

ছবি

যুক্তরাজ্যে অভিবাসনে আসছে নতুন নিয়ম

ছবি

শিগরই ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে সৌদি, আশা ট্রাম্পের

ছবি

ফের বিমান হামলা করল পাকিস্তান, পাল্টা জবাব আফগানিস্তানের

tab

পাকিস্তান-তালেবান উত্তেজনায় অনিশ্চিত জীবন আফগান শরণার্থীদের

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলার পর নিজেদের দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেন লাখ লাখ আফগান নাগরিক। পাকিস্তানে বসবাসকারী আফগান শরণার্থী আল্লাহ মীরের মা–বাবাও একই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন। তাঁরা দেশ ছেড়ে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোহাটে একটি শরণার্থী গ্রামে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সেখানেই মীরের জন্ম।

বর্তমানে মীরের বয়স ৪৫ বছর। তাঁর ২০০ জনেরও বেশি স্বজন আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তখন থেকে সেখানেই তাঁদের ঘরবাড়ি।

দুই বছর ধরে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ লক্ষাধিক আফগান শরণার্থীকে দেশে ফেরত পাঠাতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এমন অবস্থায় মীরদের পরিবার নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে আছে। এত দিন তারা ইসলামাবাদে ধরপাকড় থেকে কোনোভাবে বেঁচে থাকলেও গত সপ্তাহে তাদের ওপর বিপদের ছায়া নেমে এসেছে।

গত সপ্তাহে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, দেশজুড়ে থাকা ৫৪টি আফগান শরণার্থী গ্রামের সব কটিই বন্ধ করে দেবে তারা। এটি ২০২৩ সালে শুরু হওয়া অভিযানেরই অংশ। ওই অভিযানের লক্ষ্য হলো ‘অবৈধ বিদেশিদের’ দেশ থেকে বিতাড়িত করা। ৫৪টি শরণার্থী গ্রামের মধ্যে কোহাটের গ্রামগুলোও আছে, যেখানে মীর ও তাঁর পরিবার বসবাস করে।

আল–জাজিরাকে মীর বলেন, ‘আমার জীবনে আমি মাত্র একবারের জন্য আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম। সেটা ২০১৩ সালে, দুই সপ্তাহের জন্য গিয়েছিলাম। এর বাইরে আমার পরিবারের কেউ আর কখনো সেখানে ফিরে যায়নি। আমি কী করে সব ছেড়ে চলে যাব, যখন আমরা এখানেই জন্মেছি, এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই বিয়ে করেছি এবং প্রিয়জনদের এখানেই দাফন করেছি?’

২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মীরের মতো অসংখ্য পরিবার অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিতে আটকা পড়েছে। অক্টোবরের শুরুতে সীমান্তে আফগান ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই দেশের মধ্যকার টানাপোড়েন প্রকাশ্য শত্রুতায় রূপ নেয়। গত রোববার দোহায় দুই পক্ষের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

২৫ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে তাঁদের পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

এরপরও উত্তেজনা চলছে। মীরের মতো পরিবারগুলোর আশঙ্কা, তারা দুই প্রতিবেশী দেশের এই সীমান্ত সংঘাতের কূটনৈতিক খেলায় বলি না হয়ে যায়।২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই মীরের মতো অসংখ্য পরিবার অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিতে আটকা পড়েছে।

স্বাগত থেকে বিতাড়ন

আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের হামলার পর থেকেই পাকিস্তান লাখ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে এবং ১৯৯৬ সালে তালেবান প্রথমবার ক্ষমতায় এলে বহু আফগান নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে আসেন। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর আফগানিস্তানে শুরু হওয়া মার্কিন আগ্রাসন এবং তালেবানের পতনের পর কিছু আফগান স্বদেশে ফিরে যান। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

২০২১ সালের আগস্টে হঠাৎ করে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখল করলে আবারও পাকিস্তানের দিকে এক বিশাল শরণার্থী ঢল নামে। ছয় থেকে আট লাখ আফগান নাগরিক পাকিস্তানে আশ্রয় নেন। তবে গত চার বছরে কাবুল ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক খুব খারাপ হয়ে যায়। একসময় তালেবানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান এখন অভিযোগ করছে, সীমান্ত হামলার জন্য দায়ী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। এর পর থেকে পাকিস্তানের নীতি কঠোর করা হয়েছে। এমনকি যাঁরা মীরের মতো দশকের পর দশক ধরে পাকিস্তানেই বাস করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর নীতি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

back to top