ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের বন্যা দূর্গত বাসিন্দারা কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারের ধীরগতির ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা সাদা পতাকা উড়িয়ে বিক্ষোভে নেমেছে। তাদের দাবি, সরকার বিদেশি সাহায্যের জন্য দ্বার খুলে দিক।
গত নভেম্বরের শেষ দিকে বিরল ঘূর্ণিঝড় ইন্দোনেশিয়ার তিনটি প্রদেশে আঘাত হানলে এর প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় প্রাণ হারায় ১ হাজারের বেশি মানুষ এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরও শত-সহস্র মানুষ।
মোট প্রাণহানির অর্ধেক ঘটেছে পশ্চিমাঞ্চলের আচেহ প্রদেশে। সেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু আচেহ প্রদেশের বহু মানুষ বিশুদ্ধ পানি, খাবার, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসাসেবার নূন্যতম সুবিধা পাচ্ছেন না। এতে ক্ষুব্ধ, হতাশ বাসিন্দারা।
এই সংকট সামাল দেওয়া কতটা হতাশার সেই লক্ষণ প্রকাশ পায় চলতি মাসের শুরুতে, যখন উত্তর আচেহের গভর্নর ইসমাইল এ জলিল প্রকাশ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসজল চোখে ক্যামেরার সামনে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার কি জানে না আমরা কী অবস্থার মধ্যে আছি?”
তবে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ান্তো পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে আছে’ বলে দাবি করে বিদেশি সহায়তা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়া এই দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সক্ষম।”
তাছাড়া, তিনি এখনও বন্যা দূর্গত পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করার আহ্বান উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। এই ঘোষণা দেওয়া হলে জরুরি তহবিল ছাড় ও ত্রাণ কার্যক্রম আরও গতিশীল করা যেত।
প্রবোও প্রশাসন প্রতিক্রিয়াশীল, অগোছালো ও বাস্তবতা-বিচ্ছিন্ন বলে সমালোচিত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার আচেহর রাজধানী বান্দা আচেহে কয়েক ডজন মানুষ সাদা পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিদেশি সহায়তার দ্বার খুলে দেওয়ার দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে দেখা যায়, ছোট একটি মেয়ের হাতে ধরা কাগজে লেখা, “আমার মাত্র তিন বছর বয়স। আমি একটি নিরাপদ ও টেকসই পৃথিবীতে বেড়ে উঠতে চাই।”
সাদা পতাকাকে সাধারণত আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। তবে প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীরা বলছেন, আচেহজুড়ে ভাঙা ছাদে, নদীর ক্ষয়ে যাওয়া তীরে এবং মসজিদের সামনে উড়তে থাকা এই সাদা পতাকা আন্তর্জাতিক সংহতির আহ্বান।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হুসনুল খাওয়াতিননিসা বিবিসি-কে বলেন, “এই পতাকার মানে আমরা হাল ছাড়ছি না। এই পতাকা একটি বিপদসংকেত। বাইরের বন্ধুদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমরা এ পতাকা উড়িয়েছি, যাতে তারা জানতে পারে আচেহর অবস্থা আজ কতটা খারাপ।”
অনেক গ্রাম পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। সড়ক ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হওয়ায় বহু এলাকা এখনও বিচ্ছিন্ন। বেঁচে যাওয়া মানুষ রোগব্যাধি ও অনাহারের কথা বলছেন। আরেক বিক্ষোভকারী চিৎকার করে বলেন, “আর কতদিন কাদা আর বন্যার পানিতে গা ধুতে হবে আমাদের?”
প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছে। আচেহর গভর্নর বলেছেন, তিনি যে কোনও জায়গা, যে কারও কাছ থেকে সাহায্যকে স্বাগত জানাবেন।
অন্যদিকে, প্রবোওর প্রশাসন বলছে, জাতীয় পর্যায়ে ত্রাণ কাজ চলছে এবং বন্যা দূর্গত মানুষদের পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ৬০ ট্রিলিয়ন রুপিয়া (প্রায় ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নগর-মহানগর: ভোটার হওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সারলেন তারেক রহমান