image

কেমন যাবে নতুন বছর

ট্রাম্পের অভিবাসী ফেরত অভিযান কি আরও জোরালো হবে

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

২০২৬ সালে ট্রাম্পের অভিবাসী ফেরত অভিযান আরও জোরালো হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সব অবৈধ অভিবাসীকে এক বছরের মধ্যেই ফেরত পাঠানো হবে—এমন ধারণা শুরু থেকেই বাস্তবসম্মত ছিল না। লাখ লাখ মানুষকে শনাক্ত, আটক ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে যে অর্থ ও জনবল প্রয়োজন, তা জোগাড় করতে সময় লাগাই স্বাভাবিক। তবে ক্ষমতার প্রথম বছরেই ট্রাম্প সেই অভিযানের ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। ২০২৬ সালে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ থেকে বরাদ্দ পাওয়া অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে আরও অভিবাসন কর্মকর্তা নিয়োগ, আটককেন্দ্র সম্প্রসারণ, নির্বাসন ফ্লাইট এবং নজরদারি প্রযুক্তি জোরদার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল এরই মধ্যে স্পষ্ট। নির্বাসনের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের রাখার জন্য পুরোনো কারাগার ফের চালু করা এবং নতুন কারাগার নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। ফ্লোরিডার ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’ কিংবা টেক্সাসের একটি সামরিক ঘাঁটিতে স্থাপিত অস্থায়ী তাঁবু শিবিরের মতো ব্যবস্থাও আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব অস্থায়ী আটককেন্দ্রে নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার যে তদারকি সংস্থাগুলো ছিল, তাদের ক্ষমতা কার্যত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে লোকসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পরিবেশ আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নির্বাসন কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইসিই নতুন করে জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। ‘স্যাংচুয়ারি সিটি’ হিসেবে পরিচিত লস অ্যাঞ্জেলেস ও শিকাগোর মতো শহরে আরও বেশি আইসিই এজেন্ট মোতায়েনের প্রস্তুতি রয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট যে সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে, তার ফলে ডেমোক্র্যাট-শাসিত এলাকায় অভিযান ও রাস্তায় নির্বিচার গ্রেফতারের ঘটনাও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে আইসিই এজেন্ট ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কাও রয়েছে।

তবে ব্যাপক নির্বাসনই ট্রাম্প প্রশাসনের একমাত্র লক্ষ্য নয়। সীমান্তে আশ্রয় আবেদন কার্যত বন্ধের উদ্যোগ এবং সেখানে সেনাবাহিনীর শক্ত উপস্থিতি নতুন করে অভিবাসীদের প্রবেশ নিরুৎসাহিত করছে। পাশাপাশি, কঠোর আবেদনপ্রক্রিয়া ও নতুন ফি আরোপের কারণে বৈধ অভিবাসনও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই কঠোর নীতির মধ্যেই ট্রাম্পকে অবস্থান শিথিল করতে বাধ্য করতে পারে এমন দুটি বিষয় সামনে এসেছে।

প্রথমত, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য বলছে, আইসিই অভিযানের ভয়ে অনেক শ্রমিক কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। কৃষি ও হোটেল খাতের মালিকেরা শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করলে ট্রাম্প কিছুটা সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখান। তবে প্রকাশ্যে সমালোচনার বদলে ব্যবসায়ী মহল হয়তো ব্যক্তিগত যোগাযোগের পথই বেছে নেবে। অন্যদিকে প্রশাসনের ভেতরে অভিবাসন বিষয়ে কঠোর অবস্থানের প্রবক্তারা প্রেসিডেন্টকে নীতি অব্যাহত রাখতে চাপ দিচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তাদের অবস্থানই প্রাধান্য পাচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন দ্রুত কমছে। অপরাধে জড়িত অভিবাসীদের নির্বাসনে মার্কিনিরা সমর্থন দিলেও, মুখোশধারী এজেন্টদের হাতে মানুষকে অচিহ্নিত গাড়িতে তুলে নেওয়ার দৃশ্য জনপ্রিয় নয়। আসন্ন নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন এই নীতির বড় পরীক্ষা হয়ে উঠবে। পুনর্র্নিবাচনের মুখে থাকা রিপাবলিকান প্রার্থীরা নির্বাসন প্রশ্নে কতটা আক্রমণাত্মক অবস্থান নেন, এবং ভোটাররা তাতে সাড়া দেন কি না—সেদিকেই এখন নজর।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশের তালিকা দীর্ঘ হলো। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে সিরিয়াসহ সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

