alt

সংবিধান সংশোধনীর পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হাতে কত ক্ষমতা গেল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির এখন দেশটির আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে শাহবাজ শরিফ সরকার তাঁকে আজীবন যেকোনো অপরাধ বা প্রশাসনিক অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনগত দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে দেশটির সেনাবাহিনী সব সময়ই অত্যন্ত প্রভাবশালী। নতুন আইনে সেই ক্ষমতা আরও বেড়েছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা-সমালোচনা ও তুমুল বিতর্কের পর বুধবার, (১৯ নভেম্বর ২০২৫) সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনুমোদন পায়। পরদিন বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ওই বিলে স্বাক্ষর করে সেটিকে আইনে পরিণত করেন। নতুন সংশোধনীতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা সীমিত করা হয়েছে। সমালোচকেরা এর বিরোধিতা করে বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

নতুন সংশোধনীতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা সীমিত করা হয়েছে। সমালোচকেরা এর বিরোধিতা করে বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

অন্যদিকে সংশোধনের পক্ষের লোকজন বলছেন, এর ফলে সেনাবাহিনীতে স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত হবে এবং আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ার জট কমাতে সাহায্য করবে।

স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী প্রভাবশালী ভূমিকা রেখে আসছে। পরমাণু শক্তিধর দেশটিতে সেনাবাহিনী কখনো সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে, আবার কখনো পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। (পাকিস্তানে) সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বলে আর কিছু নেই। তারা পুনরায় ক্ষমতার পাল্লা সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং এমন একসময়ে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায়িত করেছে, যখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন ছিল।

মুনিজায়ে জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক ও পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের উপপ্রধান এর ফলে দেশটি কখনো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দিকে একটু বেশি এগিয়েছে, আবার কখনো জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া উল হকের নেতৃত্বে সরাসরি সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। বিশ্লেষকেরা দেশটির রাজনীতিতে এই নাগরিক ও সামরিক শক্তির ভারসাম্যকে ‘হাইব্রিড শাসন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

কেউ কেউ নতুন সংশোধনীকে ‘হাইব্রিড শাসনের’ ভারসাম্যের পাল্লা সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ার স্পষ্ট সংকেত হিসেবে দেখছেন। ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান এখন আর হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার মধ্যে নেই, বরং হাইব্রিড শাসনপরবর্তী ব্যবস্থায় চলে গেছে। এই সংশোধন হলো তার সাম্প্রতিকতম এবং সম্ভতব এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত।

সংবিধানের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন থেকে দেশটির নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও পালন করবেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি, যেখানে বেসামরিক ও সামরিক শক্তির ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। সম্ভবত এর থেকে বেশি ভারসাম্যহীন আর হতে পারে না।’

সংবিধানের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন থেকে দেশটির নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও পালন করবেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এ বছর ২০ মে আসিম মুনির পাঁচ তারকা মর্যাদায় উন্নীত হন। এর মাত্র ১০ দিন আগে ভারতের সঙ্গে ৪ দিনের যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়েছিল পাকিস্তান।

মুনির পাকিস্তানের দ্বিতীয় সামরিক কর্মকর্তা, যিনি পাঁচ তারকা মর্যাদা পেয়েছেন। তাঁর আগে ১৯৬০–এর দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এই খেতাব পান। এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনীর কেউ পাঁচ তারকা মর্যাদা পাননি।

নতুন সংশোধনীতে আসিম মুনিরের ফিল্ড মার্শাল খেতাব এবং তাঁর সামরিক পোশাক (ইউনিফর্ম) আজীবন থাকবে। অর্থাৎ, তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়া বা অবসর গ্রহণের পরও তাঁর ফিল্ড মার্শাল পদমর্যাদা বহাল থাকবে।

‘যখন রাষ্ট্রই সেই বেঞ্চগুলো গঠন করে দেবে, তখন একজন বাদী হিসেবে ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশা আমরা কি করতে পারি?’ শুধু তা–ই নয়, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে আজীবনের জন্য যেকোনো অপরাধ বা প্রশাসনিক অভিযোগ থেকে আইনগত দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে না।

এ ছাড়া অবসর নেওয়ার পরও তাঁকে ‘দায়িত্ব ও কর্তব্য’ দেওয়া হবে, যা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। সংশোধনীর সমর্থকেরা মনে করেন, এর ফলে পাকিস্তানের সামরিক কমান্ড কাঠামোতে স্বচ্ছতা বাড়বে। পাকিস্তানের সরকারি সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বরাত দিয়ে বলেছে, এসব পরিবর্তন একটি বিস্তৃত সংস্কারপরিকল্পনার (এজেন্ডা) অংশ, যেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আধুনিক যুদ্ধের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে।

তবে বিলের সমর্থকেরা যত ব্যাখ্যাই দিন, সমালোচকেরা বলছেন, এটাকে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সাংবাদিক ও পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের উপপ্রধান মুনিজায়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘(পাকিস্তানে) সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বলে আর কিছু নেই। তারা আবার ক্ষমতার ভারসাম্যের পাল্লা সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং এমন একসময়ে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায়িত করেছে, যখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন ছিল।’ সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রের পরিবর্তন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে, সেটা হলো আদালত ও বিচার বিভাগ। নতুন সংশোধনীর অধীনে একটি নতুন কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠন করা হবে। সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলো এখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালতের হাতে চলে যাবে। প্রেসিডেন্ট নতুন এই আদালতের প্রথম প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির সরকারের অনেক নীতিমালা আটকে দিয়েছেন।

কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুতও করেছেন। নতুন সংস্কারের ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে।

এ নিয়ে সাংবাদিক মুনিজায়ে বলেন, ‘এটি ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারের কাঠামো ও প্রকৃতিকে চিরতরে বদলে দেবে। কারণ, শুধু বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সংবিধানিক বেঞ্চ নির্ধারণেও প্রশাসনের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে।’ যখন রাষ্ট্রই সেই বেঞ্চগুলো গঠন করে দেবে, তখন একজন বাদী হিসেবে ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশা আমরা কি করতে পারি, প্রশ্ন এই সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীর।

আরেক সাংবাদিক ও রাজনীতিবিশ্লেষক আরিফা নূর বলেন, ‘এখন বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতি খুবই অনুগত হবে। মোদ্দাকথা হলো, বর্তমানে বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার আর কোনো সুযোগ সত্যিই থাকল না।’ এই সংশোধনী পাস হওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানসম্পর্কিত মামলাগুলো শুনতেন এবং সিদ্ধান্ত দিতেন। এখন বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতি খুবই অনুগত হবে। মোদ্দাকথা হলো, এখন বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার আর কোনো সুযোগ সত্যিই থাকল না।

এখন বিচারকদের সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলোতে আর সময় দিতে হবে না। ফলে তাঁরা ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় অধিক সময় দিতে পারবেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁরা মনে করেন, এর ফলে আদালতে বিচারাধীন মামলার যে জট তৈরি হয়েছে, তা কমবে এবং দুটি আলাদা আদালত হওয়ার কারণে আদালতের কার্যপ্রক্রিয়া অনেকটা সহজ হবে। কোনো কোনো আইনজীবীর কাছে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য হলেও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করাচির সালাহউদ্দিন আহমেদ এই যুক্তিকে অসংগতিপূর্ণ মনে করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে যেসব মামলার বিচারকাজ আটকে আছে, সেগুলোর অধিকাংশই সুপ্রিম কোর্টে নয়, বরং অন্যান্য আদালতে।

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘পরিসংখ্যানগতভাবে যদি সত্যিই আপনি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেই মামলাগুলোর সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হতো।’

ছবি

রাখাইনে সংঘাত তীব্র, আরাকান আর্মির হামলায় ৩০ জান্তা সেনা নিহত

ছবি

রাখাইনে সংঘাত তীব্র, আরাকান আর্মির হামলায় ৩০ জান্তা সেনা নিহত

ছবি

মহাকাশে আরও তীব্র হচ্ছে সামরিক প্রতিযোগিতা

ছবি

গাজায় ঐতিহাসিক প্রাসাদ ধ্বংস, ২০ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু লুট

ছবি

হামাসকে গাজা থেকে বহিষ্কারের আহ্বান নেতানিয়াহুর

ছবি

সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

ছবি

ভারতীয়দের ভিসামুক্ত প্রবেশ বন্ধ করছে ইরান

ছবি

ব্রিটেনে নতুন আশ্রয়নীতি, ক্ষমতাসীন দলের ভেতরেই তীব্র আপত্তি

ছবি

এআই অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না: সুন্দর পিচাই

ছবি

আফ্রিকার ৬ দেশে সেনা উপস্থিতি বাড়াচ্ছে রাশিয়া

ছবি

তহবিল ঘাটতি, প্রকট হচ্ছে ক্ষুধা সংকট, জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

ছবি

গাজা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে কী আছে

ছবি

ভারতে ২৬টি হামলার নেতৃত্বদানকারী শীর্ষ মাওবাদী কমান্ডার হিদমা অভিযানে নিহত

ছবি

সড়ক দুর্ঘটনায় সৌদি আরবে ৪২ ভারতীয় ওমরাহযাত্রী নিহত

ছবি

ভেনেজুয়েলায় মাদুরোকে উৎখাতের প্রচেষ্টা ট্রাম্পের!

ছবি

ডান-বামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে দ্বিতীয় দফায় গড়াল চিলির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ছবি

পাকিস্তানের ওপর অর্থনৈতিক নির্ভরতা কমাতে চায় আফগানিস্তান

ছবি

তাইওয়ান আক্রান্ত হলে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে জাপান

ছবি

যুদ্ধবিরতির এক মাস পরও গাজার সুড়ঙ্গগুলোয় কেন আটকে আছেন হামাস

ছবি

শার্লটে অবৈধ অভিবাসীবিরোধী ফেডারেল অভিযান শুরু

ছবি

এবার মেক্সিকোতে জেন-জি ধাঁচে বিক্ষোভ

ছবি

সৌদি আরবে এক সপ্তাহে ২২ হাজারের বেশি বিদেশি গ্রেপ্তার

ছবি

ফিলিপাইনে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবি

ছবি

ট্রাম্প বনাম বিবিসির লড়াই, এরপর কী

ছবি

নীতিতে সংস্কার, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কঠোর হচ্ছে যুক্তরাজ্য

ছবি

কপে মতবিরোধ তীব্র, চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা

ছবি

মামদানির প্রশাসনে কাজ করতে ৫০ হাজার আবেদন

ছবি

গ্রেপ্তার ও বিচার থেকে আজীবন দায়মুক্তি পেলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান

ছবি

এপস্টেইন–ক্লিনটন সম্পর্কসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে তদন্তে নির্দেশ ট্রাম্পের, নজরদারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ

ছবি

জম্মু-কাশ্মীরে থানায় বিস্ফোরণে নিহত ৯

ছবি

ক্ষমা চেয়েও রক্ষা হচ্ছে না বিবিসির, মামলা করছেন ট্রাম্প

ছবি

মূল্যস্ফীতির শঙ্কায় খাদ্যদ্রব্যে শুল্ক প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প

ছবি

চীন সীমান্তে নতুন বিমানঘাঁটি চালু করল ভারত

ছবি

নীরবে যুদ্ধোত্তর গাজার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস

ছবি

দিল্লি বিস্ফোরণে কাশ্মীর-সংযোগ খতিয়ে দেখছে ভারতীয় পুলিশ

ছবি

ল্যাটিন আমেরিকায় নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা

tab

সংবিধান সংশোধনীর পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হাতে কত ক্ষমতা গেল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির এখন দেশটির আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে শাহবাজ শরিফ সরকার তাঁকে আজীবন যেকোনো অপরাধ বা প্রশাসনিক অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনগত দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করেছে। পাকিস্তানের রাজনীতির ইতিহাসে দেশটির সেনাবাহিনী সব সময়ই অত্যন্ত প্রভাবশালী। নতুন আইনে সেই ক্ষমতা আরও বেড়েছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা-সমালোচনা ও তুমুল বিতর্কের পর বুধবার, (১৯ নভেম্বর ২০২৫) সংবিধানের ২৭তম সংশোধনী বিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনুমোদন পায়। পরদিন বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ওই বিলে স্বাক্ষর করে সেটিকে আইনে পরিণত করেন। নতুন সংশোধনীতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা সীমিত করা হয়েছে। সমালোচকেরা এর বিরোধিতা করে বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

নতুন সংশোধনীতে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা সীমিত করা হয়েছে। সমালোচকেরা এর বিরোধিতা করে বলছেন, এই পদক্ষেপের ফলে পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।

অন্যদিকে সংশোধনের পক্ষের লোকজন বলছেন, এর ফলে সেনাবাহিনীতে স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত হবে এবং আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ার জট কমাতে সাহায্য করবে।

স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনী প্রভাবশালী ভূমিকা রেখে আসছে। পরমাণু শক্তিধর দেশটিতে সেনাবাহিনী কখনো সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে, আবার কখনো পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছে। (পাকিস্তানে) সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বলে আর কিছু নেই। তারা পুনরায় ক্ষমতার পাল্লা সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং এমন একসময়ে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায়িত করেছে, যখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন ছিল।

মুনিজায়ে জাহাঙ্গীর, সাংবাদিক ও পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের উপপ্রধান এর ফলে দেশটি কখনো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দিকে একটু বেশি এগিয়েছে, আবার কখনো জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ও জেনারেল জিয়া উল হকের নেতৃত্বে সরাসরি সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থেকেছে। বিশ্লেষকেরা দেশটির রাজনীতিতে এই নাগরিক ও সামরিক শক্তির ভারসাম্যকে ‘হাইব্রিড শাসন’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

কেউ কেউ নতুন সংশোধনীকে ‘হাইব্রিড শাসনের’ ভারসাম্যের পাল্লা সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ার স্পষ্ট সংকেত হিসেবে দেখছেন। ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, পাকিস্তান এখন আর হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার মধ্যে নেই, বরং হাইব্রিড শাসনপরবর্তী ব্যবস্থায় চলে গেছে। এই সংশোধন হলো তার সাম্প্রতিকতম এবং সম্ভতব এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সংকেত।

সংবিধানের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন থেকে দেশটির নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও পালন করবেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কুগেলম্যান আরও বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে আমরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছি, যেখানে বেসামরিক ও সামরিক শক্তির ভারসাম্যহীনতা রয়েছে। সম্ভবত এর থেকে বেশি ভারসাম্যহীন আর হতে পারে না।’

সংবিধানের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এখন থেকে দেশটির নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও পালন করবেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

এ বছর ২০ মে আসিম মুনির পাঁচ তারকা মর্যাদায় উন্নীত হন। এর মাত্র ১০ দিন আগে ভারতের সঙ্গে ৪ দিনের যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয়েছিল পাকিস্তান।

মুনির পাকিস্তানের দ্বিতীয় সামরিক কর্মকর্তা, যিনি পাঁচ তারকা মর্যাদা পেয়েছেন। তাঁর আগে ১৯৬০–এর দশকে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এই খেতাব পান। এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনীর কেউ পাঁচ তারকা মর্যাদা পাননি।

নতুন সংশোধনীতে আসিম মুনিরের ফিল্ড মার্শাল খেতাব এবং তাঁর সামরিক পোশাক (ইউনিফর্ম) আজীবন থাকবে। অর্থাৎ, তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়া বা অবসর গ্রহণের পরও তাঁর ফিল্ড মার্শাল পদমর্যাদা বহাল থাকবে।

‘যখন রাষ্ট্রই সেই বেঞ্চগুলো গঠন করে দেবে, তখন একজন বাদী হিসেবে ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশা আমরা কি করতে পারি?’ শুধু তা–ই নয়, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে আজীবনের জন্য যেকোনো অপরাধ বা প্রশাসনিক অভিযোগ থেকে আইনগত দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে না।

এ ছাড়া অবসর নেওয়ার পরও তাঁকে ‘দায়িত্ব ও কর্তব্য’ দেওয়া হবে, যা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। সংশোধনীর সমর্থকেরা মনে করেন, এর ফলে পাকিস্তানের সামরিক কমান্ড কাঠামোতে স্বচ্ছতা বাড়বে। পাকিস্তানের সরকারি সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের বরাত দিয়ে বলেছে, এসব পরিবর্তন একটি বিস্তৃত সংস্কারপরিকল্পনার (এজেন্ডা) অংশ, যেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আধুনিক যুদ্ধের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে।

তবে বিলের সমর্থকেরা যত ব্যাখ্যাই দিন, সমালোচকেরা বলছেন, এটাকে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সাংবাদিক ও পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের উপপ্রধান মুনিজায়ে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘(পাকিস্তানে) সামরিক ও বেসামরিক ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য বলে আর কিছু নেই। তারা আবার ক্ষমতার ভারসাম্যের পাল্লা সামরিক বাহিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং এমন একসময়ে সামরিক বাহিনীকে ক্ষমতায়িত করেছে, যখন সেটিকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন ছিল।’ সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রের পরিবর্তন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হচ্ছে, সেটা হলো আদালত ও বিচার বিভাগ। নতুন সংশোধনীর অধীনে একটি নতুন কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালত (এফসিসি) গঠন করা হবে। সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলো এখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে কেন্দ্রীয় সাংবিধানিক আদালতের হাতে চলে যাবে। প্রেসিডেন্ট নতুন এই আদালতের প্রথম প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগ দেবেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির সরকারের অনেক নীতিমালা আটকে দিয়েছেন।

কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুতও করেছেন। নতুন সংস্কারের ফলে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়েছে।

এ নিয়ে সাংবাদিক মুনিজায়ে বলেন, ‘এটি ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারের কাঠামো ও প্রকৃতিকে চিরতরে বদলে দেবে। কারণ, শুধু বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রেই নয়, বরং সংবিধানিক বেঞ্চ নির্ধারণেও প্রশাসনের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে।’ যখন রাষ্ট্রই সেই বেঞ্চগুলো গঠন করে দেবে, তখন একজন বাদী হিসেবে ন্যায্য বিচার পাওয়ার আশা আমরা কি করতে পারি, প্রশ্ন এই সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীর।

আরেক সাংবাদিক ও রাজনীতিবিশ্লেষক আরিফা নূর বলেন, ‘এখন বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতি খুবই অনুগত হবে। মোদ্দাকথা হলো, বর্তমানে বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার আর কোনো সুযোগ সত্যিই থাকল না।’ এই সংশোধনী পাস হওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানসম্পর্কিত মামলাগুলো শুনতেন এবং সিদ্ধান্ত দিতেন। এখন বিচার বিভাগ প্রশাসনের প্রতি খুবই অনুগত হবে। মোদ্দাকথা হলো, এখন বিচার বিভাগের স্বাধীনভাবে পরিচালিত হওয়ার আর কোনো সুযোগ সত্যিই থাকল না।

এখন বিচারকদের সংবিধানসংক্রান্ত মামলাগুলোতে আর সময় দিতে হবে না। ফলে তাঁরা ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় অধিক সময় দিতে পারবেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তাঁরা মনে করেন, এর ফলে আদালতে বিচারাধীন মামলার যে জট তৈরি হয়েছে, তা কমবে এবং দুটি আলাদা আদালত হওয়ার কারণে আদালতের কার্যপ্রক্রিয়া অনেকটা সহজ হবে। কোনো কোনো আইনজীবীর কাছে এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য হলেও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী করাচির সালাহউদ্দিন আহমেদ এই যুক্তিকে অসংগতিপূর্ণ মনে করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানে যেসব মামলার বিচারকাজ আটকে আছে, সেগুলোর অধিকাংশই সুপ্রিম কোর্টে নয়, বরং অন্যান্য আদালতে।

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘পরিসংখ্যানগতভাবে যদি সত্যিই আপনি মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত করা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে সেই মামলাগুলোর সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হতো।’

back to top