সাগাইং অঞ্চলে বিমান হামলার আশঙ্কায় বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে শিক্ষার্থীরা -এএফপি
মায়ানমারের চীন সীমান্তে বছর কয়েক মাস ধরে কঠিন লড়াইয়ের পর বিদ্রোহীরা জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে কিয়াউকম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। চীন সীমান্ত থেকে মায়ানমারের বাকি অংশে যাওয়ার প্রধান বাণিজ্য রুট এ অঞ্চলে অবস্থিত। তখন এটি ছিল বিদ্রোহীদের জন্য এক বড় জয়। কিয়াউকম এশিয়ান হাইওয়ে ১৪-এর ওপর অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ‘বার্মা রোড’ নামে বেশি বিখ্যাত ছিল। তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এ শহর দখল করার পর অনেকে বিরোধীদের জন্য এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, এর ফলে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার মনোবল ভেঙে পড়ছে।
তবে এ মাসেই মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী কিয়াউকম বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে। এই ছোট পাহাড়ি শহরের দখল-পুনর্দখল স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক ভারসাম্য এখন জান্তার অনুকূলে কতটা সরে গেছে। কিয়াউকম অঞ্চলকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। টিএনএলএর নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে সামরিক বাহিনী প্রায় দিনই সেখানে বিমান হামলায় চালিয়েছে। এতে শহরের বিশাল অংশ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যুদ্ধবিমান থেকে ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলা হয়েছিল। অন্যদিকে কামান ও ড্রোন দিয়ে শহরের বাইরে বিদ্রোহীদের অবস্থানে হামলা চালানো হয়েছিল।
জান্তা বাহিনীর হামলার তীব্রতায় শহরের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই পালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য সামরিক বাহিনী শহরটি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করার পর এখন তাঁরা ফিরতে শুরু করেছেন। টিএনএলএর এক মুখপাত্র টার পার্ন লা চলতি মাসের শুরুতে বিবিসিকে বলেন, ‘কিয়াউকম এবং হিসিপাওতে প্রতিদিন তীব্র লড়াই চলছে। বিদ্রোহীদের তুলনায় সেনাবাহিনীর বেশি সেনা, ভারী অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান রয়েছে। আমরা হিসিপাওকে রক্ষা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
বিবিসি যখন পার্ন লার সঙ্গে কথা বলেছিল, তখন জান্তা বাহিনী হিসিপাও এলাকাও পুনর্দখল করেছে। গত বছর টিএনএলএর দখলে থাকা শেষ শহর ছিল হিসিপাও। এভাবে চীন সীমান্তের রাস্তায় জান্তা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।চীনের সমর্থন থাকার কারণেই জান্তা বাহিনী এসব শহর পুনর্দখল করতে পেরেছে। চীন আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জান্তার পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তবে দেশে-বিদেশে এই পরিকল্পনার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কারণ, এই নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এনএলডি) বাদ দেওয়া হয়েছে।
এনএলডি মিয়ানমারে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। জান্তা বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারকে উৎখাত করেছিল। তখন থেকে মিয়ানমারের বেশির ভাগ অংশেই গৃহযুদ্ধ চলছে। সামরিক বাহিনী যতটা সম্ভব হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যাতে এসব অঞ্চলে নির্বাচন আয়োজন করা যায়। এই বছর তারা লড়াইয়ে আরও বেশি সাফল্য পাচ্ছে। কারণ, তারা অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এ ছাড়া নতুন ও মারাত্মক প্রযুক্তি হাতে পেয়েছে।
কিয়াউকম শহরের দখল-পুনর্দখল স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক ভারসাম্য এখন জান্তার অনুকূলে কতটা সরে গেছে। বিশেষ করে জান্তা সরকার বিরোধীদের সস্তা ড্রোন ব্যবহারের প্রাথমিক সুবিধার জবাবে চীন থেকে হাজার হাজার আধুনিক ড্রোন কিনেছে। তাদের অগ্রবর্তী ইউনিটগুলোকে এসব অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জান্তা বাহিনী ধীর ও সহজে উড়তে পারা মোটরচালিত প্যারাস্লাইডারও ব্যবহার করছে, যা হালকাভাবে সুরক্ষিত এলাকার ওপরে চক্কর দিতে পারে এবং অত্যন্ত নির্ভুলভাবে বোমা ফেলতে পারে। তারা চীনা ও রাশিয়া থেকে পাওয়া বিমান দিয়ে অবিরাম বোমা ফেলছে। জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় চলতি বছর বেসামরিক মানুষের হতাহতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে মোট সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি। অন্যদিকে অন্তর্নিহিত দুর্বলতার কারণে খণ্ডিত বিরোধী আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী বা শহর থেকে পালিয়ে আসা তরুণ কর্মীরা ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ বা পিডিএফ গঠন করেছিল। এতে বহু দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসা জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভিজ্ঞ যোদ্ধারাও রয়েছেন। তবে এই গোষ্ঠী দুর্বলভাবে সংগঠিত বলে মনে হচ্ছে। পিডিএফের নিজস্ব লক্ষ্য রয়েছে। তারা জাতিগত বার্মিজ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতি গভীর অবিশ্বাস পোষণ করে থাকে। তারা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার থেকে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই তাদের আন্দোলনের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই।
চার বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির পর পরিস্থিতি আবার নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। চীনের সমর্থন থাকার কারণেই জান্তা বাহিনী এসব শহর পুনর্দখল করতে পেরেছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সাগাইং অঞ্চলে বিমান হামলার আশঙ্কায় বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে শিক্ষার্থীরা -এএফপি
শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
মায়ানমারের চীন সীমান্তে বছর কয়েক মাস ধরে কঠিন লড়াইয়ের পর বিদ্রোহীরা জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে কিয়াউকম শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। চীন সীমান্ত থেকে মায়ানমারের বাকি অংশে যাওয়ার প্রধান বাণিজ্য রুট এ অঞ্চলে অবস্থিত। তখন এটি ছিল বিদ্রোহীদের জন্য এক বড় জয়। কিয়াউকম এশিয়ান হাইওয়ে ১৪-এর ওপর অবস্থিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি ‘বার্মা রোড’ নামে বেশি বিখ্যাত ছিল। তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এ শহর দখল করার পর অনেকে বিরোধীদের জন্য এটিকে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, এর ফলে ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তার মনোবল ভেঙে পড়ছে।
তবে এ মাসেই মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সেনাবাহিনী কিয়াউকম বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে। এই ছোট পাহাড়ি শহরের দখল-পুনর্দখল স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক ভারসাম্য এখন জান্তার অনুকূলে কতটা সরে গেছে। কিয়াউকম অঞ্চলকে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। টিএনএলএর নিয়ন্ত্রণে থাকাকালে সামরিক বাহিনী প্রায় দিনই সেখানে বিমান হামলায় চালিয়েছে। এতে শহরের বিশাল অংশ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যুদ্ধবিমান থেকে ৫০০ পাউন্ড ওজনের বোমা ফেলা হয়েছিল। অন্যদিকে কামান ও ড্রোন দিয়ে শহরের বাইরে বিদ্রোহীদের অবস্থানে হামলা চালানো হয়েছিল।
জান্তা বাহিনীর হামলার তীব্রতায় শহরের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই পালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য সামরিক বাহিনী শহরটি বিদ্রোহীদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করার পর এখন তাঁরা ফিরতে শুরু করেছেন। টিএনএলএর এক মুখপাত্র টার পার্ন লা চলতি মাসের শুরুতে বিবিসিকে বলেন, ‘কিয়াউকম এবং হিসিপাওতে প্রতিদিন তীব্র লড়াই চলছে। বিদ্রোহীদের তুলনায় সেনাবাহিনীর বেশি সেনা, ভারী অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান রয়েছে। আমরা হিসিপাওকে রক্ষা করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
বিবিসি যখন পার্ন লার সঙ্গে কথা বলেছিল, তখন জান্তা বাহিনী হিসিপাও এলাকাও পুনর্দখল করেছে। গত বছর টিএনএলএর দখলে থাকা শেষ শহর ছিল হিসিপাও। এভাবে চীন সীমান্তের রাস্তায় জান্তা বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।চীনের সমর্থন থাকার কারণেই জান্তা বাহিনী এসব শহর পুনর্দখল করতে পেরেছে। চীন আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জান্তার পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। তবে দেশে-বিদেশে এই পরিকল্পনার ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। কারণ, এই নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এনএলডি) বাদ দেওয়া হয়েছে।
এনএলডি মিয়ানমারে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। জান্তা বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারকে উৎখাত করেছিল। তখন থেকে মিয়ানমারের বেশির ভাগ অংশেই গৃহযুদ্ধ চলছে। সামরিক বাহিনী যতটা সম্ভব হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে, যাতে এসব অঞ্চলে নির্বাচন আয়োজন করা যায়। এই বছর তারা লড়াইয়ে আরও বেশি সাফল্য পাচ্ছে। কারণ, তারা অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এ ছাড়া নতুন ও মারাত্মক প্রযুক্তি হাতে পেয়েছে।
কিয়াউকম শহরের দখল-পুনর্দখল স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক ভারসাম্য এখন জান্তার অনুকূলে কতটা সরে গেছে। বিশেষ করে জান্তা সরকার বিরোধীদের সস্তা ড্রোন ব্যবহারের প্রাথমিক সুবিধার জবাবে চীন থেকে হাজার হাজার আধুনিক ড্রোন কিনেছে। তাদের অগ্রবর্তী ইউনিটগুলোকে এসব অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
জান্তা বাহিনী ধীর ও সহজে উড়তে পারা মোটরচালিত প্যারাস্লাইডারও ব্যবহার করছে, যা হালকাভাবে সুরক্ষিত এলাকার ওপরে চক্কর দিতে পারে এবং অত্যন্ত নির্ভুলভাবে বোমা ফেলতে পারে। তারা চীনা ও রাশিয়া থেকে পাওয়া বিমান দিয়ে অবিরাম বোমা ফেলছে। জান্তা বাহিনীর বিমান হামলায় চলতি বছর বেসামরিক মানুষের হতাহতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে মোট সংখ্যা সম্ভবত আরও বেশি। অন্যদিকে অন্তর্নিহিত দুর্বলতার কারণে খণ্ডিত বিরোধী আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী বা শহর থেকে পালিয়ে আসা তরুণ কর্মীরা ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’ বা পিডিএফ গঠন করেছিল। এতে বহু দশক ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসা জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অভিজ্ঞ যোদ্ধারাও রয়েছেন। তবে এই গোষ্ঠী দুর্বলভাবে সংগঠিত বলে মনে হচ্ছে। পিডিএফের নিজস্ব লক্ষ্য রয়েছে। তারা জাতিগত বার্মিজ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতি গভীর অবিশ্বাস পোষণ করে থাকে। তারা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকার থেকে গঠিত জাতীয় ঐক্য সরকারের কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। তাই তাদের আন্দোলনের কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নেই।
চার বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু এবং লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির পর পরিস্থিতি আবার নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। চীনের সমর্থন থাকার কারণেই জান্তা বাহিনী এসব শহর পুনর্দখল করতে পেরেছে।