রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুইদিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভারত যাচ্ছেন। সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি উভয় দেশের আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন। দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে এই সফরে বেশ কিছু চুক্তি সই হওয়ার কথা আছে। সফরটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে বাড়তি চাপ দিয়েছিল। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে রুশ প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
ভারত ও রাশিয়া বহু দশক ধরে ঘনিষ্ঠ মিত্র। পুতিন ও মোদির মধ্যেও সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। কেন তাদের একে অপরের প্রয়োজন এবং এই সফরের কোন দিকগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত তা এখানে তুলে ধরা হলো।
বিশেষ বন্ধুত্ব, বাণিজ্য চুক্তি, ভূরাজনীতি: শুরুতেই দেখা যাক ক্রেমলিনের কাছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই এর উত্তর পাওয়া যায়। প্রায় দেড় বিলিয়ন জনসংখ্যা, ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ভারত বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। এগুলো ভারতের বাজারকে রাশিয়ার পণ্য ও সম্পদের- বিশেষত তেলের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা হলো ভারত। তারা রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। তবে এ চিত্র সবসময় এমন ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ২.৫ শতাংশ ছিল রাশিয়ার তেল। সেটি এখন বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। কারণ ভারতকে রাশিয়া বড় ধরনের মূল্য ছাড়ের সুযোগ দিয়েছে।
মূলত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় বাজারে সীমিত প্রবেশাধিকারের অবস্থা কাটিয়ে উঠতেই রাশিয়া এমন উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু এতে নয়াদিল্লি খুশি হলেও নাখোশ হয় ওয়াশিংটন।
গত অক্টোবরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাদের যুক্তি ছিল, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। এরপর থেকে রাশিয়ান তেলের জন্য ভারতের অর্ডার কমে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়টি পুতিনের সফরে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে পারে।
নয়াদিল্লির কাছে অস্ত্র বিক্রিও মস্কোর জন্য আরেকটি বড় অগ্রাধিকার। এই বাণিজ্য সোভিয়েত আমল থেকে চলে আসছে। পুতিনের সফরকে সামনে রেখে এমন খবরও এসেছে যে, ভারত সর্বাধুনিক রাশিয়ান যুদ্ধবিমান এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা করছে। শ্রমিক সংকটে ভুগতে থাকা রাশিয়া ভারতের দক্ষ কর্মীদেরও মূল্যবান সম্পদ হিসেবে দেখছে। কিন্তু এখানে ভূরাজনৈতিক হিসাব আছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। ক্রেমলিনের লক্ষ্য সেটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। পুতিনের ভারত সফর সেটি প্রমাণ করার একটি উপায়। তিন মাস আগে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে গিয়েছিলেন পুতিন। সেখানে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ছিলেন নরেন্দ্র মোদিও। তাদের একসঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিল- ইউক্রেনে যুদ্ধ চললেও মস্কোর এমন শক্তিশালী মিত্র আছে যারা বিশ্ব ব্যবস্থা বহু মেরুকরণের ধারণা সমর্থন করে।
রাশিয়ার নোভায়া গেজেটা পত্রিকার কলামিস্ট আন্দ্রে কোলেসনিকভ বলছেন, ‘আমি মনে করি ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো ক্রেমলিনকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিচ্ছিন্ন নই। কারণ এশিয়া ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সংযোগ আছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখলে- এটাই ভবিষ্যত।’
আন্দ্রে কোলেসনিকভ আরও বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো রাশিয়া আবারও বিশ্বের এই অংশগুলোর প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে ফিরে এসেছে। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। তবে সেটি ছিল বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতি।’
দার্শনিকরা প্রায়ই বলেন রাশিয়া ইউরোপের অংশ। আন্দ্রে কোলেসনিকভ বলছেন, ‘এখন আমরা তা আর নই। আমরা ইউরোপ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এটি একটি বড় ব্যর্থতা। আমি নিশ্চিত যে রাশিয়ার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী শ্রেণির একটি অংশ আবার ইউরোপে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তারা শুধু চীন ও ভারতের সঙ্গে নয়, ইউরোপের সঙ্গেও ব্যবসা করতে চায়।’
তবে চলতি সপ্তাহটা হতে যাচ্ছে রাশিয়া-ভারত কেন্দ্রিক। দুই দেশের বন্ধুত্ব, বাণিজ্য চুক্তি এবং মস্কো ও দিল্লির মধ্যে বাড়তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশি আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুইদিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভারত যাচ্ছেন। সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি উভয় দেশের আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নেবেন। দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে এই সফরে বেশ কিছু চুক্তি সই হওয়ার কথা আছে। সফরটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে বাড়তি চাপ দিয়েছিল। ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধ করতে রুশ প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা চালাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
ভারত ও রাশিয়া বহু দশক ধরে ঘনিষ্ঠ মিত্র। পুতিন ও মোদির মধ্যেও সম্পর্ক বেশ উষ্ণ। কেন তাদের একে অপরের প্রয়োজন এবং এই সফরের কোন দিকগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত তা এখানে তুলে ধরা হলো।
বিশেষ বন্ধুত্ব, বাণিজ্য চুক্তি, ভূরাজনীতি: শুরুতেই দেখা যাক ক্রেমলিনের কাছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই এর উত্তর পাওয়া যায়। প্রায় দেড় বিলিয়ন জনসংখ্যা, ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে ভারত বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ। এগুলো ভারতের বাজারকে রাশিয়ার পণ্য ও সম্পদের- বিশেষত তেলের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের তৃতীয় বৃহত্তম ভোক্তা হলো ভারত। তারা রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। তবে এ চিত্র সবসময় এমন ছিল না। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ২.৫ শতাংশ ছিল রাশিয়ার তেল। সেটি এখন বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে। কারণ ভারতকে রাশিয়া বড় ধরনের মূল্য ছাড়ের সুযোগ দিয়েছে।
মূলত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় বাজারে সীমিত প্রবেশাধিকারের অবস্থা কাটিয়ে উঠতেই রাশিয়া এমন উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু এতে নয়াদিল্লি খুশি হলেও নাখোশ হয় ওয়াশিংটন।
গত অক্টোবরে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাদের যুক্তি ছিল, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনার মাধ্যমে ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। এরপর থেকে রাশিয়ান তেলের জন্য ভারতের অর্ডার কমে গেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের বিষয়টি পুতিনের সফরে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেতে পারে।
নয়াদিল্লির কাছে অস্ত্র বিক্রিও মস্কোর জন্য আরেকটি বড় অগ্রাধিকার। এই বাণিজ্য সোভিয়েত আমল থেকে চলে আসছে। পুতিনের সফরকে সামনে রেখে এমন খবরও এসেছে যে, ভারত সর্বাধুনিক রাশিয়ান যুদ্ধবিমান এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার পরিকল্পনা করছে। শ্রমিক সংকটে ভুগতে থাকা রাশিয়া ভারতের দক্ষ কর্মীদেরও মূল্যবান সম্পদ হিসেবে দেখছে। কিন্তু এখানে ভূরাজনৈতিক হিসাব আছে।
ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করছে। ক্রেমলিনের লক্ষ্য সেটিকে ব্যর্থ প্রমাণ করা। পুতিনের ভারত সফর সেটি প্রমাণ করার একটি উপায়। তিন মাস আগে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে চীনে গিয়েছিলেন পুতিন। সেখানে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ছিলেন নরেন্দ্র মোদিও। তাদের একসঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল ছবি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিল- ইউক্রেনে যুদ্ধ চললেও মস্কোর এমন শক্তিশালী মিত্র আছে যারা বিশ্ব ব্যবস্থা বহু মেরুকরণের ধারণা সমর্থন করে।
রাশিয়ার নোভায়া গেজেটা পত্রিকার কলামিস্ট আন্দ্রে কোলেসনিকভ বলছেন, ‘আমি মনে করি ইউরোপসহ পশ্চিমা দেশগুলো ক্রেমলিনকে বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিচ্ছিন্ন নই। কারণ এশিয়া ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সংযোগ আছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখলে- এটাই ভবিষ্যত।’
আন্দ্রে কোলেসনিকভ আরও বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো রাশিয়া আবারও বিশ্বের এই অংশগুলোর প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে ফিরে এসেছে। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে বিশেষ যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। তবে সেটি ছিল বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতি।’
দার্শনিকরা প্রায়ই বলেন রাশিয়া ইউরোপের অংশ। আন্দ্রে কোলেসনিকভ বলছেন, ‘এখন আমরা তা আর নই। আমরা ইউরোপ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। এটি একটি বড় ব্যর্থতা। আমি নিশ্চিত যে রাশিয়ার রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী শ্রেণির একটি অংশ আবার ইউরোপে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তারা শুধু চীন ও ভারতের সঙ্গে নয়, ইউরোপের সঙ্গেও ব্যবসা করতে চায়।’
তবে চলতি সপ্তাহটা হতে যাচ্ছে রাশিয়া-ভারত কেন্দ্রিক। দুই দেশের বন্ধুত্ব, বাণিজ্য চুক্তি এবং মস্কো ও দিল্লির মধ্যে বাড়তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশি আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।