থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিতর্কিত সীমান্তে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুই দিনের সংঘর্ষে কম্বোডিয়ায় সাত নাগরিক মারা গেছেন এবং ২০ জন আহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের তিনজন সেনা নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বের ছয়টি প্রদেশ এবং কম্বোডিয়ার উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমের পাঁচটি প্রদেশে সংঘাত ছড়িয়েছে। রয়্যাল থাই এয়ারফোর্স মঙ্গলবার আরও বিমান হামলার খবর নিশ্চিত করেছে। তবে তারা অভিযানের বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।
গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে কম্বোডিয়ার সেনেটে প্রেসিডেন্ট হুন সেন জানান, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে সম্মান জানাতে এবং বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে তারা ২৪ ঘণ্টার বেশি ধৈর্য ধরেছিলেন।’ এরপর কম্বোডিয়া পাল্টা আক্রমণ করেছে। তিনি ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘কম্বোডিয়া শান্তি চায়। কিন্তু নিজেদের এলাকা রক্ষা করতে পাল্টা আক্রমণ করতে বাধ্য।’ তিনি জানান, তাঁর দেশে বাঙ্কার ও অস্ত্র রয়েছে। এটা তাদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধে সুবিধা দেবে। থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল এর আগে শপথ নিয়েছিলেন। সরকার নিজেদের এলাকা রক্ষা করতে যা দরকার তাই করবে। তিনি বলেছিলেন, ‘কোনো আলোচনা হবে না। লড়াই বন্ধ করতে হলে কম্বোডিয়াকে থাইল্যান্ডের শর্ত মানতে হবে।’
মঙ্গলবার সংঘাত আরও ছড়িয়েছে। থাই নৌবাহিনী ঘোষণা করেছে, তারা কম্বোডিয়ার সৈন্যদের সরাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। নৌবাহিনী বলেছে, ওই সৈন্যরা ত্রাট প্রদেশে থাইল্যান্ডের এলাকায় প্রবেশ করেছিল। থাই সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, কম্বোডিয়া রকেট লঞ্চার, বোমা-ফেলা ড্রোন এবং কামান ব্যবহার করছে থাই অবস্থানে। কামানের গোলা সা কায়েও প্রদেশের দুটি বেসামরিক বাড়িতে পড়েছে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কম্বোডিয়া অভিযোগ করেছে, থাইল্যান্ড বেসামরিক এলাকায় গুলি করেছে। নতুন নতুন পরিকাঠামো ধ্বংস করেছে। মন্দির, সাংস্কৃতিক সম্পত্তি, মানব-ঐতিহ্য ধ্বংস করছে। জরুরি পরিষেবা ব্যাহত করছে। থাই সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এক লাখ ২৫ হাজার জনের বেশি মানুষ উবন রাতচাথানি, সিসাকেত, সুরিন ও বুরি রাম প্রদেশে সরিয়ে নেওয়া আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। কম্বোডিয়ায় প্রিয়া বিহার, ওদ্দার মিয়ানচে এবং বানতে মিয়ানচে প্রদেশ থেকে ২১ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে অনুরোধ করেছে। একজন মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা সোমবার সিএনএনকে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহিংসতা বন্ধ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আশা করেন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সরকার সংঘাত থামাতে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।
কী কারণে সংঘাত: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বিবাদ এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়া ফ্রান্সের অধীনে ছিল। সেই সময় ফ্রান্স প্রথম স্থলসীমান্তের মানচিত্র তৈরি করে। এ সীমান্ত ৫০০ মাইলের (৮০০ কিলোমিটার) বেশি লম্বা। এই সীমান্ত নিয়ে বিবাদ বারবার মাথাচাড়া দিয়েছে।
২০০৮ সালে সংঘাত বাড়ে। কম্বোডিয়া বিতর্কিত এলাকার এগারো শতকে মন্দিরকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করে। এ পদক্ষেপে থাইল্যান্ড জোরালো প্রতিবাদ জানায়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির কী হলো: এ চুক্তি অক্টোবরে মালয়েশিয়ায় সই হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, যদি কোনো দেশ চুক্তি মানতে অস্বীকার করে, তাহলে তিনি তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবেন না। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা বাড়ছিল। নভেম্বরে মাইন বিস্ফোরণে চারজন থাই সেনা আহত হন। এরপর থাইল্যান্ড শান্তি চুক্তির সব শর্ত স্থগিত করে। তারা কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে মাইন পেতে যৌথ ঘোষণা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে। কম্বোডিয়া এ অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে। জুলাইয়ের লড়াইয়ের সময় ধরা পড়া ১৮ জন কম্বোডীয় যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কাজও বন্ধ হয়ে যায়। থাইল্যান্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সর্বশেষ সীমান্ত সংঘাত নিয়ে আলোচনার পরিকল্পনা করছে কিনা– এ প্রশ্নের উত্তরে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক বলেন, ‘সমস্যা আমাদের। সমাধান করার দায়িত্বও আমাদের।’
গত মে মাসে সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা বাড়ে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্ক এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পৌঁছায়। জুলাই মাসের প্রথম দফা লড়াইয়ের আগে দুই দেশ সীমান্তে বিধিনিষেধ জারি করে। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফল ও সবজি, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ইন্টারনেট পরিষেবাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে। সম্প্রতি দুই দেশ সীমান্তে সেনা উপস্থিতিও বাড়িয়েছিল।
এদিকে, থাইল্যান্ড নভেম্বরেই ওই শান্তি চুক্তি স্থগিত করেছিল। প্রধানমন্ত্রী আনুতিন চার্নভিরাকুল বলেছিলেন, নিরাপত্তা হুমকি আসলে কমেনি। তখন কম্বোডিয়া জানায়, তারা চুক্তির শর্তে অটল রয়েছে। ডিসেম্বরে আবার সংঘর্ষ শুরু হলে ব্যাংককের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিহাসাক ফুয়াংকেতকেও বিবিসিকে বলেন, যুদ্ধবিরতি কাজ করছে না এবং এখন দায়িত্ব কম্বোডিয়ার।
তবে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন বলেন, তাদের বাহিনী সোমবার রাতে কেবল পাল্টা গুলি চালিয়েছে, যুদ্ধবিরতির প্রতি সম্মান জানিয়েছে। ট্রাম্প উভয় পক্ষকে চুক্তি মানার আহ্বান জানিয়েছেন বলে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।
অক্টোবরে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার করার এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন পর্যবেক্ষক দল গঠন করার কথা ছিল। পরবর্তী ধাপে থাইল্যান্ডে আটক ১৮ জন কম্বোডিয়ান সেনাকে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল।
এরপর কী ঘটতে পারে: এখনো পরিষ্কার নয়, পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে। অতীতে গুরুতর সংঘর্ষ হলেও দ্রুত তা প্রশমিত হয়েছে। জুলাইয়ে বিবিসি প্রতিবেদক জোনাথন হেডও মনে করেছিলেন, এবারও একই পথ অনুসরণ করা হবে।
তবে তিনি সতর্ক করেছিলেন, বর্তমানে উভয় দেশে এমন নেতৃত্বের অভাব রয়েছে, যারা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই সংঘাত থেকে পিছিয়ে আসতে পারে।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ায় ভ্রমণ কি নিরাপদ: থাইল্যান্ডে ভ্রমণকারীদের জন্য ব্রিটিশ ফরেন অফিস বর্তমানে পরামর্শ দিয়েছে, কম্বোডিয়ার সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করতে। কম্বোডিয়ায় ভ্রমণকারীদের জন্যও একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে; থাইল্যান্ডের সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ এড়াতে বলা হয়েছে।
সোমবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত থাইল্যান্ডের হামলায় অন্তত ৯ বেসামরিক নিহত ও ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। থাই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের ৪ সেনা নিহত ও ৬৮ জন আহত হয়েছে। থাইল্যান্ড এখন বলছে, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবেশী দেশের ‘দাঁত ভেঙে দেওয়া’ যেন তারা আর হামলা চালাতে না পারে।
গত সোমবার দেশটির শীর্ষ এক জেনারেল বলেছেন, তার সেনাবাহিনীর লক্ষ্যই হচ্ছে ‘সামনের অনেক দিনের জন্য কম্বোডিয়ার সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করে দেওয়া’। মঙ্গলবার কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলে, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া তাদের হাতে আর বিকল্প ছিল না। থাইল্যান্ড ‘বেসামরিক আবাসিক এলাকাগুলোতে নির্বিচারে ও নির্মম হামলা’ চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ নম পেনের। ব্যাংকক এই ভাষ্য অস্বীকার করে।
অর্থ-বাণিজ্য: জনগণ ভ্যাট দিলেও ‘অনেক সময়’ সরকার পায় না: অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ-বাণিজ্য: সূচকের পতনে লেনদেন ছাড়ালো ৫৩৩ কোটি
অর্থ-বাণিজ্য: ৩১ ব্যাংক-এনবিএফআইয়ের নিরীক্ষকের মতামতে বিএসইসির উদ্বেগ
অর্থ-বাণিজ্য: বাংলাদেশ ব্যাংকে ই-নথি চালু হলো
অর্থ-বাণিজ্য: নিট মুনাফা না হলে ব্যাংকের কর্মীরা উৎসাহ বোনাস পাবেন না