image
ছবি: সংগৃহীত

মায়ানমারে প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ সম্পন্ন, তরুণ ভোটারের উপস্থিতি কম

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আজ রোববার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় শেষ হয়েছে। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার পর এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে আয়োজিত প্রথম সাধারণ নির্বাচন। তিন ধাপের এ নির্বাচনে আজ প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৬টায়। আগামী ১১ ও ২৫ জানুয়ারি বাকি দুই দফায় ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা আছে।

মিয়ানমারের গত নির্বাচনে ভোটারের লাইনে যেখানে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো, আজকের নির্বাচনে তা ছিল না। এবারের ভোটারদের মধ্যে প্রধানত বয়স্ক মানুষের উপস্থিত ছিল বেশি। ইয়াঙ্গুনের বাণিজ্যিক এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে থাকা বার্তা সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক বলেন, বিকেল চারটায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আগে লাউডস্পিকারে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে শেষবারের মতো আহ্বান জানানো হয়। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর এই এলাকা গণতন্ত্রপন্থীদের বিক্ষোভের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

নির্বাচন পর্যবেক্ষক, পশ্চিমা কূটনীতিক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক জান্তার অধীনে অনুষ্ঠিত মাসব্যাপী এই নির্বাচনের নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সেনাবাহিনী নিজেদের মিত্রদের দিয়ে এই নির্বাচন করছে। ভিন্নমতের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। জান্তার পছন্দের দলগুলোই চলমান নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। সেনাবাহিনী-সমর্থিত সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমালোচকদের মতে, এটা মূলত সামরিক শাসনকে নতুন রূপে উপস্থাপন করা।

মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং রাজধানী নেপিডোতে আজ সকালে ভোট দেন। এরপর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হচ্ছে। সেনাবাহিনীর অধীনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাজেই এর সুনাম ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া যাবে না।’

মিয়ানমারে সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২০ সালে। সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল দেশটির জননেত্রী ও ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন অভিযোগে তাঁকে ২৭ বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁকে গোপন কোনো স্থানে আটক রাখা হয়েছে।

সু চির দল এনএলডিসহ ২০২০ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ দল বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তাই গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ দল এবারের নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। সহিংসতা ও নিরাপত্তার কারণে মোট ৬৫টি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুন থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা টনি চেং বলেন, এর মানে দাঁড়াচ্ছে, এ পর্যায়ে দেশের অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

চেংয়ের তথ্য অনুসারে, ইয়াঙ্গুনে আজ স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায় ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা হয়। সূর্য ওঠার পর থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে কিছু কিছু ভোটার উপস্থিতি দেখা যায়। চেং আরও বলেন, ‘ভোটারদের বেশির ভাগই মধ্যবয়সী। খুব বেশি তরুণকে আমরা দেখিনি। ব্যালটের দিকে তাকালে বোঝা যায়, সেখানে বিকল্পও খুব কম। অধিকাংশ প্রার্থীই জান্তাপন্থী দলগুলোর।’

এদিকে, ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে মিয়ানমার বেশির ভাগ সময় সেনা শাসনের অধীনে। ২০১০ সালের পর এক দশক গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতি দেখা গেলেও ২০২১ সালে সেনাবাহিনী আগের বছরের নির্বাচনের ফল মানতে অস্বীকার করে ক্ষমতা দখল করে।

এরপর থেকে দেশ পরিচালনায় জেনারেলদের মধ্যে চরম ব্যর্থতার অভিযোগ রয়েছে। এই নির্বাচন আংশিকভাবে প্রতিবেশী চীনকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা। চার বছরের গৃহযুদ্ধ থেকে বেরোতে জান্তাকে নির্বাচন আয়োজনের চাপ দিয়েছে বেইজিং। মিয়ামনারের সেনাবাহিনী বর্তমানে দেশের অর্ধেকেরও কম এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা এই নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতার ভাবমূর্তি তৈরি করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে চায়।

রাজধানী নেপিদোতে অভ্যুত্থানের নেতা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ভোট দিয়ে বলেন, ‘সেনাবাহিনী পরিচালনা করছে বলেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু।’ বিরোধীরা তাঁর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিছু বিরোধী নেতা নির্বাচনকে বাস্তবসম্মত পথ মনে করলেও প্রবাসী ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট এটিকে ভুয়া বলে বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনী-ঘনিষ্ঠ ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) নির্বাচনে সবচেয়ে বড় দল হিসেবে উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভোট শুরুর আগেই দলটির কার্যালয় ও একটি ভোটকেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে একজন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন।

পশ্চিমা অনেক দেশ এই নির্বাচন নিন্দা করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন একে ‘অগ্রগতি’ বলেছে। দেশটির অর্থনীতি ২০২০ থেকে ৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ৩৪ শতাংশে পৌঁছেছে। ডিম, রান্নার তেলসহ নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ৩৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত, বড় শহরগুলোয় দৈনিক মাত্র আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে। ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে প্রার্থী উ কিয়াও মিন হেত বলেন, সশস্ত্র পথ সঠিক নয়। আরেক প্রার্থী হেত হেত সোয়ে ও বলেন, তর্ক থামিয়ে সংলাপ ও আলোচনা দরকার। তবে অনেকেই ভোট দেননি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আরকার মিন নাইং (২৮) বলেন, ‘এই নির্বাচন জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে না। ভোট না দেওয়াই আমার প্রতিবাদ।’

থাইল্যান্ডের কাসেটসার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ললিতা হানওং বলেন, সেনাবাহিনী ঘনিষ্ঠ ইউএসডিপি আবারও ক্ষমতায় ফিরতে যাচ্ছে। অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের নেতৃত্বাধীন এই দলটি দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে মোট প্রার্থীর প্রায় এক-পঞ্চমাংশ প্রার্থী দিয়েছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন মূলত জনগণের ওপর সেনাবাহিনীর দাসত্বমূলক শাসন দীর্ঘায়িত করার জন্যই সাজানো। ইউএসডিপি ও সেনাবাহিনী সমর্থিত অন্যান্য দল একত্র হয়ে পরবর্তী সরকার গঠন করবে।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি