alt

ভারতের লোকসভায় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাস

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : সোমবার, ২৯ নভেম্বর ২০২১

অবশেষে ভারতের লোকসভায় পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। সোমবার (২৯ নভেম্বর) হট্টগোল ও বিরোধী আইনপ্রণেতাদের প্রবল হইচইয়ের মধ্যে কণ্ঠভোটে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের এ বিলটি পাস হয়। কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই হই-হট্টগোল শুরু করেন ভারতের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা। একপর্যায়ে ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান তারা।

ওই পরিস্থিতিতে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। পরে ফের অধিবেশন শুরু হতেই ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল-২০২১’ পেশ করেন ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। অন্যদিকে বিরোধীরা কৃষি আইনের ওপর আলোচনার যে দাবি করেছিল, তা খারিজ করে দেয় সরকারপক্ষ। এদিকে এখনও দিল্লি সীমানায় বসে রয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। সম্প্রতি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে মৌখিক ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি ছিল, পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহার না হওয়ার পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এ পরিস্থিতিতে সোমবারই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

এদিকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ হবে। ২৫ দিন ধরে চলবে ভারতের এ শীতকালীন অধিবেশন। এতে ৩০টির মতো বিল উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অধিবেশনের শুরুর দিনে পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।

এর আগে, ১৯ নভেম্বর বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত প্রায় এক বছর ধরে ওই আইন নিয়ে আন্দোলন করছিলেন কৃষকরা। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে কৃষক বিক্ষোভ শুরু হয়। কৃষকদের আন্দোলন বিক্ষোভে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কৃষকরা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও নিজেদের চেষ্টায় আন্দোলন চালিয়ে গেছেন কৃষকরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি বিলে সংশোধন করে আইনে পরিণত করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্তানে ওই আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষত, পাঞ্জাবে সেই বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি। রাজ্যজুড়ে রাস্তা অবরোধ, রেললাইন অবরোধসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানায় কৃষক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, নতুন আইনের ফলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।

কৃষকরা দাবি করেছিলেন, বিতর্কিত ওই আইনের ফলে ফসল নিয়ে তাদের দরাদরির ক্ষমতা কমে যাবে, প্রচলিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা। পাশাপাশি, বেসরকারি এবং বড় সংস্থাগুলোর কাছে কৃষিপণ্য মজুত রাখার রাস্তাও উন্মুক্ত হবে। যদিও সেসময় মোদি সরকারের পাল্টা দাবি ছিল, নতুন কৃষি আইনে কোনোভাবেই কৃষকরা বঞ্চনার শিকার হবেন না। এমএসপি ব্যবস্থাও কার্যকর থাকবে। তবে আন্দোলনের কারণে শেষমেশ সেই বিতর্কিত আইন বাতিল করতে বাধ্য হলো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে দেখা

দিলেন না মোদি

ভারতের সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। অধিবেশন চলবে ১৯ দিন। এ অধিবেশন সামনে রেখে সোমবার অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির ছিলেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এ বিষয়টা নিয়েই এখন তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তার বিরোধীরা। মোদির পক্ষে অবশ্য সাফাই গেয়ে বলা হচ্ছে, সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি কোনো ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে না।

এমন এক সময় এ অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে যার মাত্র দিন কয়েক আগেই ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। সোমবারের বৈঠকে কৃষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ও উঠে আসে।

বিরোধীদের পক্ষে থেকে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া একটি ঘটনার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বরখাস্তও দাবি করা হয়। রাজ্যসভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, কংগ্রেস ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের পাশাপাশি তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার এবং কোভিড ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয় তুলেছিল। তিনিও সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগে এই ধরনের কোনো বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীরা না এলেও নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হাওয়ার পরে নিজে উপস্থিত থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিই এই ঐতিহ্যের শুরু করেছিলেন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমিচীন নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির এই অনুপস্থিতি ঘিরে দলের ভেতরেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

বৈঠক প্রসঙ্গে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি বলেন, মোদিজি এই প্রথা চালু করেছিলেন, সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এবার তিনি থাকতে পারলেন না। এ বৈঠকে তৃণমূল বলেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিএসএফের কাজের পরিধি বাড়ানো এবং পেগাসাস নিয়ে তারা সংসদে আলোচনা চায়।

শীতকালীন এই অধিবেশন মোট ২৬টি নতুন বিল আনতে যাচ্ছে মোদি সরকার। এরমধ্যে ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল ২০২১’ রয়েছে। প্রথম দিনেই এই সংক্রান্ত বিল আনবে সরকার। তবে সরকার চাইলেও অধিবেশন যে খুব একটা শান্তিপূর্ণ হবে না, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বিরোধীরা। তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রসঙ্গে কৃষকদের দাবি মানেনি সরকার। আরও কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলো।

বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে এর আগে বাদল অধিবেশন বার বার ভেস্তে গিয়েছি। এবার যাতে অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় তা নিশ্চিত করতেই সোমবারের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এদিকে আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং সর্বদলীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। তার অভিযোগ, আন্দোলকারী কৃষকদের ন্যূনতম সহায়কমূল্যের দাবি জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠকে তাকে সেই বিষয় উত্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন সর্বদলীয় বৈঠকে কোনো বিরোধীদের কোনো কথা বলতে দেওয়া হয়নি।

ছবি

ইউরোপকে সতর্ক করল রাশিয়া

ছবি

ওয়াকফ সংশোধনী আইন স্থগিত করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ছবি

তালেবান সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছে জার্মানি

ছবি

১০ হাজার ইসরায়লি সেনাকে মানসিক রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে

ছবি

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে বিপুল সমর্থন, নারাজ যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল

ছবি

নেপালে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে আবারও রাস্তায় জেন জি

ছবি

নেপালে বিক্ষোভে সহিংসতা: নিহত ৭২, আহত দুই হাজারের বেশি

ছবি

তেল কেনা বন্ধ করলেই রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে চার্লি কার্কের সমালোচনাকারীদের ওপর ক্ষুব্ধ আইনপ্রণেতারা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়া ‘খারাপ পরিণতি’ ডেকে আনবে

ছবি

লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে এক লাখের বেশি মানুষ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

গাজা ছেড়েছে আরও আড়াই লাখ মানুষ

ছবি

বিপর্যস্ত নেপালের পর্যটন খাত, ২ দিনে ক্ষতি ২৫০০ কোটি রুপি

ছবি

নেপাল: দায়িত্ব নিয়েই নির্বাচনের তারিখ জানিয়ে দিলেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান

ছবি

আফগানিস্তানে বন্দি থাকা মার্কিন নাগরিকদের বিষয় নিয়ে কাবুলে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা

ছবি

রাশিয়ার ড্রোন হামলা কোনো ভুল ছিল না: পোল্যান্ড

ছবি

উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি চলচ্চিত্র দেখলেও মৃত্যুদণ্ড

ছবি

ইসরায়েলি হামলার পর ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী

ছবি

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কারকি

ছবি

হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ভোট

ছবি

কেন নেপালের এ সংকট দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

ছবি

পাকিস্তানে জঙ্গিদের হামলায় ১২ সেনা নিহত

ছবি

নেপালে নির্বাচন ৫ মার্চ

ছবি

জাতিসংঘে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের ঘোষণায় বিপুল সমর্থন

ছবি

কঙ্গোতে পৃথক দুই নৌকা দুর্ঘটনায় ১৯৩ জনের মৃত্যু

ছবি

নেপালের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হলেন সুশীলা কারকি

ছবি

বিদেশি সিনেমা দেখায় উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বেড়েছে: জাতিসংঘ

ছবি

চার্লি কার্কের হত্যাকারীকে ধরিয়ে দিলে ১ লাখ ডলার পুরস্কার

ছবি

পশ্চিমবঙ্গের তরুণদের নেপাল থেকে শিক্ষা নেয়ার আহ্বান বিজেপি নেতার, পাল্টা একাধিক এফআইআর

ছবি

প্যালেস্টাইন বলে কোনো রাষ্ট্র থাকবে না, এ ভূমি আমাদের: নেতানিয়াহু

ছবি

ব্রাজিলে অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের দায়ে বলসোনারোকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড

ছবি

ভারতের ১৫তম উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন সিপি রাধাকৃষ্ণান

ছবি

গাজায় ত্রাণ শিবিরের পাহারায় ঘৃণাবাহী মার্কিন বাইকার গ্যাং

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনে নিহত আরও ৭২ ফিলিস্তিনি

ছবি

‘ভারত-সমর্থিত’ ১৯ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের

ছবি

কাতারের পর এবার ইয়েমেনে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৩৫

tab

news » international

ভারতের লোকসভায় কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল পাস

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

সোমবার, ২৯ নভেম্বর ২০২১

অবশেষে ভারতের লোকসভায় পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল। সোমবার (২৯ নভেম্বর) হট্টগোল ও বিরোধী আইনপ্রণেতাদের প্রবল হইচইয়ের মধ্যে কণ্ঠভোটে বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের এ বিলটি পাস হয়। কৃষি আইন নিয়ে আলোচনার দাবিতে শীতকালীন অধিবেশনের শুরুতেই হই-হট্টগোল শুরু করেন ভারতের বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতারা। একপর্যায়ে ওয়েলে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান তারা।

ওই পরিস্থিতিতে সংসদের দুই কক্ষেই অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। পরে ফের অধিবেশন শুরু হতেই ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল-২০২১’ পেশ করেন ভারতের কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর। অন্যদিকে বিরোধীরা কৃষি আইনের ওপর আলোচনার যে দাবি করেছিল, তা খারিজ করে দেয় সরকারপক্ষ। এদিকে এখনও দিল্লি সীমানায় বসে রয়েছেন আন্দোলনরত কৃষকরা। সম্প্রতি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে মৌখিক ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আন্দোলনরত কৃষকদের দাবি ছিল, পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহার না হওয়ার পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এ পরিস্থিতিতে সোমবারই তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ করা হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন ভারতের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।

