image

বন্ডাই সৈকতে ইহুদি অনুষ্ঠানে গুলিবর্ষণ: বাবা–ছেলে হামলাকারী, নিহত ১৬

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনির বন্ডাই সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের একটি অনুষ্ঠানে ভয়াবহ গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, হামলায় জড়িত কথিত দুই বন্দুকধারী সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছে যে তারা বাবা ও ছেলে।

প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে রোববার অস্ট্রেলিয়ায় সংঘটিত এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী বন্দুক হামলা। দেশজুড়ে শোক পালনের মধ্যেই সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে পরিকল্পিত ইহুদিবিরোধী হামলা বলে উল্লেখ করেন।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ বছর বয়সী ওই বাবা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তাকে অন্তর্ভুক্ত করার পর মোট মৃতের সংখ্যা ১৬ হয়েছে। তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এই হামলায় আরও অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুইজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। আহত দুই পুলিশ সদস্যের অবস্থা গুরুতর হলেও বর্তমানে তারা স্থিতিশীল আছেন। হামলায় হতাহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছরের মধ্যে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বন্ডাই সৈকতসংলগ্ন একটি ছোট পার্কে ইহুদিদের হানুক্কা অনুষ্ঠান চলাকালীন এই হামলা চালানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রায় এক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, হামলাটি প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলে। গরমের সেই সন্ধ্যায় সৈকত এলাকায় প্রচুর মানুষ ছিল। গুলির শব্দ শোনার পর আতঙ্কিত মানুষজন ছত্রভঙ্গ হয়ে সৈকতের পাশের সড়কগুলোর দিকে দৌড়ে পালাতে শুরু করে।

এলোপাতাড়ি গুলির মধ্যেও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য একজন পথচারী ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ওই ব্যক্তি এক হামলাকারীকে পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে ধরে তার হাত থেকে রাইফেল কেড়ে নেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার সেই মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তিনি অস্ট্রেলিয়ার ‘হিরো’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

এই সাহসী পথচারীর নাম আহমেদ আল আহমেদ। তার বয়স ৪৩ বছর। জানা গেছে, তিনি একটি ফলের দোকানের মালিক। হামলার সময় তার শরীরে দুটি গুলি লাগে এবং তাকে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

আহমেদের চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি অনলাইন পেইজ খোলা হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর পর্যন্ত সেখানে দুই লাখ ৩৩ হাজার ডলারেরও বেশি অর্থ জমা হয়েছে।

পুলিশ হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করেনি এবং তারা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক কি না, সে বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি। তবে পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ওই বাবা ২০১৫ সাল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সধারী ছিলেন এবং তার কাছে ছয়টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র ছিল।

বাবা ও ছেলে ঠিক কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন, সে বিষয়ে পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিওগুলোর ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারীরা একটি বোল্ট-অ্যাকশন রাইফেল ও একটি শটগান ব্যবহার করেছিল।

নিউ সাউথ ওয়েলসের পুলিশ কমিশনার ম্যাল ল্যানিয়ন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা উভয় ব্যক্তির পেছনের প্রেক্ষাপট খতিয়ে দেখছি। এই মুহূর্তে তাদের সম্পর্কে আমরা খুব সীমিত তথ্যই জানি।”

হামলার পর বন্ডাই সৈকত এলাকায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। শুনশান সৈকতে পড়ে থাকে লোকজনের ফেলে যাওয়া কাপড় ও জুতা। বন্ডাই প্যাভিলিয়নে একটি অস্থায়ী স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ফুল, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরায়েলি পতাকা দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

এছাড়া অনলাইনে একটি শোকবই খোলা হয়েছে। স্মৃতিসৌধে যারা শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন, তাদের নিরাপত্তায় পুলিশ ও বেসরকারি ইহুদি নিরাপত্তাকর্মীরা মোতায়েন রয়েছেন।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি