image

দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক সামরিক শাসক চুন ডো-হোয়ানের মৃত্যু

মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

চার দশক আগে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট চুন ডো হোয়ান মারা গেছেন বলে তার এক সহযোগী নিশ্চিত করেছেন।

মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে সিউলে নিজের বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন চুন।

দিনের কোনো এক সময় শেষকৃত্যের জন্য তার মরদেহ হাসপাতালে পাঠানো হবে বলে চুনের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি মিন চংয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসা চুনের ৮ বছরের শাসনামলজুড়েই গণতন্ত্রপন্থিদের ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা গেছে। ১৯৮০ সালে গোয়াংজুতে সেনাবাহিনীর চালানো ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের জন্য পরবর্তীতে তিনি দোষীও সাব্যস্ত হন; আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাই কোর্টে তার সাজা কমে যায। গোয়াংজুর ওই হত্যাযজ্ঞে হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে বলে ধারণা করা হয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চুনের শারীরিক অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয় বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান মিন চং।

দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট রোহ তায়ে-উ’র মৃত্যুর মাসখানেক পর চুনের মৃত্যু হল। ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থানে রোহ চুনের সহযোগী ছিলেন।

গত শতকের ৯০ দশকের মাঝামাঝি চলা বিচারে চুন তার কর্মকাণ্ডের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, দেশকে রাজনৈতিক সংকটের হাত থেকে রক্ষা করতেই তাকে অভ্যুত্থানের পথ বেছে নিতে হয়েছিল।

“একই পরিস্থিতি যদি আবার আসে, আমি নিশ্চিত যে আমি ফের একই পদক্ষেপই নেবো,” আদালতকে বলেছিলেন সাবেক এ সামরিক শাসক।

গোয়াংজুতে সেনা পাঠানোর অভিযোগ অস্বীকারও করেছিলেন তিনি।

১৯৩১ সালের ৬ মার্চ হেপচেওয়নের দক্ষিণাঞ্চলীয় দরিদ্র শহর ইয়ুলগোক-মাইয়নে জন্মান চুন। সেসময় কোরিয়ায় চলছিল জাপানের শাসন।

হাইস্কুল পড়াশোনা শেষ করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি; একের পর এক ধাপ পেরিয়ে ১৯৭৯ সালে হন কমান্ডার। ওই বছর প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হি’র হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পাওয়ার পর সামরিক বাহিনীর মিত্রদের আনুগত্য ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নিজের কব্জায় নিয়ে ১২ ডিসেম্বর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিশ্ব গণমাধ্যমে নিজের নাম তুলে দেন চুন।

“তিনি যেভাবে সবার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এবং পরিস্থিতির সুযোগকে দক্ষভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন তা আমাকে বিস্মিত করেছিল। যেন মুহুর্তের মধ্যে তিনি বিপুল শক্তির অধিকারী হয়ে গিয়েছিলেন,” সাংবাদিক চো গাব-জে’কে পরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলে অভ্যুত্থানের সময় চুনের সঙ্গে থাকা পার্ক জুন-কোয়াং।

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ব্লু হাউজে চুনের থাকা ৮ বছরকে পরবর্তীতে নির্মমতা ও রাজনৈতিক দমনের সময় হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়। তবে একই সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতিও হয় চোখে পড়ার মতো।

সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতির দাবিতে ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চাপে ১৯৮৭ সালে চুন পদত্যাগ করেন। ১৯৯৫ সালে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। কৌঁসুলির কার্যালয়ে হাজিরা দিতে অস্বীকৃতি এবং নিজের শহরে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর ভাষায় ‘ট্রায়াল অব দ্য সেঞ্চুরি’তে চুন ও তার সহযোগী রোহ বিদ্রোহ, রাষ্ট্রদ্রোহ এবং ঘুষ লেনদেনে জড়িত থাকায় দোষী সাব্যস্ত হন। রোহকে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও চুন পান মৃত্যুদণ্ড।

সিউল হাই কোর্ট অবশ্য পরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা এবং ১৯৮৮ সালে রোহ’র কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করায় চুনের সাজা কমিয়ে কারাদণ্ড দেয়।

১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কিম ইয়ং-স্যাম ‘জাতীয় ঐক্যের’ স্বার্থে চুন, রোহ দুজনকেই ক্ষমা করে দিলে মুক্ত জীবনে ফেরেন তারা।

তবে বিচারে চুনের যে জরিমানা ধার্য হয়েছিল, ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তার অনেকখানিই বাকি ছিল বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

২০১৭ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে এক মৃত গণতন্ত্রপন্থি কর্মী ও ক্যাথলিক যাজকের বদনাম করায় ২০২০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার এক আদালত চুনকে ৮ মাসের স্থগিত কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিল। তার আইনজীবীরা এ সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেছিল; এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে শুনানি হওয়ারও কথা ছিল।

‘আন্তর্জাতিক’ : আরও খবর

সম্প্রতি