ব্রিজিত বার্দো: আলোড়ন, আবেদন ও বিতর্কের এক কিংবদন্তির বিদায়

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ফরাসি চলচ্চিত্রের প্রতীক ও বৈশ্বিক আইকন ব্রিজিত বার্দো ৯১ বছর বয়সে মারা গেছেন। রোববার তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। মৃত্যুর তাৎক্ষণিক কারণ জানানো হয়নি।

১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইমেন’ চলচ্চিত্রে খালি পায়ে মাম্বো নাচের দৃশ্যের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান বার্দো। এলোমেলো চুল, দুর্দমনীয় উপস্থিতি ও সম্মোহনী শক্তি দিয়ে তিনি পর্দায় এমন এক যৌন আবেদন উদ্ভাসিত করেন, যা তখনকার মূলধারার সিনেমায় অভূতপূর্ব ছিল। মাত্র ২১ বছর বয়সে স্বামী রজার ভাদিম পরিচালিত ‘এন্ড গড ক্রিয়েটেড উইমেন’ চলচ্চিত্রে তার খোলামেলা ও স্বাধীনচেতা অভিনয় সেন্সরশিপকে চ্যালেঞ্জ করেছিল এবং আগের যুগের সংযত নারীচরিত্র থেকে তাকে সম্পূর্ণ পৃথক করে দিয়েছিল।

ফ্রান্সে তিনি ‘বি.বি.’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। জীবনের শেষভাগে তিনি প্রাণী অধিকার আন্দোলন এবং কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্যও আলোচিত হন।

১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্যারিসে জন্ম নেওয়া বার্দো একটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হন। তিনি নিজেকে লাজুক কিন্তু আত্মসচেতন শিশু বলে বর্ণনা করতেন। ১৫ বছর বয়সেই তিনি ‘এল’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পান এবং মডেলিংজগতে প্রবেশের পর চলচ্চিত্রে আসেন। তার চরিত্র মুক্ত নারীসত্তার প্রতীক হয়ে ওঠে এবং বিতর্কই তার খ্যাতি আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে তিনি ফ্রান্সের একটি সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হন।

তার প্রভাব চলচ্চিত্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। নারী ও পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ক প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা তাকে কেবল একটি ‘যৌন প্রতীক’ নয়, পপ সংস্কৃতির এক আইকনে পরিণত করে। নারীবাদী দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার ১৯৫৯ সালে এক লেখায় বার্দোর স্বতঃস্ফূর্ততা ও স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রশংসা করেছিলেন।

তবে খ্যাতির জীবন বার্দোর জন্য নিঃসঙ্গ ও দমবন্ধকর ছিল। তিনি প্রায়ই বলতেন, নিজের খ্যাতির ভেতরেই তিনি বন্দী হয়ে পড়েছিলেন। তার ব্যক্তিগত জীবন চারটি বিয়ে, বহুল আলোচিত প্রেম, বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার চেষ্টার গল্পে আচ্ছন্ন। ১৯৭৩ সালে নিজের ৪২তম ও শেষ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার পর তিনি চলচ্চিত্র জগত থেকে সরে দাঁড়ান।

এরপর তিনি ফরাসি রিসোর্ট শহর সাঁ-ত্রোপেতে বসবাস শুরু করেন এবং প্রাণী কল্যাণ আন্দোলনের এক কট্টর প্রচারকে পরিণত হন। ১৯৮৬ সালে তিনি ব্রিজিত বার্দো ফাউন্ডেশন ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব অ্যানিমালস প্রতিষ্ঠা করেন। প্রাণীদের প্রতি তার এই ভালোবাসা ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে পাওয়া হতাশার একটি প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করেছিল।

প্রাণী অধিকার আন্দোলনের পাশাপাশি অভিবাসন, ইসলাম ও সমকামিতা সম্পর্কে তার বিতর্কিত মন্তব্য তাকে সমালোচনার মুখেও ফেলেছে। ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ফরাসি আদালত জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার অভিযোগে তাকে ছয়বার জরিমানা করে। তিনি কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ জঁ-মারি লে পেন এবং তার কন্যা মারিন লে পেনকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন।

বিতর্ক সত্ত্বেও ফ্যাশন, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিতে তার প্রভাব অম্লান রয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তিনি নিজেকে ‘যৌনতার বিপ্লবের প্রতীক’ হিসেবে দেখেন না। তিনি বলেন, "নারীবাদ আমার বিষয় নয়; আমি পুরুষ পছন্দ করি।" তিনি তার অভিনয় জীবনের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, "ওসব নিয়ে আমি আর ভাবি না। তবে অস্বীকারও করি না, কারণ এর জন্যই সারা বিশ্ব আমাকে প্রাণী অধিকার রক্ষাকারী হিসেবে চেনে।"

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি