রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারতে এসেছেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। এ সফরে দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হওয়ার কথা। সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে কয়েক মাস ধরে চাপ দিচ্ছে।
এ ছাড়া পুতিনের সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করছে। ভারত ও রাশিয়া কয়েক দশক ধরেই ঘনিষ্ঠ মিত্র। পুতিন ও মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্কও উষ্ণ। কেন তাঁদের একে–অপরকে প্রয়োজন এবং বৈঠকে কোন বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, তা তুলে ধরা হলো।
ক্রেমলিনের কাছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ: শুরুতেই কয়েকটি সংখ্যা দেখলেই বোঝা যাবে: প্রায় দেড় শ কোটি মানুষের দেশ (ভারত), ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি। এ কারণে ভারত রুশ পণ্য, বিশেষ করে তেলের জন্য এক বিশাল ও আকর্ষণীয় বাজার।
বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করে ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে।
বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করে ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় বাজারে রাশিয়ার প্রবেশ সীমিত হয়ে যাওয়ায় দেশটির তেলের দাম কমে যায়। ভারত সে সুযোগ কাজে লাগায়। ফলে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছায়। ভারত এতে খুশি ছিল। কিন্তু ওয়াশিংটন নয়।
গত অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। যুক্তি ছিল, রুশ তেল কিনে ভারত ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলকে শক্তিশালী করছে। এরপর নয়াদিল্লি থেকে রুশ তেলের অর্ডার কমে গেছে। তাই পুতিন চাইবেন, ভারত যেন তেল কেনা অব্যাহত রাখে। মস্কোর আরেক অগ্রাধিকার, ভারতে অস্ত্র বিক্রি। সোভিয়েত আমল থেকেই এ খাতে দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়। পুতিনের সফরের আগে খবর এসেছে, ভারত নাকি উন্নত রুশ যুদ্ধবিমান ও বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনতে চায়।
কর্মীসংকটে ভোগা রাশিয়া ভারতের দক্ষ শ্রমিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে দেখছে। তবে শুধু অর্থনীতি নয়; এ সফরে বড় ভূমিকা রাখছে ভূরাজনীতি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইলেও তা ব্যর্থ—এটাও দেখাতে পছন্দ করে ক্রেমলিন। ভারতে গিয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠক করা এর একটি উপায়।
আরেকটি উপায়, চীনে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করা। এটি তিন মাস আগেই করেছেন পুতিন। সে সফরেই মোদির সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়। তিন নেতার হাসিমুখে আলাপের ছবি যে বার্তা দেয় তা স্পষ্ট। সেটি হলো, যুদ্ধ চললেও মস্কোর শক্তিশালী মিত্র আছে, যারা ‘মাল্টি–পোলার বিশ্বব্যবস্থাকে’ সমর্থন করে। প্রসঙ্গত, এটি এমন বিশ্বব্যবস্থা, যা একক শক্তিশালী দেশ বা সুপারপাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করে না; বরং একাধিক শক্তিধর দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব ভাগ হয়ে থাকে।
ক্রেমলিন মনে করে, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিচ্ছিন্ন নই। কারণ, এশিয়া ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এই অঞ্চলেই। সোভিয়েত আমলের মতোই রাশিয়া আবারও বড় ভূমিকা নিতে চাইছে।
আন্দ্রেই কোলেসনিকভ, নোভায়া গেজেটার কলামিস্ট: চীনের সঙ্গে ‘সীমাহীন অংশীদারত্ব’ নিয়ে রাশিয়া গর্ব করে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককেও তারা তেমনি উচ্চকণ্ঠে ‘বিশেষ ও সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারত্ব’ বলে থাকে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েনের সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিপরীত।
নোভায়া গেজেটার কলামিস্ট আন্দ্রেই কোলেসনিকভ বলেন, ‘ক্রেমলিন মনে করে, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিচ্ছিন্ন নই। কারণ, এশিয়া ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এই অঞ্চলেই। সোভিয়েত আমলের মতোই রাশিয়া আবারও বড় ভূমিকা নিতে চাইছে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়ও তাদের বিশেষ চ্যানেল এবং যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে সংযোগ ছিল।’
‘কিন্তু এবার আমরা পুরোপুরি ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি নজিরবিহীন। আমাদের দার্শনিকেরা সবসময় বলতেন, রাশিয়া ইউরোপেরই অংশ। এখন আমরা নই। এটা একটি বড় ব্যর্থতা ও বড় ক্ষতি। আমি নিশ্চিত যে রাশিয়ার রাজনৈতিক মহল ও উদ্যোক্তা শ্রেণির একটি অংশ এখনো স্বপ্ন দেখে, ইউরোপে ফেরার এবং শুধু চীন–ভারত নয়, ইউরোপের সঙ্গেও ব্যবসা করার।’
এ সপ্তাহে তাই রাশিয়া–ভারতের বন্ধুত্ব, বাণিজ্য চুক্তি এবং দুই দেশের বাড়তি অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথাই বেশি শোনা যাবে। ভারতের জন্য সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু যেই না ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সর্বকালের তলানিতে গিয়ে ঠেকে। গত কয়েক মাসে এ শুল্ক–সংকটের সমাধান হয়নি। এ বাস্তবতায় পুতিনের সফর মোদির জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রকৃত পরীক্ষা। মোদিকে এখন এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে হাঁটতে হবে।
ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার পরীক্ষা: পুতিনের দিল্লি সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন মোদি ও ভারতের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা—দুই–ই এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি।
ভারত–রাশিয়া সম্পর্কের শুরু সেই সোভিয়েত যুগ থেকেই এবং ভূরাজনীতির নানা উত্থান–পতনের মধ্যেও তা টিকে আছে। পুতিন পূর্বসূরিদের তুলনায় এ সম্পর্ক ধরে রাখতে যৌক্তিকভাবেই অনেক বেশি সময় ও শ্রম দিয়েছেন।
মোদির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করতে তাঁকে ব্যাপকভাবে চাপ দিলেও তিনি সবসময় বলেছেন, সংলাপই এ সংঘাত মেটানোর একমাত্র পথ। এটাই ছিল ভারতের ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’, যেখানে মোদি পশ্চিমা সম্পর্ক বজায় রেখেও মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ধরে রেখেছেন।
ভারতের জন্য সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু যেই না ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপান, ভারত–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সর্বকালের তলানিতে গিয়ে ঠেকে। গত কয়েক মাসে এ শুল্কসংকটের সমাধান হয়নি। এ বাস্তবতায় পুতিনের সফর মোদির জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রকৃত পরীক্ষা। মোদিকে এখন এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে হাঁটতে হবে।
দেশের জনগণ ও বিশ্বকে মোদি দেখাতে চান যে তিনি এখনো পুতিনকে মিত্র মানেন এবং ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। ট্রাম্পকে আগে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ বলেছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মিত্র ইউরোপ থেকেও মোদির ওপর চাপ বাড়ছে। ভারতে নিযুক্ত জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতেরা এ সপ্তাহেই একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রে এক বিরল যৌথ প্রবন্ধে রাশিয়ার ইউক্রেন নিয়ে অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।
তাই মোদিকে নিশ্চিত করতে হবে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করলেও তা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলাপ বা ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারত্বে ছায়া না ফেলে। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)’ বলেছে, ভারতের বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কৌশলগত ভারসাম্য—ওয়াশিংটনের চাপ সামলানো ও মস্কোর ওপর নির্ভরতার মধ্যে নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখা। মোদির আরেক অগ্রাধিকার হলো, ভারত–রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়ানো। বিশ্লেষকেরা মাঝেমধ্যেই বলেন, ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়েও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক দশক ধরেই কম।
২০২৫ সালের মার্চের শেষে ভারত–রাশিয়া বাণিজ্য বেড়ে হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন (৬ হাজার ৮৭২ কোটি) ডলার।
২০২০ সালে এটি ছিল মাত্র ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন। হঠাৎ এমন বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণ, ভারত ছাড়কৃত মূল্যে বিপুল পরিমাণ রুশ তেল কিনেছে। এতে বাণিজ্য ভারসাম্য রাশিয়ার দিকে অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছে। মোদি এটা ঠিক করতে চান।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রুশ তেল কেনা কমিয়ে দিচ্ছে।
ফলে দুই দেশকে বাণিজ্য বাড়াতে অন্য খাত খুঁজতে হবে। সবচেয়ে সহজ ক্ষেত্র, প্রতিরক্ষা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ভারতের রুশ অস্ত্র আমদানি ২০২০–২৪ সালে নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে। অথচ ২০১০–১৫ সালে ছিল ৭২ শতাংশ, আর ২০১৫–১৯ সালে ৫৫ শতাংশ। এটি আংশিকভাবে ঘটেছে, ভারতের প্রতিরক্ষা খাত বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা ও দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর কারণে।
কিন্তু এসব সংখ্যার দিকে ঘনিষ্ঠভাবে তাকালে, ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ভারতের বহু সামরিক প্ল্যাটফর্ম এখনো রাশিয়ার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। দেশটির বিমানবাহিনীর ২৯টি স্কোয়াড্রনের অনেকগুলোয়ই ব্যবহৃত হয় রুশ সুখোই-৩০ জেট। এ বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমিত পরিসরে সংঘর্ষে রাশিয়ার এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এতে ভারতের দুর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে, যেগুলো দ্রুত ঠিক করতে হবে।
বিভিন্ন খবর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ভারত এস-৫০০ ও পঞ্চম প্রজন্মের সু-৫৭ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী। পাকিস্তান সম্প্রতি চীনের তৈরি জে-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট কিনেছে—এ তথ্য দিল্লির নজর এড়ায়নি। ভারতও যতদ্রুত সম্ভব সমান ক্ষমতার জেট চাইবে। কিন্তু রাশিয়া নিজেই বড় সংকটে। নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের কারণে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার। এস-৪০০–এর কিছু ইউনিট সরবরাহের সময়সীমা ২০২৬ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মোদি এ সরবরাহের সময়সীমার নিশ্চয়তা পুতিনের কাছে চাইবেন।
মোদি চাইবেন, রাশিয়ার বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য আরও উন্মুক্ত হোক, যাতে বিশাল বাণিজ্য–অসমতা ঠিক করা যায়। মোদির লক্ষ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষে রাশিয়া যখন আবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরবে, তখন ভারতীয় পণ্য যেন দেশটির বাজারে শক্তভাবে জায়গা করে নেয়। মোদির লক্ষ্য, তেল ও প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানো। সেই সঙ্গে তিনি এমন একটি চুক্তি করতে চাইবেন, যা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবে, আবার একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার সুযোগও খোলা রাখবে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে ভারতে এসেছেন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং দুই দেশের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন তিনি। এ সফরে দিল্লি ও মস্কোর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই হওয়ার কথা। সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করতে কয়েক মাস ধরে চাপ দিচ্ছে।
