image

বেথলেহেমে দুঃখ-আনন্দের মিশেলে ফিরল বড়দিনের উৎসব

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

দীর্ঘ দুই বছর বিরতির পর ফিলিস্তিনের বেথলেহেম শহরে যিশুখ্রিস্টের জন্মোৎসবের চিরচেনা পরিবেশ ফিরে এলেও, গাজায় চলমান যুদ্ধ ও দখলদারিত্বের নিত্যদিনের বাস্তবতা উদযাপনের আবহে মিশে রয়েছে গভীর বিষাদ।

বড়দিনের প্রাক্কালে বুধবার শহরের ম্যাঞ্জার স্কয়ার পুনরায় মুখরিত হয়ে ওঠে স্কাউট দলের প্যারেড, ড্রাম ও ব্রাস বাদ্যের সুর এবং বড়দিনের গানে। তবে সেসব গান ও সুরে মিশে ছিল ফিলিস্তিনি জাতীয় পরিচয়ের প্রতিধ্বনি। উৎসব শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগেই নিকটবর্তী শরণার্থী শিবির থেকে কয়েক তরুণকে গ্রেফতার করে ইসরায়েলি বাহিনী, যা যুদ্ধের রূঢ় বাস্তবতারই ইঙ্গিত বহন করে।

জেরুজালেমের ল্যাটিন ক্যাথলিক চার্চের আর্চবিশপ পিয়েরবাতিস্তা পিজাবাল্লা উৎসবে অংশ নিয়ে বলেন, "আমি বেথলেহেম থেকে শুধু এই শহরের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য আলোর বার্তা দিচ্ছি।" গাজা সফর শেষে ফেরা এই আর্চবিশপ গাজায় ফিলিস্তিনিদের ভোগান্তির কথাও তুলে ধরেন: "গাজায় আমি সম্পূর্ণ ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। কিন্তু সেই শূন্যতার মাঝেও মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা অনুভব করেছি।"

২০২৩ ও ২০২৪ সালে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতির চিহ্ন হিসেবে বেথলেহেমে বড়দিনের আনুষ্ঠানিক উৎসব স্থগিত রাখা হয়েছিল। গাজায় এ যাবৎ ৭০ হাজারেরও বেশি এবং পশ্চিম তীরে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এবারের উৎসবে প্রায় ১৫০০ ফিলিস্তিনি ও বিদেশি দর্শনার্থী অংশ নেন। তবে তাদের অনেকের জন্যই যাত্রা ছিল কষ্টকর। অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আসা ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান জর্জ জালুম তার অনুভূতি বর্ণনা করেন এভাবে: "আজকের এই পরিবেশ অর্ধেক আনন্দ আর অর্ধেক বিষাদে ভরা। কারণ গাজায় আমাদের ভাইবোনেরা এখনো বোমাবর্ষণ আর হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।"

রামাল্লার নিকটবর্তী বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা দর্শনার্থীদেরকে ইসরায়েলি সামরিক চেকপোস্টে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এক যাত্রী ঘাসান রিজকুল্লাহ বলেন, "চেকপোস্টে অন্তত দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর আমাদের শহরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। যাত্রাটি ছিল অত্যন্ত ক্লান্তিকর।" তবে তিনি আরও যোগ করেন, স্কাউট ব্যান্ডের সংগীত তাদের অতীতের সুন্দর স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

পর্যটন খাতে কিছুটা স্বস্তি ফিরছে বলে মনে করেন শহরের মেয়র মাহের কানাওয়াতি। তিনি এ উৎসবকে "বেথলেহেম, গাজা এবং পুরো ফিলিস্তিনের জন্য এক আশার বার্তা" বলে অভিহিত করেন। ফিলিস্তিন হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান ইলিয়াস আল-আর্জার তথ্যমতে, বড়দিনে হোটেলগুলোর ৮০ শতাংশ কক্ষ পূর্ণ হয়েছে এবং প্রায় ৮০০০ দর্শনার্থী এসেছেন। তবে গত দুই বছরে এই খাতে প্রায় ৩০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

মার্কিন ও ইউরোপীয় কিছু পর্যটক উৎসবের পরিবেশ ফিরে আসায় আনন্দ প্রকাশ করলেও, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন সতর্ক। স্যুভেনির দোকানের মালিক জ্যাক জ্যাকম্যান বলেন, "যে পরিমাণ দর্শনার্থী আমরা দেখছি তা যথেষ্ট নয়। আমরা সেই অবরোধের অবসানের প্রার্থনা করি যা বেথলেহেমকে একটি বিশাল কারাগারে পরিণত করেছে।"

ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সংখ্যা সংকুচিত হওয়া সত্ত্বেও, বেথলেহেমের এই উৎসব তাদের অস্তিত্ব ও সহনশীলতারই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি