image
উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলবর্তী ওয়ানস্যান কালমা। উত্তর কোরিয়ার বর্তমান নেতা কিম জং উন তার তরুণ বয়সের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন এখানে

উত্তর কোরিয়ায় বিরল পর্যটন, রাশিয়ার এক নারীর অভিজ্ঞতা

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
সূত্র: বিবিসি

গত জুলাই মাসে বিরল এক পর্যটনের সৌভাগ্য হয়েছে আনাস্তাসিয়া স্যামসোনোভার। নিজ দেশে একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের কর্মী, রাশিয়ার ৩৩ বছর বয়সী এই নারী গিয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ায়-যেখানে বলতে গেলে বিদেশিদের ঢোকারই কোনো সুযোগ ছিল না এতদিন।

গত ১ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটনের দ্বার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকার। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়ানরাই সেখানে যেতে পেরেছেন। তবে সেই ভ্রমণ করতে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে

তিনি বেড়িয়ে এলেন উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলবর্তী ওয়ানস্যান কালমা থেকে, যেখানে দেশটির বর্তমান নেতা কিম জং উন তার তরুণ বয়সের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন।

জিওট্যাগ দেখে আনাস্তাসিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি নিউজ রাশিয়ান। আসলে গত ১ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে পর্যটনের দ্বার খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকার। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলা হলেও এখন পর্যন্ত কেবল রাশিয়ানরাই সেখানে যেতে পেরেছেন। তবে সেই ভ্রমণ করতে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে।

আনাস্তাসিয়া গিয়েছিলেন নিজ দেশের আরও ১৪ জনের সঙ্গে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিং মল ও ওয়াটার পার্ক রয়েছে সেই ওয়ানস্যান কালমায়। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমে জানা যায়, একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কেন্দ্রও আছে এর অদূরেই। আনাস্তাসিয়া জানান, কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে নির্ধারিত সূচি মেনে হয়েছে ভ্রমণ। গাইড ও গার্ডরা সার্বক্ষণিক সঙ্গে ছিলেন।

পর্যটকেরা যাতে স্থানীয়দের সঙ্গে মিশতে না পারেন কিংবা স্থানীয়রা তাদের দেখে চমকে না যান-তা নিশ্চিত করাই ছিল গার্ডদের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, “যখন আমরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতাম, স্থানীয়রা খুব অবাক হয়ে আমাদের দেখত।”

জনহীন, পরিচ্ছন্ন সৈকত আনাস্তাসিয়া জানান, তাদের বলা হয়েছিল কোনো জায়গায় নির্মাণাধীন স্থাপনার ছবি না তুলতে এবং খোলামেলা পোশাক না পরতে।

তবুও সেখানকার প্রায় জনশূন্য সৈকতে ভালোই সময় কাটিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, “ সেই সৈকত প্রতিদিন পরিষ্কার করা হতো, বালিগুলোও নিখুঁতভাবে সমান করে রাখা হতো।” আরো বলেন, “সেখানে কোনো দাগ চোখে পড়ত না। সৈকতে যাওয়ার রাস্তাটাও ছিল খুব সুন্দর।”

প্রসঙ্গত, কোভিড মহামারির সময় ছিটেফোটা যে আন্তর্জাতিক পর্যটন উত্তর কোরিয়ার ছিল, তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর তারা রাশিয়ানদের জন্য পর্যটন উন্মুক্ত করে দেয়। এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তারা অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের দেশের নাগরিকদের বেড়াতে আসার সুযোগ দেয়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই তা আবার বন্ধ করে দেয়।

তবে এই ওয়ানসান কালমায় পর্যটনকে ঘিরে বড় ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে কিমের। বলা হয়ে থাকে, স্পেনের বেনিদর্ম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন ভাবনা তার। ২০১৭ সালে সেখানে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছিল সেখানে। তারপর থেকে ওয়ানসান কালমায় কীভাবে এত কিছু করা হলো তার পেছনে রহস্য আছে বলে মনে করে বিবিসি। বিশেষ করে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সবসময়ই তো জবরদস্তিমূলক শ্রম, অনুপযোগী কর্মপরিবেশ, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়ে থাকে।

ওয়ানসান কালমা পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়ানরা বাদে সবার জন্য তা আবার স্থগিত করা হয়। এখন পর্যন্ত সেখানে রাশিয়ান পর্যটকদের দুটি দল গেছে। একটি আনাস্তাসিয়াদের।

ওয়ানসান কালমায় তিন দিনসহ উত্তর কোরিয়ায় এক সপ্তাহের ভ্রমণে খরচ প্রায় ১৮০০ ডলার। যা রাশিয়ানদের গড় মাসিক আয়ের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। ওয়ানসান কালমায় পর্যটন আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। সেগুলোর কোনো কোনোতে স্থানটি যে ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি, এবং সে কারণেই যে এটি বিশেষ, সে কথাও উল্লেখ করা হচ্ছে।

তবে আনাস্তাসিয়া জানান, তিনি যখন ছিলেন সেখান থেকে কোনো ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়া হয়নি। অবশ্য খেলনা রকেট কেনার সুযোগ রয়েছে। একেকটা ৪০ ডলার করে।

তিনি জানান, সারাদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা জানানো হতো প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায়, নাস্তার সময়। দীর্ঘ কর্মসূচি সারাদিনের। তবে যেদিন চাপ কম, সেদিন সাড়ে ৯টায় জানানো হতো এই পরিকল্পনা। খাবার যা দেওয়া হয়, তাতে মাংস অনেক। সঙ্গে মিষ্টি ও টক চাটনি। সাথে কাটা বাঁধাকপি আর গাজরের সালাদ।

আনাস্তাসিয়া আরও জানান, ৫০০ মিলিলিটার পানির বোতল পাওয়া যায় একদম সস্তায়। মাত্র ৬০ সেন্ট হবে। স্মারক হিসেবে সংগ্রহের জন্য রয়েছে উত্তর কোরিয়ার অলিম্পিকে পরিধেয়। তবে দারিয়া নামের আরেকজনের ইনস্টাগ্রামের পোস্টের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। তিনি লিখেছেন, এই ওয়ানসান কালমা রিসোর্টটা ঠিক রাশিয়ার পর্যটকদের ঘুরে যাওয়ার জন্য উপযোগী নয়।

“তবে হ্যাঁ, আপনি যদি এশিয়ার অন্যান্য দেশ, তুরস্ক ইত্যাদি ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যান, তাহলে আপনি এখানে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন,” একই পোস্টে যোগ করেন তিনি। তবে আবার কবে রাশিয়ানরা যেতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা ভোস্টক ইনটুর নামে রাশিয়ার যে প্রতিষ্ঠান এই পর্যটনে আয়োজনের ব্যবসায় জড়িত, তারা জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরেও অনেকে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার সরকারের কাছ থেকে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

এছাড়া রাশিয়ার আরো কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সি উত্তর কোরিয়া ভ্রমণের বিজ্ঞাপন দিলেও তারা এখন তা সরিয়ে ফেলেছে।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি