ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিভারস্ক থেকে নিজেদের সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন। ধীরগতিতে হলেও রাশিয়ার বাহিনী সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকায় পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা। গতকাল মঙ্গলবার ইউক্রেনের সেনাবাহিনী বলেছে, সৈন্যদের জীবন রক্ষা ও ইউনিটের যুদ্ধের সক্ষমতা বজায় রাখতে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা আরও জানায়, রুশ বাহিনীর কাছে ‘যথেষ্ট জনবল’ থাকায় তারা সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। এর আগে ওই দিনই ইউক্রেনের সরকারি কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার রাতে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনে এক শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন।
সিভারস্ক দখল করার ফলে রাশিয়া এখন দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্কের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেল। এ দুটি শহরকে ইউক্রেনের শেষ শক্তিশালী ঘাঁটি বা ‘দুর্গ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করে। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা মস্কোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সিভারস্ক দখল করার ফলে রাশিয়া এখন দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্কের আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেল। এ দুটি শহরকে ইউক্রেনের শেষ শক্তিশালী ঘাঁটি বা ‘দুর্গ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, সিভারস্ক এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও রুশ সেনারা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউক্রেন দাবি করেছে, সিভারস্কের যুদ্ধে তারা শত্রুপক্ষকে ক্লান্ত ও দুর্বল করে দিয়েছে।
রুশ হামলার আগে সিভারস্ক শহরে প্রায় ১১ হাজার মানুষ বসবাস করত। দুই সপ্তাহ আগে রাশিয়া শহরটি দখল করার দাবি করলেও তখন ইউক্রেন তা অস্বীকার করে। কয়েক মাসের টানা লড়াইয়ে শহরটি এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে মস্কো দোনেৎস্ক অঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং পাশের লুহানস্ক অঞ্চলের প্রায় ৯৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এ দুটি অঞ্চলকে একত্রে ‘দনবাস’ বলা হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার সতর্ক করেছেন, ইউক্রেনকে পুরো দনবাস ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো রাশিয়া তা দখল করে নেবে। তিনি এ যুদ্ধ বন্ধে কোনো ধরনের আপস করতে রাজি নন।
ইউক্রেনের দখল করা ভূখণ্ড নিয়ে কোনো আপস নয়: বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে পুতিন
ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি আলোচনায় দনবাসের পুরো এলাকা রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছেন। তবে জেলেনস্কি এখন পর্যন্ত কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে রাজি হননি।
উল্টো তিনি ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য চড়া নিশ্চয়তা দাবি করেছেন।
শান্তি আলোচনার অংশ হিসেবে মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করলেও এখন পর্যন্ত কোনো বড় অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। জেলেনস্কি জানান, যুক্তরাষ্ট্র বড়দিন উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, কিন্তু রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ হামলার আগে সিভারস্ক শহরে প্রায় ১১ হাজার মানুষ বসবাস করত। দুই সপ্তাহ আগে রাশিয়া শহরটি দখল করার দাবি করলেও তখন ইউক্রেন তা অস্বীকার করে। কয়েক মাসের টানা লড়াইয়ে শহরটি এখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যে ইউক্রেনের বিমানবাহিনী বলেছে, সোমবার রাতভর রাশিয়া ৬৩৫টি ড্রোন ও ৩৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এর মধ্যে ৬২১টিই আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তবে জাইতোমির অঞ্চলে এক শিশুর মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। সেখানকার প্রধান ভিতালি বুনেচকো জানান, শিশুটিকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। সেখানে হামলায় আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া কিয়েভ অঞ্চলে একটি বাড়িতে হামলায় ৭৬ বছর বয়সী এক নারী নিহত ও তিনজন আহত হন। পশ্চিম ইউক্রেনের খমেলনিতস্কি এলাকায় হামলায় মারা গেছেন ৭২ বছর বয়সী আরেকজন বৃদ্ধ। পশ্চিম ইউক্রেন লক্ষ্য করে ধেয়ে আসা রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের হাত থেকে বাঁচতে পোল্যান্ডও তাদের যুদ্ধবিমানগুলোকে সতর্ক অবস্থায় মোতায়েন করেছিল।
এদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইউক্রেনের সামরিক–শিল্পকারখানা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, নিশানা করা সব জায়গায় তারা সফলভাবে আঘাত হেনেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন দক্ষিণ রাশিয়ার স্ত্রাভরোপোলে একটি রাসায়নিক কারখানায় হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রুশ গণমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু ভিডিওতে ওই কারখানার দিক থেকে আগুনের বড় বড় শিখা উঠতে দেখা যায়। অঞ্চলটির গভর্নর ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরভ জানান, একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন কারখানাটিতে আঘাত হানলে আগুন ধরে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং আবাসিক ভবনগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
যুদ্ধক্ষেত্রের কাছের শহর জাপোরিঝঝিয়ায় বসবাসকারী ওলেকসান্দর চিরভোনি বিবিসিকে বলেন, সোমবার রাতটি ছিল ‘ভীষণ অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতার’। তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারিনি। বারবার নোটিফিকেশন আসছিল—ড্রোন আর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র আসছে।’ তিনি জানান, বেশির ভাগ হামলা তাঁর শহর পেরিয়ে পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলের দিকে গেছে।