এদিকে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল রাজ্যসভায় পেশ হবে। ২৫ দিন ধরে চলবে ভারতের এ শীতকালীন অধিবেশন। এতে ৩০টির মতো বিল উত্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। অধিবেশনের শুরুর দিনে পাস হলো বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল।

এর আগে, ১৯ নভেম্বর বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত প্রায় এক বছর ধরে ওই আইন নিয়ে আন্দোলন করছিলেন কৃষকরা। বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে কৃষক বিক্ষোভ শুরু হয়। কৃষকদের আন্দোলন বিক্ষোভে ঘটে প্রাণহানির ঘটনাও। তবুও রাজপথ ছাড়েননি কৃষকরা। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে তবে বিষয়টির সুরাহা হয়নি। করোনা মহামারির মধ্যেও নিজেদের চেষ্টায় আন্দোলন চালিয়ে গেছেন কৃষকরা।

উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনটি কৃষি বিলে সংশোধন করে আইনে পরিণত করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকেই দিল্লি, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্তানে ওই আইনের বিরুদ্ধে তুমুল প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিশেষত, পাঞ্জাবে সেই বিক্ষোভের তীব্রতা ছিল অনেক বেশি। রাজ্যজুড়ে রাস্তা অবরোধ, রেললাইন অবরোধসহ নানা আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের প্রতিবাদ জানায় কৃষক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, নতুন আইনের ফলে লোকসানের মুখে পড়বেন কৃষকরা।

কৃষকরা দাবি করেছিলেন, বিতর্কিত ওই আইনের ফলে ফসল নিয়ে তাদের দরাদরির ক্ষমতা কমে যাবে, প্রচলিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হবেন তারা। পাশাপাশি, বেসরকারি এবং বড় সংস্থাগুলোর কাছে কৃষিপণ্য মজুত রাখার রাস্তাও উন্মুক্ত হবে। যদিও সেসময় মোদি সরকারের পাল্টা দাবি ছিল, নতুন কৃষি আইনে কোনোভাবেই কৃষকরা বঞ্চনার শিকার হবেন না। এমএসপি ব্যবস্থাও কার্যকর থাকবে। তবে আন্দোলনের কারণে শেষমেশ সেই বিতর্কিত আইন বাতিল করতে বাধ্য হলো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।

সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে দেখা

দিলেন না মোদি

ভারতের সংসদে শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে আজ। অধিবেশন চলবে ১৯ দিন। এ অধিবেশন সামনে রেখে সোমবার অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় বৈঠকে হাজির ছিলেন না দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এ বিষয়টা নিয়েই এখন তার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তার বিরোধীরা। মোদির পক্ষে অবশ্য সাফাই গেয়ে বলা হচ্ছে, সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি কোনো ঐতিহ্যের মধ্যে পড়ে না।

এমন এক সময় এ অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে যার মাত্র দিন কয়েক আগেই ব্যাপক আন্দোলনের মুখে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন বাতিলে রাজি হয়েছে মোদি সরকার। সোমবারের বৈঠকে কৃষকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ও উঠে আসে।

বিরোধীদের পক্ষে থেকে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া একটি ঘটনার জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির বরখাস্তও দাবি করা হয়। রাজ্যসভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, কংগ্রেস ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের পাশাপাশি তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার এবং কোভিড ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয় তুলেছিল। তিনিও সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগে এই ধরনের কোনো বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীরা না এলেও নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হাওয়ার পরে নিজে উপস্থিত থেকেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদিই এই ঐতিহ্যের শুরু করেছিলেন। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা সমিচীন নয়। তবে নরেন্দ্র মোদির এই অনুপস্থিতি ঘিরে দলের ভেতরেই প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।

বৈঠক প্রসঙ্গে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি বলেন, মোদিজি এই প্রথা চালু করেছিলেন, সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এবার তিনি থাকতে পারলেন না। এ বৈঠকে তৃণমূল বলেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিএসএফের কাজের পরিধি বাড়ানো এবং পেগাসাস নিয়ে তারা সংসদে আলোচনা চায়।

শীতকালীন এই অধিবেশন মোট ২৬টি নতুন বিল আনতে যাচ্ছে মোদি সরকার। এরমধ্যে ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার বিল ২০২১’ রয়েছে। প্রথম দিনেই এই সংক্রান্ত বিল আনবে সরকার। তবে সরকার চাইলেও অধিবেশন যে খুব একটা শান্তিপূর্ণ হবে না, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন বিরোধীরা। তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করলেও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রসঙ্গে কৃষকদের দাবি মানেনি সরকার। আরও কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলো।

বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে এর আগে বাদল অধিবেশন বার বার ভেস্তে গিয়েছি। এবার যাতে অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় তা নিশ্চিত করতেই সোমবারের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এদিকে আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় সিং সর্বদলীয় বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। তার অভিযোগ, আন্দোলকারী কৃষকদের ন্যূনতম সহায়কমূল্যের দাবি জানাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সর্বদলীয় বৈঠকে তাকে সেই বিষয় উত্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন সর্বদলীয় বৈঠকে কোনো বিরোধীদের কোনো কথা বলতে দেওয়া হয়নি।

back to top