রয়টার্সের খবরে এমনটি বলা হয়েছে। হোয়াইট হাউস জানায়, জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার ঝুঁকি ঠেকাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব দেশের নাগরিকদের তথ্য যাচাই ও নিরাপত্তা পরীক্ষা ঠিকমতো করা যায় না, সেসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে এই কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

মঙ্গলবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়ার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি) ইস্যু করা ভ্রমণ নথি বহনকারীদেরও যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না।এ ছাড়া লাওস ও সিয়েরালিওনের নাগরিকদের ওপরও সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর আগে এই দুই দেশ শুধু আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ছিল। হোয়াইট হাউস জানায়, সম্প্রসারিত এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

ট্রাম্প এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি সিরিয়াকে সফল করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। গত নভেম্বর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এমন কথা বলেছিলেন। এর মধ্যেই দেশটির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলো। মার্কিন সেনাবাহিনী জানায়, সিরিয়ায় সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট (আইএস) সদস্যদের হামলায় দুইজন মার্কিন সেনা ও একজন বেসামরিক দোভাষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনাকে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প ‘ভয়াবহ’ হামলা বলে বর্ণনা করেন।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে হোয়াইট হাউস জানায়, সিরিয়ার অনেক নাগরিক ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাচ্ছেন—এই হার তুলনামূলকভাবে বেশি। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ ও অভ্যন্তরীণ সংঘাত থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে সিরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করার চেষ্টা চললেও দেশটিতে এখনো পাসপোর্ট বা নাগরিক নথি ইস্যুর জন্য কার্যকর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। পাশাপাশি নাগরিকদের যথাযথ নিরাপত্তা যাচাই ও বাছাইয়ের ব্যবস্থাও সেখানে অনুপস্থিত।

আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন দেশ: হোয়াইট হাউস জানায়, জুনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ঘোষণাপত্রে সই করে ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেন এবং আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।ট্রাম্প বলেন, ‘বিদেশি সন্ত্রাসী’ ও অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকি ঠেকাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা অভিবাসী ও অভিবাসী নন —উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। হোয়াইট হাউস জানায়, ওই ১২টি দেশের ওপর সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

এ ছাড়া নতুন করে আরও ১৫টি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা ও প্রবেশে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে নাইজেরিয়াও রয়েছে।

দেশটি নিয়ে ট্রাম্প আগে থেকেই কড়া অবস্থানে আছেন।

জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প কঠোরভাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বড় বড় মার্কিন শহরে ফেডারেল এজেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র–মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয়প্রার্থীদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

গত মাসে ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি করে হত্যার ঘটনার পর থেকে অভিবাসন নীতিতে এই কঠোরতা আরও বেড়েছে। তদন্তকারীরা জানান, ওই হামলা চালান একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে একটি পুনর্বাসন কর্মসূচির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাবি, ওই কর্মসূচিতে পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই ছিল না।

গুলির ঘটনার কয়েক দিনের মধ্যেই ট্রাম্প ‘তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ’ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত রাখার অঙ্গীকার করেন। তবে তিনি কোন দেশগুলোকে এ তালিকায় রাখবেন বা ‘তৃতীয় বিশ্ব’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন—তা স্পষ্ট করেননি।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

» ২০২৫ সালে সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে নতুন রেকর্ড

সম্প্রতি