মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ -এএফপি
গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত হলেও পাকিস্তান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, তারা এ বিষয়ে কোন অবস্থানে আছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করা পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতেখার আহমেদ প্রস্তাবটি উপস্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানালেও স্পষ্ট করে বলেন, পাকিস্তান প্রস্তাবের সব অংশে সন্তুষ্ট নয়। ইসলামাবাদ যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব করেছিল, তার বেশির ভাগই চূড়ান্ত খসড়ায় যুক্ত হয়নি, যা পাকিস্তানের আপত্তির মূল কারণ।
এই প্রস্তাবের কেন্দ্রে রয়েছে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী—আইএসএফ। এটি হবে একটি বহুজাতিক বাহিনী, যারা গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে যুদ্ধবিরতির কার্যকর বাস্তবায়ন, মানবিক সহায়তার তদারকি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং উপত্যকার পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। গাজাকে অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলে পরিণত করার বিষয়টিও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে এই বাহিনীতে কোন কোন দেশ সেনা পাঠাবে, বাহিনী কাদের অধীনে কাজ করবে এবং জাতিসংঘ এখানে কী ভূমিকা নেবে—এসব বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। পাকিস্তান এটিকেই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হিসেবে দেখছে।
পাকিস্তানের ভূরাজনীতিক অবস্থান সাম্প্রতিক সময়ে নতুনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক ইসলামাবাদ সফর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের জর্ডান ও মিসর সফর, উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ঐতিহ্যগত ঘনিষ্ঠতার আরও দৃঢ় হওয়া—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সামরিক-রাজনৈতিক সমীকরণে পাকিস্তান আবারও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে; ট্রাম্প নিজেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে তাঁর ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বিনিয়োগ, বিশেষ করে বিরল খনিজসম্পদ নিয়ে আলোচনাও চলছে। এসব পরিবর্তনই প্রমাণ করে, পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক কূটনীতিতে বড় ধরনের হিসাব-নিকাশ চলছে।
তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথটি মোটেও সহজ নয়। পাকিস্তান ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি পাকিস্তানি পাসপোর্টেই লেখা থাকে—এই পাসপোর্ট ইসরায়েল ভ্রমণে ব্যবহারযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষাপটে গাজায় আইএসএফের অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাদের পাঠানো এবং সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করা হলে তা পাকিস্তানের ভেতরে ব্যাপক বিতর্ক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারও তাই পরিস্থিতি খুব সতর্কভাবে বিবেচনা করছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আইএসএফে অংশ নেওয়াকে গর্বের বিষয় বললেও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকার সংসদ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাহিনী ও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে যেসব অস্পষ্টতা রয়েছে, তা চীন ও রাশিয়ার মতো দেশকে ভোটদানে বিরত থাকতে বাধ্য করেছে। প্রস্তাবে গাজাকে “অসামরিকীকরণ” এবং হামাসকে “সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ” করার কথা বলা হয়েছে। হামাস এ অংশটাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে; তাদের মতে, এই প্রস্তাব তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
আইএসএফ গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে গাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি সিভিল-মিলিটারি কো–অর্ডিনেশন সেন্টার স্থাপন করেছে, যেখানে প্রায় দুই শতাধিক মার্কিন সেনা কাজ শুরু করেছে। মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর পথগুলো এখান থেকে তদারকি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আইএসএফে যোগদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী বিবেচিত হচ্ছে।
পাকিস্তান বর্তমানে নিজস্ব নিরাপত্তাজনিত সংকটের মধ্যেই রয়েছে। পূর্বে ভারতের সঙ্গে এবং পশ্চিমে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটও দেশটিকে দুর্বল অবস্থানে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায় তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সুনজরে থাকা প্রয়োজন। ফলে আইএসএফে অংশগ্রহণের বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে বিকল্পও খুব বেশি নেই। তবে আনন্দের বিষয় হলো, গাজায় পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণ সেনা পাঠাতে হবে না, কারণ বাহিনীটি হবে বহুজাতিক এবং বিভিন্ন দেশ মিলেই দায়িত্ব ভাগ করে নেবে।
তবুও সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—ইসরায়েলের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের কোনো ধরনের সমন্বয় ঘটবে কি না। পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওমর মাহমুদ হায়াত মনে করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ পাকিস্তানের জনগণের আস্থায় বড় ধাক্কা দেবে। এটি শুধু নৈতিক বা রাজনৈতিক সংকটই তৈরি করবে না, বরং পাকিস্তানের বহুদিনের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। যদিও কেউ কেউ যুক্তি দেন, আইএসএফের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হতে পারে যাতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন না পড়ে, কিন্তু বাস্তবে এমন সমন্বয় পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
সুতরাং, গাজায় আইএসএফের অংশ হিসেবে সেনা পাঠানোর প্রশ্নটি পাকিস্তানের জন্য যেমন আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দেশের ভেতরেও অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি সিদ্ধান্ত। আঞ্চলিক রাজনীতি, যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় মিত্রদের প্রত্যাশা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপ এবং ইসরায়েল প্রসঙ্গ এই চার দিকের টানাপোড়েনের মাঝেই পাকিস্তানকে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ -এএফপি
সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫
গাজায় দীর্ঘদিন ধরে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অনুমোদিত হলেও পাকিস্তান এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি, তারা এ বিষয়ে কোন অবস্থানে আছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করা পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতেখার আহমেদ প্রস্তাবটি উপস্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানালেও স্পষ্ট করে বলেন, পাকিস্তান প্রস্তাবের সব অংশে সন্তুষ্ট নয়। ইসলামাবাদ যেসব গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী প্রস্তাব করেছিল, তার বেশির ভাগই চূড়ান্ত খসড়ায় যুক্ত হয়নি, যা পাকিস্তানের আপত্তির মূল কারণ।
এই প্রস্তাবের কেন্দ্রে রয়েছে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী—আইএসএফ। এটি হবে একটি বহুজাতিক বাহিনী, যারা গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা থেকে শুরু করে যুদ্ধবিরতির কার্যকর বাস্তবায়ন, মানবিক সহায়তার তদারকি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং উপত্যকার পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। গাজাকে অস্ত্রমুক্ত অঞ্চলে পরিণত করার বিষয়টিও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে এই বাহিনীতে কোন কোন দেশ সেনা পাঠাবে, বাহিনী কাদের অধীনে কাজ করবে এবং জাতিসংঘ এখানে কী ভূমিকা নেবে—এসব বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। পাকিস্তান এটিকেই সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হিসেবে দেখছে।
পাকিস্তানের ভূরাজনীতিক অবস্থান সাম্প্রতিক সময়ে নতুনভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সাম্প্রতিক ইসলামাবাদ সফর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের জর্ডান ও মিসর সফর, উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ঐতিহ্যগত ঘনিষ্ঠতার আরও দৃঢ় হওয়া—সব মিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের নতুন সামরিক-রাজনৈতিক সমীকরণে পাকিস্তান আবারও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে; ট্রাম্প নিজেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে তাঁর ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বিনিয়োগ, বিশেষ করে বিরল খনিজসম্পদ নিয়ে আলোচনাও চলছে। এসব পরিবর্তনই প্রমাণ করে, পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক কূটনীতিতে বড় ধরনের হিসাব-নিকাশ চলছে।
তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথটি মোটেও সহজ নয়। পাকিস্তান ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি পাকিস্তানি পাসপোর্টেই লেখা থাকে—এই পাসপোর্ট ইসরায়েল ভ্রমণে ব্যবহারযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষাপটে গাজায় আইএসএফের অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাদের পাঠানো এবং সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সমন্বয় করা হলে তা পাকিস্তানের ভেতরে ব্যাপক বিতর্ক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। সরকারও তাই পরিস্থিতি খুব সতর্কভাবে বিবেচনা করছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আইএসএফে অংশ নেওয়াকে গর্বের বিষয় বললেও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, সরকার সংসদ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাহিনী ও গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসন নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে যেসব অস্পষ্টতা রয়েছে, তা চীন ও রাশিয়ার মতো দেশকে ভোটদানে বিরত থাকতে বাধ্য করেছে। প্রস্তাবে গাজাকে “অসামরিকীকরণ” এবং হামাসকে “সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ” করার কথা বলা হয়েছে। হামাস এ অংশটাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে; তাদের মতে, এই প্রস্তাব তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
আইএসএফ গঠনের প্রস্তুতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে গাজার সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি সিভিল-মিলিটারি কো–অর্ডিনেশন সেন্টার স্থাপন করেছে, যেখানে প্রায় দুই শতাধিক মার্কিন সেনা কাজ শুরু করেছে। মানবিক সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর পথগুলো এখান থেকে তদারকি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে আইএসএফে যোগদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামী বিবেচিত হচ্ছে।
পাকিস্তান বর্তমানে নিজস্ব নিরাপত্তাজনিত সংকটের মধ্যেই রয়েছে। পূর্বে ভারতের সঙ্গে এবং পশ্চিমে আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ায় সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করতে হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটও দেশটিকে দুর্বল অবস্থানে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও কৌশলগত অবস্থান বিবেচনায় তাদের যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সুনজরে থাকা প্রয়োজন। ফলে আইএসএফে অংশগ্রহণের বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে বিকল্পও খুব বেশি নেই। তবে আনন্দের বিষয় হলো, গাজায় পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণ সেনা পাঠাতে হবে না, কারণ বাহিনীটি হবে বহুজাতিক এবং বিভিন্ন দেশ মিলেই দায়িত্ব ভাগ করে নেবে।
তবুও সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—ইসরায়েলের সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাদের কোনো ধরনের সমন্বয় ঘটবে কি না। পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ওমর মাহমুদ হায়াত মনে করেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগ পাকিস্তানের জনগণের আস্থায় বড় ধাক্কা দেবে। এটি শুধু নৈতিক বা রাজনৈতিক সংকটই তৈরি করবে না, বরং পাকিস্তানের বহুদিনের কূটনৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করে দেবে। যদিও কেউ কেউ যুক্তি দেন, আইএসএফের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হতে পারে যাতে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর সরাসরি যোগাযোগের প্রয়োজন না পড়ে, কিন্তু বাস্তবে এমন সমন্বয় পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।
সুতরাং, গাজায় আইএসএফের অংশ হিসেবে সেনা পাঠানোর প্রশ্নটি পাকিস্তানের জন্য যেমন আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি দেশের ভেতরেও অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি সিদ্ধান্ত। আঞ্চলিক রাজনীতি, যুক্তরাষ্ট্র ও উপসাগরীয় মিত্রদের প্রত্যাশা, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপ এবং ইসরায়েল প্রসঙ্গ এই চার দিকের টানাপোড়েনের মাঝেই পাকিস্তানকে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।