image

তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি গাজার ১৬ লাখ মানুষ

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলা ও মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়া অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল।

এখনও গাজার লাখ লাখ বাসিন্দা পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। খাবারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইসরায়েল যে পরিকল্পিত হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল, তা চলমান। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাজার মা ও শিশুদের নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। আগামী এপ্রিল পর্যন্ত এক লাখের বেশি শিশু, ৩৭ হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারীকে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে হবে। রয়টার্স জানায়, জাতিসংঘের সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) রিপোর্ট প্রকাশের পর এই সতর্কতা দেওয়া হলো। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস জানিয়েছেন, গাজার কমপক্ষে ১৬ লাখ মানুষ ২০২৬ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হবে।

তিনি সতর্ক করেছেন, দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় অগ্রগতি অত্যন্ত ভঙ্গুর। কারণ ইসরায়েলের হামলায় ব্যাপক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। জীবিকা নির্বাহ এবং স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনে ধস নেমেছে। মানবিক কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ থাকায় ক্ষুধার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। ডব্লিউএইচওর প্রধান তাঁর এক্স পোস্টে বলেন, ‘এখন গাজার মাত্র ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আংশিকভাবে কার্যকর রয়েছে।’ অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চিকিৎসায় জরুরি ও নিবিড় পরিচর্যা পরিষেবার ঘাটতির কারণে দুই লাখ রোগী জরুরি পরিষেবা থেকে, এক লাখ রোগী অস্ত্রোপচার পরিষেবা থেকে এবং ৭০০ রোগী নিবিড় পরিচর্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তরুণী মায়ের স্মৃতিচারণে যুদ্ধের ভয়াবহতা : ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় হাদিল আল ঘেরবাউই সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২৬ বছর বয়সী এই তরুণী সন্তান প্রসবের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।

গর্ভাবস্থা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। গাজা শহরের পূর্ব দিকে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে তিনি থাকতেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণে দ্রুত চলাফেরা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি মিডলইস্ট মনিটরকে বলেন, ‘আমার পরিবার তখন থেকে ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং স্বামীর বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে। গত অক্টোবরের শেষের দিকে গাজা শহরের একটি আবাসিক ভবনে ছিলাম। পাশেই ইসরায়েল বোমা হামলা করে। এটা তীব্র ভূমিকম্পের মতো ছিল। সেই রাতের ভয়াবহতা আমি ভুলতে পারাছি না। পরে আমি আল-শিফা হাসপাতালে পালিয়ে যাই। সেখানে লাশের গন্ধে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। এটা ভুলবার নয়।’

পশ্চিম তীরে ১৯টি নতুন বসতি অনুমোদন : ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ১৯টি নতুন বসতি স্থাপনের স্বীকৃতি অনুমোদন করেছে।

অতি ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই প্রস্তাব তোলেন। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ উত্তেজনা বৃদ্ধি করছে। সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্থায়িত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে। অন্যদিকে হামাস ও হিজবুল্লাহ অস্ত্র বিসর্জন না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ফের সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী লিন্ডসে গ্রাহাম।

সিরিয়ায় ২১ দিনে ৪২ বার ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ : সিরিয়ায় ডিসেম্বরের শুরু থেকে ২১ দিনের মধ্যে ৪২ বার ইসরায়েলি অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে। এই অনুপ্রবেশের মধ্যে গ্রেপ্তারের ঘটনাও রয়েছে। আনাদোলু এজেন্সি জানায়, সিরিয়ায় বারবার অনুপ্রবেশ ইসরায়েলি কৌশলের অংশ, যা অতিরিক্ত অঞ্চল দখল লক্ষ্যে করা হচ্ছে। সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, সর্বশেষ রোববার দুটি সামরিক যানবাহন নিয়ে গঠিত একটি ইসরায়েলি টহল দল কুনেইত্রার উত্তরাঞ্চলীয় আদনানিয়াহ পয়েন্ট থেকে অনুপ্রবেশ করে।

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় কথিত হলুদ রেখা দিয়ে ইসরায়েল বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে আছে।

পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী যেসব এলাকায় ফিলিস্তিনিরা নানা ফসল উৎপাদন করতেন, যেখানে ছিল স্ট্রবেরির বাগান, জলপাইয়ের দীর্ঘ সারি– সেগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। উপত্যকার মাঝ বরাবর গেলে সেই কুখ্যাত হলুদ রেখা, যেখানে প্রতিদিনই প্রাণ যাচ্ছে কোনো না কোনো ফিলিস্তিনির। নারী-শিশু কেউই বাদ যাচ্ছেন না।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আশারক আল-আওসাত গত শনিবার জানায়, অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির অধীনে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহারের অংশ হিসেবে এ ‘হলুদ রেখা’ নির্ধারণ করে ইসরায়েল। এখন সেখানে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিয়মিত গুলি করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, এর মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন ঘটছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে বানি সুহেলা শহরে লোকজন নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তাদের ওপর বারবার হামলা হয়। এতে এক নারীসহ চার ফিলিস্তিনি নিহত হন। এসব ঘটনা ঘটেছে হলুদ রেখার কাছাকাছি ২০০ মিটারের মধ্যে। চিকিৎসক দল, বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল বা আন্তর্জাতিক সংস্থার কেউ এসব মৃতদেহ উদ্ধার করতে পারেননি। লাশগুলো দীর্ঘ সময় ধরে মাটিতে পড়ে ছিল।

মাঠ পর্যায়ের সূত্রগুলো আশারক আল-আওসাতকে জানায়, ইসরায়েলের বাহিনী প্রথমে এক নারীকে গুলি করে হত্যা করে। যখন এক যুবক তার মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করেন, তখন তাকেও হত্যা করা হয়। এর পর মৃতদেহের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করার সময় আরও দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সূত্রগুলো বলছে, হলুদ রেখার আশপাশে চলমান লঙ্ঘনের কারণে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। অভিযোগ আছে, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় আরও এগিয়ে গেছে। ফলে ফিলিস্তিনিরা হলুদ রেখার কাছে থাকা তাদের বাড়িঘরে যেতে পারছেন না।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি