দুই বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় নারকীয় তা-ব চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। সেখানে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং বাস্তুহারা হয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ। গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়নি। পুরো গাজা যেন এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজায় দীর্ঘদিন ধরে কোনো সহায়তা না পৌঁছানোয় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেখানকার মানুষের জন্য তাঁবু এবং বিভিন্ন মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
একদিকে যুদ্ধের ভয়াবহতার কারণে ধ্বংসস্তূপ অপরদিকে বৈরী আবহাওয়া গাজার পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।শনিবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাস বয়ে গেছে। ২০২৩ সালের শেষের দিক থেকেই অনেক পরিবার তাঁবুতে বসবাস করছে। কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে দিয়েছে যে, এই উপত্যকায় তাপমাত্রা কমে যাওয়া, বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বাতাসের কারণে লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
গাজা সিটিতে বসবাসরত বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মোহাম্মদ মাসলাহ তাঁবু থেকে আলজাজিরাকে বলেন, সেখানে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, আমি এখানে থাকতে বাধ্য হচ্ছি কারণ আমার বাড়ি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। মাত্র কয়েক ঘন্টা বৃষ্টির পর আমরা ভিজে গিয়েছিলাম।
দেইর আল-বালাহতে, উত্তরের জাবালিয়া থেকে বাস্তুচ্যুত চার সন্তানের মা শাইমা ওয়াদি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা দুই বছর ধরে এই তাঁবুতে বাস করছি। প্রতিবার বৃষ্টি হলে তাঁবুটি আমাদের মাথার ওপর ভেঙে পড়ে এবং আমরা নতুন কাঠের টুকরো স্থাপন করার চেষ্টা করি। তিনি বলেন, সবকিছু এত ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে যে কোনো আয় ছাড়া, আমরা আমাদের বাচ্চাদের জন্য কাপড় বা তাদের ঘুমানোর জন্য গদি কিনতে পারছি না।
চলতি মাসের শুরুতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে গাজাজুড়ে তাঁবু এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্লাবিত হয়েছে। সেখানে বেশিরভাগ ভবন ইসরায়েলি আক্রমণে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাজা কর্তৃপক্ষের মতে, ডিসেম্বরে এখন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে তিন শিশুসহ কমপক্ষে ১৫ জন মারা গেছে এবং বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলো ইসরায়েলকে এই অঞ্চলে আরও আশ্রয়কেন্দ্র এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গাজা সিটি থেকে আলজাজিরার ইব্রাহিম আল খলিলি বলেছেন, শীতকাল হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বৃষ্টিতে যখন আশেপাশের এলাকা কাদা পানিতে ভরে যায় তখন তারা চরম দুর্দশায় পড়েন।
এদিকে, তীব্র জ্বালানিসংকটের কারণে ফিলিস্তিনের গাজার গুরুত্বপূর্ণ একটি হাসপাতালের একাধিক সেবা স্থগিত করা হয়েছে। এর ফলে উপত্যকাটিতে মানবিক সংকট আরও বাড়তে পারে।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি নির্বিচার হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে নুসেইরাত জেলায় অবস্থিত আল-আওদা হাসপাতালে প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত এক হাজার রোগী সেখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। হাসপাতাল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আহমেদ মেহান্না বলেন, জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিসংকটের কারণে বেশির ভাগ সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে। শুধু জরুরি, প্রসূতি ও শিশু বিভাগের মতো অত্যাবশ্যকীয় বিভাগগুলো চালু আছে।
স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ লিটার ডিজেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্তমানে তাদের কাছে মাত্র ৮০০ লিটার জ্বালানি আছে। মেহান্না বলেন, ‘আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখার বিষয়টি সাময়িক। এটি জ্বালানি পাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানিসংকট হাসপাতালের মৌলিক সেবা দেওয়ার সক্ষমতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে। এমন অবস্থায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে জ্বালানির নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিতের আহ্বান জানান।
১০ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। তবে এরপর ইসরায়েল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করে আসছে। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও উপত্যকাটি তীব্র মানবিক সংকটে ভুগছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪১১ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ হাজার ১১২ জন আহত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন গাজায় ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন বেসরকারি সরকারি সংস্থার মতে, বর্তমানে প্রতিদিন মাত্র ১০০ থেকে ৩০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করতে পারছে।
যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে ও চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়মিত হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বর্তমানে গাজার ২ হাজার ৩০০টি হাসপাতালের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শয্যা পরিচালনা করছে। এ ছাড়া গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে, এমন শিশুদের জন্য পাঁচটি কেন্দ্রে সহায়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় রোববার,(২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) পর্যন্ত গাজায় ৭০ হাজার ৯৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
গাড়িচাপায় হত্যা: পশ্চিম তীরে একটি সড়কের পাশে নামাজ আদায়ের সময় এক ফিলিস্তিনিকে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করেছেন একজন ইসরায়েলি। সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। লেস্টিনিয়ান টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিওটি যাচাইয়ের পর এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
সারাদেশ: লাউয়াছড়া বনাঞ্চল আজ চরম পরিবেশ সংকটে
সারাদেশ: রাজশাহী বিভিন্ন অপরাধে ১৫ জন আটক
সারাদেশ: বড়লেখায় দুই ভাই খুন, তদন্তে পুলিশ