এ ছাড়া পুতিনের সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চেষ্টায় মস্কো ও কিয়েভের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করছে। ভারত ও রাশিয়া কয়েক দশক ধরেই ঘনিষ্ঠ মিত্র। পুতিন ও মোদির ব্যক্তিগত সম্পর্কও উষ্ণ। কেন তাঁদের একে–অপরকে প্রয়োজন এবং বৈঠকে কোন বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে, তা তুলে ধরা হলো।
ক্রেমলিনের কাছে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেন গুরুত্বপূর্ণ: শুরুতেই কয়েকটি সংখ্যা দেখলেই বোঝা যাবে: প্রায় দেড় শ কোটি মানুষের দেশ (ভারত), ৮ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল বৃহৎ অর্থনীতি। এ কারণে ভারত রুশ পণ্য, বিশেষ করে তেলের জন্য এক বিশাল ও আকর্ষণীয় বাজার।
বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করে ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশটি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে।
বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণে অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করে ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে। আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযানের আগে ভারতের মোট তেল আমদানির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ আসত রাশিয়া থেকে।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও ইউরোপীয় বাজারে রাশিয়ার প্রবেশ সীমিত হয়ে যাওয়ায় দেশটির তেলের দাম কমে যায়। ভারত সে সুযোগ কাজে লাগায়। ফলে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানি বেড়ে ৩৫ শতাংশে পৌঁছায়। ভারত এতে খুশি ছিল। কিন্তু ওয়াশিংটন নয়।
গত অক্টোবরে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। যুক্তি ছিল, রুশ তেল কিনে ভারত ক্রেমলিনের যুদ্ধ তহবিলকে শক্তিশালী করছে। এরপর নয়াদিল্লি থেকে রুশ তেলের অর্ডার কমে গেছে। তাই পুতিন চাইবেন, ভারত যেন তেল কেনা অব্যাহত রাখে। মস্কোর আরেক অগ্রাধিকার, ভারতে অস্ত্র বিক্রি। সোভিয়েত আমল থেকেই এ খাতে দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ়। পুতিনের সফরের আগে খবর এসেছে, ভারত নাকি উন্নত রুশ যুদ্ধবিমান ও বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কিনতে চায়।
কর্মীসংকটে ভোগা রাশিয়া ভারতের দক্ষ শ্রমিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে দেখছে। তবে শুধু অর্থনীতি নয়; এ সফরে বড় ভূমিকা রাখছে ভূরাজনীতি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইলেও তা ব্যর্থ—এটাও দেখাতে পছন্দ করে ক্রেমলিন। ভারতে গিয়ে মোদির সঙ্গে বৈঠক করা এর একটি উপায়।
আরেকটি উপায়, চীনে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করা। এটি তিন মাস আগেই করেছেন পুতিন। সে সফরেই মোদির সঙ্গেও তাঁর দেখা হয়। তিন নেতার হাসিমুখে আলাপের ছবি যে বার্তা দেয় তা স্পষ্ট। সেটি হলো, যুদ্ধ চললেও মস্কোর শক্তিশালী মিত্র আছে, যারা ‘মাল্টি–পোলার বিশ্বব্যবস্থাকে’ সমর্থন করে। প্রসঙ্গত, এটি এমন বিশ্বব্যবস্থা, যা একক শক্তিশালী দেশ বা সুপারপাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করে না; বরং একাধিক শক্তিধর দেশ বা অঞ্চলের মধ্যে ক্ষমতা ও প্রভাব ভাগ হয়ে থাকে।
ক্রেমলিন মনে করে, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিচ্ছিন্ন নই। কারণ, এশিয়া ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এই অঞ্চলেই। সোভিয়েত আমলের মতোই রাশিয়া আবারও বড় ভূমিকা নিতে চাইছে।
আন্দ্রেই কোলেসনিকভ, নোভায়া গেজেটার কলামিস্ট: চীনের সঙ্গে ‘সীমাহীন অংশীদারত্ব’ নিয়ে রাশিয়া গর্ব করে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককেও তারা তেমনি উচ্চকণ্ঠে ‘বিশেষ ও সুবিধাপ্রাপ্ত কৌশলগত অংশীদারত্ব’ বলে থাকে। এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার টানাপোড়েনের সম্পর্কের সম্পূর্ণ বিপরীত।
নোভায়া গেজেটার কলামিস্ট আন্দ্রেই কোলেসনিকভ বলেন, ‘ক্রেমলিন মনে করে, ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্ব পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বিচ্ছিন্ন নই। কারণ, এশিয়া ও গ্লোবাল সাউথের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে। ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এই অঞ্চলেই। সোভিয়েত আমলের মতোই রাশিয়া আবারও বড় ভূমিকা নিতে চাইছে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের সময়ও তাদের বিশেষ চ্যানেল এবং যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম জার্মানি ও ফ্রান্সের সঙ্গে সংযোগ ছিল।’
‘কিন্তু এবার আমরা পুরোপুরি ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি নজিরবিহীন। আমাদের দার্শনিকেরা সবসময় বলতেন, রাশিয়া ইউরোপেরই অংশ। এখন আমরা নই। এটা একটি বড় ব্যর্থতা ও বড় ক্ষতি। আমি নিশ্চিত যে রাশিয়ার রাজনৈতিক মহল ও উদ্যোক্তা শ্রেণির একটি অংশ এখনো স্বপ্ন দেখে, ইউরোপে ফেরার এবং শুধু চীন–ভারত নয়, ইউরোপের সঙ্গেও ব্যবসা করার।’
এ সপ্তাহে তাই রাশিয়া–ভারতের বন্ধুত্ব, বাণিজ্য চুক্তি এবং দুই দেশের বাড়তি অর্থনৈতিক সহযোগিতার কথাই বেশি শোনা যাবে। ভারতের জন্য সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু যেই না ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপান, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সর্বকালের তলানিতে গিয়ে ঠেকে। গত কয়েক মাসে এ শুল্ক–সংকটের সমাধান হয়নি। এ বাস্তবতায় পুতিনের সফর মোদির জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রকৃত পরীক্ষা। মোদিকে এখন এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে হাঁটতে হবে।
ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার পরীক্ষা: পুতিনের দিল্লি সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন মোদি ও ভারতের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা—দুই–ই এক কঠিন সময়ের মুখোমুখি।
ভারত–রাশিয়া সম্পর্কের শুরু সেই সোভিয়েত যুগ থেকেই এবং ভূরাজনীতির নানা উত্থান–পতনের মধ্যেও তা টিকে আছে। পুতিন পূর্বসূরিদের তুলনায় এ সম্পর্ক ধরে রাখতে যৌক্তিকভাবেই অনেক বেশি সময় ও শ্রম দিয়েছেন।
মোদির ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করতে তাঁকে ব্যাপকভাবে চাপ দিলেও তিনি সবসময় বলেছেন, সংলাপই এ সংঘাত মেটানোর একমাত্র পথ। এটাই ছিল ভারতের ‘কৌশলগত স্বাধীনতা’, যেখানে মোদি পশ্চিমা সম্পর্ক বজায় রেখেও মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ধরে রেখেছেন।
ভারতের জন্য সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু যেই না ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে ভারতের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপান, ভারত–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সর্বকালের তলানিতে গিয়ে ঠেকে। গত কয়েক মাসে এ শুল্কসংকটের সমাধান হয়নি। এ বাস্তবতায় পুতিনের সফর মোদির জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভারতের ভূরাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রকৃত পরীক্ষা। মোদিকে এখন এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে হাঁটতে হবে।
দেশের জনগণ ও বিশ্বকে মোদি দেখাতে চান যে তিনি এখনো পুতিনকে মিত্র মানেন এবং ট্রাম্পের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। ট্রাম্পকে আগে ‘সত্যিকারের বন্ধু’ বলেছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে মিত্র ইউরোপ থেকেও মোদির ওপর চাপ বাড়ছে। ভারতে নিযুক্ত জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতেরা এ সপ্তাহেই একটি প্রভাবশালী সংবাদপত্রে এক বিরল যৌথ প্রবন্ধে রাশিয়ার ইউক্রেন নিয়ে অবস্থানের সমালোচনা করেছেন।
তাই মোদিকে নিশ্চিত করতে হবে, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করলেও তা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলাপ বা ইউরোপের সঙ্গে অংশীদারত্বে ছায়া না ফেলে। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)’ বলেছে, ভারতের বড় চ্যালেঞ্জ হলো, কৌশলগত ভারসাম্য—ওয়াশিংটনের চাপ সামলানো ও মস্কোর ওপর নির্ভরতার মধ্যে নিজস্ব স্বাধীনতা বজায় রাখা। মোদির আরেক অগ্রাধিকার হলো, ভারত–রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও বাড়ানো। বিশ্লেষকেরা মাঝেমধ্যেই বলেন, ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়েও দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক দশক ধরেই কম।
২০২৫ সালের মার্চের শেষে ভারত–রাশিয়া বাণিজ্য বেড়ে হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন (৬ হাজার ৮৭২ কোটি) ডলার।
২০২০ সালে এটি ছিল মাত্র ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন। হঠাৎ এমন বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণ, ভারত ছাড়কৃত মূল্যে বিপুল পরিমাণ রুশ তেল কিনেছে। এতে বাণিজ্য ভারসাম্য রাশিয়ার দিকে অনেকটাই ঝুঁকে পড়েছে। মোদি এটা ঠিক করতে চান।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে রুশ তেল কেনা কমিয়ে দিচ্ছে।
ফলে দুই দেশকে বাণিজ্য বাড়াতে অন্য খাত খুঁজতে হবে। সবচেয়ে সহজ ক্ষেত্র, প্রতিরক্ষা। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, ভারতের রুশ অস্ত্র আমদানি ২০২০–২৪ সালে নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে। অথচ ২০১০–১৫ সালে ছিল ৭২ শতাংশ, আর ২০১৫–১৯ সালে ৫৫ শতাংশ। এটি আংশিকভাবে ঘটেছে, ভারতের প্রতিরক্ষা খাত বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা ও দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর কারণে।
কিন্তু এসব সংখ্যার দিকে ঘনিষ্ঠভাবে তাকালে, ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। ভারতের বহু সামরিক প্ল্যাটফর্ম এখনো রাশিয়ার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। দেশটির বিমানবাহিনীর ২৯টি স্কোয়াড্রনের অনেকগুলোয়ই ব্যবহৃত হয় রুশ সুখোই-৩০ জেট। এ বছরের মে মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সীমিত পরিসরে সংঘর্ষে রাশিয়ার এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এতে ভারতের দুর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে, যেগুলো দ্রুত ঠিক করতে হবে।
বিভিন্ন খবর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, ভারত এস-৫০০ ও পঞ্চম প্রজন্মের সু-৫৭ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী। পাকিস্তান সম্প্রতি চীনের তৈরি জে-৩৫ পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ জেট কিনেছে—এ তথ্য দিল্লির নজর এড়ায়নি। ভারতও যতদ্রুত সম্ভব সমান ক্ষমতার জেট চাইবে। কিন্তু রাশিয়া নিজেই বড় সংকটে। নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের কারণে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার। এস-৪০০–এর কিছু ইউনিট সরবরাহের সময়সীমা ২০২৬ পর্যন্ত পিছিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। মোদি এ সরবরাহের সময়সীমার নিশ্চয়তা পুতিনের কাছে চাইবেন।
মোদি চাইবেন, রাশিয়ার বাজার ভারতীয় পণ্যের জন্য আরও উন্মুক্ত হোক, যাতে বিশাল বাণিজ্য–অসমতা ঠিক করা যায়। মোদির লক্ষ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষে রাশিয়া যখন আবার বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ফিরবে, তখন ভারতীয় পণ্য যেন দেশটির বাজারে শক্তভাবে জায়গা করে নেয়। মোদির লক্ষ্য, তেল ও প্রতিরক্ষা খাতে রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমানো। সেই সঙ্গে তিনি এমন একটি চুক্তি করতে চাইবেন, যা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করবে, আবার একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার সুযোগও খোলা রাখবে।