image

ভারতে বড়দিন উদ্যাপন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার

শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লির এক গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করলেন। অথচ তাঁর দল ও সরকারের সমর্থক উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের ওপর আক্রমণে মেতে উঠলেন। ধর্মাচরণে বাধা দিলেন। অধিকাংশ আক্রমণ চালানো হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, আসাম, হরিয়ানার মতো বিজেপি–শাসিত রাজ্যে। বিস্ময় এটাই, এ ধরনের আক্রমণের প্রতিবাদ বিজেপির পক্ষ থেকে করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে নিন্দাও করা হয়নি। কোনো বিবৃতিও দেওয়া হয়নি। কারও বিরুদ্ধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং দিল্লির আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতাদের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ এফআইআর দাখিল করেছে। অভিযোগ, দিল্লির সাবেক শাসক দলের নেতারা খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন।

আসাম রাজ্যের নলবাড়িতে একটি খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুলে তাণ্ডব চালায় বজরঙ্গ দল। প্রধানত এই সংগঠন ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) বিভিন্ন রাজ্যে বড়দিন উদ্যাপনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়। আসামের নলবাড়ি জেলার পানিগাঁওয়ে সেন্ট মেরি ইংলিশ স্কুলে ঢুকে বজরঙ্গ দলের সমর্থকেরা তাণ্ডব চালান। বড়দিন উপলক্ষে স্কুলটি সাজানো হয়েছিল। ক্রিসমাস ট্রি লাগানো হয়েছিল। সব খুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের কাছেই এক দোকানে ক্রিসমাস উপলক্ষে বিক্রির জন্য রাখা সামগ্রীও তছনছ করা হয়।

একই ধরনের ঘটনা ঘটে ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর, দেশের বিজেপি–শাসিত বিভিন্ন রাজ্যেও। জয়পুর, বিদিশা, ভোপাল, গুয়াহাটি, বেরিলি, ইন্দোরের মতো শহর ছাড়াও আম আদমি পার্টি–শাসিত পাঞ্জাব ও বাম–শাসিত কেরালার বিভিন্ন শহরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরঙ্গ দল বিপণিবিতান, স্কুল, দোকান, এমনকি উৎসবমুখর মানুষদের ওপরেও হামলা চালায়। কেরালায় পালাক্কড় জেলায় পুদুস্সেরি গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আরএসএসের সদস্যেরা ক্যারল গাওয়া বন্ধ করে দেন। বিজেপি–শাসিত উত্তরাখন্ডের হরিদ্বারে গঙ্গার ধারে রাজ্য পর্যটন দপ্তর পরিচালিত এক হোটেলে বড়দিনের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়।

মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে এক গির্জায় বড়দিনের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা হয়। অভিযোগ, ওই নারীকে লাঞ্ছনা করেন স্থানীয় বিজেপিনেত্রী অঞ্জু ভার্গব। নেত্রীর অভিযোগ, ওই নারী নাকি ধর্মান্তকরণের সঙ্গে যুক্ত। খোদ দিল্লির লাজপতনগরে একদল নারী–পুরুষকেও বড়দিন উদ্?যাপনে বাধা দেওয়া হয়। তাঁরা সান্তা ক্লজের লাল–সাদা টুপি পরে বড়দিন উদ্?যাপন করছিলেন। বড়দিনের আগে গত মঙ্গলবার ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া খ্রিষ্টানদের ওপর হামলার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছিল। সেই আশঙ্কাই সত্য হলো।

দলগতভাবে বিজেপি কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে এই প্রবণতার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলেও দিল্লি পুলিশ আম আদমি পার্টির কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেছে। আম আদমি পার্টি কয়েক দিন আগে এক্সে একটি পোস্ট দিয়েছিল। তাতে দেখা যায়, সান্তা ক্লজ সাজা একজন দিল্লি এসে দূষণে জেরবার হয়ে পড়েছেন। ওই পোস্ট খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দিয়েছে—এ অভিযোগে দিল্লি পুলিশ সৌরভ ভরদ্বাজসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে।

আম আদমি পার্টির নেতাদের দাবি, তাঁরা এই পোস্টে দিল্লির দূষণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারও ধর্মীয় আবেগে আঘাতের প্রশ্নই ওঠে না। বিজেপির নির্দেশে দিল্লি পুলিশ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নেমেছে। বড়দিন উপলক্ষে দেশজুড়ে সংখ্যালঘু খ্রিষ্টানদের ওপর এমন আক্রমণ অতীতে দেখা যায়নি।

খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘুদের আইনি অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইউনাইটেড ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এ বছরে ভারতে খ্রিস্টানদের ওপর অন্তত ৬০০টি আক্রমণ হয়েছে।১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে মোট জনসংখ্যার ২.৩ শতাংশ খ্রিস্টান।

হিন্দু ও মুসলিমদের পর ভারতে তৃতীয় সর্বোচ্চ জনগোষ্টী খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব অভিযোগের পাশাপাশি বিভিন্ন চার্চে ভাংচুর, বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করে দেওয়া এবং বড়দিনের উৎসব পালন করতে থাকা মানুষকে হুমকি-ধামকি দেওয়ার ঘটনার প্রতিবেদনও তুলে এনেছে। নির্যাতিত খ্রিস্টানদের পাশে থাকার লক্ষ্যে সৃষ্ট অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ওপেন ডোরস’-এর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, শুধু বড়দিনের সময়েই ভারতজুড়ে খ্রিস্টানদের ওপর ৬০টিরও বেশি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় ধর্মীয় নেতারা ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন এবং কর্তৃপক্ষকে সাংবিধানিক অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

» পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের

সম্প্রতি