অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা—এই তিন রাজ্যের সীমান্তবর্তী অরণ্যে পুলিশের সঙ্গে মাওবাদী বিদ্রোহীদের বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাওবাদী নেতা মাদভি হিদমা নিহত হয়েছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের ওপর অন্তত ২৬টি সশস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দেওয়া এই আলোচিত কমান্ডারের মৃত্যু ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শনিবার ভোরে অন্ধ্র প্রদেশের আল্লুরি সীতারামারাজু জেলার মাড়েডুমিল্লি অরণ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গুলিবিনিময় শুরু হয় বলে জানান অন্ধ্র প্রদেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক হরিশ কুমার গুপ্ত। সংঘর্ষ শেষে ঘটনাস্থলে ছয় মাওবাদীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে হিদমাও ছিলেন। পাশাপাশি তার স্ত্রী রাজে ওরফে রাজাক্কাও এই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকায় ব্যাপক চিরুনি অভিযান চলছে।
১৯৮১ সালে তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের সুকমায় জন্মগ্রহণকারী হিদমা অল্প বয়সেই পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (পিএলজিএ)-র একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে উঠে আসেন এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হয়ে ওঠেন। সংগঠনটির সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ-র অন্যতম প্রভাবশালী কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র আদিবাসী সদস্যও ছিলেন হিদমা। তাকে ধরিয়ে দিতে ভারত সরকার ৫০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
হিদমা মাওবাদীদের একাধিক বড় হামলার পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কুখ্যাত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
২০১০ সালের দান্তেওয়াড়া হামলা, যেখানে ভারতের সিআরপিএফের ৭৬ সদস্য নিহত হন।
২০১৩ সালের ঝিরাম ঘাটি আক্রমণ, যাতে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সহ ২৭ জন নিহত হন।
২০২১ সালের সুকমা-বিজাপুর হামলা, যেখানে চোরাগোপ্তা আক্রমণে ২২ নিরাপত্তা সদস্য প্রাণ হারান।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে থাকা মাওবাদী গোষ্ঠীর জন্য হিদমার মৃত্যু বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি এনডিটিভির একটি সম্মেলনে বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০-র বেশি মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। গত ৫০-৫৫ বছরে মাওবাদী সন্ত্রাস হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। তারা স্কুল-হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দিয়েছে, চিকিৎসকদের ঢুকতে দেয়নি, প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দিয়েছে।”
সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের মধ্যে অন্যতম নেতা মল্লোজুলা ভেনুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি বলেন, দীর্ঘদিন সশস্ত্র লড়াই চালাতে গিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, যা তাদের ব্যর্থতা। তার ভাষায়, “সক্রিয় মাওবাদীদের সহিংসতার পথ ছেড়ে আত্মসমর্পণ করে মূলধারায় ফিরে এসে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলেঙ্গানা—এই তিন রাজ্যের সীমান্তবর্তী অরণ্যে পুলিশের সঙ্গে মাওবাদী বিদ্রোহীদের বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাওবাদী নেতা মাদভি হিদমা নিহত হয়েছেন। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ মানুষের ওপর অন্তত ২৬টি সশস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দেওয়া এই আলোচিত কমান্ডারের মৃত্যু ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য বড় সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শনিবার ভোরে অন্ধ্র প্রদেশের আল্লুরি সীতারামারাজু জেলার মাড়েডুমিল্লি অরণ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র গুলিবিনিময় শুরু হয় বলে জানান অন্ধ্র প্রদেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক হরিশ কুমার গুপ্ত। সংঘর্ষ শেষে ঘটনাস্থলে ছয় মাওবাদীর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে হিদমাও ছিলেন। পাশাপাশি তার স্ত্রী রাজে ওরফে রাজাক্কাও এই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকায় ব্যাপক চিরুনি অভিযান চলছে।
১৯৮১ সালে তৎকালীন মধ্যপ্রদেশের সুকমায় জন্মগ্রহণকারী হিদমা অল্প বয়সেই পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি (পিএলজিএ)-র একটি ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে উঠে আসেন এবং নিষিদ্ধ সংগঠন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হয়ে ওঠেন। সংগঠনটির সশস্ত্র শাখা পিএলজিএ-র অন্যতম প্রভাবশালী কমান্ডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির একমাত্র আদিবাসী সদস্যও ছিলেন হিদমা। তাকে ধরিয়ে দিতে ভারত সরকার ৫০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
হিদমা মাওবাদীদের একাধিক বড় হামলার পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কুখ্যাত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
২০১০ সালের দান্তেওয়াড়া হামলা, যেখানে ভারতের সিআরপিএফের ৭৬ সদস্য নিহত হন।
২০১৩ সালের ঝিরাম ঘাটি আক্রমণ, যাতে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সহ ২৭ জন নিহত হন।
২০২১ সালের সুকমা-বিজাপুর হামলা, যেখানে চোরাগোপ্তা আক্রমণে ২২ নিরাপত্তা সদস্য প্রাণ হারান।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অভিযানের মুখে থাকা মাওবাদী গোষ্ঠীর জন্য হিদমার মৃত্যু বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি এনডিটিভির একটি সম্মেলনে বলেন, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০-র বেশি মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। গত ৫০-৫৫ বছরে মাওবাদী সন্ত্রাস হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে। তারা স্কুল-হাসপাতাল নির্মাণে বাধা দিয়েছে, চিকিৎসকদের ঢুকতে দেয়নি, প্রতিষ্ঠান উড়িয়ে দিয়েছে।”
সম্প্রতি আত্মসমর্পণ করা মাওবাদীদের মধ্যে অন্যতম নেতা মল্লোজুলা ভেনুগোপাল রাও ওরফে ভূপতি বলেন, দীর্ঘদিন সশস্ত্র লড়াই চালাতে গিয়ে তারা মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন, যা তাদের ব্যর্থতা। তার ভাষায়, “সক্রিয় মাওবাদীদের সহিংসতার পথ ছেড়ে আত্মসমর্পণ করে মূলধারায় ফিরে এসে মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।”